২০১৯-এ শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

২০১৯-এ শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা

২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোসহ কয়েকটি শহরের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে একযোগে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে ১৮৯ জন মৃত্যুবরণ করে যার মধ্যে বহু বিদেশি নাগরিক রয়েছে।[][][][] বোমা হামলায় আহত হয় ৪৫৯ জনের বেশি। ইস্টার সানডের পরের দিন নিগম্বো, বাত্তিকালোয়া ও কলম্বোর গির্জাতে এবং কলম্বোতে অবস্থিত শাংরি লা, সিনামন গ্র্যান্ড ও কিংসবুরি হোটেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।[][][১০] এই ঘটনার মাধ্যমে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর দেশটি সবচেয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা প্রত্যক্ষ করে।[১১] এই হামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী মৃত্যুবরণ করে।[১২]

দ্রুত তথ্য ২০১৯-এ শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা, স্থান ...
২০১৯-এ শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা
Thumb
Thumb
Thumb
Thumb
Thumb
কলম্বো
নিগম্বো
বাত্তিকালোয়া
২০১৯-এ শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলা (শ্রীলঙ্কা)
স্থানগির্জা
  • সেইন্ট অ্যান্থনি গির্জা, কোচচিকাদে
  • সেইন্ট সেবাস্টিয়ান গির্জা, কাটুয়াপিতিয়া
  • জিয়ন গির্জা, বাত্তিকালোয়া
হোটেল
  • শাংরি লা, কলম্বো
  • সিনামন গ্র্যান্ড, কলম্বো
  • কিংসবুরি, কলম্বো
  • ট্রপিক ইন হোটেল
তারিখ২১ এপ্রিল ২০১৯ (2019-04-21)
আনু. 9:00 a.m. (SLST; UTC+05:30)
হামলার ধরনআত্মঘাতী বোমা হামলা
নিহতপ্রায় ২৫৩[][]
আহতপ্রায় ৫০০
অপরাধীগণইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (দায়স্বীকার করেছে),[] ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত
বন্ধ

পটভূমি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বেশিরভাগ হামলাগুলি ছিল লিবারেশন টাইগারস অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) এবং মার্কসবাদী-লেনিনবাদী, সাম্যবাদী দল জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) এর দ্বারা। এলটিটিই সিংহলি জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে সহিংসভাবে একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠন করার চেষ্টা করে, এবং ২০০৯ সালে তারা পরাজিত হয়। জেভিপি ১৯৭১ এবং ১৯৮৭-৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহে জড়িত ছিল।[১৩][১৪][১৫] ২০০০ এর দশকে শ্রীলঙ্কায় ১৩টি অরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটিই সংঘটিত হয় এলটিটিই এর দ্বারা। এলটিটিই এর পরাজয়ের পর ২০১৯ হামলাই ২০১০ এর দশকের শ্রীলঙ্কার প্রথম বড় হামলা।

শ্রীলঙ্কার প্রধান ধর্মগুলো হচ্ছে বৌদ্ধ (৭০%), হিন্দু (১৩%), মুসলিম (১০%) এবং খ্রিস্টান (৭%), খ্রিস্টানদের মধ্যে ৮২% রোমান ক্যাথলিক। অবশিষ্ট খ্রিস্টানরা সিংহলের এংলিকান চার্চ এবং অন্যান্য প্রোটেস্ট্যান্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সমানভাবে বিভক্ত।[১৬]

২০১০ এর দশকে কম সংখ্যক কিন্তু অবিরতভাবে খ্রিস্টীয় ধর্মসভা ও আলাদাভাবে খ্রিস্টান ব্যক্তিদেরকে এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর উপর হামলা করা হয় ও হুমকি দেয়া হয়।[১৭][১৮] কলম্বোর এংলিকান বিশপ ধিলোরাজ ক্যানাগাসাবে ধর্মকে সুরক্ষিত রাখার সাংবিধানিক অধিকার দাবি করেছেন।[১৯] ২০১৮ সালে, ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইভাঞ্জেলিকাল এলায়েন্স অফ শ্রীলঙ্কা (এনসিইএএসএল) এর পক্ষ থেকে সেই বছরে দেশের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হামলার সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির কথা বলা হয়। এর সাথে আগস্ট মাসে একটি ক্যাথলিক সংগঠনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, যেখানে বলা হয় ধর্মান্তরকরণ সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত নয় (যদিও ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষিত ছিল)।[২০][২১]

ইস্টার সানডে হচ্ছে খ্রিস্টানদের পবিত্রতম দিনগুলোর একটি এবং সেই দিন শ্রীলঙ্কায় চার্চে গমনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়।[২২]

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এবং এএফপি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, একজন পুলিশ প্রধান হামলার ১০ দিন পূর্বে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরকে প্রধান গীর্জাগুলোর উপর ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত নামে একটি মৌলবাদী ইসলামবাদী সংগঠন থেকে আসা হুমকির ব্যাপারে সতর্ক করেন।[২৩] এই সম্পর্কে কোন তথ্য দেশটির ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদদের কাছে প্রেরণ করা হয়নি,[২৪] তবে মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো পরবর্তিতে ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত এর নেতা মোহাম্মদ জাহরান এর দ্বারা পরিকল্পিত একটি জঙ্গি হামলার ব্যাপারে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে আসা একটি অভ্যন্তরীণ মেমো এবং প্রতিবেদনের কিছু ছবি টুইট করেন।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর, এই প্রথমবারের মত দেশটি একটি বিশাল জঙ্গি হামলার সাক্ষী হল।[২৫]

প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হামলায় হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন।[২৬]

সংগঠনকারী

সারাংশ
প্রসঙ্গ

হামলার দিন দেমাতাগোদা শহরতলীতে স্থানীয় পুলিশ আট জনকে আটক করে।[][২৭][২৮][২৯][৩০] সেই রাতে পাঁচজন সন্দেহভাজন হামলাকারী ও হামলায় সহায়তাকারীকে তাদের বাসায় আটক করা হয়। বোমা হামলার পরের দিনেই ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।[৩১] তবে ২৩শে এপ্রিল, ২০১৯ এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের সংখ্যা ৪০ এ গিয়ে পৌঁছায়।[৩২] গ্রেফতার করার সময় তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই বেসামরিক নাগরিক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন।[৩৩] এই হামলায় একজন নারী সহ নয়জন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী জড়িত ছিল।[৩৪]

স্বাস্থ্যমন্ত্রী রজিত সেনারত্নে নিশ্চিত করেছেন যে, সকল বোমা হামলাকারী ছিল শ্রীলঙ্কার নাগরিক যারা ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি স্থানীয় জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদী ইসলামী সংগঠনের সাথে যুক্ত, কিন্তু বিদেশী সূত্রও সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে।[৩৫] ২৩শে এপ্রিলের পূর্বে এই হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। শিশুদেরকে চরম মৌলবাদী মতদীক্ষাদান এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সাথে সংঘর্ষের জন্য এনটিজে এর নেতৃত্বকে ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন নিন্দা জানিয়েছিল।[৩৬] ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার পর বৌদ্ধ মূর্তিগুলোকে ভাংচুর করার সাথেও তারা জড়িত ছিল।[৩৭][৩৮] এনটিজে এর সদস্য ও "বোম্বিং মাস্টারমাইন্ড" শ্রীলঙ্কার একজন মৌলবাদী ইসলামবাদী ইমাম, মৌলভি জাহরান হাশিম "Al-Ghuraba" media নামে একটি আইএসআইএল পন্থী শ্রীলঙ্কান ফেইসবুক একাউন্টে এবং ইউটিউবে ধর্মপ্রচার করত।[৩৯][৪০]

তদন্ত

সারাংশ
প্রসঙ্গ

শ্রীলঙ্কার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো টুইট করেছেন যে, পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়সুন্দর ৪ই এপ্রিলের একটি ভারতীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের[৪১][৪২] উপর ভিত্তি করে তার ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল প্রিয়লাল ডিসসানায়েকেকে ১১ই এপ্রিল ২০১৯ তারিখে সতর্ক করে বলেন, এনটিজে এর সাথে সম্পর্কিত আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা উল্লেখযোগ্য গীর্জাসমূহে এবং কলম্বোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে হামলা করার পরিকল্পনা করেছে।[৪৩][৪৪][৪৫] ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জঙ্গি হামলার দুই দিন দুই ঘণ্টা আগে পুনরায় সতর্কতা জারি করেছিল। হামলার পরে, এটি প্রকাশ করে যে, এই হামলার কিছু তথ্য দিল্লিতে গ্রেফতার হওয়া আইএসআইএল এর একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল, যিনি এনটিজে এর নেতা জাহরান হাশিমের নাম প্রকাশ করেছিলেন।[৪৬]

প্রাথমিক সরকার এই সতর্কতার সত্যতা সম্পর্কে অস্বীকার করার পর, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ বলেন যে আক্রমণগুলি সম্পর্কে "তথ্য ছিল", এবং তার সরকার অবশ্যই "খতিয়ে দেখবে যে কেন যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি"। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পূর্বে মিডিয়াকে হামলাকারীর নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সরকার বিশ্বাস করে যে এই হামলাগুলো ধর্মীয় চরমপন্থীদের একটি সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।[৪৭]

সিনাম্যান গ্র্যান্ড হোটেলে বোমা হামলাকারী সেই হোটেলের একজন অতিথি ছিলেন যিনি "মোহাম্মদ আজম মোহাম্মদ" নামে নিবন্ধিত করেন এবং একটি মিথ্যা ঠিকানা দিয়েছিলেন।[৪৮] সাংগরী-লা হোটেল বোমা হামলাকারীকে পুলিশ কর্তৃক শনাক্ত করে। তিনি হলেন ইনসান সিলাভান নামে একটি কারখানার মালিক। সেই কারখানার নয়জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।[৪৯]

২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার তিনটি সরকারী ও সামরিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, একজন সিরিয়ার নাগরিককে এই হামলা নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে।[৫০]

পরবর্তিতে ২৩শে এপ্রিল, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে ইসলামী চরমপন্থীরা "নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদের উপর মার্চ মাসের হামলার প্রতিশোধের জন্য এই হামলাটি চালায়"। তবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন এবং বিশ্লেষকগণ এই ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন কারণ ক্রাইস্টচার্চ হামলার পূর্বেই এই হামলাগুলোর পরিকল্পনার সম্ভাবনা বেশি।[৫১] এর অল্পসময় পরে, আমাক সংবাদ সংস্থা দাবি করে যে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) এই আক্রমণকে অনুপ্রাণিত করেছে।[৫২] এটি একটি ছবি এবং একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখানো হয় আটজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আবু বকর আল বাগদাদির কাছে আনুগত্য প্রকাশ করছে। এনটিজে এর জাহরান হাশিমকে তাদের নেতা হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছে।[৪৬]

দেশ অনুযায়ী হতাহতদের তালিকা

আরও তথ্য দেশ, সংখ্যা ...
দেশ অনুযায়ী হতাহত[৫৩]
দেশ সংখ্যা
 শ্রীলঙ্কা ২০৭
 ভারত[৫৪][৫৫] ১২
 চীন[৫৬]
 যুক্তরাজ্য[৫৭]
 ডেনমার্ক[৫৮]
 নেদারল্যান্ডস[৫৯]
     অস্ট্রেলিয়া[৬০]
     সৌদি আরব[৬১][৬২]
     স্পেন[৬৩]
     তুরস্ক[৬৪]
     যুক্তরাজ্য/ যুক্তরাষ্ট্র[৬৫]
     যুক্তরাষ্ট্র[৬৬]
     বাংলাদেশ[৬৭]
     জাপান[৬৮]
     পর্তুগাল[৬৯]
      সুইজারল্যান্ড[৭০]
    মোট ২৫৩
      বন্ধ

      তথ্যসূত্র

      Loading related searches...

      Wikiwand - on

      Seamless Wikipedia browsing. On steroids.