Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
একনায়কতন্ত্র হলো এমন শাসনব্যবস্থা, যাতে রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে। একনায়কতন্ত্রকে সামাজিকভাবে নিকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা হিসেবে দেখা হয়। এই শাসন ব্যবস্থায় আইনসভার অস্তিত্ব নেই বলে শাসনকর্তা তার খেয়াল-খুশিমত দেশ পরিচালনা করেন। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়। এ শাসন ব্যবস্থা মূলত স্বেচ্ছাচারমূলক।
গ্রিক মনীষী এরিস্টটল "সংখ্যানীতি" ও "উদ্দেশ্যনীতি" - এ দুটি নীতির ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেন। উদ্দেশ্যনীতির ভিত্তিতে সরকার দুই রকম - স্বাভাবিক সরকার ও বিকৃত সরকার। যে সরকার জনগণের স্বার্থে কাজ করে তাকে স্বাভাবিক সরকার বলা হয়। আর যে সরকার ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে কাজ করে তাকে বিকৃত সরকার বলা হয়। এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ নিম্নরূপ—
এরিস্টটল অভিজাততন্ত্রকে সর্বাপেক্ষা উত্তম কিন্তু পলিটিকে সর্বাধিক বাস্তবধর্মী সরকার বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এ শ্রেণিবিভাগে কিছু ভুল/সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। সে যুগে গ্রিসে নগররাষ্ট্র-কেন্দ্রিক রাজ্য দেখা যেতো। এর শাসন কাজ করতেন নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামাফিক শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। গণতন্ত্র সে যুগে সেভাবে দৃশ্যমান ছিল না। আবার শাসকদের মনোভাব ছিল অনেকটাই স্বৈরাচারী, যাকে স্বৈরাচারতন্ত্র বলা হয়। এটি আসলে একনায়কতন্ত্রের একটি রূপ। এটি সে যুগে বহুল প্রচলিত বলে এরিস্টটল একে স্বাভাবিক সরকারের অন্তর্ভুক্ত করেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটি বিকৃত সরকারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত বলে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এ শ্রেণিবিভাগ প্রত্যাখ্যান করেন। এতদসত্ত্বেয় এই শ্রেণিবিভাগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ থেকে জানা যায় যে একনায়কতন্ত্র কোনো সাম্প্রতিক উদ্ভাবন নয়, বরং এক সুপ্রাচীন শাসন ব্যবস্থার বিবর্তিত রূপ। [1]
একনায়কতন্ত্রে একজন একনায়ক সকল শাসনকাজ পরিচালনা করে থাকেন। একনায়ক রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা এবং চরম ক্ষমতার উৎস, ক্ষমতা প্রয়োগে কেউ তাকে বাধা দিতে পারে না। এক দেশ, এক জাতি, এক নেতা। -একনায়কতন্ত্রের আদর্শ। একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একনায়কের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। তার কাজকর্মের জন্য তাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তার আদেশ নির্দেশ সকলে মেনে চলতে বাধ্য। একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একনায়কের নেতৃত্বে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। একনায়ক তার পছন্দমত উপদেষ্টাদের নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। উপদেষ্টামণ্ডলী তার কাছে দায়ী থাকে ও তার সন্তুষ্টির ওপর তাদের কার্যকাল নির্ভর করে।[1]একনায়কতন্ত্র হচ্ছে এক ব্যক্তির বা একদলের স্বৈরাচারী শাসন যা একটি দেশের জন্য মঙ্গল জনক নয় এবং বর্তমান বিশ্বে একমাত্র উত্তর কোরিয়াতেই এই একনায়কতন্ত্র দেখা যায়।
এ শাসন ব্যবস্থায় একনায়ক দ্রুত যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তাকে কারও কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না এবং আলোচনাও করতে হয় না বলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ও কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়। একনায়ক তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অনুন্নত দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি তার নেতৃত্বে শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করতে পারেন। একনায়কের অধীনে সারা দেশ একইভাবে পরিচালিত হয় বলে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় হয়। [1]
একনায়কতন্ত্রে জনসাধারণের স্বাতন্ত্র্য থাকে না। এটা ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী। এই শাসন ব্যবস্থার কেউ কোনো সমালোচনা করতে পারে না। বিভিন্ন মতবাদ জোরপূর্বক দমন করা হয়। একনায়কতন্ত্র উগ্র-জাতীয়তাবাদ (যেমন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জাপান সাম্রাজ্য) ও সামরিক শক্তির বিকাশ (যেমন: স্তালিনের শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়ন) ঘটায়। এ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকতা বিরোধী। একনায়ককে কোনো প্রকার জবাবদিহিতা করতে হয় না বলে তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। এটি একটি স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা। এই শাসনব্যবস্থা অস্থায়ী। কারণ, একনায়কের মৃত্যুর সাথে সাথে এ শাসনও শেষ হয়ে যায়। [1]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.