বৃহস্পতির বলয় (ইংরেজি: Rings of Jupiter) বা বার্হস্পত্য বলয় মণ্ডল (ইংরেজি: Jovian ring system) হল বৃহস্পতি গ্রহের একটি বলয় মণ্ডল। শনি ও ইউরেনাস গ্রহের বলয় মণ্ডলের পর আবিষ্কৃত এটি সৌর জগতের তৃতীয় গ্রহীয় বলয়। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ স্পেস প্রোব কর্তৃক এই বলয়টি প্রথম আবিষ্কৃত হয়[1] এবং ১৯৯০-এর দশকে গ্যালিলিও অরবিটার কর্তৃক এটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষণ করা হয়।[2] বেশ কয়েক বছর ধরে এই বলয়টিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবী থেকেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।[3] ভূপৃষ্ঠ থেকে এই বলয়টিকে পর্যবেক্ষণ করতে প্রাপ্তিসাধ্য বৃহত্তম টেলিস্কোপগুলি দরকার হয়।[4]
বার্হস্পত্য বলয় মণ্ডল হল একটি অস্পষ্ট গ্রহীয় বলয় মণ্ডল। এটি মূলত ধূলিকণা দ্বারা গঠিত।[1][5] এটির প্রধান উপাদান চারটি: "জ্যোতিশ্চক্র বলয়" বা "হ্যালো রিং" নামে পরিচিত কণার একটি পুরু আভ্যন্তরীণ টরাস; তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী ধরনের পাতলা একটি "প্রধান বলয়"; এবং দু’টি প্রশস্ত, পুরু ও অস্পষ্ট বহিঃস্থ "লূতাতন্তু বলয়" বা "গসামার রিং"। শেষোক্ত বলয় দু’টির নামকরণ করা হয়েছে যে দু’টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের উপাদানে সেগুলি গঠিত, তাদের নামানুসারে: আমালথিয়া ও থিবি।[6]
প্রধান ও জ্যোতিশ্চক্র বলয় দু’টি উচ্চ—ক্ষমতাসম্পন্ন অভিঘাতের ফলে প্রাকৃতিক উপগ্রহ মেটিস, অ্যাড্রাস্টিয়া ও অন্যান্য অপর্যবেক্ষিত মূল বস্তুখণ্ড থেকে নিঃসৃত ধূলিকণা দ্বারা গঠিত।[2] ২০০৭ সালের মার্চ মাসে নিউ হোরাইজনস মহাকাশযান থেকে গৃহীত উচ্চ-রেজল্যুশনের ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে প্রধান বলয়ের একটি সমৃদ্ধ সূক্ষ্ম আকৃতি বিদ্যমান।[7]
দৃশ্যমান ও প্রায়-অবলোহিত আলোয় বলয়গুলিকে লালচে রঙের দেখায়। শুধুমাত্র জ্যোতিশ্চক্র বলয়টি অস্পষ্ট বা নীল রঙের দেখায়।[3] বলয়ে ধূলিকণার আকার ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। তবে জ্যোতিশ্চক্র বলয় ছাড়া সব ক’টি বলয়ে প্রায় ১৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসার্ধ-বিশিষ্ট অ-গোলকাকার বস্তুগুলি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় প্রস্থচ্ছেদ ভাগে।[8] জ্যোতিশ্চক্র বলয়ে সম্ভবত সাবমাইক্রোমিটার ধূলিকণার প্রাধান্য। বলয় মণ্ডলের সামগ্রিক ভর (অনির্ণীত মূল বস্তুখণ্ড সহ) সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তবে এটির মাত্রা ১০১১ থেকে ১০১৬ কিলোগ্রামের মধ্যবর্তী।[9] বলয় মণ্ডলের বয়সও অজ্ঞাত; তবে বৃহস্পতি গঠিত হওয়ার সময় থেকেই সম্ভবত এই বলয় মণ্ডলের অস্তিত্ব রয়েছে।[9]
হিমালিয়ার কক্ষপথে সম্ভবত একটি বলয় ছিল। বলয় সৃষ্টির একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই যে, একটি ছোটো প্রাকৃতিক উপগ্রহের সঙ্গে হিমালিয়ার সংঘাত ঘটে এবং সেই সংঘর্ষের ফলে হিমালিয়া থেকে বস্তুখণ্ড ছিটকে বেরিয়ে যায়।[10]
আবিষ্কার ও গঠন
শনি ও ইউরেনাস গ্রহের বলয় মণ্ডলের পর আবিষ্কৃত বৃহস্পতির বলয় সৌর জগতের তৃতীয় গ্রহীয় বলয়। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ স্পেস প্রোব কর্তৃক এই বলয়টি প্রথম আবিষ্কৃত হয়।[1] এটির প্রধান উপাদান চারটি: "জ্যোতিশ্চক্র বলয়" বা "হ্যালো রিং" নামে পরিচিত কণার একটি পুরু আভ্যন্তরীণ টরাস; তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী ধরনের পাতলা একটি "প্রধান বলয়"; এবং দু’টি প্রশস্ত, পুরু ও অস্পষ্ট বহিঃস্থ "লূতাতন্তু বলয়" বা "গসামার রিং"। শেষোক্ত বলয় দু’টির নামকরণ করা হয়েছে যে দু’টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের উপাদানে সেগুলি গঠিত, তাদের নামানুসারে: আমালথিয়া ও থিবি।[6] বার্হস্পত্য বলয়গুলির যে সব প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির কথা জানা গিয়েছে, সেগুলি সারণি আকারে দেওয়া হল:[2][5][6][8]
নাম | ব্যাসার্ধ (কিলোমিটার) | প্রস্থ (কিলোমিটার) | ঘনত্ব (কিলোমিটার) | দৃশ্যগত গভীরতা[lower-alpha 1] (in τ) | ধূলিকণার ভগ্নাংশ | ভর (কিলোগ্রাম) | টীকা |
---|---|---|---|---|---|---|---|
জ্যোতিশ্চক্র বলয় | ৯২০০০–১২২৫০০ | ৩০৫০০ | ১২৫০০ | ~1 × ১০−৬ | ১০০% | — | |
প্রধান বলয় | ১২২৫০০–১২৯০০০ | ৬৫০০ | 30–300 | 5.9 × ১০−৬ | ~২৫% | ১০৭– ১০৯ (ধূলিকণা) ১০১১– ১০১৬ (বৃহৎ কণা) | অ্যাড্রাস্টেয়া কর্তৃক পরিবেষ্টিত |
অ্যামালথিয়া লূতাতন্তু বলয় | ১২৯০০০–১৮২০০০ | ৫৩০০০ | ২০০০ | ~২ × ১০−৭ | ১০০% | ১০৭– ১০৯ | অ্যামালথিয়ার সঙ্গে যুক্ত |
থিবি লূতাতন্তু বলয় | ১২৯০০০–২২৬০০০ | ৯৭০০০ | ৮৪০০ | ~৩ × ১০−৮ | ১০০% | ১০৭– ১০৯ | থিবির সঙ্গে যুক্ত। থিবির কক্ষপথের বাইরেও প্রসারিত। |
চিত্রাবলি
আরও দেখুন
- বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ
পাদটীকা
- স্বাভাবিক দৃশ্যগত গভীরতা হল বলয়ের কণাগুলির সামগ্রিক প্রস্থচ্ছেদ ও বলয়ের বর্গক্ষেত্র এলাকার অনুপাত।[8]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.