বাংলার সুলতান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ (ফার্সি: شمس الدین الیاس شاه, প্রতিবর্ণীকৃত: Shams al-Dīn Ilyās Shāh; ১৩৪২–১৩৫৮) ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম শাসনকর্তা। তিনি ১৩৪২ সালে সোনারগাঁও বিজয়ের পর লখনৌতির সুলতান হন। শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম স্বাধীন সুলতান ছিলেন এবং ইলিয়াস শাহী বংশের সূচনা করেন,যা ১৫২ বছর ক্ষমতায় ছিলো।[৩] ইলিয়াস শাহী বংশ ১৩৪২ সাল থেকে ১৪১৫ সাল পর্যন্ত একটানা ৭৩ বছর ধরে অবিভক্ত বাংলা শাসন করে এবং এরপর মাঝখানে প্রায় ২০ বছর বাদ দিয়ে আরো ৫২ বছর তাদের শাসন কায়েম থাকে।সুলতান ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর পর তার পূত্র সুলতান সিকান্দার শাহ ক্ষমতায় আসেন।[৪] বাংলার ইতিহাসে তাকে মহাবীর আলেক্সান্ডারের সাথে তুলনা করা হয়।[৫]
সুলতান হাজী শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ شمس الدین الیاس شاه | |
---|---|
শাহ-ই-বাঙ্গালা শাহ-ই-বাঙ্গালিয়ান[১] বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা সুলতান-ই-বাঙ্গালা দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার শামসুদ্দুনিয়া ওয়াদ্দীন আবুল মুজফ্ফর ইলিয়াস শাহ[২] | |
সপ্তগ্রামের শাসক | |
রাজত্ব | ১৩৪২–১৩৫২ |
পূর্বসূরি | ইজ্জউদ্দীন ইয়াহিয়া |
বাংলার সুলতান | |
রাজত্ব | ১৩৫২–১৩৫৮ |
উত্তরসূরি | সিকন্দর শাহ |
জন্ম | অজানা |
মৃত্যু | ১৩৫৮ |
সমাধি | |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফুলোয়ারা বেগম |
বংশধর | সিকন্দর শাহ |
রাজবংশ | ইলিয়াস শাহী রাজবংশ |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
তিনি সিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন এবং সিস্তানি মানুষ জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন[৬]
শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ প্রথম জীবনে দিল্লির সালতানাতের অধীনে চাকরি করতেন।[৩] কিন্তু কিছু সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে তিনি বাংলা পালিয়ে আসেন এবং তৎকালীন বাংলায় দিল্লির প্রাদেশিক গভর্নর ইজাজউদ্দীন ইয়াহিয়ার অধীনে কাজ করা শুরু করেন। ১৩৩৮ সালে ইজাজউদ্দীন ইয়াহিয়ার মৃত্যু হলে শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ সাতগাঁওয়ের ক্ষমতা দখল করেন এবং একে দিল্লির অধীন থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। ১৩৪২ সালে প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে লখনৈতির সুলতান আলাউদ্দীন আলী শাহকে পরাজিত করে তিনি লখনৌতির সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ইলিয়াস শাহী বংশের সূচনা করেন।
১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দে, তিনি যখন পূর্ব বাংলার রাজধানী সোনারগাও আক্রমণ করেন তখন ফখরউদ্দিনের পুত্র ইখতিয়ার উদ্দিন গাজী শাহ এর শাসনকর্তা ছিলেন। ইলিয়াস শাহ তাকে বিতাড়িত করে সোনারগাঁও অধিকার করেন।এভাবে তিনি বাংলার তিনটি প্রদেশ যথা সোনারগা ও লখনৌতিকে একত্রিত করে সমগ্র বাংলার অধিশ্বর হোন। কামরুপের কতকাংশ যে ইলিয়াস শাহের রাজ্যভুক্ত ছিল তা তার পুত্র সিকান্দার শাহের রাজত্বের প্রথম বছরে কামরূপের টাকশালে উৎকীর্ণ একটি মুদ্রা হতে বোঝা যায়। এরূপে তার রাজ্যসীমা আসাম হতে বারাণসী পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এছাড়াও তিনি ত্রিহুত অধিকার করেন ১৩৪৪ সালে। তখন কার ত্রিহুতের আত্নকলহই ইলিয়াস শাহকে অনুপ্রাণিত করে ত্রিহুত বিজয় করতে। এছাড়াও তিনি নেপালে ১৩৫০ সালে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।শম্ভুনাথের শিলালিপি ও নেপাল রাজবংশাবলিতে ইলিয়াস শাহের নেপাল আক্রমণের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু তার এই সমরাভিযান তার অসাধারণ সেনাপতিত্বের বহিঃপ্রকা। একে একে তিনি উরিষ্যা,চম্পারণ ও গোরক্ষপূর জয় করেন।এছাড়াও ইলিয়াস শাহকে মধ্যযুগের মুসলিম বাংলার ইতিহাসে প্রথম বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা বলা যায়। দিল্লির কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে নিজেকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। লখনৌতির শাসক হিসেবে বাংলা অধিকার করলেও তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের সমন্বয়ে দু ভূখণ্ডকে একত্রিত করে বৃহত্তর সৃষ্টি করেন। এ অখণ্ড ভৌগোলিক রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও বাঙালীদের একত্র করার পিছনে তার দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। তার রাজত্বকালেই বাঙালিরা একটি জাতি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। এ সময় হতেই বাংলার সকল অঞ্চলের অধিবাসী বাঙালী বলে পরিচিত হয় এবং বাংলার বাইরের দেশগুলোও তাদের কে বাঙালী বলে অভিহিত করে। ইলিয়াস শাহ 'শাহ ই বাঙ্গালাহ' ও 'শাহ ই বাঙ্গালী'উপাধি গ্রহণ করে বাঙালীদের জাতীয়নেতা হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন। এ কারণে তাকে মধ্যযুগে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা হিসেবে অভিহিত করা যায়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের তরাই অঞ্চলে এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। ইতঃপূর্বে কোনো মুসলিম বাহিনী এ অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে নি। তিনি রাজধানী কাঠমুন্ডু পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে বিপুল ধনসম্পদ নিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি নেপালের কোনো অংশ তার রাজ্যভুক্ত করেন নি।
তিনি ৭৫৯ হিজরি সনের প্রথম দিকে অর্থাৎ ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দের শেষ অথবা ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে মৃত্যুবরণ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.