রেশম তন্তু

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

রেশম তন্তু

রেশম (ইংরেজি: Silk) একধরনের প্রাকৃতিক প্রোটিন তন্তু, যার কয়েকটি ধরন বস্ত্রশিল্প তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। রেশমের সর্বাধিক পরিচিত ধরন বম্বিক্স মোরি নামের রেশম পোকার লার্ভার গুটি থেকে সংগ্রহ করা হয়। এক ধরনের রেশম পোকার গুটি থেকে এ ধরনের সুতা পাওয়া যায়। বিশেষ ব্যবস্থায় রেশম পোকা চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে এই সুতা প্রস্তুত করা হয়। রেশম পোকার গুটি চাষের পদ্ধতিকে সেরিকালচার বলা হয়।

Thumb
নারীরা আঘাত করে রেশম বের করছে (সম্রাট Huizong, চীন, ১২তম খ্রিস্টাব্দে)

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
রাজশাহী রেশম তন্তু, রাজশাহী

চীন

প্রাচীনকাল সর্বপ্রথম চীনে রেশমগুটির চাষ করা হয়।[] রেশমের জন্য চীনের সম্রাটের স্ত্রী লেই চু (চৈনিক: 嫘祖 ফিনিন: Léi Zǔ লেইৎসু) এর অনেক ভূমিকা রয়েছে। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩,৫০০ আগে থেকেই চীনারা রেশমের ব্যবহার করতে জানতো।[] প্রথম দিকে রেশমের জামা চীনা সম্রাটের জন্য সংরক্ষণ করা হতো। পরে এটি সে সময় সামাজের ধনী শ্রেণীর তোষাখানাতে স্থান পায় এবং এর সৌন্দর্য্য ও হালকা গুণগত মানের জন্য পরে এটি চীনা ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রেশমের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিণত হয় এবং একে শিল্পায়ন ভাবে চাষ করা শুরু হয়। চীনা সম্রাটরা রেশমগুটির চাষের উৎপাদন পদ্ধতি গোপন রাখার জন্য অনেক সতর্কতা অবলম্বন করেন, কিন্তু এর চাষ পরে জাপান, কোরিয়া এবং ভারতে আবির্ভূত হতে শুরু হয়।

রেশম বাণিজ্যের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় মিশরের ২১তম রাজবংশের (সি. ১০৭০ খ্রিস্টপূর্ব) একটি মমির চুলে পাওয়া রেশম থেকে।[]

ইউরোপ

ইউরোপে, যদিও রোমান সাম্রাজ্য রেশমের চাষ জানতো এবং সমাদর করতো, কিন্তু শুধু খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০, বাইজেন্টাইন সাম্রাজের সময় রেশমগুটির চাষ শুরু হয়েছে। উপকথা থেকে জানা যায় যে, সন্ন্যাসীরা আদেশে সম্রাট জাস্টেনিয়ান প্রথম কন্সটান্টিনোপলতে রেশম পোকা ডিমগুলো আনে। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির পালেরমো, কাতানযারো এবং কোমো ছিল ইউরোপের সর্বাধিক রেশম উৎপাদন শহর।

রেশম শিল্প

খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে চিনে প্রথম রেশম মথ থেকে রেশম উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ভারত, রাশিয়া, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিস দেশে রেশম চাষ চালু হয়। ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে রেশম মথের চাষ চালু হয় বলে অনেকের ধারণা। ভারতের রেশম ও রেশমজাত দ্রব্য ও বস্ত্র আর্ন্তজাতিক বাজারে খ্যাতি অর্জন করেছে। ভারতের রেশমের ঔজ্বল্য ও উৎকর্ষ এই খ্যাতির কারণ। আমাদের দেশে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষের রুজি রোজগার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রেশম শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বে রেশম উৎপাদনে ভারতের স্থান চতুর্থ। প্রায় হাজার বছর আগেই বাংলায় রেশম শিল্পের প্রসার ঘটেছে। তাই এই শিল্প খুবই প্রাচীন। রেশম শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলে পরিবেশ দূষিত হবে না। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। বিজ্ঞান সম্মত নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই শিল্পের প্রসার আরও ঘটানো দরকার। নতুন প্রজাতির রেশম মথ, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই শিল্পের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা বাঞ্ছনীয়।[]

রেশমের প্রকারভেদ

সারাংশ
প্রসঙ্গ


ভারতে চার রকম রেশম পাওয়া যায়। এগুলি হল; তুঁতজাত রেশম, তসর, মুগা এবং এরি। আগেকার দিনে এই রেশমমথের লার্ভা বনের নির্দিষ্ট গাছগাছড়ার পাতা খেয়ে বড় হত। সেই গাছেই গুটি বানাত। এখন কালচক্রে রেশম মথ গৃহপালিত হয়েছে। এদের লালন পালন করা হয় ঘরের মধ্যে। লার্ভার নির্দিষ্ট খাদ্যের জন্য সেই গাছের চাষ করা হয় জমিতে। তা থেকেই পাতা এনে লার্ভাকে খাওয়ানো হয়।

তুঁত রেশম মথ: এই রেশম মথের ভালো প্রজাতির নাম বম্বিক্স মোরি। এই মথের লার্ভা কেবল মাত্র তুঁত গাছের পাতা খায়। এদের গুটি থেকে উন্নত মানের রেশম পাওয়া যায়।

তসর রেশম মথ: এই রেশম মথের প্রজাতির নাম অ্যানথেরিয়া মাইলিট্টা। এই মথের লার্ভা শাল, অর্জুন গাছের পাতা খেয়ে বড় হয়। গুটি থেকে তসর পাওয়া যায়।

মুগা রেশম মথ: এই রেশম মথের বিজ্ঞান সম্মত নাম অ্যানথেরিয়া আসামেনসিস। আসামে প্রথম দেখা যায় বলে এই রকম নামকরণ। মুগার লার্ভা তেজপাতা, কর্পূর ইত্যাদি গাছের পাতা খায়। গুটি থেকে মুগা সুতো পাওয়া যায়।

এরি রেশম মথ: এই রেশম মথের বিজ্ঞানসম্মত নাম ফাইলোসেমিয়া রিসিনি।পেঁপে, রেড়ি ইত্যাদি গাছে জন্মায়। এদের গুটি থেকে মজবুত এরি সুতো পাওয়া যায়।


যে জমিতে জলের পরিমাণ কম তাতে তুঁত চাষ ভালো হয়। তুঁত চাষের জন্য ২০ শতাংশ জল, ১০ শতাংশ জৈব পদার্থ ও ৩০ শতাংশ অজৈব পদার্থ থাকে এই রকম মাটি দরকার। তুঁত গাছ খরা সহ্য করে। তাই খরাপ্রবণ এলাকায় এর চাষ সম্ভব।

তসর রেশম মথ যেহেতু শাল, অর্জুন গাছের পাতা খায় তাই যে এলাকায় এইসব গাছ আছে সেখানে এই রেশমথের পালন সম্ভব। বিভিন্ন এলাকায় গবেষণা কেন্দ্র, বীজ সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এই শিল্পের আরও ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন। প্রাকৃতিক রেশম বহুদিন ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। রেশমের ব্যবহারিক দিক এতই জনপ্রিয় যে সবসময়ই রেশমের চাহিদা রয়েছে। রেশম ব্যবহারে আছে নানা বৈচিত্র। তাই এর কদর বেশি। এই শিল্পে মন্দা আসার সম্ভাবনা কম।[]

রেশমের ব্যবহার

১) জামা, কাপড় তৈরি করতে রেশমের ব্যবহার বহুদিন ধরেই চলে আসছে।

২) প্রাকৃতিক রেশম এবং কৃত্রিম তন্তু এক সাথে মিশিয়ে কাপড়, জামা ইত্যাদি বর্তমানে তৈরি হচ্ছে।

৩) গাড়ির টায়ার তৈরিতে রেশম ব্যবহার করা হয়।

৪) রেশম থেকে মাছ ধরার সুতো তৈরি হয়।

৫) ময়দা কলের পরিস্রাবক রেশমের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়।

৬) পরিধেয় কাপড়ের উপর নক্সা তৈরিতে, ঘর সাজানোর দ্রব্য, পুতুলের নক্সার কাজে রেশম তন্তু ব্যবহার করা হয়।

৭) প্রাকৃতিক রেশম বা সিল্ক থেকে তৈরি শাড়ি ব্যাপকভাবে মহিলারা ব্যবহার করেন। সিল্কের ঔজ্জ্বল্য মহিলাদের আকৃষ্ট করে।

৮) টাইপ রাইটারের ফিতে তৈরিতে রেশম কাজে লাগে।

৯) প্যারাসুটে রেশম তন্তু ব্যবহার করা হয়।

১০) অস্ত্রোপচারের পর সেলাইয়ের কাজে রেশম তন্তু ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক এই তন্তুর সাহায্যে মানুষের শরীরে কোন বিষক্রিয়া সহজে ঘটে না।

১১) রেশম শিল্পের উপজাত দ্রব্য যেমন মৃত পিউপা ও তেল হাঁস, মুরগি এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[]

আরও দেখুন

  • প্রাকৃতিক আঁশের আন্তর্জাতিক বছর
  • রেয়ন
  • ভারতীয় উপমহাদেশে রেশম
  • সিল্ক রোড
  • মাকড়সার রেশম

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.