রুপি
বিভিন্ন প্রচলিত মুদ্রার সাধারণ নাম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রুপি বলতে বোঝায় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, নেপাল, পাকিস্তান, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা এবং পুরনো আফগানিস্তান, তিব্বত, বার্মা এবং ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা, জার্মান পূর্ব আফ্রিকা এবং ট্রুসিয়াল রাজ্যসমূহে প্রচলিত মুদ্রার নাম। ভারতীয় টাকার অপর নাম রুপি। মালদ্বীপে মুদ্রার একক হলো রুফিয়াহ। ভারতীয় টাকা (₹) এবং পাকিস্তানি রুপিকে (রুপি) ১০০ পয়সায় ভাগ করা যায়। মরিশাস ও শ্রীলঙ্কার রুপি ভাগ করা হয় ১০০ সেন্টে। আর নেপালি রুপিকে ভাগ করা হয় ১০০ পয়সা বা ৪ সুখা অথবা ২ মোহরে।

ব্যুৎপত্তি
"রুপি" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত:রূপ্য (रूप्य) থেকে, যার অর্থ "পেটা রূপা, রৌপ্যমুদ্রা"।[১] এটি এসেছে বিশেষ্য শব্দ রূপ থেকে, যার অর্থ "রূপ, গঠন, সাদৃশ্য, ছবি"। আবার রূপ শব্দটির উৎস ভাবা হয় দ্রাবিড় শব্দ উরুপ্পু, যার অর্থ "দেহের একটি সদস্য"।[২]
শের শাহ সুরি ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ পর্যন্ত তার স্বল্প শাসনকালে উত্তর ভারতে প্রচলন করেন প্রথম রুপিয়া, ১৭৮ গ্রেন ওজনের রৌপ্যমুদ্রা।[৩] এছাড়াও তিনি দাম নামের তাম্রমুদ্রা এবং ১৬৯ গ্রেন ওজনের মোহর বা স্বর্ণমুদ্রা চালু করেন।[৪]
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

ভারতীয় রুপি প্রথম পরিচিত, প্রচলিত এবং কথিত হয় রুপিয়া নামে, শের শাহ সুরির (১৫৪০-১৫৪৫) এই রৌপ্যমুদ্রা মুঘল শাসকেরাও বহাল রাখেন।[৫] রুপির ইতিহাসের সূচনা প্রাচীন ভারতে সিরকা খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতকে। চীনা ওয়েন, মধ্যপ্রাচ্যের মুদ্রা এবং লিডিয়ান স্টাটার সহ বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন কিছু মুদ্রা প্রাচীন ভারতে প্রচলিত ছিল।[৬] শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ রুপ্য থেকে যার অর্থ রৌপ্যমুদ্রা,[৭] আর সেটা এসেছে সংস্কৃত রূপ মানে "সুন্দর গঠন" থেকে।[৮]
১৮৯১ সালের পূর্বে আফগানিস্তানে আফগান রুপি হিসেবে কাবুলি রুপি এবং কান্দাহারি রুপি ব্যবহৃত হতো। আফগান রুপিকে ৬০ পয়সায় ভাগ করা হতো। ১৯২৫ সালে এর পরিবর্তে আফগান আফগানি মুদ্রা প্রচলিত হয়।
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত তিব্বতের সরকারি মুদ্রাকে তিব্বতি রুপিও বলা হতো।[৯]
ভারতীয় টাকা, যা রুপি নামেও পরিচিত, দুবাই এবং কাতারে সরকারি মুদ্রা হিসেবে চালু ছিল ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত, যখন ভারত নতুন গাল্ফ রুপি ("এক্সটার্নাল রুপি"ও বলা হয়) প্রচলন করে স্বর্ণপাচার রোধ করার জন্য।[১০] ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত গাল্ফ রুপি বৈধ মুদ্রা হিসেবে চলে, এরপর ভারত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভারতীয় রুপির মূল্যহ্রাস করে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নতুন কাতার-দুবাই রিয়াল প্রতিষ্ঠা করা হয়।[১০]
পূর্ব আফ্রিকার উপকূল এবং দক্ষিণ আরব
পূর্ব আফ্রিকা, আরব এবং মেসোপটেমিয়ায় রুপি ও এর সম্পূরক মুদ্রাসমূহ বিভিন্ন সময় প্রচলিত ছিল। পূর্ব আফ্রিকায় রুপির ব্যবহার উত্তরে সোমালিয়া থেকে দক্ষিণে নাটাল উপনিবেশ পর্যন্ত ধিস্তৃত হয়েছিল। মোজাম্বিতে ব্রিটিশ ভারতীয় রুপিসমূহ ওভারস্ট্যাম্প করা হতো। ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা কোম্পানি সেখানে রুপি ও এর ভগ্নাংশ এবং পয়সা প্রবর্তন করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই রুপার দাম বেড়ে যাওয়ায় রুপির মূল্যমান হয়ে যায় দুই শিলিং স্টার্লিং। এই সুযোগে ১৯২০ সালে ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকায় নতুন ফ্লোরিন মুদ্রা চালু করা হয় এবং এটিকে স্টার্লিংয়ের মানে তোলা হয়। অল্পকাল পরেই, ফ্লোরিনকে দুই শিলিংয়ে ভাগ করা হয়। ব্রিটিশ ভারতে অবশ্য এরকম স্টার্লিংয়ে আত্তীকরণ করা হয়নি। সোমালিয়ায় ইতালীয় ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ ঠিক একই মানের উদ্রা রুপিয়া চালু করে এবং পয়সার নাম দেয় 'বেসা'।
স্ট্রেইটস সেটলমেন্টস
স্ট্রেইটস সেটলমেন্টগুলো ছিল মূলত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আউটলাইয়ার। আর ১৯ শতকে ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে স্পেনীয় ডলার সেখানকার কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর বদলে রুপি চালু করতে চাইলেও স্থানীয় জনগণ তার বিরোধিতা করে। যখন ১৮৬৭ সালে কোম্পানির কাছ থেকে ব্রিটিশ সরকার এসব স্ট্রেইট সেটলমেন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, মুদ্রা হিসেবে রুপি প্রচলনের চেষ্টা বাদ দেয়া হয়।
ডিনোমিনেশন
আগে রুপিকে (১১.৬৬ গ্রাম, .৯১৭ খাঁটি রূপা) ভাগ করা হতো ১৬ আনা, ৬৪ পয়সা বা ১৯২ পাইতে। রুপিকে দশমিকে রূপান্তরের পূর্বপর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের সব মুদ্রারই ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল। এক পয়সা সমান ছিল দুই ঢেলা, তিন পাই এবং ছয় দামারিস। দুই পয়সা (টাকা), দুই আনা (দাওয়ান্নি), চার আনা (চাওয়ান্নি, বা রুপির এক-চতুর্থাংশ), আট আনা (আটানি, বা অর্ধ রুপি) প্রভৃতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে ১৯৬১ সালে দশমিকায়ন করার পূর্বে। এসব মুদ্রার নামগুলো দিয়ে উর্দু আনাতে তাদের মূল্যমান বোঝা যায়, টাকা (দুই পয়সা বা অর্ধ আনা) বাদে। পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) "রুপি"র বদলে টাকা শব্দটি ব্যবহার করা হতো, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা বলতে বোঝানো হতো দুই পয়সা।
টঙ্কা একটি প্রাচীন সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ টাকা। বছরে বছরে রুপির মূল্যমান কমে যাওয়ায় দশমিক রুপির ভগ্নাংশের প্রচলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে[কখন?] ব্যাংক নোট এবং ৫ ও ১০ রুপির কিছু কয়েন কদাচিৎ ব্যবহৃত হয়, বরং কাগজী মুদ্রাই অর্থ লেনদেনের প্রায় একমাত্র উপায়। রুপির ভগ্নাংশগুলোর এখন কেবল ঐতিহাসিক মূল্য আছে, ব্যবহার নেই। পশ্চিম পাকিস্তানে এক টাকা মানে ছিল দুই পয়সা কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে রুপিকে টাকা বলা হতো। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর, বাংলাদেশের মুদ্রাকে সরকারিভাবে টাকা বলা হতে থাকে।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রুপিগুলো অস্ট্রেলিয়ায় সীমিত সময়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। মুদ্রার দশমিকায়ন করা হয় সিংহলে (শ্রীলঙ্কা) ১৯৬৯ সালে, ভারতে ১৯৫৭ সালে এবং পাকিস্তানে ১৯৬১ সালে। এভাবে, একটি ভারতীয় টাকাকে এখন ১০০ পয়সায় ভাগ করা যায়। এই পয়সাকে প্রায়ই বলা হয় নয়া পয়সা, মানে "নতুন টাকা"। ভারতীয় মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং পাকিস্তানে স্টেস ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান। রুপির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রতীক হলো "Rs"। তবে ভারত ২০১০ সালের ১৫ জুলাই ভারতীয় রুপির জন্য নতুন একটি প্রতীক গ্রহণ করেছে।
ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে রুপিকে বলা হয় রুপায়া, রুপায়ে বা সংস্কৃত রৌপ্য হতে উদ্ভূত অন্য যেকোনো শব্দ। বাংলা ও অসমীয়া ভাষায় একে টাকা বলা হয়, এবং সেভাবেই ভারতীয় ব্যাংকনোটে লেখা আছে। ওড়িশা অঞ্চলে একে বলা হয় টাঁকা/তংখা। ভারতে মুদ্রা প্রচলন করা হয় ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ এবং ২০০০ টাকার মূল্যমানে, অবশ্য ২০২৩ সালে ২০০০ নোটটি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাতিল করেছে।
প্রতীক
রুপি চিহ্ন "₨" হলো একটি মুদ্রা চিহ্ন যা ব্যবহার করে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মরিশাস, সেশেলস, পাকিস্তান এবং মালদ্বীপে অর্থের একক বোঝানো হয়। এই চিহ্নটি ল্যাটিন বর্ণ "Rs" বা "Rs."-এর অনুরূপ এবং প্রায়ই পরবর্তী চিহ্নগুলো ব্যবহৃত হয়।
রুপি প্রতীকটি ইউনিকোড ক্যারেক্টারে এনকোড করা হয় U+20A8 হিসেবে (কিছু ফন্ট, যেমন মাইক্রোসফট সান্স সেরিফ, চিহ্নটির বদলে ইউনিকোডের ভুল প্রতীক "Rp" ব্যবহার করে)। অর্থের পরিমাণ লেখার ক্ষেত্রে অঙ্কগুলোর পূর্বে উপসর্গ হিসেবে এই চিহ্ন বসিয়ে রুপির মুদ্রামান বোঝানো যায়, যেমন- "Re: ১" (এক এককের জন্য), বা "Rs. ১৪০" (এক রুপির বেশি হলে)। রুপি চিহ্নটি আগে ব্যবহৃত হতো ভারতীয় টাকা বোঝাতে। কিন্তু ২০১০ সালের ১৫ জুলাই থেকে এর বদলে ব্যবহার করা শুরু হয় ভারতীয় টাকার প্রতীক, ₹। নতুন চিহ্নটি গঠিত হয়েছে দেবনাগরী অক্ষর र (র) এবং লাতিন বড়হাতের অক্ষর R তার খাড়া দাগটি ছাড়া, সমান্তরাল দাগগুলো ওপরে (তাদের মধ্যে ফাঁকা অংশসহ)। এসব বৈশিষ্ট্য ত্রিরঙা ভারতীয় পতাকার ইঙ্গিতপূর্ণ বলে বলা হয়েছে।[১১] আর এটি সাম্যের চিহ্ন তুলে ধরেছে যা ভারতীয়দের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার ইচ্ছার প্রতীক।
শ্রীলঙ্কার রুপিকে সিংহলি ভাষায় "රු" প্রতীকে চিহ্নিত করা হয়।
মূল্যমান
এই অনুচ্ছেদটি মেয়াদোত্তীর্ণ। |
রুপি মুদ্রা তখন থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে, এমনকি ব্রিটিশ ভারতেও, যখন এতে থাকত ৯১.৭% রূপার ১১.৬৬ গ্রাম এবং এক ট্রয় আউন্সের ০.৩৪৩৭ গ্রামের এএসইউ[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন][১২] (বর্তমান মূল্যে ১০ মার্কিন ডলারের সমান)।[১৩] উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে, স্বর্ণ বিনিময় স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ভারতীয় একটি রৌপ্য রুপির মূল্য স্থির করা হয় এক শিলিং এশং চার পেন্স ব্রিটিশ মুদ্রা, অর্থাৎ ১৫ রুপিতে এক পাউন্ড স্টার্লিং।
রূপার পরিমাণের ভিত্তিতে রুপির মূল্যায়ন ঊনবিংশ শতাব্দীতে তীব্র প্রভাব ফেলেছিল, যেহেতু তখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো চলতো স্বর্ণের পরিমাপে। কিন্তু আমেরিকা ও বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশে বিপুল পরিমাণ রূপা আবিষ্কারের পর স্বর্ণের তুলনায় এর মূল্যমান অনেক কমে যায়।
দেশ | মুদ্রা | ISO 4217 কোড | ১ মার্কিন ডলারের মূল্য (আগস্ট ২০২৩) |
---|---|---|---|
![]() |
ভারতীয় টাকা বা ভারতীয় রুপি | INR | ₹ ৮২.৬৬ |
![]() |
ইন্দোনেশীয় রুপিয়া | IDR | Rp ১৫,২৩৫ |
![]() |
মালদ্বীপীয় রুফিয়াহ | MVR | Rf ১৫.৪০ |
![]() |
মরিশীয় রুপি | MUR | Rs ৪৫.৫৫ |
![]() |
নেপালি রুপি | NPR | रू ১৩২.৩৬ |
![]() |
পাকিস্তানি রুপি | PKR | Rs ৩০৪.১৮ |
![]() |
সেশেলস রুপি | SCR | SR ১৩.১৭ |
![]() |
শ্রীলঙ্কান রুপি | LKR | රු ৩২১.৪৫ |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.