মোনা লিসা (/ˌmoʊnəˈliːsə/ MOH-nə-LEE-sə; ইতালীয়: Gioconda [dʒoˈkonda] বা Monna Lisa [ˈmɔnna ˈliːza]; ফরাসি: Joconde [ʒɔkɔ̃d]) হল ইতালীয় শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অর্ধদৈর্ঘ্যাকৃতির একটি প্রতিকৃতি চিত্রকর্ম। এটিকে ইতালীয় রেনেসাঁর আদর্শ শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়,[4][5] এবং একে "বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত, সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত, সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা, সবচেয়ে বেশি গাওয়া, এবং সবচেয়ে বেশি প্যারোডি করা শিল্পকর্ম" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[6] চিত্রকর্মটির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে বিষয়বস্তুর রহস্যময় অভিব্যক্তি,[7] গঠনশৈলীর বিশালত্ব, রূপের সূক্ষ্ম মডেলিং, এবং বায়ুমণ্ডলীয় অলৌকিকতা।[8]
মোনা লিসা | |
---|---|
ইতালীয়: লা জকোন্দা (La Gioconda), ফরাসি: লা জকোন্দা (La Joconde) | |
শিল্পী | লিওনার্দো দা ভিঞ্চি |
বছর | ১৫০৪–১৫০৬ খ্রিস্টাব্দ, হয়তো ১৫১৭ পর্যন্ত চলেছে |
ধরন | পপলার প্যানেলে তেলরঙ |
বিষয় | লিসা দেল জোকোন্দো |
আয়তন | ৭৭ সেমি × ৫৩ সেমি (৩০ ইঞ্চি × ২১ ইঞ্চি) |
অবস্থান | লুভ্র, প্যারিস |
চিত্রকর্মটি ঐতিহ্যগতভাবে ইতালীয় অভিজাত মহিলা |লিসা দেল জোকোন্দোকে চিত্রিত বলে বিবেচিত হয়।[9] এটি একটি সাদা পপলার প্যানেলে তৈলরঙে আঁকা।[10] লিওনার্দো চিত্রকর্মটি কখনোই জোকোন্দো পরিবারকে দেননি।[11] ধারণা করা হয়, এটি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে আঁকা হয়েছিল; তবে লিওনার্দো ১৫১৭ সাল পর্যন্ত এটি নিয়ে কাজ করতে পারেন। ফ্রান্সের প্রথম ফ্রান্সিস লিওনার্দোর মৃত্যুর পর ১৫১৯ সালে মোনা লিসা সংগ্রহ করেন, এবং বর্তমানে এটি ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মালিকানাধীন। এটি সাধারণত ১৭৯৭ সাল থেকে ল্যুভর জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়ে আসছে।[12]
বিশ্বব্যাপী চিত্রকর্মটির খ্যাতি আংশিকভাবে ১৯১১ সালে ভিনচেঞ্জো পেরুগিয়া দ্বারা চুরি হওয়ার কারণে বেড়েছে, যিনি এটিকে ইতালীয় দেশপ্রেমের কারণে চুরি করেছিলেন—তার বিশ্বাস ছিল এটি ইতালিতে থাকা উচিত। এই চুরি এবং ১৯১৪ সালে উদ্ধার পূর্বে কখনো না দেখা প্রচার তৈরি করে এবং অনেক সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা যেমন ১৯১৫ সালের অপেরা মোনা লিসা, ১৯৩০ সালের শুরুর দুটি চলচ্চিত্র (দ্য থেফট অব দ্য মোনা লিসা এবং আর্সেন লুপিন) এবং "মোনা লিসা" গানটি—যা ন্যাট কিং কোল দ্বারা রেকর্ড করা হয়েছিল এবং ১৯৫০ এর দশকের সবচেয়ে সফল গানের একটি হয়ে ওঠে।[13]
মোনা লিসা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান চিত্রগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৯৬২ সালে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বীমা মূল্যায়নের জন্য গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে স্থান পেয়েছে,[14] যা ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সমান।[15]
ইতিহাস
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে একটি পাইন কাঠের টুকরোর ওপর মোনা লিসার এই ছবিটি আঁকেন। চিত্রকলার ইতিহাসে এই চিত্রকর্মটির মতো আর কোনোটি এত আলোচিত ও বিখ্যাত হয়নি। এর একমাত্র কারণ মোনা লিসার সেই কৌতূহলোদ্দীপক হাসি, যা পরবর্তীতে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে এটি প্যারিস শহরের ল্যুভ জাদুঘরে রাখা আছে। এটি ছিল শিল্পীর সবচেয়ে প্রিয় ছবি এবং তিনি সবসময় এটিকে সঙ্গেই রাখতেন। আর তিনি নিজেই বলতেন এটি হলো আমার সেরা শিল্পকর্ম।
২০০৫ সালে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়েছে, এই চিত্রকর্মটিতে আঁকা নারী প্রকৃতপক্ষে ইতালির ফ্লোরেন্সের অভিজাত নারী ও ফ্রান্সেসকো দেল জোকোন্দোর স্ত্রী লিসা দেল জোকোন্দো গেরার্দিনি।[16] তবে মোনা লিসাকে নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত ছিল। কিছু গবেষকগণ মনে করতেন, মোনা লিসা হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মা আবার কেউ মনে করতেন মোনা লিসা হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বান্ধবী। একটি কম্পিউটার পরীক্ষায় দেখা গেছে মোনা লিসা'র সাথে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কিছুটা মিল রয়েছে। তাই মনে করা হয় হয়তো মোনা লিসা চিত্র কর্মটি না ছেলে না মেয়ে।
পরিচয় নিশ্চিতকরণ
লিওনার্দোর মোনা লিসা সম্পর্কে সমসাময়িক নিষ্পত্তিমূলক তথ্যের অভাবের কারণে চিত্রকর্মটিতে অঙ্কিত নারীর পরিচয় নিশ্চিত করা কঠিন ছিল। ২০০৫ সালে সিসারোর এপিস্তউলেই আদ ফামিলিয়ারেস (লাতিন: Epistulae ad Familiares, আত্মীয়দের চিঠি) বইটির ১৪৭৭ সালের সংস্করণের ডান মার্জিনে ভেসপুচ্চির লেখা একটি মন্তব্য হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কারের পর এই অবস্থার পরিবর্তন হয়। ড. আরমিন শ্লেচার লাইব্রেরিতে একটি ইনকুনাবুলা (মুদ্রণশিল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে মুদ্রিত বই) প্রদর্শনীর জন্য বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করার সময় এই আবিষ্কার করেছিলেন।[17]
নোটের সংক্ষিপ্ত ল্যাটিন পাঠ্যটি নিম্নরূপ: Apelles pictor. Ita Leonardus Vincius facit in omnibus suis picturis, ut enim caput Lise del Giocondo et Anne matris virginis. Videbimus, quid faciet de aula magni consilii, de qua re convenit iam cum vexillifero. 1503 octobris. [18] (বাংলা: "চিত্রকর আপেলিস। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তার সমস্ত চিত্রকর্মে এটিই করেছেন, যেমনটা করেছেন লিসা দেল জোকোন্দো এবং কুমারী মাতা অ্যানের চেহারায়।[lower-alpha 1] আমরা দেখতে পাব যে তিনি মহা কাউন্সিলের হল সম্পর্কে কী করবেন, যে সম্পর্কে তিনি ইতোমধ্যে গোনফালোনিয়েরের সাথে একমত হয়েছেন। অক্টোবর ১৫০৩।") [20]
এই মন্তব্যে ভেসপুচি লিওনার্দো এবং বিখ্যাত প্রাচীন গ্রিক চিত্রশিল্পী আপেলিসের শৈলীর মধ্যে একটি সাদৃশ্য উল্লেখ করেছেন। উভয় শিল্পীই বাকি চিত্রকর্মের কাজ করার আগে প্রথমেই খুবই বিশদে বিষয়বস্তুর মাথা ও কাঁধ এঁকে নিতেন। একটি উদাহরণ হিসাবে ভেসপুচ্চি লিওনার্দোর "লিসা দেল জোকোন্দো"র প্রতিকৃতিতে কাজ তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি মন্তব্যে "অক্টোবর ১৫০৩" তারিখ দিয়েছেন। নাম ও তারিখের অন্তর্ভুক্তি শিল্প ইতিহাসবিদ জর্জিও ভাসারির লিখিত ১৫৫০ সালে প্রকাশিত উৎসের সাথে বৈধতা নিশ্চিত করে। ভাসারির এই লেখাটি পরবর্তীতে বেশ পরিচিত হলেও প্রায়ই অবিশ্বস্ত হিসেবে বিবেচিত হতো। ভাসারি লিখেছিলেন এই সময়ের মধ্যে লিওনার্দো তার স্ত্রী, "মোনা লিসা" আঁকার জন্য ফ্রান্সেসকো দেল জোকোন্দোর কাছ থেকে একটি কমিশন নিয়েছিলেন।[21] এখানে "মোনা" শব্দটি কোনও নাম হিসাবে নয়, বরং, ইতালীয় "কুমারি নারী'র সাহিত্য রূপ "ম্যাডোনা"র (Madonna) একটি সংক্ষিপ্তরূপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।[22]
টীকা
- ১৫০৩ সালের দিকে লিওনার্দো দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড উইদ সেন্ট অ্যান ছবিটি এঁকেছিলেন। একই সময়ে তিনি প্রায় একইরকম দেখতে প্রস্তুতিমূলক দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড উইদ সেন্ট অ্যান অ্যান্ড সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট কার্টুনটিও তৈরি করেছিলেন।[19]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.