রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবন (১৯৩২–১৯৪১) কবির দীর্ঘ অসুস্থতার সময়। এই সময় রবীন্দ্রনাথ তার রচনায় মূলত মৃত্যুর প্রকৃতি অনুধাবনে মনোনিবেশ করেছেন।

১৯৩২–৩৭ সময়কালের রচনাবলি

Thumb
১৯৪০ সালে শান্তিনিকেতনে মহাত্মা গান্ধীর সহিত রবীন্দ্রনাথের (বামে) সাক্ষাৎ।

বিভিন্ন রাষ্ট্র পরিভ্রমণ করে মানবজাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির হীনতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের নিজের মত সুদৃঢ় হয়। ১৯৩২ সালের মে মাসে তিনি ইরাকের একটি বেদুইন শিবিরে গিয়েছিলেন। সেখানে এক উপজাতীয় নেতা তাকে বলেন, "আমাদের মহানবী বলেছেন, তিনিই সত্যকারের মুসলমান, যাঁর বাক্য বা কর্মের দ্বারা তাঁর ভ্রাতৃপ্রতিম মানুষগুলির ন্যূনতম ক্ষতিসাধনও হয় না।" কবি তার ডায়েরিতে লিখেছেন, "চমকে উঠলুম। বুঝলুম তার কথাগুলিই মানবতার মূল কথা।"[1]

জীবনের শেষ দশ বছরে রবীন্দ্রনাথ পনেরোটি বই লিখেছিলেন। পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫) ও পত্রপুট (১৯৩৬) নামে গদ্যকবিতা-সংকলনগুলি এই সময়েই প্রকাশিত হয়। জীবনের এই পর্বে রবীন্দ্রনাথ গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য নিয়ে নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), শ্যামা (১৯৩৯) ও চণ্ডালিকা (১৯৩৮) নামে প্রসিদ্ধ নৃত্যনাট্যত্রয়ীও এই সময়ই লিখিত হয়। এছাড়া তিনি দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪) নামে তিনটি উপন্যাসও রচনা করেন। জীবনের শেষ পর্বে কবি বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়। এই গ্রন্থে তিনি জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা তথ্যমূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তার এই সময়কার কবিতাগুলিতেও বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলির উপর আধারিত প্রকৃতিবাদের সুর ধ্বনিত হয়। সে (১৯৩৭), তিনসঙ্গী (১৯৪০) ও গল্পসল্প (১৯৪১) গল্পগ্রন্থগুলিতেও বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী চরিত্রের নানা সমাবেশ লক্ষিত হয়।[2]

১৯৩৭–৪১ সময়কালের অসুস্থতা

ঋজু শালপ্রাংশু দেহের অধিকারী রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন সুস্বাস্থ্য ভোগ করলেও জীবনের শেষ চার বছর দীর্ঘস্থায়ী পীড়ায় কষ্ট পেয়েছিলেন। তার মূল সমস্যা ছিল অর্শ। এই চার বছরে দুবার দীর্ঘসময় অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয় তাকে। ১৯৩৭ সালে একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন কবি ; এই সময় কোমায় চলে গিয়ে মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেন অত্যন্ত কাছ থেকে। আর তখন থেকেই তার এই দীর্ঘকালীন অসুস্থতার সূত্রপাত। ১৯৪০ সালের শেষ দিকে আবার একই ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এবার আর সেরে ওঠেননি। এই সময়কালের মধ্যেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতা রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। এই কবিতাগুলির মধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে লেখা রবীন্দ্রনাথের কিছু অবিস্মরণীয় পঙক্তিমালা।[3][4] দীর্ঘ রোগভোগের পর, শল্য চিকিৎসার জটিলতার কারণে, ১৯৪১ সালের ৭ অগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) বেলা ১২ টার কিছু পর কলকাতার জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত বাসভবনে প্রয়াত হন রবীন্দ্রনাথ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর ৩ মাস। উল্লেখ্য, জোড়াসাঁকোর এই বাড়িতেই,৬ দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন কবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা।[5][6] আজও বাংলাভাষী জগতে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকী পরম শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে।[7]

আরো দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.