রডনি উইলিয়াম মার্শ, এমবিই (ইংরেজি: Rod Marsh; ৪ নভেম্বর, ১৯৪৭ – ৪ মার্চ, ২০২২[1]) পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার আর্মাডেল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক এবং বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও উইকেট-রক্ষকঅস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭০-৭১ থেকে ১৯৮৩-৮৪ অস্ট্রেলীয় মৌসুম পর্যন্ত তিনি উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে রড মার্শ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষে খেলেন। বর্ণাঢ্যময় ক্রিকেট জীবনে তিনি ৯৬ টেস্টে অংশ নিয়ে ৩৫৫ আউটে সহায়তার মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড করেন যা তার দলীয় সঙ্গী ডেনিস লিলি’র ৩৫৫ উইকেটের সমান। এ দু’জন বোলার-উইকেট-রক্ষক জুটি ৯৫ টেস্ট উইকেট প্রাপ্তিতে একে-অপরকে সহায়তা করেন এবং দলে একই সময়ে অভিষেক ও অবসর নিয়েছেন। উইজডেন এ প্রসঙ্গে লিখে যে, ‘খুব কমসংখ্যক বোলার-উইকেট-রক্ষক জুটি ক্রিকেট খেলায় প্রভাববিস্তার করতে পেরেছে’।[2]

দ্রুত তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ণ নাম ...
রড মার্শ
Thumb
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
রডনি উইলিয়াম মার্শ
জন্ম (1947-11-04) ৪ নভেম্বর ১৯৪৭ (বয়স ৭৬)
আর্মাডেল, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৪ মার্চ ২০২২(2022-03-04) (বয়স ৭৪)
অ্যাডিলেড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামবাক্কাস, আয়রন গ্লাভস
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনমাঝে-মধ্যে ডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান, কোচ
সম্পর্কগ্রাহাম মার্শ (ভাই)
ড্যানিয়েল মার্শ (পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৪৯)
২৭ নভেম্বর ১৯৭০ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট৬ জানুয়ারি ১৯৮৪ বনাম পাকিস্তান
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ )
৫ জানুয়ারি ১৯৭১ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ ওডিআই১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৬৯১৯৮৪ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৯৬ ৯২ ২৫৭ ১৪০
রানের সংখ্যা ৩,৬৩৩ ১,২২৫ ১১,০৬৭ ২,১১৯
ব্যাটিং গড় ২৬.৫১ ২০.০৮ ৩১.১৭ ২৩.০৩
১০০/৫০ ৩/১৬ ০/৪ ১২/৫৫ ০/৯
সর্বোচ্চ রান ১৩২ ৬৬ ২৩৬ ৯৯*
বল করেছে ৭২ ১৪২ ২৩
উইকেট
বোলিং গড় ৮৪.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩৪৩/১২ ১২০/৪ ৮০৩/৬৬ ১৮২/৬
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২১ অক্টোবর ২০১৪
বন্ধ

ঘরোয়া ক্রিকেট

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে রড মার্শ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার জন্য নিউজিল্যান্ড গমন করলে কেভিন রাইট বেশ কিছু খেলায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার সুযোগ পান।

বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে রড মার্শ যোগদান করলে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। ফলশ্রুতিতে, ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় নিয়মিত উইকেট-রক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অপূর্ব সুযোগ আসে কেভিন রাইটের।[3]

অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার পর বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়েরা নিজেদেরকে খেলার জগতে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন কেভিন রাইট। তিনি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া দলের বাইরে থাকেন ও অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে রড মার্শ তার স্থলাভিষিক্ত হন।[4] রড মার্শের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনকালে আটটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান কেভিন রাইট। ৩৫ গড়ে ৩২২ রান তুলেন তিনি। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ করেন ৮৮ রান ও ৩৪টি ডিসমিসাল ঘটানোয় পারদর্শীতা দেখান। শেফিল্ড শিল্ডে তাসমানিয়ার বিপক্ষে একটি খেলায় সাতটি ডিসমিসাল ও ৫৫ রান তুলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন কেভিন রাইট।[5] তাসত্ত্বেও, অস্ট্রেলীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী ১৯৮০ সালে পাকিস্তান গমনের জন্য মার্শের বিকল্প উইকেট-রক্ষক হিসেবে ভিক্টোরিয়ার রিচি রবিনসনকে দলে যুক্ত করে।[6]

খেলোয়াড়ী জীবন

মার্শের টেস্ট জীবন বিতর্কের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মূলতঃ তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবেই দলে মনোনীত হয়েছিলেন। উদ্বোধনী টেস্টেই ক্যাচ নিয়ে তাকে ‘আয়রন গ্লাভসের’ অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীকালে তিনি তার উইকেট রক্ষার কাজে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। এ প্রেক্ষিতে তাকে ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল উইকেট-রক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

দলের নিয়মানুবর্তিতায় তিনি নিজেকে সমর্পণ করেছেন। বিশেষ করে ১৯৭০-৭১ মৌসুমে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ৫ম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার সেঞ্চুরি থেকে মাত্র আট রান দূরে থাকতে বিল লরি ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন।[7] গ্রেগ চ্যাপেল তার সম্পর্কে বলেন যে, তার জানা দু’জন ব্যক্তির মধ্যে রডনি মার্শ একজন যিনি অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলকে ধ্বংসস্তুপ থেকে রক্ষা করতে পারতেন। অন্যজন হচ্ছেন ইয়ান রেডপাথ[8]

১৯৬৯-৭০ মৌসুমে অবসরগ্রহণকারী বেকারের পরিবর্তে তার অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ঐ সময় অস্ট্রেলিয়া দল ব্রায়ান টাবেররে জর্ডন - এ দুই উইকেট-রক্ষককে সাথে নিয়ে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছিল। ১৯৭০-এর বসন্তে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় একাদশ জন ম্যাকলিনকে সাথে নিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে বের হয়। মার্শ ছিলেন তাদের পিছনে। কিন্তু ১৯৭০-৭১ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে টাবেরের পরিবর্তে তাকে মনোনীত করা হয়। তার উন্নততর ব্যাটিংশৈলীই এ অবস্থানে নিয়ে আসতে সহায়তা করে।

কীর্তিগাঁথা

১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতবার্ষিকী টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১১০* রান সংগ্রহ করেন। এরফলে তিনি পঞ্চম অস্ট্রেলীয় উইকেট-রক্ষক হিসেবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। একই টেস্টে অস্ট্রেলীয় উইকেট-রক্ষক ওয়ালি গ্রাউটের ১৮৭ টেস্ট আউট করার রেকর্ড ভঙ্গ করেন।[2] এছাড়াও তিনি আরও ১৬টি অর্ধ-শতক করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনি সর্বমোট ১১ সেঞ্চুরিসহ সহস্রাধিক রান করেন।[9] তন্মধ্যে তার সর্বোচ্চ রান আসে ২৩৬।

অবসর

১৯৮৬-১৯৯০ এবং ১৯৯৬-১৯৯৮ সময়কালে তিনি চ্যানেল নাইনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্প্রচারকালীন ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ছিলেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর কোচ ছিলেন ও ১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

২ মে, ২০১৪ তারিখে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ রড মার্শকে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। তিনি জন ইনভেরারিটি’র স্থলাভিষিক্ত হন।[10] এরপূর্বে তিনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় কোচিং উন্নয়ন ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকায় শোচনীয় পরাজয়ের পর সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।[11]

মৃত্যু

২০২২ সালের ৪ মার্চ ৭৪ বছর বয়সে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।[12] একই দিনে আরেক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট তারকা শেন ওয়ার্ন-ও মৃত্যবরণ করেন, যিনি তার নিজের মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে একটি টুইট বার্তায় মার্শকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।[13]

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.