শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

স্বাস্থ্যের অধিকার

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য অনেক নথিতে বর্ণিত মানবাধিকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

স্বাস্থ্যের অধিকার
Remove ads
Remove ads

স্বাস্থ্য এর সার্বজনীন মানদণ্ডে ন্যূনতম অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার কে স্বাস্থ্যের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয় , যা সকল ব্যক্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। স্বাস্থ্য অধিকারের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসকল চুক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র , অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ, অক্ষম ব্যক্তিদের অধিকার সনদ । স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা, স্বাস্থ্য অধিকারের মধ্যে ন্যূনতম যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সে সংক্রান্ত স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অনুপস্থিতি, সকলের জন্য স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কোন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে - এসব বিষয় বিবেচনায় স্বাস্থ্যের অধিকার এর ব্যাখা ও প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

Thumb
পাকিস্তানে স্বাস্থ্য অধিকারের দাবিতে প্রতিবাদকারীদের সমাবেশ
Remove ads

সংজ্ঞা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রণীত সংবিধান (১৯৪৬)

Thumb
স্বাস্থ্যবান ও সুখী মানুষ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রণীত সংবিধান এর মুখবন্ধ অনুযায়ী, কেবল মাত্র রোগমুক্ত থাকা বা, অসুখ থেকে মুক্তি নয়, বরং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভাবে সুস্থ থাকাই হল স্বাস্থ্য[] এই সংবিধান, স্বাস্থ্যের মানদণ্ডে সর্বচ্চ স্বাস্থ্য উপভোগ কেই স্বাস্থ্যের অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এছাড়াও এ সংবিধানে স্বাস্থ্যের অধিকারের কিছু নীতি যেমন, শিশুর স্বাস্থ্যকর বিকাশ, চিকিৎসা বিজ্ঞান এর যথার্থ প্রচার ও এর উপকারিতা সম্বন্ধে অবহিতকরণ ও সরকার প্রদত্ত সামাজিক সুবিধাদি যা ব্যক্তির যথাযথ স্বাস্থ্য অর্জনে সহায়তা করে ইত্যাদি উল্লিখিত আছে।

ফ্রাঙ্ক পি. গ্রাড এর মতে, সমকালীন আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পুরো কৃতিত্ব WHO এর সংবিধানের। কেননা, এর দ্বারা স্বাস্থ্যের অধিকারকে মৌলিক, প্রাকৃতিক এবং আইনগত অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। WHO এর সংবিধানের সমর্থনকারী দেশগুলোর সরকার এ অধিকার সমর্থন ও সুরক্ষার জন্য বাধ্য থাকবে। [] উল্লেখ্য, WHO এর সংবিধান সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বাস্থ্যের অধিকারের পরিসীমা নির্ধারণ করে।

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র (১৯৪৮)

Thumb
জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৫ নং অনুচ্ছেদ নির্দেশ করে রোমানিয়ান কর্মীরা ছাতা ব্যবহার করে '25' তৈরি করেন

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২৫ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, প্রত্যেক ব্যক্তির পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মানের অধিকার রয়েছে যা, তার নিজের ও নিজের পরিবারের স্বাস্থ্য ও ভাল থাকার জন্য যথেষ্ট যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবাসমূহ। এছাড়াও মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে ব্যক্তির শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতার সময় নিরাপত্তা প্রদান এবং মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন নেয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে। []

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার নাভানাথিম পিল্লাই লিখেছেন, "মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র এমন একটি পবিত্র লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যেখানে সব মানবাধিকার - নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অধিকার, কে সুসংগঠিত, অবিভাজনীয়, অপৃথকযোগ্য এবং পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করা আবশ্যক।" [] অনুরূপভাবে, গ্রুস্কিন এর মতে, "মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে মানবাধিকারগুলোর যে পারস্পারিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে, তা অধিকার নিশ্চিতকরনের দায়িত্বকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের বিধান থেকে যথাযথ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও অনুকূল কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার বিধান পর্যন্ত প্রসারিত করে।" "এসকল বিধান পৃথকভাবে মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত যা স্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যকীয়।" "[]

বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন (১৯৬৫)

জাতিসংঘে্র বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যা ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় এবং যার চুক্তি ১৯৬৯ সাল থেকে সদস্য দেশগুলোতে কার্যকর করা হয়, এতে স্বাস্থ্যের কথা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এ সম্মেলনে দেশগুলোকে সকল ধরনের বর্ণ বৈষম্য প্রতিরোধ ও প্রতিকার করার এবং জাতি, বর্ণ, ধর্ম, উপজাতি নির্বিশেষে আইনের চোখে সবার সমান অধিকার নিশ্চিতের আহবান জানানো হয়। উল্লিখিত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য জনস্বাস্থ্য সেবা, চিকিৎসা, সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সেবার অধিকার নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। []

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ (১৯৬৬)

Thumb
স্টেট পার্টি ও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ। চুক্তি স্বাক্ষরকারী ও স্টেট পার্টি :
  সাক্ষর ও অনুমোদন করেছে
  সাক্ষর করলেও অনুমোদন করেনি
  সাক্ষর ও অনুমোদন করেনি

১৯৬৬ সালের, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ এর ১২ নং অনুচ্ছেদে জাতিসংঘ স্বাস্থ্যের অধিকারকে নিম্নরূপ ভাবে সংজ্ঞায়িত করে:[]

বর্তমান চুক্তি অনুমোদনকারী সকল দেশসমূহ, প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বচ্চ অর্জনযোগ্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উপভোগ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। উক্ত অধিকারের যথাযথ উপলব্ধির জন্য উপস্থিত স্টেট পার্টি গুলোকে যেসব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে :

গর্ভকালীন শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও শিশুর স্বাস্থ্যকর বিকাশ নিশ্চিতকরণ  ;
পরিবেশ ও শিল্প ক্ষেত্রে সার্বিক স্বাস্থ্যবিধির উন্নয়ন করতে হবে ;
মহামারি, স্থানিক রোগ, পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও অন্যান্য রোগের প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে;
উপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রত্যেকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ও অসুস্থতায় দরকারি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে।

সাধারণ মন্তব্য নং-১৪ (২০০০)

জাতিসংঘের "অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার" বিষয়ক কমিটি ২০০০ সালে, "অনুচ্ছেদ ১২" ও "সর্বচ্চ স্বাস্থ্য মানের অধিকার" এর সাপেক্ষে "অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ" বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে সাধারণ মন্তব্য-১৪ জারী করে। [] "স্বাস্থ্যের অধিকার" এর অন্তর্ভুক্ত 'স্বাধীনতা' ও 'অধিকার' সমূহকে স্পষ্ট ও প্রায়োগিক ভাষায় উক্ত মন্তব্যে আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লিখিত মন্তব্যে "স্বাস্থ্যের অধিকার" কে "স্বাস্থ্যবান হবার অধিকার" হিসেবে ব্যাখ্যা না করার জন্য স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। "স্বাস্থ্যের অধিকার" কে 'স্বাধীনতা' ও 'অধিকার' এর সমষ্টি হিসেবে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা, ব্যক্তির জৈবিক ও সামাজিক চাহিদা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের মধ্যে সমন্বয় বিধান করে। এই চাহিদা বা সম্পদের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে স্বাস্থ্যের অধিকার খর্ব হয়। "অনুচ্ছেদ ১২" রাষ্ট্রকে সর্বচ্চ স্বাস্থ্য মানের প্রতি অধিকারকে সবার জন্মগত অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহবান জানায় এবং এই অধিকারকে নির্দিষ্ট কতগুলো 'স্বাধীনতা' ও 'সুবিধা' এর আওতায় নিশ্চিত এর নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তা রাষ্ট্রকে সকল নাগরিকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বাধ্য করে না। কেননা, স্বাস্থ্যের অধিকারের কিছু বিষয় সর্বজন বিদিত স্বীকৃত নয়।

অন্যান্য অধিকার এর সাথে সম্পর্ক

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ন্যায়, সাধারণ মন্তব্য নং-১৪ তেও মানবাধিকারসমূহের পারস্পারিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই মর্মে, "স্বাস্থ্যের অধিকার অন্য মানবাধিকারসমূহের স্বীকৃতির এর সাথে আন্তঃ সম্পর্কিত ও পরস্পর নির্ভরশীল"। এছাড়াও এতে অন্যান্য সুবিধা যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জীবন, অবৈষম্য, আত্মমর্যাদা, গুরুত্ব পাবার অধিকার, এর উন্নতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। অনুরূপভাবে, এতে স্বীকার করা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যের অধিকার অনেকগুলো আর্থ-সামাজিক উপাদানের উপর নির্ভরশীল যেগুলো সঠিকভাবে নিশ্চিত করলে মানুষ স্বাস্থ্যবান জীবনযাপন করতে পারে। উক্ত উপাদানগুলো স্বাস্থ্যের পূর্ব শর্ত হিসেবে বিবেচিত। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে, সাধারণ মন্তব্য ১৪ তে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিতে "অনুচ্ছদ ১২" তে যেসব পদক্ষেপ এর কথা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ও ব্যাখ্যামূলক নয়।

স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার এর মধ্যকার অনিবার্য সম্পর্ক

Thumb
আলাস্কা রাজ্যের স্বাস্থ্য নীতি সংস্কার সম্মেলন ২০১৯ এLisa Murkowski

জনাথন মান, ফ্রাঙ্কইস-জাভিয়ার বাগ্নউদ (এফএক্সবি) এর স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার এর অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড টি. এইচ. চ্যান গণস্বাস্থ্য বিদ্যালয় এ মহামারি এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয় এর অধ্যাপক ছিলেন। স্বাস্থ্য, নৈতিকতা ও মানবাধিকার এর অগ্রগতি সাধনে তিনি ক্ষমতাধর অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। "স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার পরস্পর দুরলঙ্ঘনিয় ও পরিবর্তনশীল সম্পর্কে আবদ্ধ" - এই তত্ত্ব কে তিনি সফল করে দেখিয়েছেন।

মান এর মতে, মানুষের সুস্বাস্থ্য কে সংজ্ঞায়িত করা ও এর ধারনাকে অগ্রসর করার জন্য স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার পরস্পর পরিপূরক। মান ও তাঁর সহকর্মীরা ১৯৯৪ সালে, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকারের আন্তঃ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরতে, "স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার বিচিত্রা" নামে একটি সাময়িকী প্রকাশ শুরু করেন।

"স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার বিচিত্রা" সাময়িকীর প্রথম খণ্ডে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্র ও মানবাধিকার এর মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগ অনুধাবনের জন্য, মান ও তাঁর সহকর্মীরা একটি গবেষণামূলক অনুচ্ছেদ প্রকাশ করেন। উক্ত অনুচ্ছেদে, মান ইটি এ্যাল, পরস্পর আন্তঃ সম্পর্কিত ক্ষেত্রদ্বয়ের মধ্যে সংযোগ সাধনের জন্য একটি কাঠামো ব্যাখ্যা করেন। উক্ত কাঠামোটি তিনটি বিস্তৃত সম্পর্কে ভাগ করা হয়েছে।

প্রথমত স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার এর মধ্যকার সম্পর্কটি রাজনৈতিক ভাবে যুক্ত। মান ও তাঁর সহকর্মীরা বলেন যে, মানবাধিকারের ওপর স্বাস্থ্য নীতি, স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। বিশেষত, গনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যন্ত্রের উপস্থিতি এই প্রভাবকে স্পষ্ট করে তোলে।

দ্বিতীয়ত, অনুচ্ছেদে একটি বিপরীত সম্পর্কের উল্লেখ রয়েছেঃ স্বাস্থ্যের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রভাব রয়েছে। এতে, স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্য কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে তা পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপের জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনুরোধ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও মানবাধিকারকে সংযুক্ত করার জন্যে প্রস্তাবিত এই কাঠামোতে, মানবাধিকার ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও উন্নয়ন মৌলিক এবং গতিশীল সম্পর্কে আবদ্ধ - এই ধারনার পরিচয় করায়। কাঠামোতে উল্লিখিত প্রথম দুইটি ধারণা সাহিত্যে ব্যাপকভাবে সমর্থিত হলেও তৃতীয় ধারণাটি তখনও যথেষ্ট পরিমাণে বাস্তব পরীক্ষিত নয়।

অনুচ্ছেদে নতুন ধারণাটি সমর্থন করে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার এর আন্তঃ সম্পর্ক থেকে বোঝা যায়, স্বতন্ত্র বা পারস্পারিক গণস্বাস্থ্য চর্চা ও মানবাধিকার চর্চার মধ্যে চমকপ্রদ কিছু ব্যবহারিক মিল রয়েছে। স্বাস্থ্য ও মানবাধিকারের এই আন্তঃ নির্ভরশীলতাকে মোটেও অবহেলা করা যায় না। মান ও তাঁর সহকর্মীরা আরও বিশ্বাস করেন যে, বৈশ্বিকভাবে মানুষের "সুস্বাস্থ্য" অনুধাবন ও উন্নয়ন করার জন্য, গবেষণা, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও এ সম্পর্কিত জ্ঞান এর যথাযথ প্রচার স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার এর মেলবন্ধন কে বুঝতে সাহায্য করবে।

সব শেষে, মান ও তাঁর সহকর্মীরা বোঝাতে চেয়েছেন যে, যদিও শারীরিক অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিকাংশ সময় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যক্রম মানুষ কি করে স্বাস্থ্যবান হতে পারে তা নিয়েই আবর্তিত হয়।[] এই চমৎকার সহজ সংজ্ঞা অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার লক্ষ্য হল সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও স্বাস্থ্য সমস্যা যেমনঃ রোগ, প্রতিবন্ধকতা, অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য সেবাগুলোর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের প্রতি চিরাচরিত ধারণা ও ব্যাখ্যা হল "সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য অবস্থা", কিন্তু এই তথাকথিত "অবস্থা" কখনই "স্বাস্থ্য" এর প্রতিশব্দ হতে পারে না। অন্যভাবে বলা যায়, স্বাস্থ্য সেবা গুলো সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট নয়। কেননা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের মতে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্য এর উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Thumb
স্বাস্থ্য নিরপেক্ষতার লোগো
স্বাস্থ্য নিরপেক্ষতা

সাধারণ মন্তব্য-১৪ তে "স্বাস্থ্য নিরপেক্ষতা" নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে, যা ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে আলোচনা করা হয় নি। উক্ত নথিতে, স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো সেবা ও এ সংক্রান্ত স্বাধীনতা উপভোগ ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য না করার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। উপরন্তু, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য ও এর প্রভাব প্রশমনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে অর্পণ করা হয়েছে: "যেসকল নাগরিকের পর্যাপ্ত সঙ্গতির অভাব রয়েছে, রাষ্ট্র তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য বীমা ও অন্যান্য সুবিধা দেবার জন্য এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ যেকোনো বৈষম্য প্রতিরোধে বিশেষভাবে বাধিত থাকবে।" বয়স, লিঙ্গ, অক্ষমতা বা জাতিগত ভিন্নতার জন্য স্বাস্থ্য বৈষম্য প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রসমূহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দায়িত্ব

সাধারণ মন্তব্যের পরবর্তী অংশে, "স্বাস্থ্যের অধিকার" এর ব্যাপারে রাষ্ট্রগুলো ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর দায়বদ্ধতা বিস্তৃত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্র গুলোর দায়বদ্ধতা ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে: সম্মান করার দায়িত্ব, সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব এবং "স্বাস্থ্যের অধিকার" নিশ্চিত করার বাধ্যতা। সংক্ষেপে এসব দায়িত্ব এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হল- সেবা উপভোগ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে যে কোন বৈষম্য প্রতিরোধ করা, পরিবার পরিকল্পনা বা গর্ভনিরোধক উপায়গুলোর সহজলভ্যতা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে অস্বীকার না করার বাধ্যতা, পরিবেশ দূষণ হ্রাস, ক্ষতিকর বা দমনমূলক প্রথাগত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা, স্বাস্থ্য বজায় রাখার সামাজিক নির্ধারক গুলোর প্রতি সবার সমানাধিকার নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসা সুবিধা, চিকিৎসা কর্মী ও সরঞ্জামাদির স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যথাযথ নির্দেশনা করা। আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত দায়িত্ব গুলো হল- বিদেশে থাকাকালীন স্বাস্থ্য উপভোগ এর অনুমতি; বিদেশে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির লঙ্ঘন প্রতিরোধ করা; দুর্যোগ ও জরুরী অবস্থা চলাকালীন মানবিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করা এবং রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার জন্য চিকিৎসা সামগ্রী বা চিকিৎসা কর্মীদের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।

নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ

Thumb
নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ - শীর্ষক সম্মেলন এ অংশগ্রহণ (CEDAW).
  স্বাক্ষর ও সমর্থনের মাধ্যমে পক্ষপাতী
  সংযোজন বা উত্তরাধিকারবলে পক্ষপাতী
  স্বীকৃতিহীন রাষ্ট্র, কিন্তু চুক্তিটি মেনে চলছে
  কেবল স্বাক্ষর করেছে
  স্বাক্ষর করেনি

জাতিসংঘের ১৯৭৯ সালের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ এর ১২ নং অনুচ্ছেদে, স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সময় লিঙ্গ বৈষম্য থেকে নারীর সুরক্ষা এবং নির্দিষ্ট যৌন স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নারীর অধিকারের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১২ এর সম্পূর্ণ লেখাটি:[১০]

অনুচ্ছেদ ১২:

  1. নারী পুরুষের সাম্যতার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি (পরিবার পরিকল্পনা সহ) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য স্টেট পার্টি গুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো যাচ্ছে।
  2. এই প্রবন্ধের I নং অনুচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্টেট পার্টি গুলো নারীর গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবত্তর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত, এসকল সেবা প্রয়োজনীয় সময় বিনা মুল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও গর্ভকালীন ও দুগ্ধবতী অবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

শিশু অধিকার সনদ

Thumb
শিশু অধিকার সম্মেলন এ স্টেট পার্টি সমূহ
  সম্মেলনে উপস্থিত পার্টি সমূহ
  কেবল স্বাক্ষর করেছে কিন্তু সমর্থন করেনি
  স্বাক্ষর করেনি

শিশু অধিকার সনদ (১৯৮৯) এর বেশ কিছু স্থানে "সাস্থ্য" এর কথা উল্লেখ করা আছে। শিশুদের যত্ন নেবার বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলো যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য অনুচ্ছেদ ৩ এ স্টেট পার্টিগুলোকে আহবান করা হয়েছে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার সাথে সম্পর্কিত তথ্য শিশুর পাবার অধিকারকে অনুচ্ছেদ ১৭ তে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৩ এ অক্ষম/বিকলাঙ্গ শিশুদের অধিকার সম্পর্কর বলা হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য সেবা, পুনর্বাসন ও প্রতিরধ্মূলক যত্ন নিশ্চিতের কথাও অন্তর্ভুক্ত আছে। অনুচ্ছেদ ২৪ এ শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে ও বলা হয়েছে, "পার্টিগুলো শিশুর সর্বচ্চ স্বাস্থ্য মানের অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও স্বাস্থ্য পুনর্বাসনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। কোন শিশুই যেন তার এসকল স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় তা স্টেট পার্টিগুলোকে কঠোরভাবে নিশ্চিত করবে।" চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যে সনদে যেসব পদখেপের কথা উল্লেখ করা আছে :[১১]

  • নবজাতক ও শিশু মৃত্যু হার হ্রাস করা;
  • প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে, প্রত্যেক শিশুর জন্য চিকিৎসা সহায়তা ও স্বাস্থ্য সেবার শর্ত গুলো নিশ্চিত করতে হবে ;
  • রোগ ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার কাঠামো, সহজপ্রাপ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য ও নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ ও পরিবেশ দূষণের বিপদ ও ঝুঁকি সমূহ বিবেচনায় নিতে হবে;
  • দুগ্ধবতী হবার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় মায়ের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ;
  • সমাজের সর্ব স্তরের মানুষকে, বিশেষত মা-বাবা ও শিশুদের, জানাতে হবে যে তাদের শিক্ষার অধিকার আছে এবং শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান ব্যবহার, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানর উপকারিতা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এ সরকারের সমর্থন আছে;
  • প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা, মাতা-পিতার জন্য দিকনির্দেশনা ও পরিবার পরিকল্পনার জন্য দরকারি শিক্ষা ও সেবা নিশ্চিত করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে দেয়া মন্তব্য অনুযায়ী, "সিআরসি হল শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্যের বিস্তৃত ক্ষেত্রে (WHO) "হু" এর কাজ করার আদর্শিক ও আইনি কাঠামো" [১২] গোল্ডহাজেন, "শিশু অধিকার সনদ" কে শিশু সুরক্ষার নিয়ামক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং এটিকে শিশু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নের কাঠামো হিসেবে ব্যবহারের আবেদন জানান। [১৩]

অক্ষম ব্যক্তিদের অধিকার সনদ

অক্ষম ব্যক্তিদের অধিকার সনদ (২০০৬) এর ২৫ নং অনুচ্ছেদে নির্দিষ্ট করে বলা আছে, "অক্ষম ব্যক্তিদের নিজের অপারগতার জন্য বৈষম্যের শিকার না হয়েই সর্বচ্চ স্বাস্থ্য মান উপভোগ করার অধিকার আছে।" উক্ত অনুচ্ছেদের উপ-ধারা গুলোতে বলা হয়েছে, রাস্ত্র অক্ষম ব্যক্তিদেরকে অন্য সবার মত একই "পরিসর, গুন ও মানের" স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করবে এবং অক্ষমতা প্রতিরোধ-প্রতিকার, চিহ্নিতকরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট সেবার প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করবে। এই বিধানে আরও বলা আছে, অক্ষমদের জন্য দরকারি স্বাস্থ্য সেবার প্রাপ্যতা স্থানীয় সমাজ পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে এবং এই সেবা স্থান নিরপেক্ষ হবে। অক্ষমতার জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সীমিত করা বা সেবা (খাদ্য, পানিয়, জীবন বীমা) থেকে বঞ্চিত করা কে এখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [১৪]

হেন্ড্রিক্স টেমপ্লেট:কে?, "অক্ষমতা" কে সংজ্ঞায়িত করতে না পারার জন্য সনদের সমালোচনা করেন; তিনি আরও বলেন,"যথাযথ ও স্পষ্ট বর্ণনার [...] অভাব সনদের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যায় অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে বা, বলা যায়, যে দৃঢ় সুরক্ষার আশ্বাস সনদে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিতকরনে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।"[১৫] তবে তিনি এটা স্বীকার করেন যে, স্পষ্ট সংজ্ঞার অনুপস্থিতি রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থাকে সনদের প্রদত্ত বিধানগুলিকে কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা কোন বিশেষ অবস্থার জনগোষ্ঠী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার এখতিয়ার খারিজ করে যার ফলে, আসলে অক্ষম ব্যক্তিগণই লাভবান হন।

প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্যে সংজ্ঞা

বেশিরভাগ মানবাধিকারকে তাত্ত্বিকভাবে ঋণাত্মক অধিকার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে সমাজ প্রত্যক্ষ কোন প্রভাব ফেলতে পারে না বা রাজনৈতিকভাবে সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারে না। মেরভিন সাসসার এই তত্ত্বের বিরোধিতা করে বলেন, "স্বাস্থ্যের অধিকার" একটি অনন্য ও জটিল অধিকার কেননা, এটিকে অনেক সময় ধনাত্মক অধিকার হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হয় যেখানে সমাজ, সাধারণ মানুষকে কিছু নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য দায়বদ্ধ থাকে। সাসসার, এমন ৪টি বিধানের কথা উল্লেখ করেন যেগুলো তাঁর মতে, "স্বাস্থ্যের অধিকার" এর আওতায় পরে। এগুলো হল: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার উপর সবার সমানাধিকার; সমাজের বিভিন্ন স্তরে স্বাস্থ্যের সুষম বণ্টনের জন্য কার্যকরী সামাজিক আন্দোলন; স্বাস্থ্য নিরপেক্ষতা পরিমাপ ও মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা; এবং সুষম সমাজ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেন তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সমর্থন ও প্রচারে সব গোষ্ঠীর নিজস্ব মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। তিনি অত্যন্ত সতর্কতাপূর্বক উল্লেখ করেন, যদিও এখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ন্যূনতম সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এতে সবার জন্য নিরপেক্ষ স্বাস্থ্য অবস্থা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা বা আশ্বাস দেয়া হয় না। কেননে, জন্মগত ভাবে সবার জৈবিক স্বাস্থ্য অবস্থা পৃথক। [১৬] "স্বাস্থ্যের অধিকার" এর কিছু সাধারণ সমালোচনায় এমন এক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয় যেখানে, এমন এক স্বাস্থ্য মানের প্রতি অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয় যা অর্জন করা বাস্তবে অসম্ভব এমনকি যে অধিকার ব্যক্তি ভেদে বা সমাজভেদে পরিবর্তনশীল। .[১৭]

যদিও সাসসার স্বাস্থ্যসেবাকে ধনাত্মক অধিকার হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন, পাল হান্ট এই ব্যাখ্যা খণ্ডন করে বলেন যে, স্বাস্থ্যের অধিকার কিছু ঋণাত্মক অধিকার যেমনঃ বৈষম্য থেকে সুরক্ষা এবং রোগীর অমতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান না করা ও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হান্ট স্বীকার করেন যে, কিছু ধনাত্মক অধিকার যেমন, সুবিধাবঞ্চিত ও অসুরক্ষিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য চাহিদার প্রতি সমাজের বিশেষ মনোযোগ দেবার বাধ্যতা স্বাস্থ্যের অধিকার এর অন্তর্ভুক্ত। [১৮]

পাল ফার্মার, তার লেখা "বিশ্বের প্রধান ছোঁয়াচে রোগসমূহ - চিকিৎসা না উপেক্ষা " তে স্বাস্থ্য সেবায় অসম প্রবেশাধিকার এর বিষয় আলোচনা করেন। তিনি চিকিৎসা সেবা উপভোগকারী ও বঞ্চিতদের সংখ্যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান তফাৎ এর বিষয়টি তুলে ধরেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যদিও বা কোন সেবা উপভোগ করে, তা বিত্তশালীদের তুলনায় নগন্য। চিকিতসা সেবা ও ওষুধ এর উচ্চ মূল্যের কারণে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য সমান স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা একটি বর সমস্যা। তিনি বলেন, "নিরপেক্ষতা ব্যতীত শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করা একবিংশ শতাব্দীর স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রধান সংকট।" [১৯]

Remove ads

স্বাস্থ্য সেবার উপর মানবাধিকার

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
স্বাস্থ্যসেবা একটি মানবাধিকার

স্বাস্থ্যের অধিকার এর একটি দিক সম্বধে ধারণা করার জন্য স্বাস্থ্য সেবার উপর মানবাধিকার্‌ এর বিষয়টি বিবেচনা করা যায়। উল্লেখ্য, এতে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতা ও দাতা উভয়ের অধিকারই স্বাস্থ্য সেবা সরবরাহ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এখানে দাতার অধিকার প্রায়ই রাষ্ট্র কর্তৃক নিগৃহীত হয়। [২০] স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে রোগীর যেসব অধিকার অন্তর্গত থাকে: নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যের অধিকার, জীবনের নিশ্চয়তা, মানসম্মত সেবা এবং বৈষম্য, নির্যাতন ও নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবনতিমূলক চিকিৎসা থেকে মুক্তি। [২০][২১] প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন অভিবাসী, এবং উদ্বাস্তু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী, যৌন সংখ্যালঘু ও এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার বিশেষত স্বাস্থ্য-সেবা ব্যবস্থায় সুরক্ষিত নয়। [২২][২৩] উদাহরনস্বরূপ, জাতিগত সংখ্যালঘু রোগীদের নিম্ন মানের পৃথক কামরা দেয়া হতে পারে, শারিরিক/মানসিক অক্ষম রোগীকে জোরপূর্বক ধরে-বেধে ওষুধ দেয়া হতে পারে, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে যথাযথ চিকিৎসা না দেয়া হতে পারে, নারীকে জোরপূর্বক যৌন হয়রানী করা/ সতীত্ব পরীক্ষা করা হতে পারে এবং জীবন রক্ষাকারী গর্ভপাত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে, সমকামী সন্দেহে পুরুষের পায়ু-পথ পরীক্ষা করা হতে পারে এবং প্রান্তিক নারী ও রূপান্তরিত নারীকে জোরপূর্বক নির্বীজিত করা হতে পারে। [২৩][২৪]

সেবা প্রদানকারীদের অধিকারের মধ্যে রয়েছে: মান সম্মত কর্ম-পরিবেশ পাবার অধিকার, কর্মস্থান (প্রতিষ্ঠান/সংস্থা) নির্বাচনের স্বাধীনতা এবং নিজস্ব নীতি-নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোন কাজ/প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার অধিকার। [২০] স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের প্রায় সময়ই অধিকার বঞ্চিত হয়ে থাকেন। উদাহরনস্বরুপ, যেসব দেশে আইনের শাসন দুর্বল ওইসব দেশে প্রধানত, স্বাস্থ্য কর্মীরা এমন সব কাজ করতে বাধ্য হন যাতে- তাঁদের নীতি-নৈতিকতা ক্ষুণ্ণ হয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সর্বচ্চ মানের স্বাস্থ্য-সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, রোগীর গোপনীয়তা ভঙ্গ হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রোগীরা নির্যাতনের শিকার হয়। [২৫][২৬] উপরন্তু, যারা এসব চাপ উপেক্ষা করেন বা, অমানবিক নীতি মানতে অস্বীকৃতি জানান তাঁদের অত্যাচার-নিপীড়ন করা হয়। [২৫] বর্তমানে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে, "স্বাস্থ্য-সেবা প্রদানকারীর চেতনা" বিষয়টি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে, যা তাঁদের নিজস্ব নৈতিকতা বিরোধী কাজ যেমন-গর্ভপাত করানো, থেকে বিরত থাকার অধিকার রক্ষা করে। [২৭][২৮]

আইনের পুনর্গঠন ও আইন ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োগ, স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীর অধিকার সংরক্ষণ ও অধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের কার্যকরী প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, উন্নয়নশীল দেশে (যেমন, নতুন গঠিত দেশ যেগুলো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অধীন রয়েছে) বা যেখানে/যেসব ব্যবস্থায় আইনের শাসন দুর্বল সেখানে উল্লিখিত প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা স্বভাবতই সীমিত। [২০] স্বাস্থ্য-সেবার মানবাধিকার নিশ্চিতে আগ্রহী উকিল, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান, উপায়, তথ্য-উপাত্ত ও সরঞ্জামাদি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। [২০]

Remove ads

স্বাস্থ্য-সেবা একটি সাংবিধানিক অধিকার

অনেক দেশেরটেমপ্লেট:কোনগুলো? সংবিধানে এখন "স্বাস্থ্যের অধিকার" কে স্বীকৃতি দিয়েছে। [২৯] Sometimes, these rights are justiciable, meaning that they can be pursued by action in court.[৩০] প্রকৃতপক্ষে, সারা বিশ্বে এই অধিকারকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দ্বারা এর সুরক্ষা নিশ্চিত ও যুক্তিযুক্ত করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক পুনর্গঠনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। [৩০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথার ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত, অন্তত ফেডেরাল (রাজ্য সরকার) পর্যায়ে। [৩১] অথচ, যুক্তরাষ্ট্রে অধিকারটির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দাবি করে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে।[৩২] যেখানে সংবিধান যুক্তিযুক্ত স্বাস্থ্যের অধিকার কে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেখানে তা নিয়ে আদালতের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। [৩৩][৩৪]

সমালোচনা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ফিলিপ বারলো এর ভাষ্যমতে, "স্বাস্থ্যের অধিকার" এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি ও ন্যূনতম স্বাস্থ্য মানের অধীনে অবশ্য অন্তর্ভুক্ত বিষয় গুলো সংজ্ঞায়িত করার জটিলতার জন্য এটিকে অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তাঁর মতে অধিকার প্রতিষ্ঠার ফলে অন্যদের উপর ঐ অধিকার রক্ষা ও নিশ্চিতের দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষার সামাজিক দায়িত্ব কার তা স্পষ্ট নয়। [৩৫] জন বারকেলি, বারলো এর সাথে একমত প্রকাশ করে আরও সমালোচনা করেন যে, "স্বাস্থ্যের অধিকার" এ একজন ব্যক্তির নিজস্ব স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয় না। [৩৬]

রিচার্ড ডি লাম স্বাস্থ্য-সেবাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি অধিকারকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন যা, যেকোনো মুল্যে সংরক্ষণ করতে হবে ও যার ধারণা বিচার ব্যবস্থা কর্তৃক সংজ্ঞায়িত ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিলে, রাষ্ট্রকে তার সম্পদের একটি বড় অংশ তার নাগরিকদের এই অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ব্যায় করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা "সম্পদ অফুরন্ত" এই ভ্রান্ত ধারনার উপর প্রতিষ্ঠিত। সীমিত সম্পদ, বিশেষত দীর্ঘ মেয়াদে, সরকারকে সবার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য-সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাদা হয়ে দাঁড়ায়। সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে সবার জন্য "উপকারি" স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা দেশে অর্থনৈতিক ধস ডেকে আনতে পারে। লাম আরও বলেন, স্বাস্থ্যকর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্তির অধিকার অপেক্ষা সামাজিক সম্পদের উপর রাষ্ট্রের সম্পদ বিনিয়োগ অধিক গুরুত্বপূর্ণ। [৩৭]

"স্বাস্থ্যের অধিকার" এর অন্য একটি অসুবিধা হল, এটি কার্যকর ও নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য। ইম্রে জে. পি. লোএফ্লার, নাইরোবি হাসপাতাল প্রসিডিংস এর সাবেক সম্পাদক ও ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল এর নিয়মিত লেখক, এর মতে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের আর্থিক বোঝা বহন ও যৌক্তিকতা প্রদান অসম্ভব। উপরন্তু সীমিত সম্পদের বাস্তবতা জীবনকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য দীর্ঘায়িত করে এমন অধিকার কে যৌক্তিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াকে অবাস্তব করে দেয়। লোএফ্লার এর মতে, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্য, "স্বাস্থ্যের অধিকার" এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অপেক্ষা সুনির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক নীতির দ্বারা ভালোভাবে ও যথাযথভাবে অর্জন করা সম্ভব। [৩৮]

Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading content...

তথ্যসূত্র

Loading content...
Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads