Loading AI tools
হিন্দু পুরাণে বর্ণিত অসুর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মহিষাসুর (সংস্কৃত: महिषासुर) হিন্দু পুরাণে বর্ণিত একটি চরিত্র।[1] মহিষাসুর ছিলেন রম্ভাসুরের পুত্র এবং ব্রহ্মর্ষি কশ্যপের প্রপৌত্র। বিভিন্ন প্রাচীন হিন্দু কাহিনীতে মহিষাসুরকে অপদেবতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
দল | পৌরাণিক চরিত্র |
---|---|
উপ দল | অসুর |
পিতামাতা | রম্ভাসুর, মহিষী |
পুরাণ | হিন্দু |
অঞ্চল | ভারতীয় উপমহাদেশ |
বিভিন্ন পুরাণ অনুযায়ী, রম্ভ নামক অসুর মহাদেবকে কঠোর তপস্যায় প্রীত করে তাঁর কাছে ত্রিলোকবিজয়ী পুত্রলাভের বর প্রার্থনা করলে মহাদেব তাকে সেই বর প্রদান করেন। রম্ভ পুত্রপ্রাপ্তির বরলাভ করে অসুররাজ্যে ফেরার সময় "ত্রিহায়ণীঞ্চিত্রবর্ণাং সুন্দরীমৃতুশালিনীম্" এক মহিষীকে দেখে কামার্ত হন। কামার্ত রম্ভ ওই মহিষীকে হরণ করে বনের মধ্যে তাঁর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হন। মৈথুনের পরে ওই মহিষীকে বিবাহ করে রম্ভাসুর। বিবাহের পর পুনরায় তাঁরা মৈথুনে আবদ্ধ হলে অপর এক মহিষ অতর্কিতে আক্রমণ করে মিলনরত রম্ভকে বধ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর যক্ষরা তার মরদেহ চিতায় স্থাপন করে। তার স্ত্রী শোকাহত মহিষী সহমরণের উদ্দেশ্যে চিতায় আরোহণ করেন। চিতায় অগ্নিসংযোগ করলে চিৎকার করে ওঠেন মহিষী । তখন তাঁর গর্ভ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয় তার মহিষী ও রম্ভের মিলনজাত সন্তান, অর্ধ মহিষ অর্ধ মানব মহিষাসুর। তখন রম্ভও পুত্রস্নেহবশতঃ চিতা থেকে পুনরায় উত্থিত হন। নবোত্থিত রম্ভের নাম হয় রক্তবীজ [2] শিব বরপ্রভাবে মিলনকালেই গর্ভসঞ্চার হয়েছিল মহিষীর। তাঁর পশুরূপের সাথে মিলনের ফলে জ্বলন্ত চিতা থেকে জন্মায় অর্ধ মহিষ অর্ধ মানবরূপী মহিষাসুর। শিববরে জাত মহিষাসুর অতীব দুর্দান্ত হয়ে উঠে দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গরাজ্য অধিকার করেন। রাজ্যচ্যূত দেবগণ মহেশ্বর ও নারায়ণের কাছে গিয়ে তাঁদের দুঃখের কাহিনী নিবেদন করেন। হরিহরের নিদারুণ ক্রোধাগ্নি তাঁদের দেহ থেকে নির্গত হয়ে এক বহ্নিচক্রের নির্মাণ করে। এর সঙ্গে যোগ হয় ব্রহ্মা ও অপরাপর দেবতাদের ক্রোধরশ্মি। মহামায়া আদ্যাশক্তি দেবতাদের এই সমষ্টিভূত তেজঃপুঞ্জ হতেই কাত্যায়নদুহিতা কাত্যায়নী রূপে আবির্ভূতা হন। দেবী চণ্ডিকা যুদ্ধে এই অসুরকে বধ করেন।
কালিকা পুরাণে এ কাহিনীকেই ভিন্ন আঙ্গিকে একটু বিস্তৃতভাবে বলা হয়েছে - তিন কল্পে যথাক্রমে অষ্টাদশভুজা অঞ্জনপ্রভা উগ্রচণ্ডা, ষোড়শভুজা অতসীপুষ্পবর্ণা ভদ্রকালী ও তপ্তকাঞ্চনবর্ণা দশভুজা দুর্গা মূর্তিতে মহামায়া মহিষাসুরকে বধ করেন। তৃতীয় কল্পে মহিষাসুর ভদ্রকালীর কাছে অসুরপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে যজ্ঞভাগের অধিকারের বর প্রার্থনা করেন। উত্তরে দেবী অসুরত্বমোচনের বরপ্রদান করলেও যজ্ঞভাগ দিতে অস্বীকৃত হন, কিন্তু বলেন যে তাঁর পদলগ্ন হয়ে মহিষাসুর ত্রিলোকপূজ্য হবেন, তিনটি কল্পের প্রতিটিতে যে যে রূপে তিনি মহিষাসুরকে বধ করেছেন/করবেন অর্থাৎ উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী ও দুর্গা রূপে মহামায়ার পদলগ্ন ও সাযুজ্যপ্রাপ্ত হয়ে দেব-গন্ধর্ব-মানব-দানব সকলের পূজা পাবেন।
মহিষাসুর বধ দুর্গা একটি বিশিষ্ট থিম যা ভারত জুড়ে বিভিন্ন গুহা ও মন্দিরে ভাস্কর্য করা হয়েছিল। কিছু বিশিষ্ট উপস্থাপনা মহাবালিপুরমের মহিষাসুরমর্দিনী গুহা, ইলোরা গুহা, রানি কি ভাভের[3] প্রবেশদ্বারে হালেবিডুর হৈসলেশ্বর মন্দির এবং ভারত জুড়ে আরও অনেক মন্দিরে দেখা যায়। বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং অন্যান্য পূর্ব রাজ্যে দুর্গাপূজার সময় দুর্গার পূজা প্যান্ডেলে উপস্থাপন করা হয়, যা দুর্গা মহিষাসুরকে বধের চিত্রিত করে।[4] মহিষাসুরের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র, নাটক এবং নৃত্যনাট্যের অনুপ্রেরণাও হয়েছে।[5]
জনপ্রিয় কিংবদন্তি হল মহীশুর (মহিশুরু) এর নাম হয়েছে মহিষাসুরমর্দিনী থেকে, যা দেবী দুর্গার প্রকাশ । মহিষের রাক্ষস মহিষাসুর, আঞ্চলিক ঐতিহ্য বলে, স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত করেছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে দেবী দুর্গা (চামুন্ডেশ্বরী) চামুন্ডি পাহাড়ের চূড়ায় মহিষাসুরকে হত্যা করেছিলেন । স্থানটি মাইসুরুর চামুন্ডেশ্বরী মন্দির হিসাবে নির্মিত হয়েছিল, একটি অনুষ্ঠান যা বার্ষিক নবরাত্রি এবং মাইসুরু দশরাতে উদযাপিত হয় । ভারতে ব্রিটিশ যুগে "মহিশুরু" এর নাম পরিবর্তন করে "মহীশূর" এবং পরে কন্নড়ীকরণ " মইসুর " করা হয়।[6]
শহরের অভিভাবক দেবতা চামুণ্ডেশ্বরীর মন্দিরে শহরের দিকে মুখ করে পাহাড়ে মহিষাসুরের একটি বিশাল মূর্তি রয়েছে। নথিভুক্ত ইতিহাসে মহীশূরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যেতে পারে ২৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, অর্থাৎ অশোকের সময়কালে যখন তৃতীয় বৌদ্ধ সমাবর্তনের সমাপ্তিতে মহিষা মন্ডালের কাছে একটি দল পাঠানো হয়েছিল।[7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.