Remove ads
ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি সরকারি সংস্থা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি সরকারি সংস্থা যার কাজ হল পুরাতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা এবং ঐতিহ্যশালী কীর্তিস্তম্ভের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।[২] ১৮৬১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আলেকজান্ডার কানিংহাম এই সংস্থার প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন।[৩]
সংক্ষেপে | এ এস আই |
---|---|
গঠিত | ১৮৬১ |
সদরদপ্তর | জনপথ, নতুন দিল্লি, ভারত - ১১০০১১ |
যে অঞ্চলে কাজ করে | ভারত |
প্রধান প্রতিষ্ঠান | সংস্কৃতি মন্ত্রক, ভারত সরকার |
বাজেট | ₹ ৬৬২ কোটি (ইউএস$ ৮০.৯২ মিলিয়ন) (২০১৫-২০১৬)[১] |
ওয়েবসাইট | asi |
আলেকজান্ডার কানিংহাম ভারতে ১৮৬১ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়াইটিক সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত হয় যা ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ব্রিটিশ ইন্ডোলোজিস্ট উইলিয়াম জোন্স দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কলকাতায় অবস্থিত এই সংস্থাটি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা এবং পার্সিয়ান হরফের ওপর গবেষণা করে এবং "Asiatic Researches" নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এ সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন চার্লস উইকিনস যিনি প্রথম ১৭৮৫ সালে ভগবত গীতার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। সংস্থাটির সবচেয়ে বড় অর্জন ছিলো ১৮৩৭ সালে জেমস প্রিন্সেপ কর্তৃক ব্রাহ্মী লিপির ব্যাখ্যা যা ভারতের প্রাচীন লিপি-বিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু করে।
ব্রাহ্মীর জ্ঞানে সজ্জিত, বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর ওপর আলেকজান্ডার কানিংহাম একটি বিশদ জরিপ পরিচালনা করেন যা প্রায় অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত হয়। ইতালীয় সামরিক বাহিনীর সদস্য জিনব্যাপটিস্ট ভেনচুরা ও অন্যান্য অপেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মূলত কানিংহাম এ জরিপটি পরিচালনা করেন।
তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত স্তূপগুলো খনন করেছিলেন এবং এ খনন কার্য পরিচালনার জন্য তিনি নিজেই অর্থ যোগান দিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি কাজ পরিচালনার জন্য এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য জরিপ কমিটি গঠনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন । ১৮৪৮ সালে নিজের পদ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে কমিটি গঠনের জন্য চেষ্টা করেও সফলতা না পেয়ে পরবর্তীতে ১৮৬১ সালে পুনরায় চেষ্টা করে তিনি কমিটি গঠনে সফল হোন। লন্ডিং ক্যানিংয়ের মাধ্যমে কানিংহামকে প্রধান করে ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনার আইন পাশ করা হয় ।
অর্থের অভাবে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত জরিপের কাজ স্থগিত রাখা হয়। ১৮৭১ সালে কানিংহামকে প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান এবং জরিপটি অন্য বিভাগে স্থান্তরের মাধ্যমে কাজটি পুনরায় শুরু হয়।
১৮৮৫ সালে কানিংহাম অবসর গ্রহণের পর মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেমস বার্গেস। বার্গেস প্রথমেই "The Indian Antiquary (1872)" নামে একটি জার্নাল এবং ১৮৮২ সালে "Epigraphia Indica" নামে ভারতীয় পুরাতত্ত্বের ওপর বার্ষিক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেন।
১৮৮৯ সালে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে বার্গেসকে মহাপরিচালকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯০২ সাল পর্যন্ত তিনি আর পদ ফিরে পান নি।
তবে মধ্যবর্তীকালীন সময়ে খনন ও জরিপের কাজ বিভিন্ন সংঘ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।
১৮৮৮ সাল থেকে সরকারি ব্যয় হ্রাস করার উদ্দেশ্যে নানা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার বাজেট কর্তন করে। প্রায় দশ বছরের মতো এই অর্থের অভাবে সমিক্ষার কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হয় নি। এই ১০ বছর ভারতের ইতিহাসে "Buck Crisis" নামে পরিচিত।[৪]
বাস্তবে এ পদক্ষেপের কারণ ASI এর কর্মচারীদের কর্মসংস্থান মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়। ১৮৯২ সাল এডওয়ার্ড বাক ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বন্ধ করার ঘোষণা দেন এবং সে সাথে ASI ও বন্ধ করে দেন ফলস্বরূপ ১৯৯৫ সালের মধ্যেই ASI এর সকল কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পরে। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিলো সরকারের বাজেটে অধিক অর্থ সঞ্চয় করা।[৫][৬]
এ থেকে বোঝা গেলো যে আগামী ৩ বছরের মধ্যে বড় কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কারই কেবল এএসআই কে রক্ষা করতে পারবে। [৪]
১৮৯৫ সালের মার্চ মাসে অবশেষে নিগালি সাগর শিলালিপি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এএসআই তাদের জরিপ পরিচালনার অনুমতি লাভ করে এবং সেই সাথে " Buck Crisis" এর অবসান ঘটে। এ ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয় জরিপ চলাকালে প্রতি বছর বড় কিছু আবিষ্কার করতে হবে। [৫]
১৮৯৭ সালে "বুদ্ধ শাক্যমুনির জন্মস্থান" শিরোনামে রচিত এ্যালোইস অ্যান্টোন ফুহরের নিজস্ব প্রতিবেদন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। [৭]
১৮৯৫ সালে জর্জি বোহলার রয়েল এশিয়াইটিক সোসাইটিক জার্নালে তিনি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপকে সমর্থন করেছিলেন এবং আরও উল্লেখ করেছিলেন যে প্রাক-অশোকান যুগের আসল দলিল কেবল মাটির নিচেই পাওয়া সম্ভব। [৫][৮]
১৮৯৬ সালের আর একটি স্মরণীয় আবিষ্কার হচ্ছে লুম্বিনি স্তম্ভের শিলালিপি, অশোকের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিলালিপি যা একটি স্তম্ভে লিখিত ছিলো। এটি আবিষ্কার করেন অলিউস আন্তন ফুহার।
পূর্বের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং এই নতুন আবিষ্কৃত স্তম্ভ হতে এটি স্পষ্ট হয় যে বুদ্ধ এই লাম্বিনিতেই জন্মগ্রহণ করেন।[৯]
১৮৯৮ সালে যখন ফুহারের জরিপ কাজে দুর্নীতি ধরা পরে তখন সংস্থাটি পুনরায় সমস্যার সম্মুখীন হয়। প্রকাশিত সকল তথ্য, প্রকাশনা এবং প্রতিবেদন সম্পর্কে স্মিথের কাছে ফুহার স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, তিনি আজ পর্যন্ত যা লিখেছেন তার সবই মিথ্যা ছিলো।[১০]
পরবর্তীতে ভারতীয় সরকারের নির্দেশে ফুহারকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, স্মিথের নেতৃত্বে তার সকল প্রকাশনা ও পাণ্ডুলিপি জব্দ করা এবং তার অফিস তল্লাশি করা হয়।
১৮৯৭ সালে ফুহার তার আবিষ্কারের ওপর একটি মনোগ্রাফ প্রকাশ করলেও তা সরকারের নির্দেশে প্রচার বন্ধ করা হয়।[৭][১১] ফুহারকে তার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় ইউরোপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৯০২ সালে সংস্থাটির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লর্ড কার্জন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি পূর্বে চলমান প্রথা ভঙ্গ করে কেমব্রিজের শাস্ত্র বিষয়ক অধ্যাপক ২৬ বছর বয়সী জন মার্শালকে জরিপের প্রধান করে জরিপ কাজ পুনরায় শুরু করেন। মার্শাল প্রায় ২৫ বছর জরিপের কাজ পরিচালনা করেন। তিনি এ সময়ে সরকারি ইপিগ্রাফিস্ট পদটি চালু করেন এবং বেশি বেশি লিপি বিষয়ক পড়াশুনায় মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন।
তার কার্যকালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিলো ১৯২১ সালে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার। ১৯২৮ সালে হ্যারল্ড হারগ্রিভস মার্শালের পদে স্থলাভিসিক্ত হন।
এরপর পর্যায়ক্রমে দয়া রাম শাহ্নি, জে. এফ. ব্লাকিস্টোন, কে. এন. দিকশিত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ও সামরিক বাহিনীর সদস্য মোরটিমার হুইলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি কর্তব্যরত ছিলেন। এই সময় তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন ব্রহ্মগিরি, চন্দ্রাবল্লি, লৌহ যুগের নিদর্শন ও প্রস্তর যুগের নিদর্শনগুলো খনন করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালে হুইলারের স্থলাভিষিক্ত হন এন পি চক্রবর্তী। যুক্তরাজ্যে ভারতীয় প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের জন্য ১৫ আগস্ট ১৯৪৯ সালে দিল্লিতে ভারতের জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ।
পরবর্তীতে মধুস্বরূপ ভট্ট এবং অমলানন্দ ঘোষ এন পি চক্রবর্তীর পদে অভিষিক্ত হন। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ঘোষ মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি কালীবাগান, লোথাল ও ধোলাভিরায় খনন কার্যের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন।
"The Ancient Monuments and Archaeological Sites and Remains Act" নামে ১৯৫৮ সালে একটি আইন পাশ হয় যার মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের কাজ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যায়। এরপর বি বি লাল মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন যিনি রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ আবিষ্কারের জন্য খনন কাজ পরিচালনা করেন। তার সময়ে "Antiquities and Art Treasures Act-1972" পাশ হয় যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো এই সকল প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
এম এন দেশপাণ্ডে (১৯৭২-১৯৭৮), বি কে থাপার (১৯৭৮-১৯৮১), দেশের প্রথম মহিলা মহাপরিচালক দুবালা মিত্র, এম এস নাগারাজা রাও, জে পি জোশি, এম সি জোশি ধারাবাহিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
এম সি জোশির সময় ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ফলে ভারতে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। ফলস্বরূপ জোশিকে ১৯৯৩ সালে বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে এএসআই তে পূর্বে মহাপরিচালক নিয়োগের যে সকল নিয়ম প্রচলিত ছিলো তা বন্ধ করে আমলা নিয়োগের প্রথা চালু হয়। আবার এই প্রথাটিও ২০১০ সালে বাতিল করা হয়, যখন গৌতম সেন গুপ্তকে সরিয়ে দিয়ে আইএএস এর একজন কর্মকর্তা কে এম শ্রিভাস্তাব মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) মোট ২৯ টি শাখায় বিভক্ত যা ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। যেমন:
জরিপটি পরিচালনার জন্য এই পর্যন্ত ৩০ জন মহাপরিচালক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। তারা হলেন:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.