Remove ads

রবার্ট ক্লাইভ (সেপ্টেম্বর ২৯, ১৭২৫ - নভেম্বর ২২, ১৭৭৪) ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী।[১] তিনি ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করেন।[১] তার উপাধি ছিল পলাশীর প্রথম ব্যারনপলাশীর যুদ্ধে তার নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদল বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদলকে পরাজিত করে এবং তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম গভর্নর ছিলেন।[২]

Thumb
পলাশীর যুদ্ধের পর ক্লাইভের সাথে মীরজাফর দেখা করছেন, শিল্পী ফ্রান্সিস হেম্যানের আঁকা ছবি
দ্রুত তথ্য ফোর্ট উইলিয়াম প্রেসিডেন্সীর গর্ভনর, পূর্বসূরী ...
মেজর জেনারেল দ্য রাইট অনারেবল
দ্য লর্ড ক্লাইভ
কেবি এমপি এফআরএস
Thumb
সামরিক পোষাকে লর্ড ক্লাইভ।
ন্যাথানিয়েল ড্যান্স আকা ছবি
ফোর্ট উইলিয়াম প্রেসিডেন্সীর গর্ভনর
কাজের মেয়াদ
১৭৫৭  ১৭৬১
পূর্বসূরীরজার ড্রেকে
রাষ্ট্রপতি হিসেবে
উত্তরসূরীহেনরি ভ্যান্সিটার্ট
কাজের মেয়াদ
১৭৬৫  ১৭৬৬
পূর্বসূরীহেনরি ভ্যান্সিটার্ট
উত্তরসূরীহ্যারি ভেরেলেস্ট
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৭২৫-০৯-২৫)২৫ সেপ্টেম্বর ১৭২৫
স্টেসি হল, মার্কেট ড্রেইটন, শরোস্পিয়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২২ নভেম্বর ১৭৭৪(1774-11-22) (বয়স ৪৯)
বার্কেলি স্কয়ার, ওয়েস্টমিনিস্টার, লন্ডন, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাব্রিটিশ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীমার্চেন্ট টেইলর্স স্কুল
পুরস্কারকেবি
সামরিক পরিষেবা
ডাকনামক্লাইভ অব ইন্ডিয়া
আনুগত্য যুক্তরাজ্য
শাখাব্রিটিশ সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৭৪৬–১৭৭৪
পদমেজর-জেনারেলl
ইউনিটব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
কমান্ডভারতের কমান্ডার ইন চিফ
যুদ্ধWar of the Austrian Succession
মাদ্রাজের যুদ্ধ
দ্বিতীয় কর্নাটিকের যুদ্ধ
আর্কট অবরোধ
আর্নির যুদ্ধ
চিঙ্গলেপুতের যুদ্ধ
সাত বছরের যুদ্ধ
চন্দনগরের যুদ্ধ
পলাশীর যুদ্ধ
বন্ধ
Thumb
লর্ড ক্লাইভের প্রতিকৃতি
Thumb
রবার্ট ক্লাইভ স্ট্যাচু, কলকাতা ভিক্টরিয়াল মেমোরিয়াল
Remove ads

জন্ম ও ছেলেবেলাঃ

রবার্ট ক্লাইভের জন্ম ইংল্যান্ডের স্টাইচের স্রোপশায়ার শহরে। পিতা রিচার্ড ক্লাইভ ও মাতা রেবেকার ১৩ সন্তানের সবার বড় ক্লাইভ।[৩] তার ছেলেবেলার বেশিরভাগ সময় কেটেছে ম্যানচেস্টারে তার খালার বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই ক্লাইভ ছিলো উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের, কিশোর বয়সে সে এবং তার বন্ধুরা মিলে একটি চাঁদাবাজির দল গঠন করে।

ক্লাইভের যখন ৯ বছর বয়স তখন তার খালা মারা যান এবং ক্লাইভ তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। সেখানে সে মার্কেট ডেইটন স্কুলে ভর্তি হয়। তবে তার বদমেজাজি স্বভাবের কারনে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং লন্ডনে মার্চেন্ট টেইলরস স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। তবে আচরণের পরিবর্তন না হওয়ার কারনে তাকে সেখান থেকেও নিয়ে যাওয়া হয়।[৪]

Remove ads

নবাবগঞ্জের যুদ্ধ

দিল্লীর বাদশা পূর্ণিয়ার নবাব শওকত জঙ্গকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাবি সনদ পাঠিয়েছিলেন। শওকত নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন করেন। ইংরেজরা এই সংবাদ পেয়ে গোপনে শওকত জঙ্গের সাথে মিত্রতার করার চেষ্টা করতে থাকে। অপরদিকে মাদ্রাজের ইংরেজ দরবার কর্নেল রবার্ট ক্লাইভকে প্রধান সেনাপতি করে কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠায়। সিরাজদ্দৌলাও শওকত জঙ্গকে প্রতিরোধ করার জন্য রওনা হন। পথিমধ্যে নবাবগঞ্জ নামক স্থানে উভয়পক্ষ মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে শওকত নিহত হন। সিরাজদ্দৌলা দেওয়ান মোহনলালের হাতে পূর্ণিয়ার শাসনভার অর্পণ করে রাজধানীতে ফিরে আসেন।

ক্লাইভ ও ওয়াটসন পলতায় পৌঁছেই কলকাতা অভিমুখে রওনা হন। প্রায় বিনাযুদ্ধে তারা কলকাতা দুর্গ জয় করে নেন। এর আগে ক্লাইভ ও ওয়াটসন কলকাতায় এসে সিরাজদ্দৌলার কাছে সন্ধির প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন এবং সিরাজদ্দৌলা তাতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজরা শর্ত ভঙ্গ করে কলকাতা আক্রমণ করে। সিরাজদ্দৌলা তার মন্ত্রীদের কুচক্রের বিষয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং এ কারণে ইংরেজদের সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চেষ্টা চালাতে থাকেন। তাই ইংরেজদের সকল দাবিতে রাজি হয়ে তিনি ১৭৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংরেজদের সাথে একটি সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেন। ইতিহাসে এই সন্ধি 'আলিনগরের সন্ধি' নামে পরিচিত। কিন্তু ইংরেজরা তাদের মতিগতির কোন পরিবর্তন করল না। মূলতঃ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ফরাসিদের সঙ্গে। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা ফরাসিদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছিলেন। আলিনগরের (কলকাতা) সন্ধির প্রতিশ্রুতি পালনে নবাবকে যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল।

Remove ads

পলাশীর যুদ্ধ

১৭৫৭ সালের ১২ জুন কলকাতার ইংরেজ সৈন্যরা চন্দননগরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। সেখানে দুর্গ রক্ষার জন্য অল্প কছু সৈন্য রেখে তারা ১৩ জুন অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে যুদ্ধযাত্রা করে। কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের পথে হুগলী, কাটোয়ার দুর্গ, অগ্রদ্বীপ ও পলাশীতে নবাবের সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তারা কেউ ইংরেজদের পথ রোধ করে নি। ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বুঝতে পারেন, তার সেনাপতিরাও এই ষড়যন্ত্রে শামিল।

বিদ্রোহের আভাস পেয়ে সিরাজ মীর জাফরকে বন্দি করার চিন্তা পরিত্যাগ করেন। তিনি মীর জাফরকে ক্ষমা করে তাকে শপথ নিতে বলেন। মীর জাফর পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে অঙ্গীকার করেন যে, তিনি শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকতেও বাংলার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন হতে দেবেন না। গৃহবিবাদের মীমাংসা করে নবাব রায় দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ খান, মীর জাফর, মীর মদন, মোহন লাল ও ফরাসি সেনাপতি সিনফ্রেঁকে সৈন্য চালানোর দায়িত্ব দিয়ে তাদের সঙ্গে যুদ্ধযাত্রা করেন।

২৩ জুন সকাল থেকেই পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজরা মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। ১৭৫৭ সালের ২২ জুন মধ্যরাতে রবার্ট ক্লাইভ কলকাতা থেকে তার বাহিনী নিয়ে পলাশী মৌজার লক্ষবাগ নামে আম্রকাননে এসে তাঁবু গাড়েন। বাগানটির উত্তর-পশ্চিম দিকে গঙ্গা নদী। এর উত্তর-পূর্ব দিকে দুই বর্গমাইলব্যাপী আম্রকানন। বেলা আটটার সময় হঠাৎ করেই মীর মদন ইংরেজ বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তার প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে ক্লাইভ তার সেনাবাহিনী নিয়ে আমবাগানে আশ্রয় নেন। ক্লাইভ কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। মীর মদন ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু মীর জাফর, ইয়ার লুৎফ খান ও রায় দুর্লভ যেখানে সৈন্য সমাবেশ করেছিলেন সেখানেই নিস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাদের সামান্য সহায়তা পেলেও হয়ত মীর মদন ইংরেজদের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করতে পারতেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সিরাজউদ্দৌলার গোলাবারুদ ভিজে যায়। তবুও সাহসী মীর মদন এবং অপর সেনাপতি মোহন লাল ইংরেজদের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গোলার আঘাতে মীর মদন মারাত্মকভাবে আহত হন ও মারা যান। নবে সিং হাজারী ও বাহাদুর খান প্রমুখ গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধানও একইসাথে মৃত্যুবরণ করেন।

গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফর ও রায় দুর্লভকে তাদের অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীব্র বেগে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু উভয় সেনাপতি তার নির্দেশ অমান্য করেন। তাদের যুক্তি ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া অগ্রসর হওয়া আত্মঘাতী ব্যাপার। কিন্তু কোম্পানি ও নবাবের বাহিনীর মধ্যে তখন দূরত্ব মাত্র কয়েকশত গজ। বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহন লাল নবাবকে পরামর্শ দেন যুদ্ধবিরতি ঘটলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সিরাজ মীর জাফর প্রমুখের পরামর্শে পশ্চাৎপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। বিকেল পাঁচটায় সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী নির্দেশনার অভাবে এবং ইংরেজ বাহিনীর গোলন্দাজি অগ্রসরতার মুখে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে অর্থাৎ পরাজয় স্বীকার করে। নবাবের ছাউনি ইংরেজদের অধিকারে আসে। ইংরেজদের পক্ষে ৭ জন ইউরোপীয় এবং ১৬ জন দেশীয় সৈন্য নিহত হয়। তখন কোনো উপায় না দেখে সিরাজউদ্দৌলা রাজধানী রক্ষা করার জন্য ২,০০০ সৈন্য নিয়ে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু রাজধানী রক্ষা করার জন্যেও কেউ তাকে সাহায্য করেনি। সিরাজউদ্দৌলা তার সহধর্মিণী লুৎফুন্নেসা ও ভৃত্য গোলাম হোসেনকে নিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়ে স্থলপথে ভগবানগোলায় পৌঁছে যান এবং সেখান থেকে নৌকাযোগে পদ্মামহানন্দার মধ্য দিয়ে উত্তর দিক অভিমুখে যাত্রা করেন। তার আশা ছিল পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারলে ফরাসি সেনাপতি মসিয়ে নাস-এর সহায়তায় পাটনা পর্যন্ত গিয়ে রাজা রামনারায়ণের কাছ থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে ফরাসি বাহিনীর সহায়তায় বাংলাকে রক্ষা করবেন। কিন্তু তার সে আশা পূর্ণ হয়নি। সিরাজ পথিমধ্যে বন্দি হন ও মিরনের হাতে বন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।

Remove ads

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.

Remove ads