দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ – ১৪ আগস্ট ২০২৩) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামি পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে সাহায্য করার অভিযোগে তাকে ২০১৩ সালে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।[1][2][3][4][5][6] তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে-আমীর ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার এবং ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দ্রুত তথ্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ...
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
Thumb
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১২ জুন ১৯৯৬  ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮
পূর্বসূরীগাজি নুরুজ্জামান বাবুল
উত্তরসূরীএ কে এম এ আউয়াল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে-আমীর
কাজের মেয়াদ
২০০৯  ১৪ আগস্ট ২০২৩
আমীর
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৪০-০২-০২)২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০
সাঈদখালি গ্রাম, ইন্দুরকানী, বালিপাড়া, পিরোজপুর, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৪ আগস্ট ২০২৩(2023-08-14) (বয়স ৮৩)
বিএসএমএমইউ, ঢাকা
সমাধিস্থলসাঈদী ফাউন্ডেশনের পারিবারিক কবরস্থান
পিরোজপুর
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
দাম্পত্য সঙ্গীশেখ সালেহা বেগম
সম্পর্ককামালুদ্দীন জাফরী (বেয়াই)
সন্তান
পিতামাতাইউসুফ, গুলনাহার বেগম
পেশারাজনীতি, দাওয়াত
বন্ধ

২০১১ সালে সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার বিরূদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজের অপরাধের ২০ দফা অভিযোগ আনা হয়।[7] আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০টি অভিযোগের মধ্যে প্রদত্ত বিচারের রায়ে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং দু'টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।[6][8][9][10][11][12] বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এই রায়ের নিন্দা করে এবং অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভুল পরিচয়ের মামলা বলে আখ্যায়িত করে।[13][14][15][16] হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার বিচারের রায়ের সমালোচনা করেছিল।[17][18] তার ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সহিংসতা শুরু করেছিল।[19][20][21][22] এই রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিলের রায় পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমিয়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে।[23]

প্রারম্ভিক জীবন

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর বালিপাড়া ইউনিয়নের সাঈদখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[24] তার পিতার ইউসুফ শিকদার ও মাতার নাম গুলনাহার বেগম। তার পিতা গ্রামের আলেম ও গৃহস্থ ছিলেন।[25] তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন।[25][26]

তিনি ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন ও পরবর্তীতে খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তরিত হন।[25] ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পর সাঈদী স্থানীয় গ্রামে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মুসলমান আলেম বা মওলানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারে তাকে ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে মানবাতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।[27] তার পুত্র মাসঊদ সাঈদীর মতে তিনি ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে ছিলেন না এবং ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি যশোরে বসবাস করছিলেন।[25]

সাঈদী বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাও তার আয়ত্ত্ব করেছিলেন।[25]

পারিবারিক জীবন

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর স্ত্রীর নাম শেখ সালেহা বেগম। এই দম্পতীর চার সন্তান হলো— রফিক বিন সাঈদী (২০১২ সালে হৃদরোগে মারা যান),[28] শামীম সাঈদী, মাসঊদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।[29]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতা-যুদ্ধ শুরু হয়। ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে হাজার হাজার নিরীহ বাংলাদেশীকে সেই রাতে হত্যা করে যা ইতিহাসে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা পায়।[30] দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেন।[31][32] তিনি সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার দায়ে অভিযুক্ত।[33] পাকিস্তান সেনাবাহিনী সাহায্যার্থে সে সময় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী গঠন করা হয়, আধাসামরিক বাহিনী রাজাকারের সক্রিয় সদস্য হিসেবে সাঈদীর বিরোদ্ধে হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও জোড়পূর্বক সংখ্যালঘু হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।[5][6][9][25][27][32] তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয়ভাবে ‘দেইল্যা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।[34] আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার আইনজীবী তার পক্ষে বলেন, ১৯৭১ সালের দেলাওয়ার হোসাইন শিকদার ওরফে ‘দেইল্যা রাজাকার’ এক ব্যক্তি নন; কুখ্যাত ‘দেইল্যা রাজাকারকে’ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেন ও হত্যা করেন।[35]

রাজনৈতিক জীবন

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন ১৯৭৯ সালে। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন ও ১৯৮৯ সালে মজলিশে শূরা সদস্য হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য হন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[36]

১৯৮০’র দশকের প্রথমদিকে সাঈদী সারা দেশব্যাপী ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন এবং তার সুন্দর বক্তব্য দানের ক্ষমতার জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[37]

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনী জোট গঠন করে এবং তিনি এই নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[25]

আফগানিস্তান ২০০১ যুদ্ধের সমালোচনা

সাঈদী ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রশক্তি দ্বারা পরিচালিত আফগানিস্তানের তালেবান সরকার উৎখাত ও আল কায়েদা নির্মূল অভিযানের ব্যাপক সমালোচনা করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে একটি স্বাধীন মুসলমান রাষ্ট্রের সরকারের উপর হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন। আল কায়েদাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ হামলার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে।

পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সাঈদীর চরমপন্থী মতবাদের জন্য ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেরোরিস্ট স্ক্রিনিং সেন্টার (টিএসসি) সাঈদীকে তাদের নো ফ্লাই তালিকাভুক্ত করে অর্থাৎ এই তালিকার নাগরিকেরা কোন দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না।[38]

বিদেশভ্রমণ বিতর্ক

২০০৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনের পর সাঈদী যুক্তরাজ্যে যান লন্ডন ও লুটনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখার জন্য।[39] অনেক ব্রিটিশ সংসদ সদস্য তার এই ভ্রমণকে বিতর্কিত হিসেবে গণ্য করে। কিছু ফাঁস হওয়া ইমেইল নিয়ে দি টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখান থেকে জানা যায় যে একজন উপদেষ্টা, এরিক টেইলর বলেছেন, “যুক্তরাজ্যে সাঈদীর পূর্ববর্তী ভ্রমণেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তার অনুসারীদের আক্রমণাত্নক আচরণের জন্য।”[40]

২০০৬ সালের ১৩ই জুলাই ব্রিটিশ সাংবাদিক একটি ডকুমেন্টরি প্রকাশ করেন যার শিরোনাম ছিল “হু স্পিকস ফর মুসলিম? (Who speaks for Muslim?)” এখানে সাঈদীকেও যুক্ত করা হয় এবং তাকে চরমপন্থী মতবাদ-দাতা বলে উল্লেখ করা হয়।[41] ব্রিটিশ বাংলাদেশী সম্প্রদায়ে সাঈদীর বড় একটি অনুসারী অংশ রয়েছে। তিনি ১৪ই জুলাই, ২০০৬ সালে পূর্ব লন্ডন মসজিদে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন; পরবর্তিতে ব্রিটেনে মুসলিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল বারী তারা এই আমন্ত্রন সমর্থন করেন।[42]

২০০৯ সালের ২৪শে জুলাই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সাঈদীকে বিদেশ ভ্রমণে বাধা দেন। তার বিদেশ ভ্রমণের উপর সরকারের এই বিধিনিষেধ আরোপকে অস্বীকার করে সাঈদী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন ফাইল করেন ২৭শে জুলাই। চেম্বার জজের সামনে অ্যাটর্নি জেনারেল বিধিনিষেধের সপক্ষে যুক্তি দেখান যে, ১৯৭১ সালে সাঈদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন এবং সাঈদীকে যদি বিদেশ যেতে বাধা না দেওয়া হয় তাহলে তিনি যুদ্ধাপরাধীদেরকে আদালতে অভিযুক্ত করার সরকারের যে উদ্যোগ, এর বিরূদ্ধে বিদেশে প্রচারণা চালাতে পারেন।[1]

ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রচারের অভিযোগ

বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ব্রিটিশ মিডিয়া যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সাঈদীর ভিসা বাতিলের জন্যে অনুরোধ জানায়।[43]

গ্রেফতার

ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে” মর্মে অভিযোগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তারিখে দায়েরকৃত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর মামলার প্রেক্ষিতে ঐ বছর ২৯ জুন তারিখে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে পুলিশ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে।[44]

যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য অভিযোগ

  • অভিযোগ রয়েছে যে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী তৎকালীন সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ফায়জুর রহমান কে হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন।[45]
  • ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত একটি গণতদন্ত প্রতিবেদনে সাঈদী কে আল বদর বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাথে যুক্ত থাকার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।[46] মানিক পশারী নামে একজন ২০০৯ সালের ১২ই আগস্ট পিরোজপুরে সাঈদী সহ আরও চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।[47] মানিক পশারী অভিযোগ করেন যে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নেতৃত্বে তাদের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিল এবং বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক কে হত্যা করা হয়েছিল।[48]
  • আরও একটি মামলা পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তার নামে দায়ের করা হয়। এ মামলা দায়ের করেন মহিউদ্দীন আলম হাওলাদার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা।[49][50]
  • দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী দাবী করেন আদালত ফতোয়া (ধর্মীয় অনুশাসন) নিয়ন্ত্রণ করবে না, বরং ফতোয়াই আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করবে।[51]
  • তাবলিগি কর্মকাণ্ডের আড়ালে তিনি বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেন।[52]
  • ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সাঈদীর ভূমিকার কথা লেখার কারণে তিনি বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার পিরোজপুরের স্থানীয় সাংবাদদাতাদের হুমকি দেন।[53]

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির রায়

তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে[54] এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।[55][56] ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেন।[57] সাঈদীর বিরুদ্ধে থাকা ২০টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়।[58][59][60][61] এই জন্য ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯নং অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এতে কোনো সাজার কথা ঘোষণা করেননি ট্রাইব্যুনাল।[62][63] তবে,তার বিরুদ্ধে আনা অন্য ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে সেগুলো থেকে খালাস দেওয়া হয়।[55]

প্রকাশিত গ্রন্থাবলি

  • আখিরাতের জীবনচিত্র[64]
  • দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়ার মূলনীতি[65]
  • ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবী ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা[66]
  • আমি কেন জামায়াতে ইসলামী করি[67]
  • সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে ইসলাম[68]
  • শিশুর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি[69]
  • রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মোনাজাত[70]
  • কাদিয়ানীরা কেন মুসলমান নয়[71]
  • পবিত্র কোরআনের মু'জিজা[72]
  • নীল দরিয়ার দেশে[73]
  • নিজ পরিবারবর্গের প্রতি আমার অসিয়্যত[74]
  • মহিলা সমাবেশে প্রশ্নের জবাবে - ১ম খণ্ড[75]
  • মহিলা সমাবেশে প্রশ্নের জবাবে - ২য় খণ্ড[76]
  • মানবতার মুক্তি সনদ মহাগ্রন্থ আল-কোরআন[77]
  • খোলা চিঠি[78]
  • জান্নাত লাভের সহজ আমল[79]
  • ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা[80]
  • হাদীসের আলোকে সমাজ জীবন[81]
  • দ্বীনে হক-এর প্রতি দাওয়াত না দেয়ার পরিণতি[82]
  • দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ধৈর্যের অপরিহার্যতা[83]
  • দেখে এলাম অবিশ্বাসীদের করুণ পরিণতি[84]
  • চরিত্র গঠনে নামাযের অবদান[85]
  • তাফসীরে সাঈদী - সূরা আল-আসর[86]
  • তাফসীরে সাঈদী - সূরা লূকমান[87]
  • তাফসীরে সাঈদী - সূরা আল-ফাতিহা[88]
  • তাফসীরে সাঈদী - আমপারা[89]
  • বিষয়ভিত্তিক তাফসীরুল কোরআন - ১ম খণ্ড[90]
  • বিষয়ভিত্তিক তাফসীরুল কোরআন - ২য় খণ্ড[91]
  • আল্লামা সাঈদী রচনাবলী - ১ম খণ্ড[92]
  • আল্লামা সাঈদী রচনাবলী - ২য় খণ্ড[93]
  • মাওলানা সাঈদী রচনাবলী - ৩য় খণ্ড[94]
  • আল্লাহ মৃতদেহ নিয়ে কি করবেন?[95]
  • আল্লাহ কোথায় আছেন?[96]
  • আল কোরআনের মানদণ্ডে সফলতা ও ব্যর্থতা[97]
  • আল-কোরআনের দৃষ্টিতে মহাকাশ ও বিজ্ঞান[98]
  • আল-কোরআনের দৃষ্টিতে ইবাদাতের সঠিক অর্থ[99]
  • সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালীন[100]
  • শিশু-কিশোরদের প্রশ্নের জবাবে[101]
  • নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে[102]

মৃত্যু

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[103] এর আগে ১৩ আগস্ট রবিবার তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়।[104] ১৫ আগস্ট ২০২৩ পিরোজপুরের সাঈদী ফাউন্ডেশনে জানাজা নামাজের পর সমাহিত করা হয়।[105]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.