Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সারাহ হাইদার একজন পাকিস্তানি-মার্কিন লেখিকা,বক্তা এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী নারী।[1] তিনি প্রচার গ্রুপ Ex-Muslims of North America (উত্তর আমেরিকার প্রাক্তন মুসলিম) তৈরি করেন যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মীয় মতবিরোধগুলো স্বাভাবিক করা এবং সাবেক মুসলিমদের সাহায্যকারী নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে তাদের ধর্মত্যাগে সাহায্য করা।[2][3] তিনি EXMNA এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সংস্থাটির উন্নয়ন-বিভাগের পরিচালক।[4]
হাইদারের জন্ম হয় করাচি,পাকিস্তানের একটি শিয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী পরিবারে।[5] তার বয়স যখন সাত বছর তখন তার পরিবার যুক্ত্ররাষ্ট্রে চলে আসে এবং হাউস্টন,টেক্সাসে বসবার শুরু করে।[6] তিনি শৈশবে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন। ২০১৭ সালে Gene Expression নামক একটি ব্লগের সাথে ইন্টারভিউতে তিনি তার ধর্মীয় অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেন,
আমি শালীনভাবে পোশাক পরিধান করতাম যাতে আমার দেহের প্রতি কেউ আকর্ষিত না হয়, এবং আমার পিতামাতাকে বিস্মিত করে দিয়ে কিছু সময়ের জন্য হিজাব পড়া শুরু করি। আমি মাদক বা যেকোন ধরনের যৌন কাজ থেকে দূরে থাকতাম, ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ খাবার থেকে দূরে থাকতাম এবং আমার সাধ্যমতো নিয়মিত প্রার্থনা করতাম।[7]
তিনি ১৬ বছর বয়সে একজন নাস্তিক হয়ে যান।[6] তিনি বিশ্বাস করতেন তিনি যথেষ্ট ভাগ্যবান অপেক্ষাকৃত উদার বাবা পাওয়ার জন্য যিনি তাকে শর্টস পড়ার বা ছেলেবন্ধু রাখার অনুমতি না দিলেও তাকে তার পছন্দমতো বই পড়তে দিতেন, যার মধ্যে ইসলামের সমালোচনাপূর্ণ বইও ছিলো এবং কলেজে যাওয়ার জন্য সারাহকে বাসা থেকে দূরে যাওয়ারও অনুমতি দেন। তার ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যাত্রা শুরু হয় যখন তার হাইস্কুলের নাস্তিক বন্ধুরা তার সাথে তর্ক-বিতর্ক শুরু করে। তার একজন বন্ধু কুরআন থেকে ভয়ঙ্কর উদ্ধৃতিগুলো মুদ্রণ করে আনতো এবং কোনো কথা না বলে তার হাতে দিয়ে যেতো। সারাহ তার নাস্তিক বন্ধুদের ভুল প্রমাণ করতে কুরআন পড়া শুরু করেন এবং ঐসকল কুরআনিক উদ্ধৃতিগুলোর অর্থ বুঝা শুরু করেন। কিন্তু তিনি কয়েকটি উদ্ধৃতি আরো খারাপ বলে উপলব্ধি করেন এবং ধীরে ধীরে নাস্তিকতার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন।[8]
সেইসময় একইসাথে তার বাবাও নাস্তিক হয়ে যান। হাইদার ২০১৬ সালে Reason Rally তে তার বাবার সাথে তার নাস্তিকতার পথে যাত্রাকে এক দশক ধরে বিস্তৃত তর্ক-বিতর্কের দীর্ঘ ধারাবাহিক ফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যাহোক,তার পিতা ফেসবুকে অন্যান্য পাকিস্তানি নাস্তিকদের গ্রুপে তার বয়সী সক্রিয় নাস্তিকদের আবিষ্কারের পূর্ব পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগের ব্যাপারে স্বছন্দে ছিলেন না। সারাহ এখন প্রাক্তন-মুসলিমদের উপদেশ দেন তাদের পরিবারের ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীকে খুঁজতে, যাতে প্রাক্তন-মুসলিমরা সহজে, স্বচ্ছন্দে তাদের ধর্মত্যাগ করতে পারেন।[5]
কলেজ সমাপ্তির পর, সারাহ ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে যান ও আয়হীন এবং সামাজিক প্রচারগ্রুপের সাথে যুক্ত হন। যা তাকে পরবর্তীতে নিজের প্রচার গ্রুপ শুরুর ব্যাপারে উদ্ভুদ্ধ করে।[9] সারাহ হাইদার এখনো ওয়াশিংটনে বসবাস করেন।[10]
২০১৩ সালে হাইদার ও মুহাম্মদ সাঈদ যৌথভাবে Ex-Muslims of North America (EXMNA) প্রতিষ্ঠা করেন, যা একটি প্রচার গ্রুপ এবং অনলাইন কমিউনিটি যার লক্ষ্য হচ্ছে ধর্মীয় মতবিরোধকে স্বাভাবিক করা এবং যারা ইসলাম ত্যাগ করেছে তাদেরকে স্থানীয় সহায়তা কমিউনিটি তৈরি করতে সাহায্য করা।[3][7] সংগঠনটি প্রথমে ওয়াশিংটন ডিসি ও টরন্টো ভিত্তিক থাকলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রায় ২৫টিরও বেশি অঞ্চলজুড়ে সক্রিয়।[1]
EXMNA বিশ্বাস করে যারা ধর্মত্যাগী হিসেবে অভিযুক্ত হয় তাদেরকে তাদের পরিবারের পাশাপাশি মুসলিম কমিউনিটিগুলো প্রায়শই পরিত্যাগ করে এবং এই সমাজচ্যুতির ভয় ও হিংস্রতা বিচ্ছিন্ন প্রাক্তন-মুসলিমদের নিজেদের অবিশ্বাসী হিসেবে পরিচিতি প্রদানের ক্ষেত্রে বিপদজনক হয়ে দাঁড়ায়।[11] এ কারণে EXMNA বিশ্বাস করে মতবিরোধকে ধর্মীয় কমিউনিটিতে স্বাভাবিক করা উচিত এবং একারণে তারা সামাজিক সহায়তা প্রদানের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে সেই সব লোকের জন্য যারা ইসলাম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।[3][12][13] EXMNA এর একটি সুদীর্ঘ স্ক্রিনিং ব্যবস্থা রয়েছে যা EXMNA সদস্যেদের নিরাপত্তা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।[3][12]
২০১৫ সালে ডেনভার, কলোরাডোয় অনুষ্ঠিত আমেরিকান হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশনের ৭৪তম বার্ষিক সম্মেলনে সারাহ “Islam and the Necessity of Liberal Critique“ নামে একটি বক্তৃতা দেন যা ইউটিউবে আপলোডের পর অসংখ্যবার দেখা হয়। ডেভ রুবিনের (ইংরেজি- Dave Rubin) সাথে একটি সাক্ষাৎকারে সারাহ তার উত্তেজনাকে এই বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে,”আমার মনে হচ্ছিলো আমার পুরো জীবন ঐ বক্তৃতাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছিলো”। যাহোক সারাহ বলেন, যেহেতু ইসলাম বিষয়ক মতবিরোধ একটি সংবেদনশীল বিষয় তাই তিনি বক্তৃতা দেয়ার সময় স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন কিন্তু তার বক্তৃতা গৃহীত হওয়াতে পরবর্তীতে তিনি স্বস্তি পেয়েছিলেন।[8] হাইদার, একজন স্ব-স্বীকৃত উদারপন্থী, তার মতো চিন্তাভাবনা অন্যান্য উদারপন্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে দেখে হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন,মুসলিম নারীরা যারা ইসলাম ত্যাগ করতে চান প্রায়শই তাদের পরিবার ও মুসলিম কমিউনিটি তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, এমনকি মারধর, নিগ্রহ এবং হুমকিও প্রদান করা হয়। তাদেরকে পশ্চিমা প্রভাব থেকে মুক্ত করতে জোর করে স্বদেশে পাঠানো হয় এবং জোর করে বিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। সারাহ মনে করেন, বামপন্থীরা তাকে ইসলামোফোব হিসেবে মনে করে। যার কারণে বামপন্থীরা তাকে এড়িয়ে চলেন এবং ইসলামের নিন্দা বর্ণবাদের সমতুল্য একথাও সারাহকে শুনতে হয়েছে। হাইদারের মতে প্রাক্তন-মুসলিম নাস্তিকদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় কারণ, “ডানপন্থী রাজনৈতিকরা তাদের পক্ষে নেই। ডানপন্থীদের (ধার্মিক) কেউ আমাদের নাস্তিকতার জন্য আমাদের পক্ষে নেই”।[3][14]
২০১৭ সালে হাইদার সিদ্ধান্ত দেন, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ জুড়ে EXMNA নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কলেজগুলোতে ভ্রমণ করবেন এবং EXMNA মুসলিম ও এক্স-মুসলিমদের উপর প্রভাব পড়ে এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচলা করবে।[1]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.