বাদ্যযন্ত্র হল এমন একপ্রকার যন্ত্র যা এমনভাবে তৈরি বা সংস্কার করা হয়েছে যাতে তা সুর বা সুরেলা শব্দ সৃষ্টি করতে পারে এবং গানের সহায়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অর্থগত দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, যেকোনো বস্তু যা শব্দ সৃষ্টি করতে পারে, তাকেই আমরা বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। বাদ্যযন্ত্র মানব সভ্যতার উদয়লগ্ন থেকেই প্রচলিত, সময়ের সাথে সাথে তাদের রূপভেদ হয়েছে শুধু। প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হতো মূলত বিভিন্ন ধর্মীয় ও প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠানে। তখন সেগুলো ব্যবহৃত হতো একেকটা একেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে। ধীরে ধীরে সংস্কৃতির বিকাশ হয় এবং মানুষ বাদ্যযন্ত্রসমূহের যৌগিক ও মিলিত ব্যবহার শুরু করে বিনোদনের জন্য। এই সময় থেকেই বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ ভিন্নতর হয়।

Thumb
বাদ্যযন্ত্র

প্রথম যে যন্ত্রটিকে বাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার উৎস ও সময়কাল বিতর্কিত। সর্বপ্রাচীন যে বস্তুটিকে কিছু সংখ্যক বিজ্ঞ বাদ্যযন্ত্র হিসেবে নির্দেশ করেছেন, তা সম্ভবত একটি সাধারণ বাঁশি, যার বয়স আনুমানিক প্রায় ৬৭,০০০ বছর। কিছু কিছু মতামত অনুযায়ী অবশ্য প্রাচীন বাঁশিসমূহের বয়স অনুমান করা হয় প্রায় ৩৭,০০০ বছর। যাহোক, অধিকাংশ ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে, বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কারের সুস্পষ্ট সময় খুঁজে বের করা অসম্ভব। কারণ, বাদ্যযন্ত্রের সংজ্ঞার প্রাসঙ্গিকতা ও বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের অনির্দিষ্টতা বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণার অন্তরায়। অনেক প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রসমূহ বানানো হতো পশুর চামড়া, হাড়, কাঠ এবং অন্যান্য অস্থায়ী উপকরণ দ্বারা।

পৃথিবীর বিভিন্ন জনবহুল অঞ্চলে বাদ্যযন্ত্রসমূহের স্বকীয়ভাবে উন্নতি হতে থাকে। তবে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের ফলে অধিকাংশ বাদ্যযন্ত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের উৎপত্তিস্থল থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে তাদের অভিযোজন ঘটে। মধ্যযুগীয় সময়ে মেসোপটেমীয় বাদ্যযন্ত্রসমূহ প্রচলিত ছিল সমুদ্র তীরবর্তি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে আর ইউরোপিয়ানরা বাজাতো উত্তর আফ্রিকান বাদ্যসমূহ। যদিও আমেরিকান অঞ্চলগুলোতে বাদ্যসমূহের উন্নতির গতি ছিল মন্থর; কিন্তু উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকান সংস্কৃতিসমূহ নিজেদের মধ্যে বাদ্যযন্ত্র শেয়ার করেছিলো। ১৪০০ সালের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে বাদ্যযন্ত্রের উন্নয়নের গতি ধীরে ধীরে কমে যায় এবং পাশ্চাত্য বিশ্বের অধীনস্থ হয়।

বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ তার নিজগুণেই একটি শৃঙ্খলা। বহু বছর ধরে বাদ্যসমূহের নানা প্রক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে এসেছে। বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাস নির্ভর করে তাদের সুরের কার্যকরি পাল্লা, তাদের গঠন উপাদানের বিশিষ্ট্য, তাদের আকার প্রভৃতির উপর। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত একাডেমিক প্রক্রিয়া হলো "Hornbostel-Sachs" , যাতে শ্রেণিবিন্যাস করতে বাদ্যযন্ত্রসমূহের শব্দ উৎপন্ন করার প্রক্রিয়া বা মাধ্যম বিচার করা হয়। বাদ্যযন্ত্রের উপরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষণের নাম "বাদ্যবিজ্ঞান"

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.