পর পর দুটি পদের মধ্যে ধ্রুব পার্থক্য বিদ্যমান এরূপ সংখ্যাসমূহের অনুক্রম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
যদি নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট সংখ্যক সংখ্যা নিয়ে গঠিত কোন অনুক্রমের যেকোন দুটি ধারাবাহিক পদের অন্তর সর্বদা একটি ধ্রুব সংখ্যা হয় তবে এই অনুক্রমকে সমান্তর প্রগমন বা সমান্তর প্রগতি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, . . . অনুক্রমটি একটি সমান্তর প্রগমন যার সাধারণ অন্তর হল ৫। সাধারণ অন্তর হল সমান্তর প্রগমনের ধারাবাহিক দুটি পদের বিয়োগফল।
যদি সমান্তর প্রগমনের প্রথম পদ এবং পর পর দুটি পদপর বিয়োগফল তথা সাধারণ অন্তর হয় তবে প্রগমনটির n-তম পদ কে নিম্নোক্তরূপে লেখা যায়:—
সাধারণভাবে লিখে পাই—
কোন সমান্তর প্রগমনের একটি নির্দিষ্ট (সসীম) অংশকে সসীম সমান্তর প্রগমন বলা হয়। কখনো কখনো একে শুধু সমান্তর প্রগমনও বলা হয়ে থাকে। আর একটি সসীম সমান্তর প্রগমনের সমষ্টিকে বলা হয় সমান্তর ধারা।
2 | + | 5 | + | 8 | + | 11 | + | 14 | = | 40 |
14 | + | 11 | + | 8 | + | 5 | + | 2 | = | 40 |
16 | + | 16 | + | 16 | + | 16 | + | 16 | = | 80 |
2 + 5 + 8 + 11 + 14 এর সমষ্টি নির্ণয়। এই অনুক্রমকে বিপরীতক্রমে সাজালে একটি নতুন অনুক্রম পাওয়া যায়। এখন উভয় অনুক্রমের পদগুলো ক্রমান্বয়ে যোগ করলে যোগফল হিসেবে শুধু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাই পাওয়া যাবে যা আবার উভয় অনুক্রমের প্রথম ও শেষ পদ দুটির সমষ্টির সমান (2 + 14 = 16)। এই 16 এর সাথে পদসংখ্যা 5 গুণ করলে পাওয়া যাবে 16 × 5 = 80 যা প্রগমনটির সমষ্টির দ্বিগুণ।
সসীম সমান্তর প্রগমনের সংখ্যাগুলোর সমষ্টিকে সমান্তর ধারা বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে নিচের সমান্তর ধারাটির সমষ্টি বিবেচনা করা যাক—
প্রগমনটির প্রথম ও শেষ পদের সমষ্টিকে (2 + 14 = 16) পদসংখ্যা n (এক্ষেত্রে 5) দ্বারা গুণ করে অতঃপর গুণফলকে 2 দ্বারা ভাগ করে খুব সহজেই প্রগমনটির সমষ্টি বের করা যায়। সূত্রাকারের লিখলে আমরা পাব—
উপরের সমস্যাটির ক্ষেত্রে আমরা নিচের সমীকরণটি পাই—
এই সূত্রটি যেকোন বাস্তব সংখ্যা এবং এর জন্য প্রযোজ্য। উদাহরণ দেখুন:
উপরের সূত্রটি প্রতিপাদনের নিমিত্তে সমান্তর ধারাটিকে প্রথমে দুটি ভিন্ন রাশিমালার মাধ্যমে প্রকাশ করা যাক:
এখন সমীকরণের উভয় পক্ষকে যোগ করে এবং যুক্ত সকল পদ পরিহার করে পাই:—
উভয় পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করলে সমীকরণটির নিম্নোক্ত সাধারণ রূপটি পাওয়া যাবে—
এই সমীকরণে প্রতিস্থাপন করে বিকল্প আরেকটি সূত্র পাওয়া যাবে—
অধিকন্তু একে পদসংখ্যা ভাগ করলে ধারাটির গড় বের হবে:
এই সূত্রটি প্রায় বিচ্ছিন্ন সুসম বণ্টনের গড়ের অনুরূপ।
প্রথম পদ, সাধারণ অন্তর এবং সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত একটি সমান্তর ধারার সকল পদের গুণজ বা গুণফলকে নিম্নোক্ত বদ্ধ রাশিমালার দ্বারা নির্ধারণ করা হয়:
এখানে হল গামা ফাংশন। এর মান ঋণাত্মক ও শূন্য হলে এই সূত্রটি কাজ করবে না।
প্রগমনটির গুণজ ফ্যাক্টরিয়াল এবং যেকোন ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং এর জন্য
রাশিমালাটির গুণজ হল
সমান্তর ধারার সকল পদের গুণজ নির্ণয়ের উপর্যুক্ত বদ্ধ সমীকরণটি এই দুটি গুণজেরই একটি সাধারণিকরণ।
এখানে হল ঊর্ধগামী ফ্যাক্টরিয়াল।
By the recurrence formula , valid for a complex number ,
সুতরাং ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা এবং ধনাত্মক জটিল সংখ্যা এর জন্য পাই—
একইভাবে, হলে আমরা পাব—
এবং সবশেষে পাব—
এর মাধ্যমে সূচিত সমান্তর প্রগমনটির 50তম পদ পর্যন্ত গুণজ হবে
প্রগমনটির প্রথম ১০টি পদের গুণজ হবে
যেকোন সমান্তর প্রগমনের আদর্শ বিচ্যুতিকে নিচের সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা যায়:
এখানে হল পদসংখ্যা এবং হল সাধারণ অন্তর। এই সূত্রটি একটি বিচ্ছিন্ন সুসম বণ্টনের আদর্শ বিচ্যুতির প্রায় অনুরূপ।
যেকোন দুটি দ্বিগুণ অসীম সমান্তর প্রগমনের ছেদ হয় শূন্য হবে অথবা ভিন্ন আরেকটি সমান্তর প্রগমন হবে যা চৈনিক ভাগশেষ উপপাদ্য প্রয়োগ করে বের করা যেতে পারে। যদি দ্বিগুণ অসীম সমান্তর প্রগমনের কোন গুচ্ছে প্রতি জোড়া প্রগমনের অ-শূন্য ছেদ থাকে তবে এদের সকলের মধ্যে একটি সাধারণ সংখ্যার অস্তিত্ব থাকবে যা হবে অসীম সমান্তর প্রগমন আকারের একটি হেলি গুচ্ছ।[১] অধিকন্তু অসীম সংখ্যক অসীম সমান্তর প্রগমনের ছেদ একটি অসীম প্রগমন না হয়ে বরং একক সংখ্যাও হতে পারে।
কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস ছোটবেলায় যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন তখন নাকি তিনি প্রতি জোড়া n + 1 এর মান দ্বারা +n/২ জোড়া সংখ্যাকে গুণনের মাধ্যমে[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] 1 থেকে 100 পর্যন্ত পূর্ণ সংখ্যাগুলোর সমষ্টি বের করার একটি পদ্ধতি পুনরাবিষ্কার করেছিলেন, তার সম্পর্কে প্রচলিত একটি অনির্ভরযোগ্য[২] গালগপ্প সেই কথাই বলছে। এই গল্পের সত্যতা যাই হোক না কেন, এই সূত্রটি প্রথম আবিষ্কারের কৃতিত্ব গাউসের নয় এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের পিথাগোরীয়দের থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।[৩] পুরাকালের আর্কিমিডিস, হিপ্সিকলস এবং দিওফ্যান্টাস;[৪] চীনে ঝাং সুয়ানজিং; ভারতে আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত এবং দ্বিতীয় ভাস্কর;[৫] এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপে আলকুইন[৬], দিকুইল,[৭] ফিবোনাচ্চি,[৮] জোহানেস ডি স্যাক্রোবোস্কো[৯] এবং তালমুদের তোসাফো নামক ভাষ্য রচনাকারী অজানা তোসাফিস্টদেরও নিকট একই ধরনের সূত্র জানা ছিল।[১০]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.