রাধা বিনোদ পাল

বাঙালি আইনবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

রাধা বিনোদ পাল

ডঃ রাধাবিনোদ পাল (২৭ জানুয়ারি ১৮৮৬ - ১০ জানুয়ারি ১৯৬৭) একজন বাঙালি আইনবিদ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দূরপ্রাচ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারার্থে স্থাপিত আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। "জাপান-বন্ধু বাংলাদেশী" বলে খ্যাতি রয়েছে তার। জাপানের ইতিহাসে রাধা বিনোদের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। জাপানের টোকিও শহরে তার নামে জাদুঘর, সড়ক ও স্ট্যাচু রয়েছে। জাপান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। তিনি আইন সম্পর্কিত বহু গ্রন্থের রচয়িতা।

দ্রুত তথ্য রাধাবিনোদ পাল, জন্ম ...
রাধাবিনোদ পাল
Thumb
জন্ম(১৮৮৬-০১-২৭)২৭ জানুয়ারি ১৮৮৬
মৃত্যু১০ জানুয়ারি ১৯৬৭(1967-01-10) (বয়স ৮০)
স্মৃতিস্তম্ভটোকিওর ইয়াসুকুনি শ্রাইনে, জাপান রাধাবিনোদ পালের সম্মানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ
জাতীয়তাবাঙালি
নাগরিকত্বভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনরাজশাহী কলেজ
প্রেসিডেন্সি কলেজ
হাজরা আইন কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাআইনজ্ঞ
পরিচিতির কারণটোকিও ট্রায়াল
দাম্পত্য সঙ্গীনলিনী বালা পাল (বি. ১৯০৭)
সন্তান১৪
আত্মীয়দেবী প্রসাদ পাল (জামাতা)
পুরস্কারপদ্মবিভূষণ
বন্ধ

প্রাথমিক জীবন

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত তৎকালীন অবিভক্ত নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার দৌলতপুরের মথুরাপুর ইউনিয়নের সালিমপুর মৌজার অধীনে তারাগুনিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে তার জন্ম হয়। এলাকাটি এখন জজপাড়া নামে পরিচিত। তার পিতার নাম হলো বিপিন বিহারি পাল।[]

ব্যক্তিগত জীবন

পাল ছিলেন নয়টি কন্যার জনক (শান্তি রানী, আশা রানী, লীলা রানী, বেলা রানী, নীলিমা, রমা রানী, রেনুকনা, লক্ষ্মী রানী এবং স্মৃতি কনা) এবং পাঁচ পুত্র (প্রশান্ত কুমার, প্রদ্যোৎ কুমার, প্রণব কুমার, প্রতীপ বিজয় এবং প্রতুল কুমার)। এক পুত্র, প্রণব কুমার পালও আইনজীবী (ব্যারিস্টার) হয়েছিলেন, তাঁর দুই জামাই বলাই লাল পাল এবং দেবী প্রসাদ পাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক এবং ভারতের অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসাবে)।

শিক্ষাজীবন

তার প্রাথমিক জীবন চরম দারিদ্রের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের গোলাম রহমান পণ্ডিতের কাছে তার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। তিনি তৎকালীন নদিয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) তারাগুনিয়া এল.পি স্কুলে (বর্তমানে তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ও পরে কুষ্টিয়া হাই স্কুলে তিনি মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ইন্টারমিডিয়েট রাজশাহী কলেজ ১৯২০ সালে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৯-২০ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু। ১৯২৫-১৯৩০ মেয়াদে এবং পরবর্তীতে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে অধ্যাপনা করেন।[] পরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৪১-৪৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[] ১৯৪৪-৪৬ মেয়াদে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[][]

কৃতিত্ব

প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব রাধা বিনোদ পালের সুখ্যাতি শুধু পাকিস্তান-ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৬-৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জাপানের রাজধানী টোকিও মহানগরে জাপানকে নানচিং গণহত্যা সহ দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে চীনাদের উপর জাপানি সেনাবাহিনীর দীর্ঘ কয়েক দশকের নৃশংসতার অভিযোগে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে যে বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হয়, তিনি ছিলেন সেই আদালতের অন্যতম বিচারপতি। তিনি তার ৮০০ পৃষ্ঠার বিচক্ষণ রায় দিয়ে জাপানকে “যুদ্ধাপরাধ”-এর অভিযোগ থেকে মুক্ত করেন। এ রায় বিশ্বনন্দিত ঐতিহাসিক রায়ের মর্যাদা লাভ করে। তার এ রায় জাপানকে সহিংসতার দীর্ঘ পরম্পরা ত্যাগ করে সভ্য ও উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশে প্রধানতম সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।[]

সম্মান

তিনি জাপান-বন্ধু ভারতীয় বলে খ্যাতি অর্জন করেন।[] রাধাবিনোদ পালকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করা হয় নিহোন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ১৯৬৬ সাল। জাপান সম্রাট হিরোহিতোর কাছ থেকে জাপানের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পদক ‘কোক্কা কুনশোও’ গ্রহণ করেছিলেন। জাপানের রাজধানী টোকিও তে তার নামে রাস্তা রয়েছে। কিয়োটো শহরে তার নামে রয়েছে জাদুঘর, রাস্তার নামকরণ ও স্ট্যাচু। তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক "পদ্মবিভূষণ" - এ ভূষিত হন।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

টোকিও ট্রায়াল টেলিসিরিয়ালটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের ট্রায়াল নিয়ে নির্মিত হলে তার চরিত্রে অভিনয় করেন ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খান

মৃত্যু

তিনি ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি কলকাতায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.