সংবাদ বলতে মুদ্রণজগৎ, সম্প্রচার কেন্দ্র, ইন্টারনেট অথবা তৃতীয় পক্ষের মুখপাত্র কিংবা গণমাধ্যমে উপস্থাপিত বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের একগুচ্ছ নির্বাচিত তথ্যের সমষ্টি যা যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।[1]
সংবাদ হচ্ছে সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য। বিভিন্ন গণমাধ্যমের (media) মাধ্যমে: মানুষের মুখে মুখে (word of mouth), ছাপা প্রক্রিয়া (postal systems), পোস্ট করার মাধ্যমে (postal systems), বেতার ও টিভি সম্প্রচার(broadcasting), দূর যোগাযোগ (electronic communication) বা কোন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য দ্বারা সংবাদ সরবরাহ করা হয়।
সংবাদ পরিবেশনের সাধারণ বিষয়গুলোর মধ্যে যুদ্ধ, সংকট, সরকার, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, আবহাওয়া, অর্থনীতি, ব্যবসা, ফ্যাশন, এবং বিনোদন ও ক্রীড়াবিষয়ক ঘটনা, অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক ঘটনা রয়েছে। সরকারি ঘোষণা, রাজকীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবগত করা, আইন, কর, গণ স্বাস্থ্য, এবং অপরাধীদের বিষয়ে ধারণা’র বর্ণনা প্রাচীন কাল থেকে সংবাদ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। সংবাদ সম্পর্কে জানা ও তা ভাগাভাগি করার আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে এবং তথ্য ভাগাভাগি করে মানুষ তা পূরণ করে। কখনো কখনো সরকারি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গুপ্তচর নেটওয়ার্ক দ্বারা চালিত হয়ে প্রযুক্তিগত এবং সামাজিক উন্নয়ন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার গতি বাড়িয়ে দিতে পারে সেইসাথে এর আধেয়কে প্রভাবিত করতে পারে। সংবাদপত্রের নিবিড়ভাবে সংযুক্ত যে ধারার সংবাদের সঙ্গে আমরা পরিচিত তা কোর্টের ইশতেহার হিসেবে চীনে উদ্ভূত হয়, পরবর্তীতে কাগজ ও ছাপাখানার দ্বারা পরিমার্জিত হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
উৎপত্তি রহস্য
একটি সূত্র দাবী করছে যে, চতুর্দশ শতাব্দীতে নিউ শব্দের বহুবচন হিসেবে নিউজ বা সংবাদ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হতো। মধ্যযুগীয় ইংরেজি হিসেবে নিউজ শব্দটির সমার্থক ছিল নিউইজ (newes), ফরাসী শব্দ নোভেলেজ (nouvelles) এবং জার্মান শব্দ নিউয়েজ (neues)।
লোকমুখে 'নিউজ' শব্দটিকে বিশ্লেষণ করা হয় - এন (নর্থ), ই (ঈষ্ট), ডব্লিউ (ওয়েস্ট) এবং এস (সাউথ)।[2]
জেসিকা গ্যারিটসন ফিঞ্চ (Jessica Garretson Finch) ১৮৯০ সালে বার্নার্ড কলেজে (Barnard College) পড়ানোর সময় “সমসাময়িক ঘটনাবলী” ("current events") ব্যাকাংশটি আবিষ্কার করেন।
নতুনত্ব
সংবাদ ( "news") শব্দটির অন্তর্নিহিত অর্থের মতো ( "news") এর সাধারণ গূঢ়ার্থ হচ্ছে নতুন তথ্য উপস্থাপন। [9][10] সংবাদ বিষয়ে এই নতুনত্ব বিষয়টিকে এমন একটি অনির্দিষ্ট গুণ দিয়েছে যা এটিকে ইতিহাসের অতি সর্তকতামূলক অনুসন্ধান এবং বা অন্যান্য পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিষয় থেকে আলাদা করেছে।[9][10][12]
ইতিহাস
সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে সংবাদপত্রের সূচনা ঘটে। এর পূর্বে সংক্ষিপ্ত সরকারি ঘোষণা বা ইস্তেহার এবং রাজার আজ্ঞা প্রধান প্রধান নগরগুলোতে প্রকাশিত হতো।[3] প্রথম লিখিতভাবে সংবাদ বা খবরের ব্যবহার মিশরে সু-সংগঠিতভাবে প্রবর্তন হয়েছিল। খ্রীষ্ট-পূর্ব ২৪০০ বছর পূর্বে ফারাও শাসন আমলে বর্তমানকালের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম কুরিয়ার সার্ভিসের আদলে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারনের উদ্দেশ্যে ডিক্রী বা আদেশনামা প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো।[4]
প্রাচীন রোমের এক্টা ডিওরনা বা সরকারের তরফে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক ঘোষিত ইস্তেহার জনগণের উদ্দেশ্যে তৈরী করতেন। এগুলো ধাতব পদার্থ অথবা পাথরের সাহায্যে জনগণের সম্মুখে প্রচার করা হতো।
চীনের সরকারশাসিত প্রথমদিককার সময়ে সংবাদ শীট আকৃতিতে তৈরী করা হতো। এটি টিপাও নামে পরিচিত ছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে হ্যান রাজবংশের শেষদিককার সময়কালে আদালতের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো। ৭১৩ থেকে ৭৩৪ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে ত্যাং রাজবংশের আমলে কাইয়ুন জা বাও (আদালতের ইস্তেহার) নামে সরকারীভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। এটি সিল্কের উপর হস্তলিখিত ছিল। সরকারী কর্মীরাই এটি প্রচারের উদ্দেশ্যে পড়ার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ছিল। ১৫৮২ সালে মিং রাজত্বকালের শেষদিকে ব্যক্তিগতভাবে সংবাদ প্রকাশের প্রথম তথ্যসূত্র প্রয়োগের উল্লেখ করা হয়।[5]
আধুনিক ইউরোপের শুরুর দিকে আন্তঃসীমান্ত এলাকায় পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিকল্পে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে হস্তলিখিত সংবাদের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৫৫৬ সালে ভেনিস প্রজাতন্ত্রীয় সরকার প্রথমবারের মতো মাসিক নটিজি স্ক্রিট প্রকাশ করে। এর মূল্য ছিল এক গেজেটা।[6]
সংবাদপত্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্যগতভাবেই অধিকাংশ বৃহৎ শহরে সকাল এবং বিকালে সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো। প্রচারমাধ্যমের সম্প্রসারণ এবং সংবাদের ক্ষেত্র অসম্ভবরকমভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ বিকালের সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে কেবলমাত্র সকালেই সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
সকালে সংবাদপত্র প্রকাশের ফলে কম ক্ষতি হয়। মূলতঃ সংবাদের গুণগত মান ও দৃষ্টিভঙ্গীই এতে সম্পৃক্ত। সাধারণতঃ সংবাদ ৫টি ডব্লিউ'র উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়। হু, হুয়াট, হোয়েন, হোয়ার, হুয়াই ছাড়াও আরও একটি ডব্লিউ (হাউ) রয়েছে। এগুলোকে ভিত্তিমূল হিসেবে ধরে যে-কোন বিষয় বা ঘটনা নিয়ে সংবাদ তৈরী করা সম্ভবপর। এশব্দগুলোর মাধ্যমে সংবাদ অনুসন্ধান কার্যক্রমের পর আর কোন প্রশ্ন বাকী থাকে না। প্রথম পৃষ্ঠায় সাধারণতঃ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ উপস্থাপন ও তথ্য পরিবেশনকে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এরফলে ব্যস্ত পাঠকেরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের অভিষ্ট সংবাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে থাকেন।
ক্যাবল নিউজ চ্যানেল হিসেবে বিবিসি নিউজ, ফক্স নিউজ, এমএসএনবিসি, সিএনএন সংবাদের গুরুত্ব অনুসারে প্রচারের ব্যবস্থা করে।
১৬০৫ সালে প্রকাশিত রিলেশন অলার ফুর্নেমেন আন্ড গেডেনঙ্কুরডিগেন হিস্টোরিয়েনকে বিশ্বের ১ম সংবাদপত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।[7]
সংবাদ সংস্থা
পৃথিবীর প্রাচীনতম সংবাদ সংস্থা হিসেবে এজেন্সী ফ্রান্স-প্রেস বা এএফপি'র নাম সর্বজনস্বীকৃত।[8] এটি ১৮৩৫ সালে ফরাসী অনুবাদক এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থার এজেন্ট চার্লস-লুইস হাভাস কর্তৃক এজেন্সী হাভাস নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাধ্যম
বর্তমানে সংবাদপত্রে মুদ্রণের জন্য নিউজরুম বা বার্তাকক্ষে ফোন ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি একজন প্রতিবেদক টাইপ করে তার প্রতিবেদন নিউজরুম বা বার্তাকক্ষে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। সাধারণত তারের মাধ্যমে কিংবা হস্তলিখিত সংবাদ নির্দিষ্ট সংস্করণে প্রকাশের জন্য কিংবা অন্যান্য সংবাদের সাথে প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়।
সর্বশেষ সংবাদ
আজকাল সর্বশেষ সংবাদ বা ব্রেকিং নিউজ নামে সংবাদের নতুন একটি অংশবিশেষ কিংবা পরিভাষার জন্ম হয়েছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে প্রচারণার জন্য ইউনাইটেড স্টেটস্ ক্যাবল নিউজ সার্ভিসে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় প্রকাশিত হয়। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাহায্যে এ সেবায় বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়। এছাড়াও বিখ্যাত সংবাদ সংস্থা বিবিসি সর্বশেষ সংবাদ ই-মেইলের সাহায্যে গ্রাহককে প্রেরণ করে থাকে।
পৃথিবীর বিভিন্ন শহর বা দেশে যে ঘটনাগুলো প্রতিটি মুহূর্তে ঘটছে তা প্রাপ্তিসাপেক্ষে দ্রুত প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এতে রেডিও বা বেতার, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.