আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বলতে পরিবেশকে দুষণমুক্ত রেখে প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ বালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমার নিচে রাখাকে বুঝায়, যাতে করে পরিবেশ দূষিত না হয়।[1] উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণ, বালাই সহনশীল জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার এবং সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বালাই নাশকের সময়োচিত ও যুক্তি সঙ্গত ব্যবহারকে নিশ্চিত করে।[2]
আইপিএম (IPM)-সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। আই পি এম আই পি এম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বলতে পরিবেশকে দুষণমুক্ত রেখে প্রয়োজনে এক বা একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ বালাইকে অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমার নিচে রাখাকে বুঝায়, যাতে করে: ● পরিবেশ দূষিত না হয়। ● উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণ, বালাই সহনশীল জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার এবং সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বালাই নাশকের সময়োচিত ও যুক্তি সঙ্গত ব্যবহারকে নিশ্চিত করে। আই পি এম-এর উপকারিতা কি? ● আই পি এম গ্রহনের ফলে উপকারী পোকা মাকড়, মাছ, ব্যাঙ, পশু, পাখী ও গুইশাপ প্রভৃতি সংরক্ষণ করা যায়। ● বালাইনাশকের যুক্তি সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, যথেচ্ছ ব্যবহার না হওয়ায় উৎপাদন খরচ কমে। ● বালাইনাশকের পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধ করা সম্ভব হয়। এতে করে বালাইনাশক জনিত দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো যায়। ● ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় বালাইনাশক সহনশীলতা অর্জন করার সুযোগ পায় না। ● বালাই- এর পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা কম। ● সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দুষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। আই পি এম- এর পাঁচটি উপাদান: ১। উপকারী পোকামাকড় ও প্রাণী সংরক্ষণ: ক. জৈবিক দমনে ব্যাঙ, চিল, পেঁচা, গুইসাপ, মাকড়সা, লেডী বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল, বোলতা, মিরিড বাগ, ওয়াটার বাগ, ড্যামসেল ফড়িং প্রভৃতি উপকারী পোকামাকড় ও অন্যান্য প্রাণী ড়্গতিকারক পোকা দমনে যথেষ্ট সাহায্য করে। খ. উপকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য: ● ধান ক্ষেতের আইলে শিম ও শসা জাতীয় ফসল আবাদ করা । ● জমিতে পরিমিত পরিমাণ পানি রাখা । ● ফসল কাটার অন্তত: ৪/৫ ঘন্টা পর জমিতে লাঙল দেওয়া। ● ফসল কাটার পর আইলে কিছু খরকুটা বিছিয়ে দেওয়া। ● জমিতে বাঁশের বুষ্টার স্থাপনের মাধ্যমে বোলতা প্রতিপালন করা। ● বালাইনাশকের এলোপাতাড়ি ব্যবহার পরিহার করা। ২। বালাই সহনশীল জাতের চাষাবাদ: ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ অনেকাংশে রোধ করতে পারে। যেমন- ● বি আর ২৬: সাদা-পিঠ গাছ ফড়িং ও বস্নাস্ট রোগ প্রতিরোধশীল এবং পাতাপোড়া রোগ, বাদামি গাছ ফড়িং সবুজ পাতা ফড়িং আক্রমণে মধ্যম প্রতিরোধশীল। বাদামী গাছ ফড়িং ও সবুজ পাত ফড়িং আক্রমণে মধ্যম প্রতিরোধশীল । ● ব্রি ধান ২৭: সাদা পিঠ গাছ ফড়িং এর আক্রমনে প্রতিরোধশীল। টুংরো, ব্লাস্ট, পাতাপোড়া রোগ এবং বাদামি গাছ ফড়িং ও পামরী পোকার আক্রমণে মধ্যম প্রতিরোধশীল । ● ব্রি ধান ৩১: বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণে প্রতিরোধশীল এবং পাতা পোড়া ও টুংরো রোগে মধ্যম প্রতিরোধশীল । ● ব্রি ধান ৩৫: বাদামি গাছ ফড়িং প্রতিরোধশীল এবং টুংরো রোগ মধ্যম প্রতিরোধশীল । ৩। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার: সুস্থ ‘বীজ, সঠিক দূরত্বে রোপন, সবল চারা, সুষম সার , আগাছা মুক্ত জমি, সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা, সারিতে রোপণ ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহনে অধিক ফলন পাওয়া যায়। ৪। যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি: ● হাত জালের সাহায্যে পোকা ধরে মারা। ● আলোর ফাঁদে পোকা ধরা । ● আক্রানত্ম পাতার আগা কেটে দেওয়া । ● পাখি বসার জন্য ডাল পুঁতা । ● হাত দিয়ে পোকার ডিম সংগ্রহ করে ধংশ করা । এসব পদ্ধতি ব্যবহারে বালাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ৫। রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা: ● নিয়মিতভাবে অপকারী ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা। ● সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কেবল আক্রানত্ম জমিতে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময় , সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা । প্রথম ৪টি উপাদানের সাহায্যে ও যদি ক্ষতিকারক পোকা- মাকড় ও রোগের আক্রমণ দমিয়ে রাখা সম্ভব না হয়, কেবল তখনই সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বালাইনাশক ব্যবহার করা র্অথাৎ পোকার সংখ্যা অর্থনৈতিক দ্বারপ্রান্তে (ইটিএল) পৌঁছে গেলে তখনই বালাইনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার। ধানের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা নিম্নরুপ: ১. উপকারী পোকামাকড় ও প্রাণী সংরক্ষণ করুন আইল ফসলের চাষ বাঁশের তৈরি বুস্টার স্থাপন পেস্টি সাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার পরিহার করুন ফসল তোলার পর আইলের উপর নাড়া বিছিয়ে দেয়া ২. বালাই সহনশীল জাতের চাষ করুন: ব্রি ধান -২৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৩৫; বাদামি গাছ ফড়িং, পামরী, সাদা-পিঠ গাছ ফড়িং, টুংরো,বস্নাস্ট ও পাতা পোড়া, খোল পোড়া, কান্ডপচা রোগ। ৩. যান্ত্রিক উপায়ে দমন আক্রান্ত পাতার অগ্রভাগ কর্তন করে পোকার ডিম নষ্ট করা হাত জালের সাহায্যে পোকা ধরে মারা ডাল পুঁতে পাখি বসার ব্যবস'া করা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা মারা ফাঁদ পেতে ইঁদুর ধরে মারা ৪. আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সুস্থ বীজ ও চারা ব্যবহার করা সুষম সার প্রযোগ আগাছা বাছাই করা সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা ফসলের সমকালীন চাষাবাদ লাইন করে চারা লাগানো ৫. রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন: সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে বালাইনাশক নিয়ম মাফিক ব্যবহার করুন।
সুস্থ বীজ, সঠিক দূরত্বে রোপন, সবল চারা, সুষম সার, আগাছা মুক্ত জমি, সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা, সারিতে রোপণ ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
যান্ত্রিক দমন পদ্ধতি
হাত জালের সাহায্যে পোকা ধরে মারা।
আলোর ফাঁদে পোকা ধরা।
আক্রান্ত পাতার আগা কেটে দেওয়া।
পাখি বসার জন্য ডাল পুঁতা।
হাত দিয়ে পোকার ডিম সংগ্রহ করে ধংশ করা।
এসব পদ্ধতি ব্যবহারে বালাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা
নিয়মিতভাবে অপকারী ও উপকারী পোকামাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা।
সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কেবল আক্রান্ত জমিতে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা।
প্রথম ৪টি উপাদানের সাহায্যে ও যদি ক্ষতিকারক পোকা- মাকড় ও রোগের আক্রমণ দমিয়ে রাখা সম্ভব না হয়, কেবল তখনই সর অর্থনৈতিক দ্বারপ্রান্তে (ইটিএল) পৌঁছে গেলে তখনই বালাইনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার।