লিথিয়াম
মৌলিক পদার্থ যার পারমাণবিক সংখ্যা ৩ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লিথিয়াম একটি রাসায়নিক মৌল যার প্রতীক Li এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৩। গ্রিক শব্দ λιθoς লিথোস্ "পাথর" থেকে লিথিয়াম ধাতুর নাম হয়েছে।লিথিয়াম হলো নরম, রূপালি-সাদা ক্ষার ধাতু। পর্যায় সারণীতে এর অবস্থান ১ নং গ্রুপে। আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে লিথিয়াম সবচেয়ে হালকা কঠিন পদার্থ ও সবচেয়ে হালকা ধাতু। অন্যান্য ক্ষার ধাতুর মতো লিথিয়াম হলো অত্যন্ত সক্রিয় ও দাহ্য পদার্থ, তাই একে অবশ্যই খনিজ তেলে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। যখন একে কাটা হয় এটি ধাতব দীপ্তি প্রদর্শন করে, তবে আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে জারিত হয়ে হালকা রূপালি ধূসর বর্ণে পরিণত হয়। এর আয়ন হিসেবে দ্রাব্যতার জন্য সমুদ্রের পানিতে এর উপস্থিতি আছে এবং সাধারণত ব্রাইন থেকে পাওয়া যায়। লিথিয়াম ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম ক্লোরাইড এর মিশ্রণের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে লিথিয়াম ধাতু আলাদা করা হয়।
![]() | |||||||||||||||||||||
উচ্চারণ | /ˈlɪθiəm/ | ||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
উপস্থিতি | রূপালী-সাদা (তেলের উপর ভাসমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে) | ||||||||||||||||||||
আদর্শ পারমাণবিক ভরAr°(Li) | |||||||||||||||||||||
পর্যায় সারণিতে লিথিয়াম | |||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||
পারমাণবিক সংখ্যা | ৩ | ||||||||||||||||||||
মৌলের শ্রেণী | ক্ষার ধাতু | ||||||||||||||||||||
গ্রুপ | গ্রুপ ১: হাইড্রোজেন এবং ক্ষার ধাতু | ||||||||||||||||||||
পর্যায় | পর্যায় ২ | ||||||||||||||||||||
ব্লক | এস-ব্লক | ||||||||||||||||||||
ইলেকট্রন বিন্যাস | [He] ২s১ | ||||||||||||||||||||
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা | 2, 1 | ||||||||||||||||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||||||||||
দশা | কঠিন | ||||||||||||||||||||
গলনাঙ্ক | ৪৫৩.৬৯ কে (১৮০.৫৪ °সে, ৩৫৬.৯৭ °ফা) | ||||||||||||||||||||
স্ফুটনাঙ্ক | ১৬১৫ K (১৩৪২ °সে, ২৪৪৮ °ফা) | ||||||||||||||||||||
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে) | ০.৫৩৪ g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa) | ||||||||||||||||||||
তরলের ঘনত্ব | m.p.: ০.৫১২ g·cm−৩ | ||||||||||||||||||||
পরম বিন্দু | (extrapolated) ৩২২৩ কে, ৬৭ MPa | ||||||||||||||||||||
ফিউশনের এনথালপি | ৩.০০ kJ·mol−১ | ||||||||||||||||||||
বাষ্পীভবনের এনথালপি | ১৪৭.১ kJ·mol−১ | ||||||||||||||||||||
তাপ ধারকত্ব | ২৪.৮৬০ J·mol−১·K−১ | ||||||||||||||||||||
বাষ্প চাপ
| |||||||||||||||||||||
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||||||||||
জারণ অবস্থা | +১, -১ strongly basic oxide | ||||||||||||||||||||
তড়িৎ-চুম্বকত্ব | ০.৯৮ (পলিং স্কেল) | ||||||||||||||||||||
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ | empirical: ১৫২ pm | ||||||||||||||||||||
সমযোজী ব্যাসার্ধ | ১২৮±৭ pm | ||||||||||||||||||||
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ | ১৮২ pm | ||||||||||||||||||||
বিবিধ | |||||||||||||||||||||
কেলাসের গঠন | body-centered cubic (bcc) | ||||||||||||||||||||
তাপীয় প্রসারাঙ্ক | ৪৬ µm·m−১·K−১ (২৫ °সে-এ) | ||||||||||||||||||||
তাপীয় পরিবাহিতা | ৮৪.৮ W·m−১·K−১ | ||||||||||||||||||||
চুম্বকত্ব | paramagnetic | ||||||||||||||||||||
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক | ৪.৯ GPa | ||||||||||||||||||||
কৃন্তন গুণাঙ্ক | ৪.২ GPa | ||||||||||||||||||||
আয়তন গুণাঙ্ক | ১১ GPa | ||||||||||||||||||||
(মোজ) কাঠিন্য | ০.৬ | ||||||||||||||||||||
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা | ৭৪৩৯-৯৩-২ | ||||||||||||||||||||
লিথিয়ামের আইসোটোপ | |||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||
আবিষ্কার
১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলিয়ান রসায়নবিদ জোস বনিফেকো ডি অ্যান্ড্রাডা ই সিলভা সুইডেনে প্রাপ্ত একটি মাইনে পেটালাইট আবিষ্কার করেন। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে জোহান অগাস্টা আর্ফওয়েডসন ও ইয়নস জ্যাকব বার্জেলিয়াস পেটালাইট আকরিক বিশ্লেষণের সময় একটি নতুন মৌলেন অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন যা ছিল সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর সমগোত্রীয়। বার্জেলিয়াস মৌলটির নাম দেন Lithium (Greek lithos= পাথর)। আর্ফওয়েড পরবর্তীতে স্পডুমিন ও লেপিডোলাইটেও এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ন মেলিন দেখেন যে লিথিয়াম ক্লোরাইড পোড়ালে উজ্জ্বল লাল বর্ণ প্রদর্শন করে। তিনি ও আর্ফওয়েডসন বিশুদ্ধ লিথিয়াম পৃথক করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ব্যার্থ হন। পরবর্তীতে ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম থমাস ব্র্যান্ডে লিথিয়াম অক্সাইডকে তড়িৎবিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ লিথিয়াম পৃথক করতে সমর্থ হলেও তা পরিমাপ করার মতো যথেষ্ট ছিল না। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান রসায়নবিদ রবার্ট বুনসেন ও ব্রিটিশ রসায়নবিদ অগাস্টাস মেটিসা লিথিয়াম ক্লোরাইডকে তড়িৎবিশ্লেষণ করে বিশুদ্ধ লিথিয়াম এর আয়তন নিরূপন করেন।
বৈশিষ্ট্য
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর মতো, লিথিয়ামে একটি একক ভ্যালেন্স ইলেকট্রন থাকে- যা সহজেই একটি কেশন গঠনের জন্য দেওয়া হয়। এ কারণে লিথিয়াম তাপ এবং বিদ্যুৎএর একটি ভালো পরিবাহী; পাশাপাশি একটি উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান, যদিও এটি ক্ষারীয় ধাতুগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন প্রতিক্রিয়াশীল।
রসায়ন এবং যৌগিক বৈশিষ্ট্য : লিথিয়াম সহজে জল দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে কম শক্তি দ্বারা প্রতিক্রিয়ায় জলীয় দ্রব্যে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং লিথিয়াম হাইড্রোক্সাইড গঠন করে। জলের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণে, লিথিয়াম সাধারণত একটি হাইড্রোকার্বন সিল্যান্টে জমা হয়, প্রায়ই পেট্রোলিয়াম জেলি। যদিও ভারী ক্ষারীয় ধাতুগুলো খনিজ তেলজাতীয় ঘন পদার্থগুলোতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে তবে লিথিয়াম এ তরলগুলোতে নিজেকে পুরোপুরি নিমজ্জিত করার মতো যথেষ্ট ঘন নয়।
যখন একটি শিখার উপরে স্থাপন করা হয়, লিথিয়াম যৌগগুলো একটি মারাত্মক ক্রিমসন রঙ দেয়, তবে যখন ধাতুটি পোড়ায়, শিখাটি একটি উজ্জ্বল রুপাতে পরিণত হয়। জল বা জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এলে লিথিয়াম অক্সিজেনে জ্বলবে। লিথিয়াম জ্বলনীয় এবং অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর চেয়ে কম হলেও বায়ু এবং বিশেষত জলের সংস্পর্শে এলে এটি সম্ভাব্য বিস্ফোরক। সাধারণ তাপমাত্রায় লিথিয়াম-জলের প্রতিক্রিয়া তীব্র; তবে অহিংস কারণ উৎপাদিত হাইড্রোজেন নিজেই জ্বলতে পারে না। সব ক্ষারীয় ধাতুর মতো, লিথিয়াম আগুন নিভানো কঠিন, শুকনো গুঁড়ো অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম প্রয়োজন। লিথিয়াম এমন কয়েকটি ধাতবগুলোর মধ্যে একটি- যা সাধারণ পরিস্থিতিতে নাইট্রোজেনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ব্যবহার : সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লিথিয়াম ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের রিচার্জেবল ব্যাটারিতে। এ ছাড়া হার্ট পেসমেকার, খেলনা, ঘড়ি ইত্যাদিতে নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি হিসেবে লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। লিথিয়ামকে অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে সংকর ধাতু হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ম্যাগনেসিয়াম- লিথিয়াম সংকর ধাতু আর্মার পেস্নটিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অ্যালুমিনিয়াম-লিথিয়াম সংকর ধাতু বিমানপোতে, সাইকেলের ফ্রেমে এবং দ্রম্নতগতির ট্রেনে ব্যবহার করা হয়।
কাঁচশিল্পে লিথিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম ক্লোরাইড একটি তীব্রমাত্রার জলাকর্ষী পদার্থ এবং এটি এয়ারকন্ডিশনিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রাইং সিস্টেমে বহুল প্রচলিত। লিথিয়াম স্টিয়ারেটকে উচ্চ তাপমাত্রার লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম কার্বনেট ম্যানিক ডিপ্রেশনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
হাইড্রোজেন ফুয়েল সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম হাইড্রাইড।
যৌগসমূহ
রাসায়নিক বিক্রিয়া
লিথিয়াম সহজেই জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, তবে অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে কম সক্রিয়। জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন গ্যাস এবং লিথিয়াম হাইড্রোক্সাইডের জলীয় দ্রবণ উৎপন্ন হয়।[৪]
ব্যবহার

সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লিথিয়াম ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের রিচার্জেবল ব্যাটারীতে। এছাড়াও হার্ট পেসমেকার, খেলনা, ঘড়ি ইত্যাদিতে নন-রিচার্জেবল ব্যাটারী হিসেবে লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। লিথিয়ামকে অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর সাথে সংকর ধাতু হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ম্যাগনেসিয়াম-লিথিয়াম সংকর ধাতু আর্মার প্লেটিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম-লিথিয়াম সংকর ধাতু বিমানপোতে, সাইকেলের ফ্রেমে এবং দ্রুতগতির ট্রেনে ব্যবহার করা হয়। কাঁচ শিল্পে লিথিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম ক্লোরাইড একটি তীব্রমাত্রার জলাকর্ষী পদার্থ এবং এটি এয়ার কন্ডিশনিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রাইং সিস্টেমে বহুল প্রচলিত। লিথিয়াম স্টিয়ারেটকে উচ্চ তাপমাত্রার লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম কার্বনেট ম্যানিক ডিপ্রেশন এর ওষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। হাইড্রোজেন ফুয়েল সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম হাইড্রাইড।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.