Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ব্যক্তিত্বের অর্চনা বা নেতার অর্চনা বা ব্যক্তি পূজা (ইংরেজি: Cult of Personality) বলতে বোঝায় যখন একটি দেশের শাসনব্যবস্থা অথবা একজন শাসক বিভিন্ন কৌশল যেমন গণমাধ্যম, অপপ্রচার, বড় মিথ্যা, প্রদর্শনী, শিল্পকলা, দেশপ্রেম, সরকার সমর্থিত আন্দোলন এবং সমাবেশ; এইগুলো ব্যবহার করে চাটুকারিতা এবং প্রশংসার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে ঐ নেতার একটি আদর্শিক, বীরত্বপূর্ণ এবং উপাসনামূলক চিত্র তৈরি করে। সাধারণত রাষ্ট্র নিজে বা একদলীয় সরকারের দল কিংবা রাষ্ট্রের প্রভাবশালী দল সামাজিক প্রকৌশল দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত করে। এই বৈশিষ্ট্য বাদ দিলে এটিকে এক প্রকার "দেবত্বারোপ" মতবাদের মত বলা যায়। এই ব্যক্তিত্বের অর্চনা সাধারণত কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী দেশগুলিতে দেখা যায়।
এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেসের শেষ দিনে ক্রুশ্চেভের ব্যক্তিত্বের অর্চনা ও এটির ফলাফল নামক গোপন বক্তৃতায় এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ভাষণটিতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সেক্রেটারি এবং দেশটির প্রধান নেতা ক্রুশ্চেভ তাঁর পূর্বসূরি জোসেফ স্টালিনের সিংহীকরণ এবং আদর্শীকরণের সমালোচনা করেছিলেন এবং একইসাথে তখনকার কমিউনিস্ট সমসাময়িক মাও সেতুং-র মতবাদ যে মূল মার্কসবাদী মতবাদের বিরোধী ছিলো তাও তিনি বলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে বি-স্তালিনীকরণের (De-stalinization) অংশ হিসেবে এই গোপন ভাষণটি প্রকাশ্যে আনা হয়।
প্রাচীন রোমের রাজ্যের সম্রাট এবং তাঁদের পরিবারের কিছু সদস্যদের মধ্যে এ ধরনের ব্যক্তি-কেন্দ্রিক অর্চনা প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। ইতিহাস জুড়ে রাজা এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রায়শই প্রচুর শ্রদ্ধার সাথে এবং অতিমানবিক গুণাবলির অধিকারী হিসেবে ধরা হত। রাজার শাশ্বত অধিকারের নীতি আনুযায়ী, উদাহরণস্বরূপ, মধ্যযুগীয় ইউরোপে 'ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই' শাসকরা অধীনস্থ হয়েছে বলে বলা হত॥ প্রাচীন মিশর, জাপান সাম্রাজ্য, ইনকা, অ্যাজটেক, তিব্বত, শ্যামদেশ (বর্তমানে থাইল্যান্ড) এবং রোমান সাম্রাজ্যে রাজা ও সম্রাটদের "ঐশ্বিরিক-রাজা" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হত।
১৮ ও ১৯ শতকে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদগুলি ছড়িয়ে পড়ায় শাসকশ্রেণিদের পক্ষে এই ধারণাটা মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে বেতারেরর মতো গণমাধ্যম বিকাশের ফলে রাজনৈতিক নেতারা জনগণের কাছে নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি খুব সুন্দরভাবে প্রচার করতে পারছিল। যা আগে কখনও সম্ভব ছিলো না। ঠিক এভাবেই এই ২০ শতাব্দীতেই সবচেয়ে বেশি কুখ্যাত এরকম শাসকের আবির্ভাব হয়। প্রায়শই এরা রাজনৈতিক ধর্মের মোড়কেই এটি করতো। [1]
"Personality cult" (ব্যক্তিত্বের অর্চনা) শব্দটি সম্ভবত ইংরেজিতে ১৮০০-১৮৫০ সালের দিকে ফরাসি ও জার্মান ভাষায় সমসাময়িক ব্যবহারের সাথে সাথেই ব্যবহৃত হয়েছিলো।[2] প্রথমে এটির কোনো রাজনৈতিক ধারণা ছিল না তবে পরিবর্তে রোমান্টিক "Genius cult"-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। কার্ল মার্ক্সের জার্মান রাজনৈতিক কর্মী উইলহেলম ব্লোসকে ১০ নভেম্বর ১৮৭৭-তে লেখা একটি চিঠিতে এই শব্দটির প্রথম রাজনৈতিক ব্যবহার করা হয়।
আমরা কেউই জনপ্রিয়তাকে গুরুত্ব দেই না। একটি প্রমাণ দেই: আমি এই ব্যক্তিত্বের অর্চানাকে তেমন পছন্দ করি না যখন এরকম গণসম্মান[...] জানানোর ব্যপারটি ঘটে, আমি কাউকে এরকম সম্মানের মধ্যে দেখতে চাইনা। [...][2][3]
কোনো নেতার মধ্যে এই ব্যক্তিত্বের অর্চনা কীভাবে গড়ে উঠে তা সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ঐতিহাসিক ইয়ান পাম্পার লিখেছেন যে, আধুনিক কালের ব্যক্তিত্ব অর্চনা পাঁচটি বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে যা তাঁদেরকে তাঁদের "পূর্বসূরিদের" থেকে আলাদা রাখে: এইসব অর্চনা হবে 'ধর্মনিরপেক্ষ' এবং "জনপ্রিয় সার্বভৌমত্বের প্রতীক"; নেতা সবসময় পুরুষ হবে; কেবল শাসক শ্রেণজদের টার্গেট না করে তাঁরা গোটা জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে; তাঁরা গণমাধ্যম ব্যবহার করে; যেখানে "প্রতিদ্বন্দ্বী অর্চনার সংস্কৃতি"কে বাধা দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমগুলোকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তাঁরা সবসময় মুখিয়ে থাকে।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.