Remove ads
দক্ষিণ এশীয়ার নৃগোষ্ঠী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মণিপুরি জাতি ভারত ও বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নাম।[১১] এদের আদি নিবাস ভারতের মণিপুর রাজ্যে। মণিপুরিদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। ভারতের মণিপুর, আসাম, ও ত্রিপুরা রাজ্যের ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় এবং মায়ানমারে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।[১][১০][১২]
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
১,৮০০,০০০+[১] (২০১১) | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
ভারত | ১,৭৬০,৯১৩[২] |
মনিপুর | ১,৫২২,১৩২[৩] |
আসাম | ১৬৮,১২৭[৪] |
ত্রিপুরা | ২৩,৭৭৯[৫] |
নাগাল্যান্ড | ৯,৫১১[৬] |
মেঘালয় | ৪,৪৫১[৭] |
অন্ধ্রপ্রদেশ | ২,৮৩৫[৮] |
মিজোরাম | 2,242[৯] |
মায়ানমার | ২৫,০০০[১০] |
বাংলাদেশ | ১৫,০০০[১] |
ভাষা | |
মৈতৈ মণিপুরি ভাষা | |
ধর্ম | |
সংখ্যাগরিষ্ঠ: হিন্দুধর্ম সংখ্যালঘু:
| |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
পাঙাল), নাগা, কুকি, জো |
লৌহ যুগ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যে মণিপুরি ইতিহাস সম্পর্কে লিখিত রেকর্ড আকারে সামান্য নথিপত্র বিদ্যমান। অধিবাসীদের জাতিগত-ভাষাগত পটভূমি সহ এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাস অনেকাংশে অজানা।[১৩][১৪][১৫]
মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী পঞ্জিকা মণিপুরী পঞ্জিকা (মৈতৈ : ꯃꯅꯤꯄꯨꯔꯤ ꯊꯥꯄꯥꯂꯣꯟ) বা কঙলৈপাক পঞ্জিকা (মৈতৈ : ꯀꯪꯂꯩꯄꯥꯛ ꯊꯥꯄꯥꯂꯣꯟ) বা মলিয়া ফম্বালচা কুমশিং (মৈতৈ : ꯃꯂꯤꯌꯥꯐꯝ ꯄꯥꯜꯆꯥ ꯀꯨꯝꯁꯤꯡ) নামে পরিচিত, যার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মতো ১২ মাস এবং ৭ দিনের সপ্তাহ রয়েছে।[১৬]।মনিপুরী ৭ দিনের নাম যথাক্রমে ১.নোঙমাইজিং (রবিবার) ২. নিংথৌকাব (সোমবার) ৩.লৈপাকপোকপা (মঙ্গলবার) ৪.য়ুমশাকৈশা (বুধবার) ৫.শগোলশেন (বৃহস্পতিবার) ৬.ঈরাই (শুক্রবার) ৭.থাংজ (শনিবার)। মনিপুরী রা মাস কে থা বলে। মনিপুরী ১২ মাসের নাম যথাক্রমে ১.শজিবু ২.কালেন ৩.ইঙা ৪. ইঙেন ৫.থাওয়ান ৬.লাংবন ৭.মেরা ৮.হিয়াঙ্গৈ ৯.পোইনু ১০.ওয়াকচিঙ ১১.ফাইরেল ১২.লমতা।এরা বছরকে চহী বলে।মণিপুরীদের নিজস্ব গণনা রীতি রয়েছে। যথাক্রমে .ফুন (শূন্য) .অমা (এক) .অনি (দুই) .অহুম (তিন) .মরি (চার) .মঙা (পাঁচ) .তরুক (ছয়),.তরেত (সাত) .নিপাল (আট) . মাপল (নয়) .তরা (দশ)। এরা ২০ কে কুন,৩০ কে কুন্থ্রা,৪০ কে নিফু,৫০ কে য়াঙ্খৈ, ৬০ কে হুম্ফু,৭০ কে হুম্ফু তরা,৮০ কে মর্ফু,৯০ কে মর্ফু তরা, ১০০ কে চা অমা রুপে নিজস্ব গণনা রীতিতে সকল কিছু গুণে থাকেন। ১০০০ হচ্ছে লিশিঙ অমা।
মণিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী। মণিপুরী সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম দিক হলো মণিপুরী নৃত্য যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
মণিপুরীদের মধ্যে ঋতুভিত্তিক আচার অনুষ্ঠান বেশি। বছরের শুরুতে হয় মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের বিষু এবং মৈতৈদের চৈরাউবা উৎসব। আষাঢ় মাসে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ও কাঙ উৎসবের সময় প্রতিরাত্রে মণিপুরী উপাসনালয় ও মণ্ডপগুলোতে বৈষ্ণব কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ নাচ ও গানের তালে পরিবেশন করা হয়।
কার্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন-শ্রবণ। এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্তম উৎসব রাসপূর্ণিমা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরণ বা রাসপূর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রায় দেড়শত বছর ধরে (আনুমানিক ১৮৪৩ খ্রি: থেকে) পালিত হয়ে আসছে। কার্ত্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে দূরদূরান্তের লক্ষ লক্ষ ভক্ত-দর্শক সিলেটের মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামণ্ডপের এই বিশাল ও বর্ণাঢ্য উৎসবের আকর্ষণে ছুটে আসেন।
বসন্তে দোলপূর্ণিমায় মণিপুরীরা আবির উৎসবে মেতে উঠে। এসময় পালাকীর্তনের জনপ্রিয় ধারা "হোলি" পরিবেশনের মাধ্যমে মণিপুরী তরুণ তরুণীরা ঘরে ঘরে ভিক্ষা সংগ্রহ করে। এছাড়া খরার সময় বৃষ্টি কামনা করে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বৃষ্টি ডাকার গান পরিবেশন করে থাকে।
প্রথম মণিপুরী চলচ্চিত্র, মতমগী মণিপুর , ৯ এপ্রিল ১৯৭২ সালে মুক্তি পায়। পাওখুম আমা (১৯৮৩) হল মণিপুরের প্রথম পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের রঙিন ফিচার ফিল্ম (একটি ফিচার ফিল্মের অ্যাকাডেমির সংজ্ঞা অনুসারে) এবং এটি ছিল পরিচালনা করেছেন অরিবম শ্যাম শর্মা । Lammei (২০০২) হল প্রথম মণিপুরি ভিডিও ফিল্ম যেটি একটি থিয়েটারে বাণিজ্যিক প্রদর্শনী হয়েছে। ভিডিও ফিল্ম নির্মাণের গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে মণিপুর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি প্রসারিত হয় এবং প্রতি বছর প্রায় ৪০-৫০টি চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, অধিকাংশ মণিপুরী হিন্দুধর্ম অনুসারী। কিছু মণিপুরী হিন্দুধর্মের সনামাহী ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। পাশাপাশি ইসলাম ও খ্রীস্টধর্ম পালন করে আসছে।[১৭] বিভিন্ন ধরনের উৎসব যা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং তাদের দ্বারা অত্যন্ত আনন্দের সাথে পালিত হয় সেগুলি হল রাসলীলা , জন্মাষ্টমী , হোলি , লাই হারাওবা , চৈরাওবা(নববর্ষ), য়াওশঙ,থাবল চোংবা, রথযাত্রা , দীপাবলি , রাম নবমী।
ভাত, শাকসবজি এবং মাছ মেইটিসদের প্রধান খাদ্য। যদিও মাংসও খাওয়া হয় তবে ঐতিহ্যবাহী মেইতি খাবারে মাংস কখনই আমিষ জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয় না। ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক সমাবেশে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, ঈল ইত্যাদি একমাত্র আমিষ-ভেজ ব্যবহার করা হয় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেইটিস এটি অনুসরণ করে যেখানে মাংস রান্না করা হয় এবং খাওয়া হলে বাড়ির বাইরে খাওয়া হয়। ভাত হল মেইটেই খাবারের প্রধান কার্বোহাইড্রেট উৎস যা সবজি, মাছ, মিঠা পানির শামুক, কাঁকড়া, ঝিনুক, ঈল ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। মণিপুরি সারেং (ওয়াল্লাগো আট্টু) মাছের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রজাতির মধ্যে বা সাধারণত হেলিকপ্টার ক্যাটফিশ, ইলিশ (ইলিশ টেনুয়ালোসা ) নামে পরিচিত। মিঠা পানির শামুক ( পিলা (গ্যাস্ট্রোপড)) এবং ভোজ্য ঝিনুক একটি উপাদেয় হিসাবে বিবেচিত হয়। শাকসবজি হয় স্ট্যু (কাংসোই) হিসাবে তৈরি করা হয় কম তেল দিয়ে/কোন তেল ভাজাতে ব্যবহার করা হয় না, অথবা তৈলাক্ত মশলাদার সাইড ডিশ (কাংঘো) তৈরি করতে বিভিন্ন যোগ মশলা দিয়ে সরাসরি তেলে ভাজা হয়। ভাজা/ধূমপান করা এবং রোদে শুকানো মাছ বা ভাজা তাজা মাছ সাধারণত বিশেষ স্বাদ দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ স্টু এবং তরকারিতে যোগ করা হয়। এই অঞ্চলে খাওয়া শাকসবজি, ভেষজ এবং ফলগুলি দক্ষিণ-পূর্ব/পূর্ব/মধ্য এশীয়, সাইবেরিয়ান, আর্কটিক, পলিনেশিয়ান এবং মাইক্রোনেশিয়ান খাবার যেমন মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইনুইট, ইত্যাদির মতো।), কুল্যান্ট্রো (আওয়া ফাদিগম), চুন বেসিল (মায়াংটন), ফিশওয়ার্ট (টোকিংখোক) এবং আরও অনেকগুলি, যা উত্তর ভারতে চাষ করা হয় না। Meitei রান্নার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল Ngari (গাঁজানো মাছ)।সিংজু (এক ধরনের সালাদ), মোরোক মেটপা (মরিচের চাটনি), ইরোম্বা (মরিচের সাথে সেদ্ধ এবং ভেজে রাখা সবজি)। বিভিন্ন ধরনের গাঁজানো বাঁশের অঙ্কুর (সোইবাম) পাশাপাশি তাজা বাঁশের অঙ্কুর (উশোই/শোইডন), এবং গাঁজানো সয়া বিন (হাওয়াইজার)ও মেইতেই রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে। সমস্ত খাবার পাশে কিছু তাজা সুগন্ধযুক্ত ভেষজ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
প্রতিদিনের একটি সাধারণ মেইতে খাবারে থাকবে ভাত, সবজি বা মাছের তরকারি, একটি চটকদার সাইড ডিশ (হয় মোরোক মেটপা বা ইরোম্বা ভেষজ সহ), একটি চাম্পুট (একটি স্টিমড/সিদ্ধ সবজি যার সামান্য চিনি, যেমন, গাজর, কুমড়া বা শসার টুকরো। বা চিনি ছাড়া বাষ্প/সিদ্ধ সরিষার সবুজ ডালপালা ইত্যাদি), এবং কাংঘো।
মণিপুরীরা প্রধানত কৃষিজীবী যেখানে ধান তাদের প্রধান ফসল। তবে তারা আম, লেবু, আনারস, কমলা, পেয়ারা এবং অন্যান্য ফলও জন্মায়। মাছ ধরাও মেইতেইদের একটি পেশা বা শখ হতে পারে। খাদ্য সামগ্রী, টেক্সটাইল এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকের বিক্রেতা হিসাবে মহিলারা স্থানীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে।[১৮]
ঐতিহ্যবাহী মেইতেই খেলাগুলি এখনও বিদ্যমান, কিছু এমনকি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
কিছু ক্রীড়া নিম্নরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে:
রাজাদের শাসনামলে ব্রিটিশরা মণিপুর উপত্যকায় এলে তারা পশ্চিমে পোলো প্রবর্তন করে। স্থানীয়ভাবে একে সাগোল কাংজেই বলা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে খেলাটি মেইটিসের দেবতারা যুদ্ধের অনুশীলন হিসাবে খেলেছিলেন।
মণিপুরী জনগোষ্ঠীর ভাষায় প্রসার অসীম
মণিপুরী মৈতৈ ভাষাকে তিব্বতি-বর্মী উপ-পরিবারের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মনিপুরী মহারাষ্ট্রী-সৌরসেনী ভাষাশ্রেণীর আবার কেউ কেউ একে ইন্দো-মঙ্গোলয়েড উপশ্রেণীর তালিকাভুক্ত করা সমীচীন মনে করেন। শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে মণিপুরী মৈতৈ ভাষাতেব্যবহৃত হয় এমন শব্দসংখ্যা চার হাজারেরও বেশি।
১৮৮৯ সনে প্রকাশিত ভারতবর্ষের ভাষা শ্রেণিবিভাগের প্রধান ভিত্তি স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সনের Linguistic Survey of India-তে মৈতৈ মণিপুরী ভাষাকে মণিপুরের অন্যতম ভাষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৯] মনিপুরী ভাষা ভারতে স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের স্কুলগুলোতে ইন্ডিয়ান সরকার [মণিপুরী]মৈতৈ মণিপুরী ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। মণিপুরি (মৈতৈ) ভাষা ভারতের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং মণিপুর রাজ্যের রাজ্যভাষা।[২০] মণিপুর রাজ্যে মণিপুরী মৈতৈ ভাষায় স্নাতকোত্তর ও পি,এইচ,ডি পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে, মণিপুরীরা নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপে নিজের ভাষায় কথা বলে। নৃতাত্ত্বিক মণিপুরীরা তাদের আদি মণিপুরী ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষায় শিক্ষিত হয়।[২১] কারণ বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে মনিপুরী ভাষায় পাঠদান কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্র থেকে প্রতি সপ্তাহে "মণিপুরী অনুষ্ঠান" শিরোনামে পর্যায়ক্রমে বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় এবং এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার এখনো অব্যাহত রয়েছে।
সূর্যদেবতার উদ্দেশ্যে রচিত গীতিকবিতা ঔগ্রী মণিপুরী মৈতৈ সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন, যা খ্রিস্টীয় ৩৩ অব্দে রচিত। এছাড়া অনেক প্রেমগীতি ও লোকগাথা মণিপুরী মৈতৈ সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। মণিপুরি (মৈতৈ) সাহিত্যের লিখিত অস্তিত্ব পাওয়া যায় খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী থেকেখাম্বাথৈবীর প্রেমকাহিনী(১৫০০-১৬০০) মণিপুরী লোকসাহিত্যর অমূল্য সম্পদ। উনিশ শতকের মধ্যভাগে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক এজেন্ট কর্নেল ম্যাককুলক তার Valley of Manipur and Hill Tribes গ্রন্থে ইংরেজি, মৈতৈ ভাষার তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত অভিধান প্রণয়ন করেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত সংঘটিত বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের শিকার হয়ে এবং যুদ্ধজনিত কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের অধিবাসীরা দেশত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে। পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলায়, ত্রিপুরা রাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে এবং বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মণিপুরী অভিবাসন ঘটে। বার্মা-মণিপুর যুদ্ধের সময় (১৮১৯-১৮২৫) তৎকালীন মণিপুরের রাজা চৌরজিৎ সিংহ, তার দুই ভাই মারজিৎ সিংহ ও গম্ভীর সিংহসহ সিলেটে আশ্রয়গ্রহণ করেন। যুদ্ধ শেষে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই স্বদেশে ফিরে যায়, কিন্তু বহু মণিপুরী তাদের নতুন স্থানে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। বাংলাদেশে আসা মণিপুরীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ময়মনসিংহের দুর্গাপুর, ঢাকার মণিপুরী পাড়া এবং প্রধানত বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসতি গড়ে তোলে। [২২]
বর্তমানে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া,জুড়ী,বড়লেখায়, সিলেটের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে মণিপুরী জনগোষ্ঠীর লোক বাস করে।
মায়ানমারে মেইটিস সম্প্রদায়ের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর বাসস্থান, যাদেরকে বার্মিজ ভাষায় কাথে বলা হয়।[২৩] মায়ানমারের অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপরীতে, মেইটি অন্যান্য বার্মিজ জাতিগোষ্ঠীর সাথে দৈহিক চেহারার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা তাদের বার্মিজ সমাজে একীভূতকরণ এবং একীকরণকে ত্বরান্বিত করেছে।[২৩] ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে, বার্মিজ মেইটিসদের সংখ্যা প্রায় ৪০,০০০ ছিল, তাদের এক তৃতীয়াংশ মান্দালেতে বসবাস করত।[২৪] তা বর্তমানে আনুমানিক ২৫,০০০ জন।[১০] মেইটিসরা উত্তরে মিটকিনার নিকটবর্তী গ্রাম, হোমলিন, কালেওয়া, দেশের কেন্দ্রে এবং দক্ষিণে ইয়াঙ্গুন সহ সারা দেশে পুনর্বাসিত হয়েছে।[২৪] তারা মিয়ানমারে এখনো হিন্দুধর্ম পালন করে চলেছে।[২৫]
ব্রিটিশ শাসনামলে মণিপুরী কৃষকদের সংগ্রামের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। ১৯৪৩ সনে জমিদারী ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার ভানুগাছ পরগনার ভানুবিল মৌজার নয়টি গ্রামের মণিপুরি সম্প্রদায়ের কৃষকরা।
১৯৭১ সনে মণিপুরী জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। এই সম্প্রদায়ের অসংখ্য তরুণ মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন। মণিপুরী মহিলা ও গৃহবধুরাও নানানভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতা করেন।
বিদ্বান
বাংলাদেশী মনিপুরী সাহিত্যিক ও কবি তালিক
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.