সিন্ধি লোককাহিনী (সিন্ধি: لوڪ سنڌي ڪهاڻيون ) দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধি জনগণের সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে প্রচুর রূপকথার গল্প এবং লোককথা রয়েছে, যেগুলি দিয়ে এর লোককাহিনী তৈরি। এর মধ্যে কিছু লোককাহিনী (সিন্ধি: قصا) সিন্ধি ভাষায় উচ্চতর সাহিত্যের বিকাশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এগুলি সিন্ধুর রহস্যময় গল্পের অন্তস্থল তৈরি করেছে এবং শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাইয়ের বর্ননায় অমর হয়ে আছে। এগুলি সাধারণত শাহের নায়িকা (সিন্ধি: شاه جون سورميون) নামে পরিচিত।

এই লোককাহিনীগুলোর মধ্যে বিশেষ করে যেগুলোতে প্রেমের গল্প বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সিন্ধুতে সুপরিচিত এবং সাসুই পুনহুনের গল্পটি সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত। এতে, ভাম্বোরের এক ধোপা পরিবারে প্রতিপালিত সাসুই নামে একটি সুন্দরী সিন্ধু মেয়ের বহু প্রেমিককে আকর্ষণ করার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। অবশেষে, কেচের রাজকুমার তার প্রেমে পড়ে। রাজকুমারের পরিবার হতাশাগ্রস্ত হয় এবং অবশেষে দম্পতিকে মাতাল ক'রে প্রেমিককে নিয়ে চলে যায়। সাসুই সকালে দেখে সে একা। সে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মরুভূমিতে একটি বেলুচ কাফেলার চিহ্ন অনুসরণ করে।

সোহনির করুণ কাহিনীও আছে, সে তার অপছন্দের একজনকে বিয়ে করেছিল। সে প্রতিরাতে সিন্ধু পার হয়ে সাঁতার কেটে তার প্রিয় মেহারের সাথে দেখা করতে যেত। মেহার একটি দ্বীপে গবাদি পশু পালন করতো। অবশেষে সোহনির ননদ বিষয়টি জেনে যায়। সে সোহনির জন্য জীবনরক্ষাকারী আগুনে পোড়ানো মাটির পাত্রের বদলে কাঁচা মাটির পাত্র রেখে দেয় এবং সোহনি ডুবে যায়।

লীলান চনেসারের গল্পটি অদ্ভুত। নায়িকা ছিল যাদুবিদ্যায় পারদর্শী একজন মহিলা। সে হীরার নেকলেসের বিনিময়ে স্বামীকে অজানা প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে এক রাত্রি যাপন করতে দেয়। পরে যখন তার স্বামী তাকে তালাক দেয়, তখন সে বুঝতে পারে যে সে তুচ্ছ বিষয়ের বিনিময়ে তার সমস্ত সুখকে অযথা বিলিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ পরীক্ষার পর, দম্পতি আবার মিলিত হয় এবং একসাথে মারা যায়।

নুরির গল্পটি সাম্মা যুগের ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলে, যেখানে এক যুবক জাম তামাচি, জেলেকন্যা নুরির প্রেমে পড়ে। নম্রতা এবং কোমলতার গুণে নুরি তার প্রিয় রানি হয়ে ওঠে।

উমর মারুইয়ের গল্পও বিখ্যাত। অমরকোটের শাসক উমর যুবতী মারুইকে বন্দী করে। মারুই শাসকের খোশামোদ না শুনে বাড়ি যাবার জন্য আকুল হয় এবং মালির থারপারকারের দরিদ্র পশুপালক ও তার পরিবারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। অবশেষে উমর তাকে বাড়ি পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখতে পায় না।

এই সমস্ত গল্পগুলো সময়ের সাথে সাথে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং যারা গল্পগুলোকে আধ্যাত্মিক রূপ দিয়েছিল, বিশেষ করে সেই সুফিদের জন্য, সিন্ধি সাহিত্যে চিত্রকল্প প্রদান করেছে।

ডোডো চানেসার এবং মরিরোর গল্প বীরত্বের অনুভূতিতে পূর্ণ। একইভাবে, সোরথ রাই দিয়াচ গল্পটিতে রাজা দিয়াচের পরাক্রম এবং উদারতার কথা তুলে ধরা হয়েছে, রাজা দিয়াচ তার শির বিচ্ছিন্ন করে চারনকবি বিজলকে দান করেছিলেন।

সম্প্রতি, এই লোককাহিনীগুলো সিন্ধি আদবি বোর্ডের লোককাহিনী ও সাহিত্য প্রকল্পের অধীনে লোকে কাহানিয়ুঁ নামে সাতটি খণ্ডে সংকলিত হয়েছে।[1] এই সাতটি খণ্ডে বিভিন্ন ধরনের লোককাহিনী, কিংবদন্তি এবং অন্যান্য গল্প রয়েছে। এই সিরিজের মাধ্যমে ৩০০ টিরও বেশি লোক-কাহিনী আলোকিত হয়েছে, যার মধ্যে ধ্রুপদী এবং জনপ্রিয় উভয়রূপের গল্পই রয়েছে।

আরো পড়ুন

  • সিন্ধি লোককাহিনী
  • পাকিস্তানি লোককাহিনী
  • সিন্ধুর সমাধি চিত্র

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.