জুহি চাওলা (জন্ম: ১৩ নভেম্বর ১৯৬৭) একজন ভারতীয় অভিনেত্রী, মডেল, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং ১৯৮৪ সালের মিস ইন্ডিয়া সৌন্দর্যের বিজয়ী। তিনি দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা , পাঞ্জাবী , মালয়ালম , তামিল , কন্নড় এবং তেলুগু ভাষার ছায়াছবি ছাড়াও চওলা প্রধানত হিন্দি ভাষা চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী,[1][2] এবং তার কমেডিক টাইমিং এবং চিত্তাকর্ষক অন-স্ক্রীন ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রশংসা লাভ করেছেন। [3][4]
সুলতানাত (১৯৮৬) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম অভিষেক করেন চাওলা এবং অত্যন্ত ব্যবসা সফল ট্র্যাজিক রোম্যান্স চলচ্চিত্র কায়ামত সে কায়মাত তাক (১৯৮৮) এর মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, এই চলচ্চিত্রে জন্য তিনি বছরের সেরা লাক্স নিউ ফেসের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় পারিবারিক ড্রামার চলচ্চিত্র যেমন স্বরগ (১৯৯০), থ্রিলার ধরনের প্রাতিবাদ (১৯৯০), রোমান্টিক চলচ্চিত্র বোল রাধা বোল (১৯৯২) এবং রোমান্টিক কমেডি রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান (১৯৯২) প্রভৃতির মাধ্যমে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্রগুলিতে অভিনয় করেন, যেমন অ্যাকশন থ্রিলার লুটেরে (১৯৯৩) তে মদের বারের নর্তকী হিসাবে, নিজের প্রেম বিসর্জনকারি নারী হিসাবে আশিনা (১৯৯৩) চলচ্চিত্রে, একজন দক্ষিণ ভারতীয় হিসাবে রোমান্টিক কমেডি হাম হেয় রহি পেয়ার কে (১৯৯৩), যার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং রোমান্টিক থ্রিলার চলচ্চিত্র ডর (১৯৯৩) তে একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী হিসাবে। এছাড়াও তিনি বক্স অফিসের সফলতা অর্জনকারী চলচ্চিত্র যেমন সাজান কে ঘার (১৯৯৪), নাওজায়াজ (১৯৯৫), রাম জানে (১৯৯৫), লোফার (১৯৯৬), মি। এবং মিসেস খিলাড়ী (১৯৯৭), দেওয়ানা মাস্তানা (১৯৯৭), ইয়েস বস (১৯৯৭), ইশক (১৯৯৭) এবং অর্জুন পণ্ডিত (১৯৯৯) এর মত চলচ্চিত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছেন।। ২১ শতকে, চাওলা আর্ট হাউস প্রকল্পগুলিতে স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে কাজ শুরু করেন, ঝঙ্কার বিটস (২০০৩), ৩ দিওয়ারিন (২০০৩), মাই ব্রাদার... নিখিল (২০০৫), বাস এক পাল (২০০৬), আই এম (২০১১), গুলাব গ্যাং (২০১৪) এবং চক এন ডাস্টার (২০১৬) ইত্যাদি কাজের জন্য সমালোচদের কাছ থেকে উচ্চ প্রশংসাধ্বনি অর্জন করেন। [5]
চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও, চাওলা নৃত্যে আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান ঝালক দিখালা যাক এর তৃতীয় পর্বের একজন প্রতিভাবান বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেজ শো এবং কনসার্ট ট্যুরে অংশগ্রহণ করেছেন, এবং বিভিন্ন দাতব্য ক্রিয়াকলাপের সাথে জড়িত রয়েছেন। চাওলা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ ক্রিকেট দলের কোলকাতা নাইট রাইডার্সের সহ-মালিক। ১৯৯৫ সালে তিনি শিল্পপতি জে মেহতাকে বিয়ে করেন এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে।
প্রাথমিক জীবন এবং পটভূমি
জুহি চাওলা জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে উঠেন ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের, আম্বালাতে। তার বাবা ছিলেন ভারতীয় রাজস্ব পরিসেবা (আইআরএস) এর একজন কর্মকর্তা। [6] তিনি মুম্বাইয়ের ফোর্ট কনভেন্ট স্কুল থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন,[7] এবং মুম্বাইয়ের সিদানহ্যাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। [8] তিনি ১৯৮৪ সালের মিস ইন্ডিয়া শিরোপা বিজয়ী ছিলেন। [9] তিনি ১৯৮৪ সালে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ কস্টিউম পুরস্কার জিতেছিলেন। [10] তিনি একজন সুদক্ষ নৃত্যশিল্পী। টক শো বাজে পায়েল -এ একটি সাক্ষাত্কারে তিনি উল্ল্যেখ করেছিলেন তিন বছর কত্থক শেখার কথা এবং আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন এটি শেখা ছেড়ে দেয়াটা যা একজন অভিনেত্রী হিসেবে তার কর্মজীবনের সাহায্য করতে পারত। তিনি একটি সফল শাস্ত্রীয় গায়ক এবং গত ছয় বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
চলচ্চিত্র কর্মজীবন
চলচ্চিত্র তালিকা
- সন অফ সরদার (২০১২)
- ওয়ান টু কা ফোর (২০০১)
- ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি (২০০০)
- ইয়েস বস (১৯৯৭)
- রাম জানে (১৯৯৫)
- ডর (১৯৯৩)
- রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান (১৯৯২)
- কেয়ামত সে কেয়ামত তক (১৯৮৮)
১৯৯৬-১৯৮৮: ব্রেকথ্রু এবং সাফল্য
চাওলা ১৯৮৬ সালে সুলতানাত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন কিন্তু এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ ছবি হয়েছিল। এরপর তিনি ১৯৮৭ সালে কাজ করেন কান্নাডা ভাষার ক্লাসিক চলচ্চিত্র প্রমালোকাতে, যার পরিচালক ছিলেন রবিচন্দ্রন। মুক্তির পর এই চলচ্চিত্রটি ব্লকবাস্টার হয়ে উঠে এবং সমালোচক ও ভক্তাদের কাছে চাওলার অভিনয় দক্ষতা ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলে। তিনি দুটি ছবিতে মেগাস্টার প্রসেনজিত চ্যাটার্জির বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া কেয়ামত সে কেয়ামত তাক ছিল বলিউডের তার কাজ করা প্রথম বড় ধরনের কাজে, যেখানে তিনি আমির খানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রটি ছিল উইলিয়াম শেকসপিয়ারের রোমিও এন্ড জুলিয়েটের আধুনিক সংকরণ, যা ছিল একই সাথে সমালোচকদের কাছে এবং বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য অর্জন করে। একজন চলচ্চিত্র সমালোচক লিখেছিলেন: "জুহি চাওলা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন যে তিনি এখানে সফল হতে এসেছেন। তিনি শুধুমাত্র স্বাভাবিকভাবেই প্রাণবন্ত তাই নন একই সাথে তিনি বিস্ময়কর নিগূঢ়ভাবে "রেশমির" সরলতা, বাচ্চাদের পছন্দ করা এবং মানষিক দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন চলচ্চিত্রটিতে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এর ফলশ্রুতিতে, অন-স্ক্রিনে আমির ও জুহির রসায়ন সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।" আরেকজন সমালোচক লিখেছিলেন, "যদিও অধিকাংশ লোক আমিরকে ক্রেডিট করে তবে এই চলচ্চিত্রটি জুহির কারণে আরও বেশি জনপ্রিয় ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র। জুহির চারুত্ব ও কারিশমা তাকে ভারতীয়দের কাছে ঠিক যেন "পাশের বাড়ির মেয়ে" এই ইমেজ হিসাবে তৈরি করেছে; তার অতি সাধারণ কিন্তু সুরুচিপূর্ণ স্যালোয়ার সুট কিংবা তার নির্দোষ হাসি যে কোন মানুষকে পাগল করে তলে। " এই চলচ্চিত্রটি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ মুভি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল, এবং এই চলচ্চিত্রের জন্য চাওলা ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাক্স শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেত্রী পুরস্কার জিতেছিলেন এবং ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কারের জন্য তার প্রথম মনোনীত হয়েছিলেন । [11] চলচ্চিত্রটি তখন থেকে একটি বিশ্বাসের স্থান অর্জন করেছে, বিনোদন পোর্টাল বলিউড হাঙ্গামা মন্তব্য করেছে ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য এটি ছিল একটি " নতুন পথসৃষ্টিকারী ও নতুন মোড় সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র"। [12][13]
১৯৮৯-১৯৯৯: তারকাখ্যাতি
১৯৯০ সালে, তিনি প্রতিবাদ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যা বক্স অফিস সফল চলচ্চিত্র ছিল এবং সমালোচকরা তার অভিনয়ের উচ্ছসিত প্রশংসা করে বলেছিলেন: "চলচ্চিত্রটিতে জুহি চওলার বেশিরভাগ অংশের অভিনয় কেবল তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্যই নজরকারে সবার। তিনি শান্তি চরিত্রটি সুনিপুনভাবে ফুতিয়ে তুলেছেন, যিনি একজন খেলনা বিক্রেতা, হুট করে নিজেকে একটি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। " তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার এর তার দ্বিতীয় মনোনয়ন পান । একই বছর পারিবারিক ড্রামার চিত্রনাট্যে নিয়ে সাজানো তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র "সোহাগ" মুক্তি পায়, যেখানে তার সাথে ছিলেন রাজেশ খান্না ও গোবিন্দ , যা ছিল ডেভিড ধাওয়ান ও গোবিন্দের তার করা বহু কাজের প্রারাম্ভ। চলচ্চিত্রটি ছিল ওই বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী ছবি। [14]
১৯৯২ সালে, তিনি ঋষি কাপুরের সাথে সুপারহিট চলচ্চিত্র বল রাধা বল চলচ্চিত্রে হাজির হন, যার জন্য তিনি তৃতীয়বারের মত ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান। [15][16] একজন সমালোচক লিখেছিলেন [স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] "একজন যতটুকু কল্পনা করতে পারে জুহির ততটুক নিখুঁত ছিল। দক্ষতা সহ একটি সাধারণ গ্রাম্য মেয়ে হিসাবে তাকে দেখতে অত্যন্ত কমনীয় ছিল এবং এমন কি চলচ্চিত্রটির দ্বিতীয় অংশে তার চরিত্রের আবেদনময়ী অংশ ফুটিয়ে তোলা হলেও তার সুন্দর নির্দোষ কোমনীয়তা হারিয়ে যায় নি।
ব্যক্তিগত জীবন
জুহি চাওলা শিল্পপতি জয় মেহতার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে: ২০০১ সালে জন্মগ্রহণকারী কন্যা জাহ্নবি এবং ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণকারী পুত্র অর্জুন। এক সাক্ষাৎকারে জুহি প্রকাশ করেছেন যে, চলচ্চিত্রে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে জাহ্নবি লেখক হতে চায়।[17]
জয় মেহতা এবং জুহি চাওলা শাহরুখ খানের সাথে অংশীদারত্বে তাদের কোম্পানির রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্টের অধীনে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল কোলকাতা নাইট রাইডার্সের সহ-মালিক। তার ভাই ববি চওলা রেড চিলি এন্টারটেনমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১০ সালে ডিনার পার্টির পরে তিনি ব্যাপক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। প্রায় চার বছর কোমায় থাকার পর ২০১৪ সালের ৯ই মার্চ তিনি জসলোক হাসপাতালে মারা যান। তার বোন সোনিয়া ২০১২ সালের ৩০ই অক্টোবর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.