রহনপুর অষ্টভুজী সমাধিসৌধ গৌড়িয় আমলের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। এটি বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অষ্টভূজি ভবনের নিদর্শন।[1] গোমস্তাপুর উপজেলার সদর দপ্তর রহনপুরের উত্তর প্রান্তের নওদা বুরুজের ঠিক দক্ষিণ পাশের ১ কি.মি. দূরে অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমির উপর এ অষ্টভূজ সমাধিসৌধটি অবস্থিত।[2]
রহনপুর অষ্টভুজী সমাধিসৌধ | |
---|---|
বিকল্প নাম | রহনপুর গম্বুজ |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
অবস্থা | সংরক্ষিত |
স্থাপত্যশৈলী | মুসলিম স্থাপত্য |
অবস্থান | ধুলাউড়ি |
ঠিকানা | রহনপুর, গোমস্তাপুর |
শহর | রাজশাহী |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্বত্বাধিকারী | বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর |
কারিগরী বিবরণ | |
উপাদান | ইট, বালি, সুরকি |
পরিচিতি | বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অষ্টভূজি ভবনের নিদর্শন |
অবকাঠামো
সমাধিসৌধের বাইরের দিক থেকে পরিমাপ ২৬.৫২ মিটার। ভবনটির প্রত্যেকটি বাহু ১.৩৭ মিটার পুরু এবং ৪.৩৪ মিটার দীর্ঘ। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষণ ও সংস্কারের পূর্বে গৌড়িয়া ইট দ্বারা নির্মিত এ ভবনটি বেশ জীর্ণ অবস্থায় ছিলো। অষ্টকোণাকারে নির্মিত এ ক্ষুদ্র সমাধিসৌধের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে ৪টি খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ। সমাধিসৌধের একটি মাত্র গম্বুজ যা অষ্টদেয়াল পিপা আকৃতির হয়ে উর্ধে উঠে গম্বুজের ভার বহন করছে।
দরজার উভয় পাশের দেয়ালে সুন্দর প্যানেলিং এর কারুকাজ রয়েছে। প্রত্যেক দরজার দু পাশে শোভাবর্ধক সরু মিনার স্থাপিত। প্রতি দরজার উপরে ৯ টি করে খিলান রয়েছে, দরজার নকশা এর মধ্যে মধ্যবর্তিটিতে শাপলা ফুল অঙ্কিত রয়েছে। এর অনুভুমিক প্যারাপেট বদ্ধ মেরলনের সারি দ্বারা অলংকৃত। সমাধিসৌধের অভ্যন্তরে গম্বুজ ও নিম্নদেশে বিচিত্র নকশা ও ছোট ছোট কুলুংগি রয়েছে। ক্ষুদ্রাকৃতির কুলুংগিগুলো সম্ভবত বাতি রাখার জন্য ব্যবহৃত হত। গম্বুজের পার্শ্বদেশে পদ্মফুল এবং কেন্দ্র বিন্দুতে কলসচুড়া শোভিত রয়েছে।
ইতিহাস
প্রাচীন এ সমাধিসৌধটি স্থাপত্য শৈলীগত দিক থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে মুঘল রীতিতে নির্মিত বলে অনুমিত হয়। তবে কি উদ্দেশ্যে ভবনটি নির্মিত হয়েছিলো তা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। স্থানীয়ভাবে ধারণা করা হয় এটি কোন সমাধি সৌধ ছিলো।[3] অবশ্য বর্তমানে শবাধারের কোন আলামত বা চিহ্ন নাই। কিন্তু চতুর্পার্শ্বের দরজা দেখে এটা কোন ওলির মাজার সদৃশ বলে মনে হয়। কারণ প্রাচীন ইমারতগুলির মধ্যে অধিকাংশ বিলুপ্তি ঘটেছে। শুধু পবিত্র স্থাপনা গুলি আজো টিকে আছে। ঐতিহাসিক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ইমারতটিকে একটি মাজার বলে উল্লেখ করেন। এটি সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীর পরে নির্মিত হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। ডঃ আহমদ হাসান দানীও একই মত পোষন করেন।[4] খুব সম্ভবত সবাধারটি ভেঙ্গে ফেলা হয়, এবং এর মাল মসলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সময়ের বিচারে এটি বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অষ্টভূজি ভবনের নিদর্শন। পরবর্তিকালে এ বৈশিষ্টের পুনরাবৃত্তি দেখা যায় রাজমহলের বেগমপুরের অষ্টভূজি সমাধী সৌধে, যা এখন পর্যন্ত বাংলায় এ জাতীয় ভবনের সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে গণ্য। এ জাতীয় ভবনের ধারনাটি সম্ভবতঃ তুঘলক, সৈয়দ ও লোদী যুগে নির্মিত অষ্টভুজ সমাধী সৌধ থেকে এসেছে। মিহরাবের উপস্থিতি ভবনটিকে সমাধী সৌধ হিসেবেই বিবেচনার ইঙ্গিত প্রদান করে।[5] সুতরাং এটি যে একটি প্রাচীন মাজার বা সমাধীসৌধ তা নির্দিধায় বলা যায়।
বর্তমান অবস্থা
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সম্ভবত এ-অষ্টভুজি ইমারেতের আঙ্গিনা সুরকি ঢালাই করেছে। এ ভবনের চারপাশে প্রায় ২ বর্গ কি.মি. এলাকাজুড়ে অজস্র মৃৎপাত্র, প্রাচীন ইট ও পাথরের ভগ্নাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান আবাদি জমির প্রয়োজনের তাগিদেই এ স্থানটি হয়ে গেছে ফসলি জমি। এখনো জমি কর্ষন করতে গেলে প্রাচীন ইট-পাথর এর ভগ্নাংশ বের হয়ে পড়ে। এ থেকে বোঝা যায় এখানে দূর অতীতে সারিবদ্ধ সুসজ্জিত প্রচুর ইমারতের অস্তিত্ব ছিল।
ছবি
- রহনপুর অষ্টভূজি সমাধিসৌধ
- রহনপুর অষ্টভূজি সমাধিসৌধ
- রহনপুর অষ্টভূজি সমাধিসৌধ
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.