ফ্রান্সিস স্কট কি ফিট্জেরাল্ড (ইংরেজি: Francis Scott Key Fitzgerald; জন্ম: ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৬ - ২১ ডিসেম্বর ১৯৪০)[1] ছিলেন একজন মার্কিন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, চিত্রনাট্যকার ও ছোটগল্পকার। তার সৃষ্টিকর্মগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি জ্যাজ যুগ পরিভাষাটিকে জনপ্রিয় করে তুলেন। জীবদ্দশায় তিনি চারটি উপন্যাস, চারটি ছোটগল্প সংকলন এবং ১৬৫টি ছোটগল্প প্রকাশ করেন। ১৯২০-এর দশকে সীমিত পরিসরে সাফল্য অর্জন করলেও তার মৃত্যুর পর তিনি সমালোচক ও পাঠকদের নিকট প্রশংসিত হন। তাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মার্কিন লেখক বলে গণ্য করা হয়। ফিট্জেরাল্ডকে ১৯২০-এর দশকেরএকজন সদস্য বলে ধরা হত।
এফ. স্কট ফিট্জেরাল্ড | |
---|---|
স্থানীয় নাম | F. Scott Fitzgerald |
জন্ম | সেন্ট পল, মিনেসোটা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৬
মৃত্যু | ২১ ডিসেম্বর ১৯৪০ ৪৪) হলিউড, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স
সমাধিস্থল | সেন্ট ম্যারিস সেমেটারি, ম্যারিল্যান্ড |
পেশা | লেখক |
ভাষা | ইংরেজি |
সময়কাল | "হারানো প্রজন্ম" |
ধরন | উপন্যাস, ছোটগল্প |
বিষয় | জ্যাজ |
সক্রিয় বছর | ১৯২০-১৯৪০ |
দাম্পত্যসঙ্গী | জেল্ডা ফিট্জেরাল্ড (বি. ১৯২০–১৯৪০) |
সন্তান | ফ্রান্সেস স্কট ফিট্জেরাল্ড |
স্বাক্ষর |
ফিট্জেরাল্ড মিনেসোটার সেন্ট পলে এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু তার শৈশবে কাটে নিউ ইয়র্কে। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু সাহিত্যচর্চার শুরুর কারণে তিনি ১৯১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েন এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। অ্যালাবামায় অবস্থানকালে তিনি ধনী শৌখিন জেল্ডা সয়ারের প্রেমে পড়েন। শুরুতে তার আর্থিক অবস্থার কারণে তাকে প্রত্যাখ্যান করলেও পরবর্তীকালে তার প্রথম উপন্যাস দিস সাইড অব প্যারাডাইজ (১৯২০) সফলতা অর্জন করলে জেল্ডা তাকে বিয়ে করতে রাজি হন।
১৯২০-এর দশকে ফিট্জেরাল্ড প্রায়ই ইউরোপে যাতায়াত করতেন, সেখানে তিনি "হারানো প্রজন্ম" নামে প্রবাসী সম্প্রদায়ের আধুনিকতাবাদী লেখক ও শিল্পীদের দ্বারা প্রভাবিত হন, বিশেষ করে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের। তার দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য বিউটিফুল অ্যান্ড ড্যামড (১৯২২) তাকে নিউ ইয়র্ক সিটির অভিজাতদের দিকে তাকে অগ্রসরমান করে। এই সময়ে তার জীবনযাত্রার মান ধরে রাখতে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীর জন্য কয়েকটি গল্প লিখেছেন। তার তৃতীয় উপন্যাস দ্য গ্রেট গ্যাটসবি (১৯২৫) তার খ্যাতির বিকাশ ও জেল্ডার সাথে তার সম্পর্ক থেকে অনুপ্রাণিত। যদিও উপন্যাসটি মিশ্র পর্যালোচনা লাভ করে, এটি বর্তমানে বিপুল প্রশংসিত এবং কেউ কেউ উপন্যাসটিকে "সেরা মার্কিন উপন্যাস" হিসেবে গণ্য করেন। জেল্ডা স্কিটসোফ্রিনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির পর ফিট্জেরাল্ড তার সর্বশেষ উপন্যাস টেন্ডার ইজ দ্য নাইট (১৯৩৪) সমাপ্ত করেন।
তার সৃষ্টিকর্মের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার ফলে আর্থিক সংকট দেখা দিলে তিনি হলিউডের চলচ্চিত্রের লেখনী ও চিত্রনাট্য সংশোধনের কাজ শুরু করেন। মদ্যপানে আসক্তি সাথে দীর্ঘকালে সংগ্রাম করার পর তিনি ১৯৪০ সালে ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার পঞ্চম ও অসমাপ্ত উপন্যাস দ্য লাস্ট টাইকুন এডমান্ড উইলসন সমাপ্ত করেন এবং এটি ফিট্জেরাল্ডের মৃত্যুর পর ১৯৪১ সালে প্রকাশিত হয়।
জীবনী
প্রারম্ভিক জীবন
ফিট্জেরাল্ড ১৮৯৬ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর মিনেসোটার সেন্ট পলে এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ফিট্জেরাল্ডের বিখ্যাত চাচাতো ভাইয়ের নামানুসারে তার নাম রাখা হয় ফ্রান্সিস স্কট কি এবং তিনবার তা বাদ দেওয়া হয়,[2] কিন্তু তিনি বরাবরই স্কট ফিট্জেরাল্ড নামে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া তার দুই অকালপ্রয়াত বোনের একজন লুইস স্কট ফিট্জেরাল্ডের নামানুসারেও তার নামকরণ করা হয়েছিল।[3] ফিট্জেরাল্ড পরবর্তীকালে এ সম্পর্কে লিখেন "আমার জন্মের তিন মাস পূর্বে আমার মা তার দুই সন্তানকে হারায়... আমি মনে করি আমি তখন থেকেই লেখক হওয়া শুরু করেছিলাম।"[4]
জেল্ডা ফিট্জেরাল্ড
১৯১৮ সালে ফিট্জেরাল্ড সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের মন্টগামারির নিকটবর্তী ক্যাম্প শেরিডানে ৪৫তম ও ৬৭তম পদাতিক রেজিমেন্টের সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত হন।[5] স্থানীয় একটি কান্ট্রি ক্লাবে ফিট্জেরাল্ড অ্যালাবামা সুপ্রিম আদালতের বিচারপতি অ্যান্থনি ডি. সয়ারের কনিষ্ঠ কন্যা এবং ফিট্জেরাল্ডের ভাষায় মন্টগামারি সমাজের "গোল্ডেন গার্ল" জেল্ডা সয়ারের সাথে পরিচিত হন এবং তার প্রেমে পড়েন।[6] তাদের প্রাক-বৈবাহিক প্রেম শুরু হয়, কিন্তু অক্টোবরে উত্তরে ফিট্জেরাল্ডের ডাক পড়লে তাদের প্রেমে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটে। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন যে তাকে ফ্রান্সে পাঠানো হবে, কিন্তু এর পরিবর্তে তাকে লং আইল্যান্ডের ক্যাম্প মিলসে প্রেরণ করা হয়। সেখানে অবস্থানকালে জার্মানির সাথে সাময়িক যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। তিনি এরপর মন্টগামারির নিকটবর্তী ঘাঁটিতে ফিরে আসেন এবং পুনরায় জেল্ডার সাথে সাক্ষাৎ করা শুরু করেন।[7][8] ফিট্জেরাল্ডের ভাষায় তারা পুনরায় একত্রে "যৌন অসংযম" গ্রহণ করেন এবং ডিসেম্বর নাগাদ তারা অবিচ্ছেদ্য হয়ে ওঠেন।[7][8] ফিট্জেরাল্ড তার সাহিত্যিক অনুপ্রেরণা হিসেবে জেল্ডার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, এমনকি তার প্রথম উপন্যাস সংশোধনকালে তিনি জেল্ডার দিনলিপি নকল করেন।[9]
কাজের চলচ্চিত্রে উপযোগকরণ
ফিট্জেরাল্ডের কাজসমূহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে উপযোগ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম তার রচিত ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মাণ করা হয় ১৯২১ সালের নির্বাক চলচ্চিত্র দ্য অফ-শোর পাইরেট। দ্য বিউটিফুল অ্যান্ড ড্যামড উপন্যাসটি ১৯২২ ও ২০১০ সালে দুইবার চলচ্চিত্র উপযোগী করা হয়েছে। দ্য গ্রেট গ্যাটসবি উপন্যাস অবলম্বনে একাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, তন্মধ্যে রয়েছে ১৯২৬, ১৯৪৯, ১৯৭৪, ২০০০, এবং ২০১৩ সালের চলচ্চিত্র। টেন্ডার ইজ দ্য নাইট ১৯৬২ সালের চলচ্চিত্র ও ১৯৮৫ সালের টেলিভিশন মিনি ধারাবাহিকে উপযোগী করা হয়েছে। তার ছোটগল্প দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন অবলম্বনে নির্মিত হয় ২০০৮ সালের দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.