Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
যোগাদ্যা বাংলার এক লৌকিক দেবতা ও ৫১ পীঠের এক পীঠের দেবী।তার মন্দির পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ব্লকের নিকটে ক্ষীরগ্রাম নামক গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন কালী মন্দির।এছাড়া হুগলীর প্রধান গ্রামদেবতা ষণ্ডেশ্বর জীউ-এর মন্দির চত্বরের মূল মন্দিরের উত্তর দিকে ও একটি যোগাদ্যা দুর্গামন্দির রয়েছে।
যোগাদ্যা | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | বর্ধমান জেলা |
অবস্থান | |
অবস্থান | ক্ষীরগ্রাম, মঙ্গলকোট |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
স্থাপত্য | |
ধরন | প্রস্তর স্থাপত্য |
পৌরাণিক কাহিনী দক্ষযজ্ঞে সতী দেহত্যাগ করলে মহাদেব মৃতদেহ স্কন্ধে নিয়ে উন্মত্তবৎ নৃত্য করতে থাকেন, বিষ্ণু সেই দেহ চক্রদ্বারা ছেদন করেন ৷ সতীর মৃতদেহের খন্ডাংশ একান্নটি স্থানে পতিত হয় ৷ এই একান্নটি স্থান দেবীর পীঠস্থান নামে পরিচিত ।ক্ষীরগ্রামও এক সতীপীঠ, দেবীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল এখানে।[1]
।[1]
কথিত আছে, ক্ষীরগ্রামের দেবী ৫১ পীঠের এক পীঠ। ক্ষীরগ্রামস্থিত দেবী যোগাদ্যার পূজা কাহিনীর ইতিবৃত্ত উদঘাটনে উঠে আসা গল্পটির বর্ণনায় ৷ শোনা যায় একদা হরিদত্ত নামে এক রাজার সন্নিকট দেবীর আগমনে শুরু হয় এই পূজা ৷ সপ্তাহব্যাপী মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে চলে ৷ কিন্তু অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি হল পূজা হত নরবলি দিয়ে ৷ রাজা সমস্ত পরিবারের জন্য নিয়ম চালু করেন , বলির নর প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্য প্রতি পূজায় ৷ স্বভাবতই শোকচ্ছায়া নেমে আসে প্রজাবর্গের মধ্যে ৷ নিয়মানুসারে একদিন পূজারী ব্রাহ্মণের পালা পড়ে, শোকগ্রস্ত একপুত্রী ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী ভোররাত্রিতে গ্রাম পরিত্যাগ করার চেষ্টা করে ৷ কিন্তু পথিমধ্যে দেবীর দর্শনে ও আশীর্বাদে তারা গ্রামে প্রত্যাবর্তন করে এবং নরবলির পরিবর্তে শুরু হয় মহিষবলি ৷ দেবী হয়ে ওঠেন জগৎযামিনী মহিষমর্দ্দিনী ।কিন্তু প্রাচীন যোগাদ্যা মূর্তিটি কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চন্দ এই গ্রামে যোগাদ্যার একটি মন্দির নির্মাণ করান। এবং সম্ভবত তারই আদেশে হারিয়ে যাওয়া মূর্তিটির অনুকরণে একটি দশভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তি তৈরি করেন দাঁইহাটের প্রস্তর শিল্পী নবীনচন্দ্র ভাস্কর। নতুন তৈরি হওয়া মূর্তিটি অবশ্য বছরের অন্যান্য সময়ে ডুবিয়ে রাখা হত ক্ষীরদিঘির জলেই। কেবল ৩১ বৈশাখ তা জল থেকে তুলে এনে সর্বসমক্ষে রাখা হত। এর মধ্যে হঠাৎই ঘটে গেল অলৌকিক এক কাণ্ড। অন্তত গ্রামের মানুষ এই ঘটনাকে অলৌকিক বলেই দাবি করেছেন। তিন বছর আগে, ক্ষীরদিঘি সংস্কারের সময় নতুন মূর্তির সঙ্গেই উঠে এল ‘হারিয়ে যাওয়া’ পুরনো যোগাদ্যা মূর্তিটি। মূর্তি ফেরত পাওয়ার আনন্দে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সাহায্যে গ্রামের মানুষ গড়ে তুললেন সম্পূর্ণ আলাদা একটি মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হল ফিরে পাওয়া দেবী-মূর্তি। ফলে বহিরাগতরা এখন গ্রামে গেলেই দর্শন পান দেবীর। তবে সংক্রান্তিতে দুই মন্দিরেই চলে দেবীর আরাধনা। ক্ষীরগ্রামে পুরনো যোগাদ্যা মন্দিরে তোরণদ্বারের স্থাপত্য দর্শকদের বিশেষ নজর টানে। জানা গিয়েছে, এই ক্ষীরগ্রামে একটা সময় বেশ কিছু চতুষ্পাঠী ছিল। মিলেছে বহু প্রাচীন পুঁথি। স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাদের দাবি, বেশ কয়েক জন পণ্ডিত এই গ্রামে বিদ্যাচর্চা করতেন। গবেষক যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, এই জনপদে অন্তত ৪০টি যোগাদ্যা বন্দনা পুঁথি মিলেছে। তবে তার মতে, সবথেকে আগে যোগাদ্যা বন্দনা লিখেছিলেন কবি কৃত্তিবাস। কবির মতে, রামায়ণের কালে মহীরাবণ বধের পরে তারই পূজিতা ভদ্রকালী বা যোগাদ্যাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেন রামচন্দ্র। কবির লিখিত কাহিনিটি ছিল এ রকম, মহীরাবণ রাম-লক্ষ্মণকে বেঁধে পাতালে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে দেবীর সামনে তাদের বলির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু হনুমান মাছির রূপ ধরে রাম-লক্ষ্মণের পরিচয় জানিয়ে দেন দেবীকে। দেবী তখন হনুমানকে বুদ্ধি দেন, রামকে বলি দেওয়ার আগে মহীরাবণ যখন দেবীকে প্রণাম করতে বলবেন, রাম যেন তখন তাকে বলেন, তিনি প্রণাম করতে জানেন না। মহীরাবণ হেঁট হয়ে দেবীকে প্রণাম করতে গেলেই খাঁড়া দিয়ে তার মাথা কেটে ফেলতে হবে। এমনটাই করেছিলেন রামচন্দ্র। এ তো গেল কৃত্তিবাসের কথা। এমন অনেক অলৌকিক কাহিনি, দেবীর নানা রূপ ধরে ভক্তদের আশীর্বাদ করার গল্প ছড়িয়ে রয়েছে ক্ষীরগ্রামের আকাশে-বাতাসে।[2] কিন্তু প্রাচীন যোগাদ্যা মূর্তিটি কোনও ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চন্দ এই গ্রামে যোগাদ্যার একটি মন্দির নির্মাণ করান। এবং সম্ভবত তারই আদেশে হারিয়ে যাওয়া মূর্তিটির অনুকরণে একটি দশভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তি তৈরি করেন দাঁইহাটের প্রস্তর শিল্পী নবীনচন্দ্র ভাস্কর। নতুন তৈরি হওয়া মূর্তিটি অবশ্য বছরের অন্যান্য সময়ে ডুবিয়ে রাখা হত ক্ষীরদিঘির জলেই। কেবল ৩১ বৈশাখ তা জল থেকে তুলে এনে সর্বসমক্ষে রাখা হত। এর মধ্যে হঠাৎই ঘটে গেল অলৌকিক এক কাণ্ড। অন্তত গ্রামের মানুষ এই ঘটনাকে অলৌকিক বলেই দাবি করেছেন। তিন বছর আগে, ক্ষীরদিঘি সংস্কারের সময় নতুন মূর্তির সঙ্গেই উঠে এল ‘হারিয়ে যাওয়া’ পুরনো যোগাদ্যা মূর্তিটি। মূর্তি ফেরত পাওয়ার আনন্দে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সাহায্যে গ্রামের মানুষ গড়ে তুললেন সম্পূর্ণ আলাদা একটি মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হল ফিরে পাওয়া দেবী-মূর্তি। ফলে বহিরাগতরা এখন গ্রামে গেলেই দর্শন পান দেবীর। তবে সংক্রান্তিতে দুই মন্দিরেই চলে দেবীর আরাধনা। ক্ষীরগ্রামে পুরনো যোগাদ্যা মন্দিরে তোরণদ্বারের স্থাপত্য দর্শকদের বিশেষ নজর টানে। জানা গিয়েছে, এই ক্ষীরগ্রামে একটা সময় বেশ কিছু চতুষ্পাঠী ছিল। মিলেছে বহু প্রাচীন পুঁথি। স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাদের দাবি, বেশ কয়েক জন পণ্ডিত এই গ্রামে বিদ্যাচর্চা করতেন। গবেষক যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, এই জনপদে অন্তত ৪০টি যোগাদ্যা বন্দনা পুঁথি মিলেছে। তবে তার মতে, সবথেকে আগে যোগাদ্যা বন্দনা লিখেছিলেন কবি কৃত্তিবাস। কবির মতে, রামায়ণের কালে মহীরাবণ বধের পরে তারই পূজিতা ভদ্রকালী বা যোগাদ্যাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেন রামচন্দ্র। কবির লিখিত কাহিনিটি ছিল এ রকম, মহীরাবণ রাম-লক্ষ্মণকে বেঁধে পাতালে নিয়ে গিয়েছেন। সেখানে দেবীর সামনে তাদের বলির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু হনুমান মাছির রূপ ধরে রাম-লক্ষ্মণের পরিচয় জানিয়ে দেন দেবীকে। দেবী তখন হনুমানকে বুদ্ধি দেন, রামকে বলি দেওয়ার আগে মহীরাবণ যখন দেবীকে প্রণাম করতে বলবেন, রাম যেন তখন তাকে বলেন, তিনি প্রণাম করতে জানেন না। মহীরাবণ হেঁট হয়ে দেবীকে প্রণাম করতে গেলেই খাঁড়া দিয়ে তার মাথা কেটে ফেলতে হবে। এমনটাই করেছিলেন রামচন্দ্র। এ তো গেল কৃত্তিবাসের কথা। এমন অনেক অলৌকিক কাহিনি, দেবীর নানা রূপ ধরে ভক্তদের আশীর্বাদ করার গল্প ছড়িয়ে রয়েছে ক্ষীরগ্রামের আকাশে-বাতাসে।[2]
অন্নদামঙ্গলে বলা হয়েছে ,
‘ক্ষীরগ্রামে ডানি পার অঙ্গুষ্ঠ বৈভব৷ /যুগাদ্যা দেবতা ক্ষীরখণ্ডক ভৈরব৷৷ ’
মানে দেবী যুগাদ্য়া ও ভৈরব ক্ষীরখণ্ডক।[2]
কাটোয়া-বর্ধমান রেলপথে কাটোয়া থেকে ১৭ আর বর্ধমান থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে কৈচর স্টেশন। বাস বা রিকশায় কৈচর থেকে ৪ কিমি যেতে ক্ষীরগ্রামের পশ্চিমে দেবী যোগাদ্যা উমা অর্থাৎ সিংহপৃষ্ঠে আসীন কালো কোষ্ঠীপাথরের দশভুজা মহিষমর্দিনী। মন্দির লাগোয়া ক্ষীরদিঘির জলে দেবীর বাস। বছরে মাত্র ৬ দিন দেবী জল থেকে ডাঙায় ওঠেন। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র দু’ দিন ভক্তরা দেবীর দর্শন পান। [3] [4] [5]
বৈশাখ সংক্রান্তির আগের দিন এবং জ্যৈষ্ঠের ৪ তারিখে। বাকি চার্টই দিন, আষাঢ়ী নবমী, বিজয়াদশমী, ১৫ পৌষ এবং মাঘ মাসের মাকরী সপ্তমীতে দেবীকে জল থেকে তুলে পুজো করা হলেও তাকে দেখাতে পান না সাধারণ মানুষজন। মন্দিরে রয়েছে প্রবেশমণ্ডপ, তার পরে গর্ভগৃহ। মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নাই। কারণ দেবীর বাস তো ক্ষীরদিঘিতে। গর্ভগৃহের দেওয়াল ঘেঁষে বেদী। সেই বেদীতেই দেবীর নিত্যপূজা হয়।তন্ত্রচূড়ামণি মতে এই দেবী যেখানে থাকেন , সেখানে আরও কোনও দেবীর মূর্তি রেখে পুজো করা যায় না।দেবীর নিত্যসেবায় আমিষ ভোগ হয়। কালী পুজোর রাতে মা যোগাদ্যার মহাভোগই দেওয়া হয় কালীকে ।ক্ষীরগ্রাম এবং সেই গ্রামের দেবী যোগাদ্যা সমার্থক৷ এ গ্রামের পুজোর খ্যাতি রাঢ়বঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল৷ তাই রাঢ়বঙ্গে প্রায় পঞ্চাশখানা যোগাদ্যাতলা আছে৷ এক সময় ক্ষীরগ্রামে এই মাতৃআরাধনায় বর্ধমান মহারাজার অনেক অনুদান ছিল৷অদূরে এক টিলার টঙে দেবীর ভৈরব ক্ষীরকণ্ঠ শিবের মন্দির। তাই এই গাঁয়ের নাম ক্ষীরগ্রাম, আদরের ক্ষীরগাঁ। মন্দির আর ক্ষীরদিঘি থেকে খানিকটা দূরে গ্রামের এক প্রান্তে ধামাসদিঘি। পুরাণে আছে, এই দিঘির ঘাটেই যুবতীর বেশে শাঁখা পরেছিলেন উমা। সেই থেকে দেবী বৈশাখের উৎসবে শাঁখা পরেন যোগাদ্যা। আর শাঁখা পরেন ক্ষীরগ্রামের এয়ো বধূরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। বিশাল মেলা বসে এখানে।যোগাদ্যা সতীপীঠের কালী পুজো ঘিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। নরবলি না হলেও পশু বলি দেওয়া হয়।বৈশাখী সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে আজও মহিষবলির মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয় ৷ পনেরো দিন যাবৎ প্রচুর ভক্তের জনসমাগমে পুণ্যস্থল ক্ষীরদীঘির পাড়ে মহামেলা হয়ে ওঠে মিলনক্ষেত্র ৷
প্রতিমা ছাড়াই কালীর আরাধনা এখানে শাস্ত্রীয় অহংকার বলে দাবি মন্দির কর্তৃপক্ষের।[1]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.