ক্লিফোর্ড আর্চিবল্ড রোচ (ইংরেজি: Clifford Roach; জন্ম: ১৩ মার্চ, ১৯০৪ - মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৮) ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পোর্ট অব স্পেনে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।[1] ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, লেগ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন ক্লিফোর্ড রোচ

দ্রুত তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ণ নাম ...
ক্লিফোর্ড রোচ
Thumb
১৯৩০ সালের গৃহীত স্থিরচিত্রে ক্লিফোর্ড রোচ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ক্লিফোর্ড আর্চিবল্ড রোচ
জন্ম(১৯০৪-০৩-১৩)১৩ মার্চ ১৯০৪
পোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
মৃত্যু১৬ এপ্রিল ১৯৮৮(1988-04-16) (বয়স ৮৪)
পোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগ ব্রেক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক২৩ জুন ১৯২৮ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৩-১৯৩৮ত্রিনিদাদ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৬ ৯৮
রানের সংখ্যা ৯৫২ ৪,৮৫১
ব্যাটিং গড় ৩০.৭০ ২৮.০৪
১০০/৫০ ২/৬ ৫/২৫
সর্বোচ্চ রান ২০৯ ২০৯
বল করেছে ২২২ ৯৫৮
উইকেট
বোলিং গড় ৫১.৫০ ১০৫.২০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/১৮ ১/১৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৫/– ৪৩/–
বন্ধ

১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বপ্রথম টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণের বিরল গৌরবগাঁথা রচনা করেন তিনি। ২৩ জুন, ১৯২৮ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে ক্লিফোর্ড রোচের। দুই বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করার কীর্তিগাঁথা সৃষ্টি করেন। দুই খেলার পর দলের প্রথম দ্বি-শতকধারী ব্যাটসম্যান হন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পক্ষাবলম্বন করেন। কিন্তু প্রথম-শ্রেণীর খেলায় আশানুরূপ সফলতা না পেলেও ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ঐ সফরে সহস্রাধিক রান তুলেন ক্লিফোর্ড রোচ। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসে। নিজ মাঠে সেঞ্চুরি করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তবে এর পরপরই তার ক্রীড়াশৈলী দূর্বলতর হতে থাকে। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান ও ১৯৩৩ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে তিনি আরও একবার সহস্রাধিক রান তুলেন। কিন্তু, ১৯৩৫ সালে দল থেকে বাদ পড়েন। তিন বছরের মধ্যেই ত্রিনিদাদ দল থেকেও তাকে চলে আসতে হয়। সচরাচর ক্লিফোর্ড রোচ ধারাবাহিকতাবিহীন অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু, ব্যাট হাতে বেশ আক্রমণধর্মী ও আকর্ষণীয় ক্রীড়াশৈলীর অধিকারী ছিলেন।

ক্রিকেটের বাইরে উকিল হিসেবে কাজ করেছেন। জীবনের শেষদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে উভয় পা কেটে ফেলতে হয়েছিল তাকে।

প্রারম্ভিক জীবন

ক্লিফোর্ড রোচ ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সেন্ট মেরিজ কলেজে অধ্যয়ন করেন।[2] সেখানে ফুটবল খেলতে শুরু করেন। ত্রিনিদাদে ম্যাটিং পিচে ক্রিকেট খেলায় সূত্রপাত ঘটান।[ক 1][5] মাঝারিমানের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ম্যাপল ক্লাবে খেলতে থাকেন।[6] শৈশবে জর্জ জনের কাছ থেকে ক্রিকেটে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[7]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

ফেব্রুয়ারি, ১৯২৪ সালে ত্রিনিদাদের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ৪৪ ও ২২ রান তুলেন।[8] ১৯২৬ সালের পূর্ব-পর্যন্ত ত্রিনিদাদের পক্ষে আর কোন খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তার। ১৯২৬ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসে। দুই খেলায় তিনি অংশগ্রহণ করলেও তেমন সফলতা পাননি। জানুয়ারি, ১৯২৭ সালে বার্বাডোসের বিপক্ষে আরও একটি খেলায় অংশ নিয়েও ব্যর্থ হন। তাস্বত্ত্বেও, ত্রিনিদাদের গণমাধ্যমে ১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ইংল্যান্ড সফরের জন্য সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীরূপে তার কথা উল্লেখ করা হয়। ত্রিনিদাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতিসহ ফিল্ডিং ও বোলিংয়ের দক্ষতার কারণেই তাকে দলে রাখা হয়েছিল।[9] ঐ ডিসেম্বরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অর্ধ-শতকের কোঠা অতিক্রমণে সক্ষম হন ক্লিফোর্ড রোচ। ত্রিনিদাদ ও গায়ানার সম্মিলিত দলের বিপক্ষে ৮৪ রান তুলেন। শেষের খেলাটিতে সুন্দর ক্রীড়ানৈপুণ্যের কারণে দল নির্বাচকমণ্ডলী আসন্ন ইংল্যান্ড সফরের জন্য দলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করে। তবে, ১৯২৮ সালের শুরুতে আরও দুইটি এ জাতীয় খেলায় তেমন সফলতা পাননি।[8] তাস্বত্ত্বেও, সফরকারী দলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। এ পর্যায়ে ফিল্ডিং ও বোলিংয়ের সক্ষমতাকে তার মনোনয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।[10]

পাশাপাশি, উকিল হিসেবেও প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন ও সফর শুরুর অল্প কিছুদিন পূর্বে পরীক্ষা সফলতার সাথে শেষ করেন তিনি।[11]

টেস্ট ক্রিকেট

ইংল্যান্ড গমন

১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। ঐ সফরেই দলটি তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করে। তবে, তিন টেস্টের প্রতিটিতেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ধারাভাষ্যকারেরা সামগ্রীকভাবে দূর্বলমানের ফলাফলের জন্য দলটিকে ব্যর্থতার চিহ্ন অঙ্কন করে দেন। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক কর্তৃপক্ষ সফরের বিষয়ে মূল্যায়ন করে যে, প্রত্যেকেই অনুধাবন করেছেন যে, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট খেলা আয়োজন করা গুরুতর ভুল ছিল।[12] অনুপযোগী পরিবেশ ও গ্রীষ্মের শুষ্ক মৌসুমের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানেরা মুখোমুখি হয়েছেন।[13] শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করে ও অফ সাইডে দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক খেলে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। রান সংগ্রহের পাশাপাশি কভার অঞ্চলে চমৎকার ফিল্ডার হিসেবেও সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন তিনি।[12] এ সফরে ক্লিফোর্ড রোচ ২৬.৫৬ গড়ে ১,২২২ প্রথম-শ্রেণীর রান সংগ্রহ করেছেন। [5] কোন সেঞ্চুরির সন্ধান না পেলেও নয়বার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান তুলেছেন তিনি।[14] মাইনর কাউন্টিজ দলের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯২ রান তুলেছেন।[8] প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ব্যাটিং গড়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন ও দুইটি উইকেটও লাভ করেছেন তিনি।[15]

সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। খেলায় তিনি ও ১৬ রান সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় খেলায় ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন এবং ৫০ ও ০ রান করেন। শেষ খেলায় ৫৩ ও ১২ রান তুলেন।[5][16] ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ব্যাটিং গড়ে তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে জর্জ চ্যালেনরের সাথে ৭০ মিনিটে ৯১ রানের জুটি গড়েন। সমগ্র সিরিজে জো স্মলই কেবল তার সাথে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করেছেন। তবে রোচ একাধিকবার এ কার্য করেছেন।[17]

ইংল্যান্ডের মুখোমুখি

১৯২৯ সালে ত্রিনিদাদে ফিরে তিনটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে দুইটি অর্ধ-শতকের ইনিংস খেলেন। ১৯৩০ সালে এমসিসি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চার টেস্ট খেলার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। তবে, এমসিসি দলটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকমানের শক্তিধর ছিল না। দলটিতে সবেমাত্র শুরুরদিকের কিংবা শেষের দিকের খেলোয়াড় সমৃদ্ধ ছিল।[18] এছাড়াও, বেশ কয়েকজন তারকা বোলার অনুপস্থিত ছিলেন।[ক 2][19]

ক্লিফোর্ড রোচ প্রথম টেস্টে খেলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ১২২ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস খেলেন। এটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরি ছিল ও রোচ তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন।[5] ইংরেজ বোলার উইলফ্রেড রোডসের বলে উপর্যুপরী চারবার চারের মার মেরে তিন অঙ্কে উপনীত হন।[20] দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রান তুলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[5][8] দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রান তুলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[5][8] এ টেস্টের পর ত্রিনিদাদের সদস্যরূপে দুইবার সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে অংশ নিলেও তেমন সফলতা পাননি।[8] দ্বিতীয় টেস্টে কোন ইনিংসেই রানের সন্ধান পাননি। ত্রিনিদাদ টেস্টের ষষ্ঠ ইনিংসে মাত্র ২৪ রান তুলেন। তার ক্রীড়াশৈলী দল নির্বাচকমণ্ডলীকে ভাবিয়ে তুলে ও পরবর্তী টেস্টে দলের বাইরে থাকবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। তাস্বত্ত্বেও দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে দলে রাখেন।

২০৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এরফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে প্রথম দ্বি-শতকধারী হন তিনি।[5][21] প্রথম উইকেটে এরল হান্টের সাথে ১৪৪ ও দ্বিতীয় উইকেটে জর্জ হ্যাডলি’র সাথে ১৯২ রান তুলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় শতরানের জন্য মাত্র ৭৪ মিনিট খরচ করেছিলেন।[5] মাইকেল ম্যানলি তার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাস গ্রন্থে, রোচের ইনিংস সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, অত্যন্ত মনোরম ইনিংস হলেও বেশ কয়েকবার ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন যা হ্যাডলির ধীরলয়ে খেলার বৈপরীত্য চিত্র।[19] খেলাটি অনায়াসে নিজেদের করায়ত্ত্ব করে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ও টেস্ট খেলার ইতিহাসে তাদের প্রথম জয় তুলে নেয়।[5] চূড়ান্ত টেস্টে খুব কমই সফলতা পেয়েছেন। তাস্বত্ত্বেও সিরিজে ৫৮.৩৭ গড়ে ৪৬৭ রান নিয়ে দলের ব্যাটিং গড়ে তৃতীয় স্থান দখল করেন। কেবলমাত্র রোচ ও হ্যাডলি স্বাগতিক দলের পক্ষে প্রত্যেক টেস্টে অংশ নিয়েছেন।[22] আন্তঃদ্বীপ সম্পর্কীয় রাজনৈতিক কারণে দল নির্বাচকমণ্ডলী টেস্ট খেলার জন্য দ্বীপ রাষ্ট্র থেকে খেলোয়াড়দেরকে রাখতো। ঐ সিরিজে ২৯জন খেলোয়াড় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে অংশ নেন ও প্রত্যেক খেলায় ভিন্ন দলনায়ককে রাখা হয়।[23]

অস্ট্রেলিয়া গমন

১৯৩০ সালের শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে পাঁচ টেস্টে অংশ নেয় তারা। শেষ খেলায় ৩০ রানের ব্যবধানে জয় পেলেও প্রত্যেকটিতেই হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। দলটি খেলায় পাত্তাই পায়নি।[24] ঐ সফরে হ্যাডলির সাথে রোচকে দলের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল।[25] প্রথম টেস্টে ৫৬ রান তুলেন। কিন্তু, পরবর্তী সাত ইনিংসে মাত্র দুইবার দুই অঙ্কের কোঠা স্পর্শ করতে পেরেছিলেন।[16] সিরিজ শেষে দলের ব্যাটিং গড়ে ১৯.৪০ গড়ে ১৯৪ রান তুলে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করেন।[26]

অন্যান্য প্রথম-শ্রেণীর খেলার মধ্যে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রান ও সর্বমোট ২৪.৫০ গড়ে ৬৩৭ রান করেছিলেন।[8][14] সমসাময়িক প্রতিবেদনগুলোয় মন্তব্য করা হয় যে, তিনি কখনো দূর্বলমানের খেলা উপহার দেননি ও বোলারদের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।[27] ত্রিনিদাদভিত্তিক সংবাদপত্র স্পোর্টিং ক্রনিকলের এপ্রিল, ১৯৩১ সালের সংখ্যায় রাখঢাক না রেখেই লেখা হয় যে, এ সফরে তিনি নিজের মাঝে ছিলেন না, ফলে দূর্বল ক্রীড়াশৈলী দেখা যায়।[28]

পুনরায় ইংল্যান্ড গমন

১৯৩২ সালে ত্রিনিদাদের পক্ষে তেমন ভালো খেলেননি। ফলশ্রুতিতে, দূর্বলমানের খেলার জন্য কিছুসংখ্যক ক্রিকেটবোদ্ধা তাকে দলের বাইরে রাখার পরামর্শ দেন।[29] ১৯৩৩ সালের শুরুতে প্রস্তুতিমূলক খেলায় ব্যর্থ হন। তাস্বত্ত্বেও, ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য দলের অন্যতম সদস্যরূপে তাকে রাখা হয়। ঐ সফরে দলটি প্রত্যাশিত খেলা উপহার দেয়নি ও টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়। এছাড়াও, দলের ব্যাটিংও সফলতা পায়নি। ধীরগতিতে শুরুর পর হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ৬৭ ও তারপর সারের বিপক্ষে ১৭০ মিনিটে ১৮০ রান তুলেন ক্লিফোর্ড রোচ।

শেষের ইনিংসটি সম্পর্কে উইজডেন মন্তব্য করে যে, সফরের সবচেয়ে আশাপ্রদ ইনিংস ছিল এটি ও তিনি মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বেই সেঞ্চুরি তুলে নেন। উইজডেন আরও জানায় যে, ঐ সময়ে সারের বোলিং মাঝারিমানের হলেও রোচ তার কাট, ড্রাইভ ও হুকসে নিজের সহজাত প্রতিভার কথা জানান দেন যা খুব কম সময়ই দেখা গেছে।

কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে আশাপ্রদ ইনিংস খেললেও প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসেই শূন্য রান করেন তিনি। অবশ্য পরবর্তী দুই টেস্টে বেশ সফল হন। দ্বিতীয় টেস্টে ৬৪ রান সংগ্রহের পর তৃতীয় টেস্টে মাত্র ৩৩ মিনিটে ৫৬ রান তুলেন।[5][16] উইজডেনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, হ্যাডলির ন্যায় তাকে সেভাবে দেখা না হলেও দলে তিনি খুব সহজেই সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছেন। অনেকবারই তার ইনিংস বেশ উঁচুমানের ছিল। তবে, ওভালে সারের বিপক্ষে ১৮০ রানের ইনিংসটিই বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল।[30]

প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় ২৫.৭২ গড়ে তিনি সর্বমোট ১,২৮৬ রান করেন ও দলের ব্যাটিং গড়ে নবম স্থান অধিকার করেন তিনি।[31] টেস্টে ২৩.৫০ গড়ে ১৪১ রান করেন।[32] উইজডেন মন্তব্য করে যে, রক্ষণাত্মক ব্যাটিংশৈলীর কারণে তার স্ট্রোকপ্লেতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। খুব সম্ভবতঃ তিনি আরও সফলতা পেতে পারতেন।[30] ত্রিনিদাদের সংবাদপত্রে রোচকে ১৯৩৩ সালের সফরে সেরা স্ট্রোক খেলোয়াড় হিসেবে চিহ্নিত করে। দলের সমালোচনার পাশাপাশি তিনিও অনির্ভরতার স্বাক্ষর রেখেছেন।[33] ফলে দূর্বলমানের খেলার জন্য রোচের ব্যাটিং অবস্থানে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়া হয়। তবে, অধিনায়ক জ্যাকি গ্র্যান্ট মন্তব্য করেন যে, তার আগ্রাসী খেলাই তাকে আকর্ষণীয় করে রেখেছে ও তিনি ব্যাটিং উদ্বোধন করতেই অধিক পছন্দ করেন।

১৯৩৪ সালে ত্রিনিদাদের পক্ষে দুইটি খেলায় অংশ নেন। ফেব্রুয়ারিতে প্রথম খেলায় সুবিধা লাভ করতে না পারলেও সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে ১২৮ রান তুলেন তিনি। ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে এমসিসি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসলে প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করেন ক্লিফোর্ড রোচ। খেলায় তিনি ৯ ও অপরাজিত ১০ রানের ইনিংস খেলেন। এটিই তার শেষ টেস্ট ছিল।[16] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৬ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। ৩০.৭০ গড়ে ৯৫২ রান তুলেন। এছাড়াও দুইটি উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখান।[1]

অবসর

রোচ ত্রিনিদাদের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। একই মাসে শেষ টেস্টে অংশগ্রহণের পর এমসিসি দলের বিপক্ষে ত্রিনিদাদের সদস্যরূপে খেলেন। খেলায় তিনি ২৮ ও ০ রান করেন। ১৯৩৬ সালে দলটির পক্ষে আরও দুই খেলায় অংশ নেন। দ্বিতীয় খেলায় তিনি অর্ধ-শতক করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। বার্বাডোসের বিপক্ষে ৮৯ ও ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে শেষ খেলায় ৭ ও ২৮ রান তুলেছিলেন।

১৯৩৯ সালের শেষদিকে ক্রিকেটবোদ্ধারা মন্তব্য করেন যে, ত্রিনিদাদের পক্ষে খেলবেন তিনি এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষেও খেলার যোগ্য তিনি। তবে, তাকে আর খেলার জগতে দেখা যায়নি।[34]

৯৮টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৮.০৪ গড়ে ৪৮৫১ রান তুলেন। তন্মধ্যে, পাঁচটি সেঞ্চুরিও করেছেন। এছাড়াও, পাঁচ উইকেট পেয়েছেন।[1] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইংল্যান্ডে অবস্থান করেন। সেখানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ নামের দলের পক্ষে বেশ কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীবিহীন খেলায় অংশ নেন।

ফুটবলার হিসেবে স্বল্প সফলতা লাভ করেন ক্লিফোর্ড রোচ। ১৯৩০-এর দশকের শেষদিক পর্যন্ত ম্যাপল দলের পক্ষে ইনসাইড রাইট হিসেবে খেলেছেন।[35] এছাড়াও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ত্রিনিদাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।[36]

ব্যক্তিগত জীবন

জীবনের শেষদিকে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ফলশ্রুতিতে উভয় পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে প্রথমটি ও ১৯৭০ সালে দ্বিতীয়টি। ইংল্যান্ডে কৃত্রিম পা লাগানো হয়। এ অবস্থাতেই উকিল হিসেবে কাজ চালিয়ে যান।[37][38]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ক্লিফোর্ড রোচ এডনা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির নয় সন্তান ছিল। অধিকাংশ সন্তানই ইংল্যান্ডে অভিবাসিত হন। ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৮ তারিখে ৮৪ বছর বয়সে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পোর্ট অব স্পেনে ক্লিফোর্ড রোচের দেহাবসান ঘটে।

মূল্যায়ন

রোচের ব্যাটিংকে ধারাবাহিকতাবিহীন অবস্থায় চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত খেলোয়াড়ী জীবন সম্পর্কে ঐতিহাসিক ব্রিজিত লরেন্স লেখেন যে, তার খেলার ধরন ও ব্যাটিংয়ের গভীরতা নিজ জায়গায় নিয়ে যাবে।[20] তিনি মূল্যায়ন করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সফলতম ব্যাটসম্যান জর্জ চ্যালেনর ও জর্জ হ্যাডলির মাঝে তিনি সেঁতুবন্ধন গড়ে দিয়েছেন।[20] সফলতা লাভ করুক বা না করুক ক্লিফোর্ড রোচ তার আক্রমণধর্মী ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। অত্যন্ত ক্ষুরধার ফিল্ডার হিসেবে প্রভূতঃ সুনাম কুড়িয়েছেন, বিশেষ কভার অঞ্চলে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

১৯৮৪ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো স্পোর্টস হল অব ফেমে ক্লিফোর্ড রোচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়াও, ২০০৮ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক সাবেক ফুটবলারদের সাথে তিনিও শতবার্ষিকী পদক লাভ করেন।[39]

পাদটীকা

  1. Matting pitches were used as an alternative to turf in some parts of the world where it was difficult to produce a good grass pitch. The matting was made of jute or coir,[3] and laid over a surface which may have been sand, grass, soil or gravel.[4]
  2. On most MCC tours of the lesser Test playing countries, leading players often chose not to tour, opting to rest at home. The side was usually competitive enough without them, and only on the more taxing tour of Australia was a fully representative team selected.

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.