হাম্বলী (মাযহাব)
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হানবালী (বানানভেদে হাম্বলি, হাম্বালী, হানবালি) সুন্নী ইসলামের অন্যতম চারটি মাযহাবের (আইনি চিন্তাগোষ্ঠী) মধ্যে একটি। [১] এটি ইরাকি ইসলামী আইনবেত্তা পণ্ডিত ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হানবাল আশ-শাইবানির নামে নামকরণ করা হয়েছে, আর এটির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন তাঁর শিষ্যরা। চার মাযহাবের মধ্যে একমাত্র হানবালী মাযহাবকে একই সাথে ফিকহ ও আকীদার মাযহাবরূপে গণ্য করা হয়। হানবালী মাযহাবের আকীদাকে ক্ষেত্রবিশেষে আহলুস সুন্নাহ, হানবালী বা মাযহাবে হানবালী আকীদা বলেও পরিচয় দেওয়া হয়।

সুন্নী ইসলামের চারটি মাযহাবের মধ্যে হানবালী মাযহাবের অনুসারী সংখ্যাই সবচেয়ে কম। [২][৩] হানবালি মাযহাবের অনুসারী প্রধানত সৌদি আরব ও কাতার-এ পাওয়া যায়; এদুটি দেশে হানবালি ফিকাহ অফিশিয়াল ফিকাহ হিসেবে রয়েছে। [৪][৫] আরব আমিরাত-এর চারটি আমিরাত: শারজাহ, উম্ম আল-কুওয়ায়িন, রাস আল-খাইমাহ এবং আজমানে এই ফিকাহের অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ট। [৬] এছাড়া মিশর, বাহরাইন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনেও এ মাযহাবের কিছু অনুসারী রয়েছে। [৭] অধুনা পশ্চিমা বিশ্ব, কাশ্মির, এমনকি বাংলাদেশেও এ মাযহাবের অনুসারী পাওয়া যায়, যদিও বাংলাদেশে এর সংখ্যা এখনও খুব কম।
স্বকীয় নিয়ম
- অযু: যে ৭টি বিষয় অযু ভেঙ্গে দেয় তার মধ্যে অন্যতম একটা হলো শারীরিক চাহিদাবশত বিপরীত লিঙ্গের কারও ত্বক স্পর্শ করা [৮], যেটা অনেকটা মালিকী মাযহাবের সাথে মিলে যায়। অন্যদিকে শাফেঈ মাযহাবে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে স্পর্শ করলেই অযু ভেঙ্গে যায়, যেখানে হানাফী মাযহাবে শুধুমাত্র কাউকে স্পর্শ করলে অযু ভাঙ্গে না।
- রুকু: রুকুতে যাওয়ার আগে এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় হাত তোলা (রাফউল ইয়াদাইন) সুন্নত, যেখানে শাফাঈ মাযহাবের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর নামাযরত ব্যক্তি চাইলে আগের মত হাত বাঁধতে পারে। [৯] যেখানে অন্য মাযহাবে হাত দু পাশে ছেড়ে দাঁড়ানোই নিয়ম।
- তাশাহুদ: আল্লাহর নাম উচ্চারণের সময় আঙুল উঠাতে ও নামাতে হয়। [১০]
- তাসমিয়া বা বিসমিল্লাহ বলা: ওযু, গোসল ও তয়াম্মুমে বিসমিল্লাহ বলা এ মাযহাবে ওয়াজিব বলে বিবেচিত। [১১]
- কোনো ওজর না থাকলে, পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) বলে বিবেচিত।[১২]
প্রসিদ্ধ আলিমগণ
- আবু দাউদ আস-সিজিস্তানি (মৃৃ. ২৭৫ হি.)
- হারব ইবন ইসমাইল আল-কিরমানি (মৃ. ২৮০ হি.)
- আবু বাকর আল-খাল্লাল (মৃ. ৩১১ হি.)
- আল-হাসান ইবন আলি আল-বারবাহারি (মৃ. ৩২৯ হি)
- আবু বাকর আব্দুল আজিজ বিন জাফার বিন আহমাদ গুলাম আল-খাল্লাল (মৃ. ৩৬৩ হি.)
- ইবন বাত্তাহ আল-উকবারি (মৃ. ৩৮৭ হি.)
- ইবন মানদা (মৃ. ৩৯৫ হি.)
- হাসান বিন হামিদ (মৃ. ৪০৩ হি.)
- আল-কাদি আবু ইয়ালা (মৃ. ৪৫৮ হি.)
- আবদুল্লাহ আল-হারাউই আল-আনসারি (মৃ. ৪৮১ হি.)
- ইবন আকিল (মৃ. ৪৮৮ হি)
- ইবন আবি ইয়ালা (মৃ. ৫২৫ হি.)
- আউন আদ-দীন ইবন হুবাইরা (মৃঃ ৫৬০ হি)
- আব্দুল কাদির আল-জিলানি (মৃঃ ৫৬১ হি)
- আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযি (মৃঃ ৫৯৭ হি)
- হাম্মাদ আল-হাররানি (মৃঃ ৫৯৮ হি)
- আব্দুল গনি আল-মাকদিসি (মৃঃ ৬০০ হি)
- ইবন কুদামাহ আল-মাকদিসি (মৃ. ৬২০ হি.)
- দিয়াউদ্দিন আল-মাকদিসি (মৃ. ৬৪৩)
- মাজদুদ্দিন ইবন তাইমিয়্যাহ (মৃ. ৬৫২ হি.)
- আহমাদ ইবন ইবরাহিম আল-ওয়াসিতি (মৃ. ৭১১ হি.)
- তাকিউদ্দীন ইবন তাইমিয়্যাহ (মৃ. ৭২৮ হি)
- ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (মৃ. ৭৫১ হি)
- ইবনু মুফলিহ
- ইবন আবদুল হাদি
- ইবন রজব আল-হানবালী (মৃঃ ৭৯৫ হি)
- আলাউদ্দিন আল-মারদাওয়ি
- মূসা আল-হাজ্জাওয়ি
- আহমদ বিন হামদান
- মানসুর আল-বুহুতি
- মারঈ আল-কারমি (মৃ. ১০৩৪ হি.)
- ইবনুল ইমাদ আল-হানবালি (মৃ. ১০৯০ হি.)
- ইবন বালবান আল-বা‘লি
- মুহাম্মদ বিন আহমদ আস-সাফ্ফারিনি (মৃ. ১১৮৮ হি.)
- আবদুর রহমান আল-বা‘লি
- মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব
- ইবন হুমাইদ (মৃঃ ১২৯৫ হি)
- নাসির আস-সা‘দি
- আল-জুমা
- আদনান নাহহাম
- মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-উসাইমিন (মৃঃ ১৪২১ হি)
- নাসির আল-ক্বুয়াইমি
- মুহাম্মদ বিন সায়্যিদ
- মুত্বলাক্ব আল-জাসির
- আমির বাহজাত
আরও পড়ুন
- আবদুল-হালিম আল-জুনদী, আহমদ বিন হানবাল ইমাম আহলে সুন্নাহ, দারুল-মাআরিফ কর্তৃক কায়রোতে প্রকাশিত
- ডা. 'আলী সামি আল-নাশার, নাশাহ আল-ফিকর আল-ফালাসাফি ফি আল-ইসলাম, বালাম ১, দারুল-মাআরিফ থেকে প্রকাশিত, ৭ম সংস্করণ, ১৯৭৭
- শাইখ বকর আবু যাইদ, আল-মাদখাল আল-মুফাস্সাল
- ইমাম ইবনে রজব আল-হানবালী (রহ.), যাইল 'আলা তাবাকাত আল-হানাবিলাহ
- ইমাম ইবনে রজব আল-হানবালী (রহ.), মাযহাব বিরোধিতার খণ্ডন
- ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপ্স, মাযহাব : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
- ইমরান হেলাল(সংকলক), হানবালী মাযহাবের ক্রমবিকাশ, হানবালী ফিকহ্ কর্তৃক প্রকাশিত
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.