বিম্বিসার

উত্তর ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারের পৃষ্ঠপোষক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বিম্বিসার

বিম্বিসার (সংস্কৃত: बिम्बिसार) (৫৫৮ খ্রিঃপূঃ – ৪৯১ খ্রিঃপূঃ)[][] হর্য্যঙ্ক রাজবংশের রাজা ছিলেন,[] (জন্ম: ৫৬৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ মৃত্যু: ৪৯২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ যিনি ৫৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মগধ শাসন করেন।[] তার পৃষ্ঠপোষকতায় উত্তর ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার সম্ভব হয়েছিল।

Thumb
রাজগৃহে বিম্বিসার গৌতম বুদ্ধকে স্বাগত জানাচ্ছেন

পরিচিতি

সিংহলী বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশ অনুসারে বিম্বিসার মাত্র পনেরো বছর বয়সে তার পিতা মহাপদুম কর্তৃক মগধের রাজা রূপে অভিষিক্ত হন। বিম্বিসারের মাতার নাম ছিল বিম্ব। প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে বিম্বিসারকে সেনিয় নামে উল্লেখ করা হয়েছে। টীকাকার বুদ্ধঘোষের মতে সেনিয় তার ব্যক্তিগত নাম ছিল, অপরপক্ষে ধম্মপালের মতে সেনিয় ছিল তার গোত্রের নাম।

বৈদেশিক নীতি

বিম্বিসার বিভিন্ন রাজ্যের রাজকুমারী ও অভিজাত নারীদের বিবাহের মাধ্যমে রাজ্যগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন। তিনি কোশল রাজ মহাকোশলের কন্যা কোশল দেবীকে বিবাহ করলে দুই রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান ঘটে। বিবাহের যৌতুক হিসেবে বিম্বিসার কাশীর অধিকার লাভ করেন।[] বিম্বিসার বৈশালীর লিচ্ছবি মহাজনপদের প্রধান চেতকের কন্যা চেল্লনাকে বিবাহ করেন।[] বিম্বিসারের তৃতীয়া পত্নী ক্ষেমা ছিলেন মদ্র দেশের রাজকন্যা। বিদের রাজ কন্যা বাসবি কে বিবাহ করেন।[] তিনি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের জন্য পূর্বে অঙ্গ রাজ্য অধিকার করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে মৌর্য্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তিভূমি হিসেবে কাজ করেছিল।[]

বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা

মহাবংশদীপবংশ গ্রন্থানুসারে বিম্বিসার গৌতম বুদ্ধ অপেক্ষা পাঁচ বছর ছোট ছিলেন। পব্বজ্জাসুত্ত অনুসারে, বোধিলাভের সাত বছর পূর্বে মগধের রাজধানী রাজগৃহে সিদ্ধার্থ গৌতমের সঙ্গে বিম্বিসারের সাক্ষাত ঘটে। সিদ্ধার্থ নিজেকে শাক্য বংশজাত হিসেবে পরিচয় দিলে বিম্বিসার তাকে রাজগৃহে বসবাস করার অনুরোধ করলে সিদ্ধার্থ তা প্রত্যাখ্যান করেন, কিন্তু পরবর্তীকালে বোধিলাভের পর তিনি রাজগৃহে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে গৌতম বুদ্ধ বোধিলাভের দুই বছর পরে বিম্বিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেইদিনই বিম্বিসার বৌদ্ধ সংঘের সহস্রাধিক ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য বেণুবন নামক উদ্যানটি গৌতম বুদ্ধকে প্রদান করেন। এরপর বুদ্ধ তাকে চতুরার্য সত্য সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করেন। বিম্বিসারের অনুরোধে বুদ্ধ অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপোসথ ব্রত পালনের বিধি প্রচলন করেন। আবার, বিম্বিসারের অনুরোধেই বুদ্ধ বর্ষাকালে পরিব্রাজন না করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে সাধনার বর্ষাবাস নামক রীতি প্রচলন করেন। ভিক্ষুদের বর্ষাবাসের সুবিধার জন্য কুটীর নির্মাণ এবং বুদ্ধ ও ভিক্ষুদের চিকিৎসার জন্য রাজবৈদ্য জীবককে নিযুক্ত করেন। বিম্বিসারের তৃতীয়া পত্নী ক্ষেমা পরবর্তীকালে ভিক্ষুণী সংঘে যোগদান করে অর্হত্ত্ব লাভ করেন।[]:২৭-২৯

মৃত্যু

দেবদত্তের প্ররোচনায় বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু তাকে হত্যার চেষ্টা করেন। বুদ্ধের মতাদর্শে বিশ্বাসী বিম্বিসার তার পুত্রকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পুনরায় দেবদত্তের প্ররোচনায় অজাতশত্রু বিম্বিসার ও তার উপদেষ্টামণ্ডলীকে গৃহবন্দী করে নিজেকে মগধের শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন। ৪৯১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গৃহবন্দী অবস্থায় বিম্বিসারের মৃত্যু ঘটে।

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.