Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মোঃ আব্দুল মুক্তাদির (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ - ২৫ শে মার্চ ১৯৭১) বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন এবং তাঁকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
শহীদ ড. মোহাম্মদ আবদুল মুক্তাদির | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৫ মার্চ ১৯৭১ ৩১) | (বয়স
মৃতদেহ আবিস্কার | ইকবাল হল (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) |
সমাধি | পল্টন কবরস্থান |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪০-১৯৪৭), পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১) |
শিক্ষা | চকবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলাম পিএল জুনিয়র স্কুল, রাজা জি.সি. উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি কলেজ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | প্রভাষক |
মেয়াদ | ১৯৬৪-১৯৭১ |
সন্তান | ইলোরা মুক্তাদির |
পিতা-মাতা |
|
আব্দুল মুক্তাদির ১৯৪০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলার সিলামের পশ্চিমপাড়ায় এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার মাতাপিতার তৃতীয় সন্তান। তাঁর মায়ের নাম বেগম মোশাহেদা খানম। বাবার নাম আব্দুল জব্বার যিনি মৌলভী ও সামাজিক কর্মী ছিলেন, পাশাপাশি সিলাম পিএল জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আব্দুল জব্বার সিলেট সদরের জালালপুর আলিয়া মাদ্রাসায় স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা করতেন। আব্দুল মুক্তাদিরের দুই ভাই ও চার বোন ছিল। তার কনিষ্ঠ ভাই ছিলেন আব্দুল কাদির জালালউদ্দিন।[1]
আব্দুল মুক্তাদির সিলাম চকবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪৮ সালে সিলাম জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি রাজা জি. সি. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে আই. এসসি পাস করেন। তিনি যথাক্রমে ১৯৬০ এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬২ সালে, আব্দুল মুক্তাদির দুই বছরের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী ভূতাত্ত্বিক হিসাবে কাজ করেছিলেন।[2] এরপর ১৯৬৪ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে জলবিদ্যায় পিএইচডি অর্জন করেন। এটি করাকালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা পাওয়ার অংশ হিসেবে জলবিদ্যুতের উপর আরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৮-এর মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হন। [3] তিনি আরও গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন।
আব্দুল মুক্তাদির ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যায় নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি তাঁর তিন মাসের গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন,[4] সেই সময় কেউ তার ফ্ল্যাটের নিচের তলার দরজায় কড়া নাড়ে।[5] যে দরজা খোলে, লোকেরা তাকে ধরে ফেলে এবং তার ১২ নম্বর ফুলার রোডের বাসার দিকে গুলি করে। [6] তারপরে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী দৌড়ে একই ভবনের তৃতীয় তলায় ডাঃ সৈয়দ আলী নকীর বাসায় আশ্রয় নেন। সারারাত তারা ভয়াবহ গর্জন ও ভীতির মাঝে জেগে ছিলেন। জানালা দিয়ে বাইরে অন্ধকার মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে, সৈন্যদের গাড়ির আওয়াজ, মানুষের চিৎকার শােনা যাচ্ছিল।
সূর্যোদয়ের সময় তারা জানালা দিয়ে দেখতে পান যে ১০ থেকে ১৫ জন সৈন্য একটি কাগজের টুকরো হাতে ধরে এলাকার ভিতরে ঢুকে এই ভবনের দিকেই আসছে। সৈন্যরা তাদের নীচে আসার আদেশ দেয়। আলী নকী নিচে নামলে ৪ থেকে ৫ সৈন্য তাঁকে আক্রমণ করে। আব্দুল মুক্তাদির ও তাঁর স্ত্রী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন সৈনিক ভিতরে ঢুকে আব্দুল মুক্তাদিরকে “তুম জয় বাংলা বলতা, পাকিস্তান নেহি চাহতা” বলে তার বুক ও পেটে গুলি করে, তার স্ত্রী চিৎকার করে প্রাণভিক্ষা চাইলে তাকে তিরস্কার করে ফেলে দিয়ে সে বাড়িতে আর একজনকে হত্যা করে। তার স্ত্রী স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। দুইবার তার স্ত্রী তাক করা বন্দুকের সামনে দাঁড়ান। প্রতিবারই সেনারা তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তৃতীয়বার তার স্ত্রী মাটি থেকে ওঠার আগেই সেনারা গুলি চালিয়ে মুক্তাদিরকে হত্যা করে।[7] সেনারা তার লাশ টেনে নিয়ে ইকবাল হলে রাখে। পরের দিন মুকতাদিরের আত্মীয়রা তার লাশ সংগ্রহ করে ও পুরানা পল্টনের ৭৮/এ লাইনের বাসভবনের পাশের মসজিদের কাছে তাকে কবর দেওয়া হয়।[8]
তার সন্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ তাদের যাদুঘরটির নাম শহীদ মুক্তাদির যাদুঘর রাখে। [9] তাঁকে সম্মান জানাতে সরকার ডাকটিকিট জারি করেছিল। সিলেটে তাঁর গ্রামে ডক্টর মুক্তাদির একাডেমী নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আব্দুল মুক্তাদিরের নামানুসারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চেয়ার চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করেছেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.