বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন[] ছিল একটি বেঙ্গল রেনেসাঁ আন্দোলন যা বাঙালি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক মতবাদের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদীতার পক্ষে কথা বলে। ব্রিটিশ রাজের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবীরা এর নেতৃত্বে ছিলেন। এই আন্দোলনের একটি মুখপত্র বের হতো ‘শিখা’ নামে।[] শিখা’র প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা থাকত, ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’[] ঢাকায় মর্যাদাপূর্ণ মুসলিম সাহিত্য সমিতির প্রতিষ্ঠা এই আন্দোলনের একটি বড় সাফল্য। [][]

দ্রুত তথ্য গঠিত, প্রতিষ্ঠাস্থান ...
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন
Thumb
গঠিত১৯ জানুয়ারি ১৯২৬ (1926-01-19)
প্রতিষ্ঠাস্থানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিলুপ্ত১৯৩৬
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা
বন্ধ

ইতিহাস

১৯২৬ সালে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিল সমাজ থেকে ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা, এবং কুসংস্কার দূর করে যুক্তিবাদ ও ইহজাগতিক চিন্তা প্রতিষ্ঠা করা। এই আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কাজী আবদুল ওয়াদুদ, আবুল ফজল, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী নজরুল ইসলাম এবং আবদুল কাদির[][][]

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলার মুসলমান সমাজ ইংরেজি শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করছিল এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে নিজেদের দূরে রাখছিল। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্বেষের ফলে মুসলমান সমাজ শিক্ষায়, অর্থনীতিতে এবং সামাজিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে পড়ে। তবে হিন্দু সমাজ এই সময় ইংরেজ শাসনকে মেনে নিয়ে আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নতি করতে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সমাজের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিল।[][]

এই আন্দোলনের মূলে ছিল মুসলিম সাহিত্য-সমাজ, যা ১৯২৬ সালে ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলে বাংলা ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে নেতৃত্বে আরো ছিলেন আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আবদুল কাদিরসহ আরও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী[][][]

লক্ষ্য ও কর্মসূচি

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গঠিত হয় যুক্তিবাদ, ইহজাগতিকতা, এবং মানবতাবাদের উপর ভিত্তি করে। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি চিন্তাবিদসাহিত্যিকদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি মুসলমান সমাজে অন্ধ সংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, এবং পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে যুক্তিবাদ, মানবতা, এবং বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচলন করা।[][]

মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে বলা হয়েছিল, ‘‘আমরা চোখ মেলিয়া সত্যকে জীবনে প্রকৃতভাবে অনুভব করতে চাই, এবং সংস্কারকে ভস্মীভূত করতে চাই।’’ এই আন্দোলনের চিন্তাধারার লক্ষ্য ছিল মুসলমান সমাজে আত্ম-পরিচয়ের সংকট দূর করা এবং তাদের চিন্তায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করা।[]

১৯২৯ সালে আবুল হুসেনের প্রবন্ধ ‘আদেশের নিগ্রহ’ প্রকাশের পর ঢাকার রক্ষণশীল সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তী ঘটনায় আবুল হুসেনকে ক্ষমাপ্রার্থী হতে বাধ্য করা হয়, যা বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যদিও তিনি পরবর্তীতে পদত্যাগ করেন, এই ঘটনা আন্দোলনের অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি।[][]

প্রভাব

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন বাঙালি মুসলমান সমাজের মধ্যে একটি নবজাগরণের সূচনা করে। যদিও এই আন্দোলন সরাসরি ধর্মীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, তবে তা সমাজের গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরব ছিল। এই আন্দোলনের আলোকে বাঙালি মুসলমান সমাজে নতুন চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে।[][]

১৯৩৬ সাল পর্যন্ত বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন তার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ‘শিখা’ পত্রিকার মাধ্যমে তারা তাদের চিন্তা এবং মতবাদ ছড়িয়ে দিতে থাকে। যদিও আন্দোলনের প্রভাব কিছুটা কমে যায়, তবে এর শিক্ষা ও আদর্শ আজও বাঙালি সমাজের প্রগতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।[][]

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.