Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
স্পেনের আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হবার পথ ইউরোপের অন্যান্য অংশের তুলনায় বহু দিক থেকে আলাদা। ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় অবস্থিত রাষ্ট্রটি ভৌগোলিকভাবে স্তুপ পর্বত এবং সাগরের মাধ্যমে ইউরোপের অন্যান্য অংশ থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন, ফলে ইউরোপের সাংস্কৃতিক উন্নতির সাথে স্পেনের খানিকটা দূরত্ব সবসময়ই অনুমিত ছিল। ১৮শ শতকের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যে যে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, তা ধীরে ধীরে স্পেনে এসে পৌঁছায়। বিংশ শতাব্দীতে ভয়াবহ স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ (১৯৩৬-১৯৩৯) এবং তৎপরবর্তী ফ্রান্সিস্কো ফ্রাংকোর একনায়কতন্ত্র স্পেনকে সমৃদ্ধ, গণতন্ত্রী ও আধুনিক ইউরোপের কাছ থেকে খানিকটা দূরে ঠেলে দেয়।
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (মে ২০১৬) |
তবে ইতিহাসের বেশির ভাগ সময়ই স্পেন ছিল বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মিলনস্থল। স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত জিব্রাল্টার প্রণালীর মাধ্যমে সহজেই স্পেন ও আফ্রিকার মধ্যে যাতায়াত সম্ভব। আইবেরীয় উপদ্বীপের বহু সমুদ্রবন্দর সমুদ্রগামী ভূমধ্যসাগরীয় লোকদেরকে সেখানে নেমে প্রাকৃতিক সম্পদ খোঁজার সুযোগ করে দেয়। স্পেনের সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত ইতিহাসেও সেখানে বিভিন্ন অভিবাসী জাতির বসতি স্থাপনের দীর্ঘ ধারা ও সাংস্কৃতিক মিলনের কথা লেখা আছে। প্রাগৈতিহাসিক পর্যায়ে স্পেনে আইবেরীয় জাতির লোকেরা বাস করত। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকে কেল্টীয় ও ফিনিসীয়রা এখানে বসতি স্থাপন করে। ফিনিসীয়রা আইবেরীয় উপদ্বীপকে স্পান (লুকানো বা দূরবর্তী দেশ) বলে ডাকত। সেখান থেকেই স্পেনের নাম হিস্পানিয়া হয়েছে। কেল্টীয় ও ফিনিসীয়দের পর এখানে গ্রিক, কার্থেজীয় এবং সবশেষে রোমানদের পদার্পণ ঘটে। রোমানদের এই গোটা উপদ্বীপ দখল করতে প্রায় ২০০ বছর লেগে যায়; শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে এসে তাদের স্পেন বিজয় সম্পূর্ণ হয়।
রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে স্পেনের অধিকাংশ জনগণ খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয় এবং লাতিন ভাষার বিভিন্ন প্রাকৃত ভাষায় কথা বলা শুরু করে। রোমানদের পরে জার্মানীয় গোত্রের লোকেরাও উত্তর দিক থেকে ৫ম শতকে স্পেনে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ভ্যান্ডাল গোত্রের লোকেরা স্পেন পার হয়ে আফ্রিকায় চলে যায় এবং সেখানেই বসতি স্থাপন করে। অন্যদিকে ভিজিগথেরা স্পেনে থেকে যায় এবং স্পেনে নিজস্ব রাজ্য স্থাপন করে। ভিজিগথের অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণে রাজত্বের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ৭১১ সালে স্পেন আবার বহিরাক্রমণের শিকার হয়। এবারে আফ্রিকা থেকে মুসলমানেরা স্পেন আক্রমণ করে। মুসলমানেরা বহু শতাব্দী ধরে আইবেরীয় উপদ্বীপের বেশির ভাগ অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। স্পেনের মুসলিম সংস্কৃতি ১০ম শতকে এসে উন্নতির শিখরে আরোহণ করে। স্পেনের মুসলিম শাসকেরা দেশটিতে নতুন শস্য প্রবর্তন করেন ও দক্ষ সেচ ব্যবস্থা চালু করেন। ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পায় এবং গণিত, চিকিৎসা ও দর্শনের প্রসার ঘটে।
১০ম শতকের পর স্পেনে মুসলিম শাসনের অবনতি ঘটে। উত্তর স্পেনের খ্রিস্টান রাজ্যগুলি ইউরোপ মহাদেশ থেকে অভিবাসী গ্রহণ করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে উপদ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৪৯২ সালে স্পেনের শেষ মুসলিম রাজ্য গ্রানাডা দখলের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে। এই খ্রিস্টান রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কাস্তিল, আরাগন এবং পর্তুগাল। এদের মধ্যে কাস্তিল ছিল সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী। মধ্যযুগে এই কাস্তিল রাজ্য ছিল ক্যাথলিক, কাস্তিলীয়ভাষী স্পেনের প্রাণকেন্দ্র।
১৫শ শতকের শেষ নাগাদ স্পেনে বিদেশীদের অভিবাসন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মিলনস্থল হিসেবে স্পেনের গুরুত্ব বজায় থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও উত্তর ইউরোপের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্যের মধ্যস্থল হিসেবে স্পেন একটি সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থিত ছিল। ১৫শ শতকের শেষ দিকে স্পেনের অধীনস্থ নাবিকেরা সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়েন এবং আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেন। তারা সেখানে প্রচুর রূপা আবিষ্কার করেন। আমেরিকা থেকে আনা রূপা ইউরোপের সম্প্রসারণশীল বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রে স্পেনকে স্থাপন করে। একই সময় রাজবংশগুলির মধ্যে বিবাহ এবং কূটনীতির সুবাদে স্পেন এক বিরাট ইউরোপীয় সাম্রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ মহাদেশে বিস্তৃত স্পেনের সাম্রাজ্য ১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত টিকে থাকে। ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯-১৭৯৯) এবং নেপোলিয়নীয় যুদ্ধগুলির (১৭৯৯-১৮১৫) পর স্পেনের সাম্রাজ্য বিলীন হয়ে যায়।
১৯শ শতকের পুরোটা জুড়েই স্পেনীয়রা তাদের সরকারের গঠন এবং রাজনীতিতে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিয়ে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এই সময় স্পেন ধীরে ধীরে শিল্প বিপ্লবের অংশীদার হয় এবং সম্প্রসারমান অর্থনীতি নতুন নতুন রাজনৈতিক শক্তির সৃষ্টি করে। তা সত্ত্বেও একক কোন রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অনেক স্পেনীয় এই নৈরাজ্যের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এবং এর ফলে সেটিও একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনের সরকার কাগজেকলমে গণতান্ত্রিক হলেও আসলে একটি বিশেষ শ্রেণীর হাতে স্পেনের রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ক্রমে সংঘর্ষ ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৩ সালে জেনারেল মিগেল প্রিমো দে রিবেরা নিজেকে একনায়ক ঘোষণা করেন। ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে দ্বিতীয় স্পেনীয় প্রজাতন্ত্রে গণতন্ত্র নিয়ে আবার পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয় এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংস্কারকাজ বিস্ময়কর দ্রুততায় সম্পন্ন হয়। কিন্তু ১৯৩৬-১৯৩৯ সালের স্পেনীয় গৃহযুদ্ধের কারণে এ সবকিছু চাপা পড়ে যায়। এই যুদ্ধের কারণে স্পেন প্রায় ৫ লক্ষ প্রাণ হারায়, দেশটির অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে, বহু লোক উদ্বাস্তু হয়। যুদ্ধশেষে সামরিক জেনারেল ফ্রান্সিস ফ্রাংকো একনায়ক হিসেবে পরবর্তী ৩৬ বছর ধর স্পেন শাসন করেন। ১৯৭৫ সালে ফ্রাংকোর মৃত্যুর পর স্পেন আধুনিক, গণতান্ত্রিক, গতিশীল একটি ইউরোপীয় জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পায় এবং একটি ধনী, নগরায়িত, শিল্পোন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ২১শ শতক শুরু করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.