যৌন অভিমুখ (ইংরেজি: Sexual orientation, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন) বলতে অন্য ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণের মূল প্রবণতা বোঝায়। যৌনাকর্ষণ বিপরীত লিঙ্গ, বা সম লিঙ্গ, অথবা এই উভয় লিঙ্গের প্রতি হতে পারে। যৌন অভিমুখের লক্ষণ হলো কোন ব্যক্তির অন্য ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ, প্রণয় এবং যৌনক্রিয়া করার সক্ষমতা। যৌন অভিমুখ অনুযায়ী অধিকাংশ মানুষকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যথা: বিষমকামী, সমকামী ও উভকামী।

যৌন অভিমুখে এমনকী অযৌন (লিঙ্গ নয় এমন) অথবা অপর কোনো লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গের প্রতি একজন মানুষের কামজ আকর্ষণ অন্তর্ভূত হতে পারে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যৌন অভিমুখ বলতে কোনো ব্যক্তির "এই ধরনের আকর্ষণ, আচরণ বা সমজাতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিচয়"-টিকেও বোঝায়।[১] যৌন অভিমুখের শ্রেণিবিভাজন সাধারণত যৌন আকর্ষণসম্পন্ন ব্যক্তিদের যৌনতা বা লিঙ্গের ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে। যদিও কেউ কেউ অন্যান্য তকমা ব্যবহারের অথবা কোনোটিও ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়[২]

যৌন অভিমুখ বিপরীতকামিতা, সমকামিতাউভকামিতা এই তিনটি প্রধান বর্গের অধীনে আলোচিত হলেও নিষ্কামিতাকে (অন্যের প্রতি যৌন আকর্ষণের অভাব) অনেক সময় চতুর্থ বর্গ বলে বিবেচনা করা হয়।[৩][৪]বিপরীতকামিতা-সমকামিতা অনবচ্ছেদের এই বিভাগগুলি বিভিন্ন উভকামিতা-বিষয়ক উপবর্গ সহ একান্তভাবে বিপরীতকামী থেকে একান্তভাবে সমকামী বিষয়শ্রেণী সহকারে বিন্যস্ত। অনেক যৌনতত্ত্ববিদ এ হেন শ্রেণিবিভাজনকে সূক্ষ্ম যৌন পরিচয় চেতনার এক অতিসরলীকরণ বলে মনে করেন।[৫]

যৌন পরিচয় ও পরিভাষার অধিকতর বর্ণিল প্রকৃতিগুলো তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মূলত এই বর্গসমূহ বিভাজন করা হয়ে থাকে।[৬] উদাহরণস্বরূপ, লোকেরা নিজেদের ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য পরিচয়ও ধারণ করতে পারেন, যেমন সর্বকামী অথবা বহুকামী,[৭] অথবা এদের কোনটাই নয়।[৬]

যৌন অভিমুখিতার অধিকাংশ সংজ্ঞাতেই মনস্তাত্ত্বিক উপাদানের কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন, নির্দিষ্ট ব্যক্তির কামোদ্দীপনার অভিমুখ, বা আচরণগত উপাদান যা সেই ব্যক্তির যৌনসঙ্গী বা যৌনসঙ্গীদের যৌনতার দিকটি তুলে ধরে। কেউ কেউ সংজ্ঞার মধ্যে উভয় উপাদানকেই সংযোজিত করেন। আবার কেউ কেউ সরলভাবে ব্যক্তিগতভাবে স্ব-সংজ্ঞায়িত বা পরিচয়ভিত্তিক কোনো সংজ্ঞা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

যৌনতত্ত্ব, নৃতত্ত্বইতিহাসের কোনো কোনো বিশারদ মনে করেন বিপরীতকামী বা সমকামী – এই ধরনের সামাজিক শ্রেণিবিভাগ সার্বজনীন নয়। বিভিন্ন সমাজে যৌনতার থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বিদ্যমান। যেমন, যৌনসম্পর্কে বয়সবৈষম্য, যৌনসঙ্গীদের যৌনসংগমকালে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা গ্রহণ এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা।

যৌন পরিচয়যৌন আচরণ যৌন অভিমুখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। যদিও তারা পরস্পর পৃথক। পরিচয় বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তির নিজেদের সম্পর্কে ধারণা, এবং আচরণ বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তির নিজস্ব যৌনাচার সম্পর্কিত আচরণ; অন্যদিকে অভিমুখিতা বলতে বোঝায়, “কল্পনা, স্নেহানুভূতি ও কামনা।” (fantasies, attachments and longings) [৮] কোনো ব্যক্তি তার যৌন আচরণের মাধ্যমে তার যৌন অভিমুখিতাকে ব্যক্ত করতে পারেন, আবার নাও পারেন।[৯] যৌন অভিমুখিতা এমন এক ধারণা যার উদ্ভব হয় শিল্পবিপ্লবোত্তর পাশ্চাত্য জগতে। অন্যান্য দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে তার সার্বজনীনতা বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাই বিতর্কের অবকাশ থেকেই যায়।[১০][১১][১২] মিশেল ফুকো লিখেছেন, "'যৌনতা' আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিল্পবিপ্লব ও ধনতান্ত্রিকতার এক আবিষ্কার।"[১৩] পুরুষ যৌনতার অপাশ্চাত্য ধারণা যৌনতার প্রতি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী ও যৌন অভিমুখিতা ব্যবস্থার শ্রেণিবিভাজনের সঙ্গে স্পষ্টত দ্বিমত পোষণ করে।[১৪] আবার ‘যৌন অভিমুখিতা'র যৌক্তিকতা শিল্পবিপ্লবোত্তর পাশ্চাত্য সমাজেও প্রশ্নাতীত নয়।[১৫][১৬]

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.