Loading AI tools
প্রাককেন্দ্রিক ও এর কোষ বিভাজন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রাক-কেন্দ্রিক (ইংরেজি: Prokaryotic) হল এককোষী জীব, যাদের কোষে দ্বিস্তরী ঝিল্লি (প্রাচীর বা পর্দা বা সূক্ষ আবরণ) বা অন্য কোন প্রকার ঝিল্লি দ্বারা আবৃত কোনো অঙ্গানু থাকে না । এদের কোষে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, প্লাস্টিড ও মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে না, কিন্তুু রাইবোজোম থাকে। এদের হ্যাপ্লয়েড(Haploid) নিউক্লিয়াস থাকে। প্রাক-কেন্দ্রিক বা প্রোক্যারিওটিক কোষ হচ্ছে এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘরের মত।
প্রাক-কেন্দ্রিকেরা দুটি ক্ষেত্রে বিভক্ত ব্যাক্টেরিয়া ও আরকিয়া । সকল ব্যাক্টেরিয়া ও আরকিয়া প্রাক-কেন্দ্রিক জাতীয় কোষের অন্তর্গত। এরা প্রধানত শোষণ পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করলেও কেউ কেউ সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য তৈরি করে গ্রহণ করে।
ইংরেজি prokaryote শব্দটি এসেছে গ্রীক- πρό- (pro-) অর্থ "পূর্বে" এবং καρυόν (karyon) অর্থ কেন্দ্র বা শাঁস।[1][2]
প্লাজমা ঝিল্লি (ফসফোলিপিড দ্বিস্তর) কোষের অভ্যন্তরভাগকে এর পরিবেশ থেকে রক্ষা করে এবং এর মধ্যে একটি যোগাযোগ মাধ্যম ও ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। অধিকাংশ আদি কোষেরই একটি কোষ প্রাচীর রয়েছে; ব্যতিক্রম হল মাইকোপ্লাজমা (এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া) এবং থার্মোপ্লাজমা (একটি আর্কিয়ন)। ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে কোষ প্রাচীরের মধ্যে পেপটিডোগ্লাইক্যান নামক পদার্থ থাকে যা বাইরের যেকোন শক্তি বিরুদ্ধে একটি বাঁধা হিসেবে কাজ করে। কোষ প্রাচীর কোষকে হাইপোটনিক পরিবেশে অসমোটিক চাপের কারণে বিস্ফোরিত হওয়া (সাইটোলাইসিস) থেকে রক্ষা করে। প্রকৃত কোষেও ক্ষেত্রবিশেষে কোষ প্রাচীর থাকতে দেখা যায় (উদ্ভিদ কোষের সেলুলোজ, ছত্রাক), কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রাচীরের রাসায়নিক গঠন ভিন্ন। আদি কোষের ক্রোমোসোম একটি বৃত্তাকার অণু। অবশ্য লাইম রোগ সৃষ্টিকারী Borrelia burgdorferi নামক ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটে। আদি কোষে প্রকৃত নিউক্লিয়াস না থাকলেও ডিএনএ অণু একটি নিউক্লিঅয়েডের মধ্যে ঘনীভূত থাকে। এরা প্লাজমিড নামক এক্সট্রাক্রোমোসোমাল ডিএনএ মৌল বহন করে যারা সাধারণত বৃত্তাকার। প্লাজমিড কিছু সহযোগী পদার্থ বহন করতে পারে, যেমন এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেকটি প্রাক-কেন্দ্রিক কোষে সাইটোকঙ্কাল আছে, যদিও তা সুকেন্দ্রিক কোষের তুলনায় আদিম প্রকৃতির। এধরনের কোষের দৈর্ঘ্য ১ মাইক্রোমিটার থেকে ১০ মাইক্রোমিটার হয়। তবে ০.২ মাইক্রোমিটার থেকে ৭৫০ মাইক্রোমিটারেরও বেশি হতে পারে (Thiomargarita namibiensis)।
এইটি মৃত বা জড় বস্তু দ্বারা গঠিত।এতে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন, পেক্টিন, সুবেরিন,আমাইলোপেক্টিন,কিউটিন,মুরামিন,কাইটিন ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। কোষ প্রাচীর বাহিরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। কোষকে দৃঢ়তা প্রদান করে। কোষের আকার আকৃতি বজায় রাখে। জল ও খনিজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
কোষ প্রচীরের ঠিক নিচে সমস্ত প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে সজীব নরম মেমব্রেন বা ঝিল্লি থাকে তাকে প্লাজমা মেমব্রেন বা কোষঝিল্লি বলে। কোষঝিল্লি একটি বৈষম্য ভেদ্য পর্দা হওয়ায় অভিস্রবণের মাধ্যমে জল ও খনিজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ও পার্শ্ববর্তী কোষগুলোকে পরস্পর থেকে আলাদা করে রাখে।
পুরু কোষ ঝিল্লি তিনটি স্তর দিয়ে গঠিত । বিভিন্ন প্রকার কোষে যত প্রকার ঝিল্লি থাকে তাহাদের সকলেরই মৌলিক গঠন ত্রিস্তর বিশিষ্ট একক ঝিল্লি । মাঝে একটি পাতলা স্তর থাকে এবং তার দুই পাশে দুটি পাতলা স্তর থাকে । বাইরের দিকের স্তরটি বেশি পুরু থাকে । মাঝের পাতলা স্তরে লিপিড থাকে এবং দুই পাশে প্রোটিনে পুরু স্তর থাকে । লিপিড স্তর 35Å পুরু । এবং দুই পাশের প্রোটিন স্তর 20Å পুরু । পুরো প্লাজমা ঝিল্লির বেধ 75Å । (20+35+20=75Å) । প্লাজমা ঝিল্লিতে ক্ষুদ্র,ক্ষুদ্র 8-50Å ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র থাকে । প্লাজমা ঝিল্লিতে বেশি জল থাকে না । এতে মাত্র 25% জল থাকে।
প্রাক-কেন্দ্রিক কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস নেই। এর পরিবর্তে নিউক্লিওয়েড নামে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিয়ার জালিকা ও নিউক্লিওলাসবিহীন একটি বস্তু দেখা যায়। এরূপ নিউক্লিওয়েড কেবল একটি দীর্ঘ, প্যাঁচানো ডিএনএ অণু দিয়ে গঠিত। এটি রিং আকারে অবস্থান করে।নিউক্লিওয়েডকে সাইডোনিউক্লিয়াস(Cydonucleus) বলা হয়।
রাইবোজোম জীব কোষে অবস্থিত রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা। ১৯৪৩ সালে ক্লড প্রথম কোষের মধ্যে রাইবোজোম আবিষ্কার করেন।১৯৫৫ সালে প্যালডে এর নামকরণ করেন।তাই একে ক্লডের দানা বা প্যালডের দানা বলা হয়। প্রাক-কেন্দ্রিক ও সু-কেন্দ্রিক উভয় প্রকার কোষে এদের পাওয়া যায়।এগুলো সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গাত্রে যুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। রাইবোজোম নিউক্লিক অ্যাসিড(RNA) ও প্রোটিনের(Protine) সমন্বয়ে গঠিত। ইহা দুটি অধঃএককের সমন্বয়ে গঠিত। অধঃএককদুটি ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম দ্বারা যুক্ত।
সাইটোপ্লাজমে যে ফাকাঁ অংশ দেখা যায় তাই কোষ গহ্বর। কাজ : ১. কোষরস ধারণ করা ২.প্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ ধারণ করা। ৩. আহরিত খাবার সংরক্ষণ করা ইত্যাদি।
কোষের চারদিকে ফ্লাজেলা নামে ক্ষুদ্র সুতার মতো বর্ধিত অংশ রয়েছে। এগুলো আন্দোলিত করে ব্যাকটেরিয়া স্থান পরিবর্তন করে।কিছু কিছু ব্যাক্টেরিয়ামের সাথে যুক্ত চাবুকের মতো সরু চুলের ন্যায় অঙ্গাণু দেখা যায় যা পানিতে অদ্রবণীয় প্রোটিন ফ্ল্যাজেলিন নামক জৈবাণু দ্বারা সৃষ্ট অতিদ্রুততে চলতে সক্ষমকারী ও সংযুক্ত আদিকোষে গুচ্ছ আকারে থাকে, সেইসব গুচ্ছাকৃতি অঙ্গাণুকে ফ্ল্যাজেলাম বলা হয়।ফ্ল্যাজেলাম সাধারণত আদিকোষে কোষপ্রাচীরের ভেতরে গ্ৰ্যানিউল নামক অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়।গ্ৰাম নেগেটিভ বা গ্ৰাম পজিটিভ উভয়েই ব্যাক্টেরিয়ামতে থাকে।ফ্ল্যাজেলামের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে সুস্পষ্ট অংশটি ফিলামেন্ট নামে পরিচিত। এটি কোষের পৃষ্ঠ থেকে ডগা পর্যন্ত প্রসারিত। এটি ফ্ল্যাজেলিন নামে পরিচিত একটি গ্লোবুলার প্রোটিন দ্বারা গঠিত, যা ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির উপর নির্ভর করে 30,000K থেকে 60,000K ডাল্টন(একক) পর্যন্ত আণবিক ভরে পরিবর্তিত হয়।
কোষের পৃষ্ঠদেশে আমিষ নির্মিত কিছু সংখ্যক চুলের মতো উপাঙ্গ দেখা যায়। পিলিন নামক আমিষ দিয়ে গঠিত এসব অঙ্গাণুকে পিলি বলে। এগুলো পোষক দেহের সঙ্গে নিজেকে আটকে রাখতে সাহায্য করে।ফ্ল্যাজেলামের অপেক্ষা খাটো ও সরু অতিশক্ত উপাঙ্গকে পিলি/ফ্রিম্ব্রী বলে।পিলিন নামক অতিশক্ত প্রোটিন দ্বারা তৈরি হয় ফ্রিম্ব্রী/পিলি।ব্যাকটেরিয়াকে কোন কিছুর সাথে আটকে থাকতে পিলি সহায়তা করে। পিলি যেহেতু প্রোটিন দ্বারা গঠিত, সেগুলি অ্যান্টিজেনিক। পিলি ফ্ল্যাজেলামের চেয়ে সোজা। পিলি নামটি সাধারণত যৌন পিলিকে বোঝায় অন্য পাইলাসের মতো কাঠামোকে ফিম্ব্রিয়া বলা হয়। পিলি সংযোগের সময় জিনগত উপাদানগুলির স্থানান্তরিত সাথে জড়িত। সুতরাং, যৌন পিলিকে কনজুগেটিভ পিলিও বলে।ফ্রিম্ব্রী/পিলি আদিকোষে সাইটোপ্লাজমে ফ্রিম্ব্রোস নামক অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্ৰাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ামতে ফ্রিম্ব্রী/পিলি থাকে না।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.