মৃগী নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক রোগ যাতে খিঁচুনি হয়।[1][2] এই রোগের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও মস্তিষ্কে আঘাত,স্ট্রোক, মস্তিষ্কে টিউমার বা সংক্রমণ, জন্মগত ত্রুটি প্রভৃতিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[3] জিনগত মিউটেশন কিছুকিছু ক্ষেত্রে দায়ী বলে মনে করা হয়।[4][5] মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষসমূহের অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলে খিঁচুনি হয়।[6] বার বার স্নায়বিক কারণে অর্থাৎ হঠাৎ খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাবার রোগ। এটি একপ্রকার মস্তিষ্কের রোগ; চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় "নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ"। মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে এই রোগ দেখা দেয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গবেষকদের ধারণা ছিল মৃগী রোগ থাকলেই ব্যক্তির বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনা বোধের উৎকর্ষ কমে যায়। কিন্তু বর্তমানকালের গবেষকরা মনে করেন, মৃগী রোগে আক্রান্তদের খুব কম অংশে বিচার-বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি দেখা যায়।

Video explanation
An instructional video about epileptic seizures
A still image of a generalized seizure
A bite to the tip of the tongue due to a seizure
দ্রুত তথ্য মৃগী, বিশেষত্ব ...
মৃগী
বিশেষত্বস্নায়ুচিকিৎসাবিজ্ঞান, epileptology উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
বন্ধ

মৃগীয় ব্যক্তিত্ব

গবেষকরা মৃগী রোগীদের "মৃগীয় ব্যক্তিত্ব" বা "ইপিলেপ্টিক পার্সোনালিটি" নামে অভিহিত করেন। এই এপিলেপ্টিক পার্সোনালিটির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

  • ঝগড়া করার প্রবণতা
  • অস্বাভাবিক আত্মকেন্দ্রিকতা
  • খিটখিটে তিরিক্ষি মেজাজ
  • ধর্মের দিক হতে গোঁড়া
  • যেকোনো প্রসঙ্গ নিয়েই চিন্তা করতে থাকা ইত্যাদি।

মানসিক প্রতিক্রিয়া

যেসব মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ মৃগী রোগে ভুগছেন তাদের মানসিকতায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মৃগী রোগীদের ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে এ রকমের স্থায়ী কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলো হলোঃ

  • ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
  • বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি
  • স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে নিজের ক্ষতিসাধন
  • বিষণ্ণতাগ্রস্ততা
  • আবেগ মনোবৃত্তি বৃদ্ধি
  • আত্মহত্যার প্রবণতা
  • সিজোফ্রেনিয়ায় (বাস্তববিমুখ অথবা বাস্তবজগত থেকে বিচ্ছিন্ন) আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা

মৃগী রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে।

  • পর্যবেক্ষণের জন্য অপেক্ষাঃ-

সকল খিঁচুনির জন্য অনেক সময় প্রথমেই সরাসরি মৃগী রোগের চিকিৎসা করা হয়না – বিশেষ করে যদি একবার খিঁচুনি হয় এবং ইহা মারাত্মক অবস্থায় পতিত না করে – তবে এর জন্য দ্বিতীয় টার্মের অপেক্ষা করতে হয় । অবশ্য সাময়িক খিঁচুনি উপশমের জন্য চিকিৎসকরা সেডিটিভ জাতীয় ঔষধ প্রয়োগ করে তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন ।

  • খিঁচুনির সময় প্রাথমিক চিকিৎসাঃ

মনে রাখবেন মৃগী রোগে আক্রান্ত রোগী অসুখ হওয়ার সাথে সাথে নিজে কি করে তা বলতে পারেনা – এ সময় তার পাশে যে থাকবেন তিনিই সবচেয়ে বড় সাহায্য কারী এবং উপকারী । জ্ঞান ফেরার পর রোগীর কিছু সময়ের জন্য মানসিক বিভ্রম দেখা দেয় বিধায় , এ সময়টুকু রোগীর পাশেই থাকুন, তাকে আশ্বস্ত করুন। পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত রোগীকে ছেড়ে যাবেন না। প্রকৃতপক্ষে, খিঁচুনী চলাকালে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োগ ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। কাউকে খিঁচুনীতে আক্রান্ত হতে দেখলে-অহেতুক আতংকগ্রস্ত হবেন না। কারণ, অধিকাংশ খিঁচুনীই মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

  • বিপদাশংকা রয়েছে এমন জিনিস যেমন আগুন, পানি, ধারালো বস্তু, আসবাবপত্র রোগীর নিকট থেকে সরিয়ে আনুন। খিঁচুনী-আক্রান্ত অবস্থায় রোগীকে সরানোর চেষ্টা করবেন না।
  • রোগী দাঁড়ানো বা চেয়ারে বসা অবস্থায় খিঁচুনীতে আক্রান্ত হলে তাকে আলতো করে ধরে মেঝেতে শুইয়ে দিন অথবা এমন ব্যবস্থা নিন যাতে রোগী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত না পায়। রোগীর মাথার নিচে বালিশ বা নরম কোন কাপড় বা ফোম- এ জাতীয় কিছু দিন।- খিঁচুনী স্বাভাবিকভাবে শেষ হতে দিন।

খিঁচুনী বন্ধ করার জন্য রোগীকে চেপে ধরবেন না। রোগীর মুখে জোর করে আঙুল বা অন্য কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। রোগীর জিহ্বায় দাঁত দিয়ে কামড় লাগলেও খিঁচুনীরত অবস্থায় তা ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি করা উচিত নয়।

  • খিঁচুনী শেষ হলে রোগীকে এক পাশে কাত করে শুইয়ে দিন।
  • রোগীর গলায় টাই বাধা থাকলে বা বেল্ট পড়া থাকলে তা খুলে দিন। জামাকাপড় ঢিলে করে দিন। রোগীর আশেপাশে ভীড় জমতে দেবেন না।
  • খিঁচুনী যদি ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, কিংবা রোগীর একবার খিঁচুনীর পর জ্ঞান ফেরার আগেই দ্বিতীয় খিঁচুনী চলে আসে তা হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতাল অথবা অভিজ্ঞ চিকিৎসকে কল করুন
  • খিঁচুনী শেষ হলে রোগীর নাড়ীর স্পন্দন অনুভব করুন, রোগী ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয় এমন কোন কিছু মুখে বা নাকে থাকলে তা সরিয়ে দিন।
  • সার্জারিঃ যদি কোন কারণে মস্তিষ্কের স্নায়ুগত গত ফাংশন স্থায়ী ভাবে নষ্ট হওয়ার সম্বাভনা থাকে তা হলে একজন নিউরোসার্জন সার্জারির তা করার কথা বলতে পারেন ( Epilepsy Surgery)
  • মেডিকেশন এবং ভি এন এসঃ– একজন নিউরো-সার্জন যদি মনে করেন তা হলে একটি দৃশ্যমান ইলেক্ট্রিক্যাল তরঙ্গ ভেগাস নার্ভের মাধ্যমে ইলেকট্রিক তরঙ্গ চিকিৎসা করতে পারেন । যা মস্থিস্কের ভিতরে তরঙ্গ পৌঁছে নার্ভ সমূহ পুনঃযোগা যোগ করার চেষ্টা করা হয় । এতে ৭০ % মৃগীরোগের অনেকটা অনেক দেরিতে পুনঃআক্রমণ করে – ইহাকে ভেগাস নার্ভ স্টিমুলেশন বলা হয় (VNS)।

অথবা চাইলে ভাল একজন আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ কে দিয়ে ঠিক সে রকম ইলেক্ট্রো স্টিমুলেটিং সুইং করালে মৃগীরোগের বেশ নাটকিয় পরিবর্তন দেখানো সম্ভব । তবে অবশ্যই সেই সাথে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টি-ইপিলেটিক (AEDs ) ড্রাগস সমূহ দীর্ঘ দিন ব্যবহার করে যেতেই হবে ( কার্বামাজেপিন -অঙ্কার্বাজিপাম, লেভেটাইরাসিটাম, ভ্যালপ্রোয়িক অ্যাসিড, ভ্যালপ্রোয়েট ইত্যাদি ) – যদি ও এর চাইতে আর উন্নত নতুন ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু তা এফ ডি এ অনুমতি পাওয়ার পর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে । যদি রোগের প্রথম থেকেই একটু কষ্ট করে ভাল চিকিৎসকের পরামর্শে ঠিক মত ঔষধ এবং অন্যান্য বিষয় সমূহ মেনে চলেন তা হলে ৯০% ভাল হয়ে যাওয়ার কথা – আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে এই সব ঔষধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবি মারাত্মক – যার কারণে ওষুধ লিভার, কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, অথবা স্টিভেন জনসন সিনড্রোম নামক প্রাণঘাতী জটিলতা, রক্তের অণুচক্রিকা কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে বিধায় সময় মত আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে এর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন ।

এসব ওষুধ চলাকালীন হজমের ওষুধ_ অ্যান্টাসিড, অ্যাসপিরিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম একসঙ্গে খাওয়া নিষেধ। রোজ একই সময়ে ওষুধ খেতে হবে। এ সম্পর্কে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন সবারই ধারণা থাকা উচিত। কোনো কোনো নারী মাসিকের সময় এ রোগে ভোগেন। ওষুধ খাওয়ার সময় সন্তান ধারণ করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে ভেলপোরেট জাতীয় ওষুধ খাওয়ার সময় সন্তান ধারণ উচিত নয়। তবে কার্বামাজেপিন ওষুধ গর্ভস্থ বাচ্চার জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। আধুনিক ওষুধে মাতৃদুগ্ধ পান অথবা পড়াশোনায় কোনো অসুবিধা হয় না।

  • ডায়েটঃ সে সময় ডায়েট পরিবর্তন করালে খুভ ভাল হয় – বিশেষ করে কেটোজেনিক ডায়েটের কথা বলা হয়েছে । ( This diet is high in fat and low in carbohydrates, so it forces the body to burn fat for energy rather than carbohydrates. When the body burns fat, it produces ketones ) কেন না উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কেটোন খিঁচুনি কে দমিয়ে রাখে ইহাই প্রমাণিত ।

সাপ্লিমেন্টরি এবং কিছু প্রমাণিত ভেষজ, ভিটামিন ই স্নায়ু যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাল কাজ করে স্বীকৃত বিধায় ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল খেতে পারেন – তবে মাঝে মধ্যে বিরতি দিতে হবে – মাছের তৈল মৃগী রোগের জন্য ভাল একটি সহায়ক রিসার্চ অনুসারে প্রমাণিত । কেন না ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ব্লাডস্ট্রিমের সাহায্যে সরাসরি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে ঢোকে পরে – তাই পরোক্ষ ভাবে ভাল কাজ করে বলে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন ।

ঝাল বারমি বা বেকোপা খিঁচুনি প্রতিরোধক হিসাবে ভাল কাজ করে বিধায় মৃগী রোগের খিচুনিতে ভাল সহায়ক হিসাবে প্রমাণিত ( ভেষজ টি ইন্ডিয়ান আয়ুর্বেদিক ঔষধি হিসাবে ঘুম এবং মানসিক প্রশমনের জন্য ব্যবহার করা হয় ) – আফ্রিকান ফেসনফ্লাওার ও ভাল কাজ করে মৃগী রোগে – অনেকেই এই ভেষজ টি ঘুম আনার জন্য সেবন করে থাকেন ডায়াজেপাম ট্যাবলেটের মত ।

কাভা ( Kava ) ইহা হাইতি এবং হওয়াই দ্বিপ পুঞ্জ সমূহে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় – ইহা খুবি শক্তিশালী সেডিটিভ ও এনেস্থেটিক – ব্রিটেনে এর ব্যবহার নিষেধ – ( ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ ভেষজ ঔষধে এর প্রচুর ব্যবহার দেখা যায় )

জার্মান ক্যামোলি ( Chamomile ) চা বিশেষ ফলপ্রদ মৃগী রোগের জন্য, সে জন্য এর ট্যাবলেট বা ক্যাপস্যুল সেবন করতে পারেন ( NCCAM )

এ ছাড়া সদ্য রিসার্চ অনুসারে বর্ণীত গাজার রস মৃগী রোগের জন্য বিশেষ ফল্প্রসু -বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র রিলাক্সেশন করে খিঁচুনি ধমিয়ে রাখে –মৃগী রোগীর উচিত সর্বদা ইয়গা জাতীয়

তথ্যসূত্র

আরও তথ্য

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.