Loading AI tools
ভারতীয় সুরকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাহুল দেববর্মণ (২৭ জুন ১৯৩৯ - ৪ জানুয়ারি ১৯৯৪) ছিলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এবং গায়ক।[১] তিনি পঞ্চম বা পঞ্চম দা এবং আর. ডি. বর্মণ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি গায়ক কিশোর কুমার এবং গায়িকা লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলেকে দিয়ে অনেক জনপ্রিয় গান বানিয়েছিলেন। তিনি এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমার সঙ্গীত জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক রূপে বিবেচিত হন। তিনি ছিলেন অন্যান্য সুরকারদের অনুপ্রেরণার মতো।[২] রাহুল তার পরে আসা সঙ্গীত পরিচালকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা ছিলেন।[২] তিনি তিন বার (১৯৮৩, ১৯৮৪ এবং ১৯৯৫) ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
রাহুল দেব বর্মণ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৪ জানুয়ারি ১৯৯৪ ৫৪) মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত | (বয়স
মৃত্যুর কারণ | হার্ট এ্যাটাক |
পেশা | গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক |
কর্মজীবন | ১৯৬১-১৯৯৪ |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
পিতা-মাতা | শচীন দেববর্মণ মীরা দেববর্মণ |
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত রাহুল মোট ২৯২টি হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত এবং ৩১টি বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন।[৩] তার অনেক বাংলা গানের এ্যালবামও রয়েছে যেগুলো তিনি পুজার সময় বের করতেন এবং গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার গীতিকার হিসেবে থাকতেন।
রাহুলের জন্ম কোলকাতাতে, তার বাবা শচীন দেববর্মণ একজন খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এবং মা মীরা দাসগুপ্ত ছিলেন গীতিকার। প্রাথমিকভাবে রাহুলের ডাকনাম টুবলু রাখা হয়েছিলো, এটা তার ঠাকুরদাদা রেখেছিলেন, পরে তার ডাকনাম পঞ্চম হয়ে ওঠে। কেউ কেউ বলে থাকেন সা রে গা মা পা-এর 'পা' ধ্বনি দ্বারা রাহুল একদম ছোটোবেলায় ক্রন্দন করতেন তাই তার নাম সা রে গা মা পা-এর পঞ্চম ধ্বনি অনুযায়ী পঞ্চম হয় বা 'প' অক্ষর থেকে পঞ্চম রাখা হয়। কেউ কেউ আবার এও বলেন যে অভিনেতা অশোক কুমার (১৯১১-২০০১) রাহুলের ডাকনাম পঞ্চম রেখেছিলেন।[৪]
রাহুল প্রাথমিক শিক্ষা বঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। রাহুল মাত্র নয় বছর বয়সে এ্যায় মেরে টোপি পালাট কে আ গানের সুর করেছিলেন, এবং তার বাবা শচীন ১৯৫৬ সালের চলচ্চিত্র ফানটুশ চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করেছিলেন। আরেকটি গান সার জো তেরা চাক্রায়েও রাহুলের সুর করা ছিলো এবং এটিও শচীন ১৯৫৭ সালের চলচ্চিত্র পিয়াসাতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।[৫]
রাহুল সঙ্গীত বিষয়ে মুম্বাইতে ওস্তাদ আলী আকবর খান এবং সমতা প্রসাদের কাছে ছোটোখাটো প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।[৬] সঙ্গীতকার সলিল চৌধুরীর কাছে রাহুল সঙ্গীতের ব্যাপারে অনেক কিছু শিখেছিলেন।[৭] রাহুল তার বাবা শচীনের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন এবং মাঝেমধ্যে শচীনের কোনো কোনো সঙ্গীতানুষ্ঠানে হারমোনিয়াম বাজাতেন তিনি।
রাহুল ১৯৫৮ সালের চলচ্চিত্র 'চলতি কা নাম গাড়ি', ১৯৫৯ সালের চলচ্চিত্র 'কাগজ কে ফুল', ১৯৬৩ সালের চলচ্চিত্র 'তেরে ঘর কে সামনে' এবং 'বন্দিনী', ১৯৬৪ সালের চলচ্চিত্র 'যিদ্দি', ১৯৬৫ সালের চলচ্চিত্র 'গাইড' এবং 'তিন দেবিয়াঁ' তে শচীনের সহকারী হিসেবে কাজ করে খ্যাতি কুড়ান। ১৯৫৮ সালের চলচ্চিত্র 'সোলভা সাল'-এর গান 'হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা'র সুর রাহুলই করেছিলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।[৮]
১৯৫৯ সালে রাহুল গুরু দত্তের সহকারী নিরঞ্জনের পরিচালনায় একটি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার জন্য স্বাক্ষরিত হন কিন্তু ঐ চলচ্চিত্রটি কখনো শেষ করা যায়নি। ১৯৬১ সালের চলচ্চিত্র 'ছোটে নাওয়াব' ছিলো রাহুলের সঙ্গীত পরিচালনার প্রথম চলচ্চিত্র যেটাতে শুধুই রাহুল সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।
১৯৬৬ সালের চলচ্চিত্র তিসরি মঞ্জিল ছিলো রাহুলের জীবনের প্রথম হিট চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ১৯৬৮ সালের চলচ্চিত্র 'পড়োশন'-এ তিনি কিশোর কুমারকে নিয়ে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন।
তিনি ১৯৩৯ সালের ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার ও গায়ক শচীন দেববর্মণ এবং তাঁর মা বিখ্যাত গীতিকার মীরা দেববর্মণ। তিনি ছিলেন তাঁর পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। তাঁকে শৈশবে টুবলু নামেও ডাকা হতো।
রাহুলের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রিটা। রিটা প্যাটেল নাম্নী এই তরুণীর সঙ্গে রাহুলের দার্জিলিংয়ে পরিচয় হয়েছিলো। রিটা তার বান্ধবীদেরকে বাজী লাগিয়েছিলেন যে, তিনি রাহুলের সঙ্গে ডেটিংয়ে যাবেন, হয়েওছিলো তাই, রাহুল রিটাকে ১৯৬৬ সালে বিয়ে করেন। রাহুলের সঙ্গে রিটার ১৯৭১ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং রাহুল শোকে মুষড়ে পড়েছিলেন।[৯] রাহুল 'মুসাফির হুঁ ইয়ারো' গানটির সুর রিটার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেই করেন, কিশোর কুমারকে দিয়ে গাওয়ানো গানটি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিলো, গানটি ১৯৭২ সালে মুক্তি প্রাপ্ত চলচ্চিত্র 'পরিচয়'-এর জন্য ছিলো।[১০]
১৯৮০ সালে গায়িকা আশা ভোঁসলেকে বিয়ে করেন রাহুল যদিও আশা রাজী ছিলেননা এবং রাহুল অসুস্থ হয়ে গেলেও আশা তার দেখাশোনা করতেননা এবং তারা খুব কমই একসঙ্গে থেকেছেন, ১৯৯৪ সালে রাহুল মারা গেলে আশা কিছুটা শোক প্রকাশ করেন, তিনি আজীবন রাহুলকে মূলত বন্ধু মানতেন। আশা রাহুলের চেয়ে ছয় বছরের বড় ছিলেন।[১১]
রাহুল মূলত সঙ্গীত নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন। এবং এর মাধ্যমে তিনি ভারতীয় সঙ্গীতকে নানান শিক্ষা প্রদান করেছেন। তিনি প্রথাগত মিউজিকের পরিবর্তে সবসময়ই কিছু নতুন করতে চাইতেন আর এ সবের মধ্যেই সৃষ্টি হত নতুন নতুন মেলোডি। বর্তমান দিনে দাড়িয়েও এখনও তার সঙ্গীত অমর হয়ে আছে। ভারতীয় সঙ্গীতের তিনি একজন পথপ্রদর্শক। নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্র, নতুন ঘরানার সঙ্গীত, নতুন কণ্ঠ, নতুন ছন্দ, নতুন তাল সবমিলিয়ে তিনি স্বয়ং এক পৃথক স্বর্ণযুগের রচনা করেছেন।
১৯৭৫ সালে, খুশবু সিনেমার জন্যে তিনি একটি গান কিশোর কুমারকে দিয়ে গাওয়ান। গানটি বিশেষ জনপ্রিয়তাও অর্জন করে কিন্তু, এর পিছনে আছে একটি গল্প। শোনা যায়, তিনি নাকি গানটির মিউজিকের জন্য প্রায় অনেকক্ষণ বৃষ্টির ফোঁটার আওয়াজ রেকর্ড করেছিলেন বৃষ্টিতে দাড়িয়ে।
১৯৪২: আ লভ স্টোরি’ ছবির জন্য গান রেকর্ড করা চলছে তখন। ছবির সঙ্গীত পরিচালক আরডি বর্মণের সুরে স্টুডিয়োয় ‘এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লগা’ গান গাইছেন কুমার শানু। বলিউডের সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্লেব্যাক গায়ক কুমার শানু। আরডি বর্মণের পরামর্শ মতোই গান গাইলেন শানু। কিন্তু স্টুডিয়ো থেকে বেরিয়েই বিপত্তি। কুমার শানুকে জড়িয়ে ধরে, চুমু খাওয়ার পরেই নাকি গালিগালাজ করা শুরু করে দেন পঞ্চম। অবাক হয়ে যান শানু নিজেও। তবে, তার পরে আর়ডির ওই আচরণের নেপথ্যে আসল কারণ জানতে পারেন তিনি,স্মৃতিচারণ করে শানু বলেন, ‘‘পঞ্চমদার দূরদৃষ্টি ছিল অসামান্য। একটা গানকে কী ভাবে হিট গানে পরিণত করতে হয়, উনি তা জানতেন। আমি গান গেয়ে বেরিয়ে আসার পরে পঞ্চমদা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। তারপরেই শুরু হয় ওঁর অকথ্য গালিগালাজ। আর সেই গালিগালাজের কোনও বাছবিচার নেই।’’ কিন্তু কেন? শানু বলেন, ‘‘পরে আমি জানতে পারি, ওঁর গানের রেকর্ডিং খুব পছন্দ হলেই নাকি উনি এ ভাবে গালিগালাজ করতেন! সেটা শুনে আমি একটু স্বস্তি পাই।’’
তিনি তাঁর জীবনে অসংখ্য পুরস্কার বিজয় করেছেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.