Loading AI tools
হাতাহাতি লড়াইয়ের নাগালের চেয়ে বেশি দূরত্বে হতাহত করার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লক্ষ্যভেদী অস্ত্র বা দূরভেদী অস্ত্র বলতে হাতাহাতি লড়াইয়ের নাগালের বাইরে দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রকে বোঝায়। অর্থাৎ অস্ত্র ব্যবহারকারী হাতে অস্ত্র ধরে রাখলে যতটুকু নাগাল পান, তার চেয়ে বেশি দূরত্বে এটি কাজ করে। লক্ষ্যভেদী অস্ত্র ব্যবহার করাকে লক্ষ্যভেদন বা ইংরেজিতে শুটিং বলে। সাধারণত এইসব লক্ষ্যভেদী অস্ত্রের দ্বারা দূর থেকে কোনও কঠিন (কদাচিৎ তরল বা বায়বীয়) বস্তু নিক্ষেপ করা হয়, যা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে সেটির ক্ষতিসাধন করে। লক্ষ্যভেদী অস্ত্রের বিপরীত ধারণাটি হল হাতাহাতি লড়াইয়ের অস্ত্র, যেগুলি ঘনিষ্ঠ পরিসরে, স্বল্প পাল্লায়, হাতের নাগালের মধ্যে তথা হাতাহাতি লড়াইয়ে ব্যবহার করা হয়।
লক্ষ্যভেদী অস্ত্রগুলি আক্রমণকারীর জন্য সুবিধাজনক, কেননা এক্ষেত্রে আক্রান্ত লক্ষ্যবস্তু তার কাছাকাছি দৃশ্যমান পাল্লার বাইরে থেকে আগত অস্ত্রের দ্বারা আক্রান্ত হয়, ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদান ও পালটা আক্রমণ চালানো দুরূহ হয়।[1] এছাড়া লক্ষ্যভেদী অস্ত্রগুলি আক্রমণকারী ও আক্রান্ত বিপক্ষ ব্যক্তির মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি করে, যা আক্রমণকারীর জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ একটি পছন্দ, কেননা হাতাহাতি লড়াইয়ের সময় আক্রমণকারী তার শত্রুর নাগালের মধ্যে থাকে বলে তার পালটা আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যু বা জখমের সমান ঝুঁকি থাকে।
হাতাহাতি লড়াইয়ের অস্ত্র ও লক্ষ্যভেদী অস্ত্রের মধ্যে সীমারেখা সম্পূর্ণ পরিস্কার নয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্শা বা বল্লম, কুঠার, ছুরি, ছোরা, খঞ্জর, ইত্যাদি হাতাহাতি লড়াইয়ের পাশাপাশি উদ্দেশ্য ও পরিস্থিতিভেদে দূরে ছুঁড়েও ব্যবহার করা যায়। আবার অন্যদিকে একটি লক্ষ্যভেদী অস্ত্রকে হাতাহাতি লড়াইয়ের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যেমন একটি বন্দুকের কুঁদো বা বাটের সাথে লাগানো সঙ্গিন (বেয়োনেট) দিয়ে আঘাত করা যায়, কিংবা একটি হাতবন্দুকের (পিস্তল বা রিভলভার) বাট দিয়ে আঘাত করা যায়, এমনকি অবস্থা সঙ্গীন হলে মরিয়া হয়ে একটি তীরকেও হাতের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষ্যভেদী অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে হাত দিয়ে নিক্ষেপের জন্য বিশেষভাবে নকশাকৃত অস্ত্র, যেমন বাণ (ডার্ট), বর্শা বা বল্লম (জ্যাভেলিন), গুলতি; অপেক্ষাকৃত জটিল স্থিতিস্থাপক অস্ত্র যেমন তীর-ধনুক, আড়ধনু; এবং অবরোধের অস্ত্রশস্ত্র যেমন পাথর নিক্ষেপক, ফিঙ্গা (ক্যাটাপুল্ট), মহা-আড়ধনু (ব্যালিস্টা) ও মানজানিক (ট্রেবুশেট বা ত্রেবুশে)। এগুলি প্রাচীনকালে ও মধ্যযুগের প্রথম পর্বের সময় যুদ্ধবিগ্রহে অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র ছিল। বিশেষ করে যখন এগুলিকে গণহারে ব্যবহার করা হত, তখন এগুলি হাতাহাতি লড়াইয়ের অস্ত্র বা স্বল্প পাল্লার অস্ত্রে সজ্জিত শত্রুপক্ষ কাছাকাছি এসে হুমকিতে পরিণত হবার আগেই তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দান আক্রমণ করার সুযোগ করে দিত।
বারুদ উদ্ভাবন ও আগ্নেয়াস্ত্র বিকাশের পরে বন্দুক-জাতীয় সংকুচিত বায়ুচালিত লক্ষ্যভেদী অস্ত্র সামরিক সংঘাতগুলিতে পছন্দের অস্ত্রে পরিণত হয়, এমনকি এগুলি নিকট পাল্লার লড়াইয়েও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহে লক্ষ্যভেদী অস্ত্রগুলি কৌশলগত ও প্রণালীগত, উভয়ভাবেই ব্যবহৃত হয়, এবং দূরপাল্লার কামান দাগা, রকেট নিক্ষেপ ও নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র এগুলির কিছু উদাহরণ। কোনও লক্ষ্যভেদী অস্ত্রের সর্বোচ্চ কার্যকরী পাল্লা বা বিস্তার হল সেই সর্বোচ্চ দূরত্ব যেখান থেকে অস্ত্রটি চালালে সেটি নিয়মিত হতাহত বা ক্ষতিসাধন করতে পারে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.