মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরা
সমুদ্র স্থিত পাহাড়চূড়া উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরা (Mid-Ocean Ridge) মূলত সামুদ্রিক পর্বতমালা যা টেকটোনিক প্লেটের কারণে সৃষ্ট হয়। যার গভীরতা সাধারণত ২,৬০০ মিটার (৮,৫০০ ফুট) এবং এর উচ্চতা সমুদ্র অববাহিকার সবথেকে গভীর অংশ হতে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কোন বিচ্ছিন্ন প্লেটের সীমানায় যখন সমুদ্রতলের প্রসারণ ঘটে সেখানে এই বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায়। সমুদ্রতল প্রসারণের হার সমুদ্র অববাহিকায় মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরার গঠনবিন্যাস এবং প্রশস্ততা কত হবে তা নির্ধারণ করে। প্লেট বিচ্ছিন্ন হবার সময়ে ম্যাগমা, পানি বা অন্যান্য তরলের উদগীরণের ফলে নতুন সমুদ্রতল এবং সামুদ্রিক ভূত্বক তৈরি হয়। বিচ্ছিন্ন হওয়া প্লেটের মধ্যবর্তী রৈখিক দুর্বলস্থানে গলিত ম্যাগমা আসতে শুরু করে এবং তা লাভায় পরিণত হয় যা পরবর্তীতে শীতল হলে মহাসাগরীয় ভূত্বক ও লিথোস্ফিয়ারে রূপান্তরিত হয়। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরা হচ্ছে মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরা, যা আসলে একটি ছড়িয়ে পড়া কেন্দ্র যেটা উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক অববাহিকাকে দ্বিখণ্ডিত করেছে; যার ফলে এই মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরা নামের উৎপত্তি। বেশিরভাগ মহাসাগরীয় প্রসারিত কেন্দ্রগুলিই মহাসাগরের ঠিক মাঝে অবস্থান করে না, কিন্তু তবুও, এদের প্রথাগতভাবে মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরাই বলা হয়। মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরাসমূহ পৃথিবীজুড়ে টেকটোনিক প্লেটের সীমানা দ্বারা সংযুক্ত এবং সমুদ্রতল জুড়ে শৈলশিরার চিহ্নগুলো অনেকটাই বেসবল বলের সীমের মত। মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরা পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘতম পর্বতমালা, যা প্রায় ৬৫,০০০ কিলোমিটার (৪০,০০০ মাইল) এর মত।

গ্লোবাল সিস্টেম

পৃথিবীর মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরাগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একত্রে মহাসাগরীয় শৈলশিরা সৃষ্টি করে, যা একটি একক ভূমন্ডলীয় মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরা প্রণালী যেটা প্রতিটি মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত হয়ে এটাকে পৃথিবীর বৃহত্তম পর্বতশ্রেণীতে পরিণত করেছে। এ অবিচ্ছিন্ন পর্বতমালা প্রায় ৬৫,০০০ কিলোমিটার (৪০,৪০০ মাইল) দীর্ঘ (যা সবথেকে দীর্ঘতম মহাদেশীয় পর্বতমালা আন্দেজের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি), এবং মহাসাগরীয় শৈলশিরা প্রণালীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০,০০০ কিলোমিটার (৪৯,৭০০ মাইল) দীর্ঘ। [১]
বর্ণনা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
গঠনবিন্যাস
প্রতিটা মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরার প্রসারণ কেন্দ্রে সমুদ্রতট প্রায় ২,৬০০ মিটার (৮,৫০০ ফুট) গভীর হয়। [২][৩] শৈলশিরা সমুদ্রতলের গভীরতার (অথবা মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরার তলদেশ হতে উচুতে থাকা কোন জায়গার উচ্চতা) সাথে সম্পর্কযুক্ত (যেখানে গভীরতা নির্ণয় করা হয় সেখানের লিথোস্ফিয়ারের বয়স। গভীরতা-বয়স সম্পর্ক লিথোস্ফিয়ার প্লেটের [৪][৫] কিংবা আচ্ছাদনের অর্ধেক স্থান [৬] শীতলীকরণ করে গঠন করা যেতে পারে। মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরার প্রসারণ কেন্দ্রের সমুদ্রতটের গভীরতা উক্ত স্থানের বয়সের বর্গমূলের সমানুপাতিক বলে ধারণা করা হয়। প্র্যাট বিচ্ছিন্নতা থেকে প্রাপ্ত শৈলশিরার আকৃতির সামগ্রিক ফলাফলঃ শৈলশিরা অক্ষের কাছাকাছি সমুদ্র ভূত্বককে সাপোর্ট করে এমন গরম, স্বল্প ঘনত্বের আচ্ছাদন আছে। মহাসাগরীয় প্লেট শীতল হবার সময়ে শৈলশিরা অক্ষের থেকে দূরে থাকা সামুদ্রিক লিথোস্ফিয়ারের আচ্ছাদন (আচ্ছাদনের শীতল, ঘন অংশ যেটা ভূত্বকের সাথে মিশে মহাসাগরীয় প্লেট তৈরি করে) ঘন হয় এবং ঘনত্ব বাড়ায়। যার ফলে পুরানো সমুদ্রতটে আর্দ্র উপাদানের দ্বারা স্তর বৃদ্ধি পায় এবং সেটা আরো গভীর হয়।
সমুদ্রতল ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে মহাসাগরীয় অববাহিকার প্রশস্ত হবার হারকে প্রসারণ হার বলা হয়। সামুদ্রিক চৌম্বকের অসংগতিগুলো যা মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরাকে প্রসার করে, তার মানচিত্র তৈরি করে এই হার নির্ণয় করা যেতে পারে। শৈলশিরা অক্ষ পর্যাপ্ত আয়রন-টাইটানিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে কুরি পয়েন্টের নিচে স্ফটিক আকারে ব্যাসল্ট নির্গত করে, যেসব চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের দিকগুলি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সমান্তরাল সেগুলো উক্ত অক্সাইডে রেকর্ড হতে থাকে। মহাসাগরীয় ভূত্বকে সংরক্ষিত ক্ষেত্রের দিকগুলি সময়ের সাথে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের গতিপথ রেকর্ড করে। যেহেতু ক্ষেত্রটির গতিপথ সময়ের সাথে সাথে দিক বদল করে আসছে, তাই সামুদ্রিক ভূত্বকে ভূচৌম্বকীয় গতিপথের পরিবর্তনের মডেল বয়সের সূচক হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে; ভূত্বকের বয়স এবং শৈলশিরা অক্ষ থেকে দূরত্ব জানা থাকলে প্রসারণের হার নির্ণয় করা সম্ভব। [২][৩][৭][৮]
প্রসারণ হার ১০-২০০ মিলিমিটার/বছর থেকে শুরু করে। একই পরিমাণ সময় এবং শীতলীকরণেও মধ্য- আটলান্টিক শৈলশিরার মত ধীরগতিতে প্রসারিত হওয়া শৈলশিরাগুলো অনেকটা কম ছড়ায় (তুলনামূলক খাড়া প্রোফাইল) পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈলশিরার (স্বাভাবিক প্রোফাইল) মত দ্রুতগতির শৈলশিরার তুলনায় চেয়ে। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়া শৈলশিরাগুলোয় (৪০ মিলিমিটার/বছর চেয়েও কম) সাধারণত দীর্ঘ ফাটলযুক্ত উপত্যাকা থাকে, কখনো কখনো ১০-২০ কিলোমিটারের মত চওড়া (৬.২-১২.৪ মাইল), এবং শৈলশিরা ভূত্বকে খুবই রুক্ষ ভূখণ্ড থাকে যা ১,০০০ মিটার (৩,০০০ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। দ্রুত ছড়ানো শৈলশিরাগুলো (৯০ মিলিমিটার/বছর এর থেকে বৃহত্তর), যেমন পূর্ব-প্রশান্ত শৈলশিরায় ফাটলযুক্ত উপত্যাকা খুবই কম থাকে। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রসারণ হার যেখানে ২৫ মিলিমিটার/বছর এর মত প্রায়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সেড়া ৮০-১৪৫ মিলিমিটার/বছর। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রসারণ হার ২০০ মিলিমিটার/বছর এর থেকেও বেশি, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের মায়োসিনে। যে শৈলশিরাগুলোর ছড়ানোর হার ২০ মিলিমিটার/বছর এর কম তাদের অতিধীর প্রসারণ শৈলশিরা বলা হয় (যেমন, আর্কটিক মহাসাগরের গাক্কেল শৈলশিরা এবং দক্ষিণ পশ্চিম ভারতীয় শৈলশিরা)। প্রসারণ কেন্দ্র কিংবা অক্ষ, সাধারণত অক্ষের ডান কোণের থাকা রুপান্তরিত ত্রুটির সাথে সংযুক্ত হয়। মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরাগুলোর পাশের অসংখ্য স্থানে রুপান্তরিত ত্রুটির নিস্ক্রিয় দাগ দ্বারা চিহ্নিত থাকে যাদের ফ্র্যাকচার জোন বলা হয়। অক্ষগুলো প্রায়ই দ্রুত প্রসারণের হারের দরুন প্রসারণ কেন্দ্র রুপান্তরিত ত্রুটির সাথে সংযোগ না পেয়ে তার উপর চেপে বসে। অক্ষের গভীরতা এমন নিয়মে বদলায় যে অগভীর গভীরতা অফসেটের মধ্যবর্তী রুপান্তরিত ত্রুটি এবং চেপে বসা প্রসারণ কেন্দ্র অক্ষগুলোকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে। বিভিন্ন অনুমানের মধ্যে একটি হচ্ছে অক্ষের গভীরতা প্রসারণ কেন্দ্রের ম্যাগমা সরবরাহে পরিবর্তনের কারণ। অতিধীর শৈলশিরাগুলোর প্রসারণ কেন্দ্র চৌম্বকীয় এবং অচৌম্বকীয় উভয় ক্ষেত্রেই (বর্তমানে কোন আগ্নেয়গিরির সংস্পর্শে নেই) রুপান্তরিত ত্রুটি ছাড়াই শৈলশিরা বিভাগ তৈরি করে।
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.