Loading AI tools
কোনো বস্তু অন্য বস্তুর সাপেক্ষে অবস্থানের জন্য স্থিত শক্তি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পদার্থবিজ্ঞানে বিভবশক্তি (ইং: Potential energy) বলতে কোনো বস্তু অন্য বস্তুর সাপেক্ষে অবস্থানের জন্য বা বস্তুর অভ্যন্তরীণ পীড়ন বা তড়িৎ আধানের জন্য প্রাপ্ত শক্তিকে বোঝানো হয়।[১][২]
বিভবশক্তির প্রচলিত ধরনের মধ্যে রয়েছে কোনও বস্তুর মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি যা এর ভর এবং অন্য কোনও বস্তু থেকে তার ভরকেন্দ্রের দূরত্বের উপর নির্ভরশীল, বর্ধিত স্প্রিংয়ের স্থিতিস্থাপক বিভবশক্তি, এবং তড়িৎক্ষেত্রে একটিতে বৈদ্যুতিক আধানের তড়িৎ বিভবশক্তি। শক্তির আন্তর্জাতিক একক (SI) হলো জুল, যার প্রতীক J।
যদিও বিভবশক্তির ধারণা দিয়েছিলেন ১৯শ শতাব্দির স্কটিশ প্রকৌশলী ও পদার্থবিদ উইলিয়াম জন র্যাংকিন,[৩][৪] তবে গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটলের পোটেনশিয়ালিটির ধারণার সাথে তার ধারণার মিল রয়েছে। বিভবশক্তি এমন বলের সাথে জড়িত যা বস্তুর উপর এমনভাবে কাজ করে যেন বস্তুর উপর এই বল দ্বারা সম্পন্ন মোট কাজ কেবলমাত্র বস্তুর প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সংরক্ষণশীল বল নামে পরিচিত এই বল স্থানের প্রতিটি বিন্দুতে একটি নির্দিষ্ট স্কেলার ফাংশনের গ্রেডিয়েন্ট হিসেবে প্রকাশিত বিভব নামক ভেক্টর দ্বারা প্রকাশ করা যায়।
যেহেতু কোনও বস্তুর বিভবশক্তির কাজ কেবল শুরু এবং শেষ এই দুটি অবস্থানের দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এই শক্তি বস্তুর গতিপথের উপর নির্ভর করে না, তাই বিভব নামের একটি ফাংশন রয়েছে যা উক্ত দুই বিন্দুতে মূল্যায়ন করে কাজ নির্ণয় করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের বিভবশক্তি রয়েছে এবং প্রত্যেকটিই একটি নির্দিষ্ট ধরনের বলের সাথে সম্পৃক্ত। উদাহরণস্বরূপ, স্থিতিস্থাপক বলের কাজকে স্থিতিস্থাপক বিভবশক্তি বলা হয়; মহাকর্ষ বলের কাজকে মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি বলে; কুলম্ব বলের কাজকে তড়িৎ বিভবশক্তি বলে; ব্যারিয়ন আধানের উপর ক্রিয়াশীল সবল নিউক্লিয় বল বা দুর্বল নিউক্লিয় বলের কাজকে পারমাণবিক বিভবশক্তি বলে; আন্তঃআণবিক বলের কাজকে আন্তঃআণবিক বিভবশক্তি বলে। রাসায়নিক বিভবশক্তি, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানীতে সঞ্চিত শক্তি হলো পরমাণু এবং অণুতে ইলেক্ট্রন এবং নিউক্লিয়াসের কনফিগারেশন পুনর্বিন্যাসের সময় কুলম্ব বলের কাজ। তাপীয় শক্তির সাধারণত দুটি উপাদান থাকে: কণার এলোমেলো গতির জন্য গতিশক্তি এবং তাদের আকৃতির জন্য বিভবশক্তি।
বিভব থেকে উদ্ভূত বলকে সংরক্ষণশীল বলও বলা হয়। সংরক্ষণশীল বল দ্বারা কাজ হলো
যেখানে হলো বলের সাথে সম্পর্কিত বিভবশক্তির পরিবর্তন। এখানে ঋণাত্মক চিহ্নটি দ্বারা বুঝায় যে বল ক্ষেত্রের বিরুদ্ধে কাজ করলে বিভবশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বল ক্ষেত্র কাজ করলে বিভবশক্তি হ্রাস পায়। বিভবশক্তিকে সাধারণত PE, U, V, and Ep দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বিভবশক্তি হলো অন্য বস্তুর সাপেক্ষে কোনও বস্তুর অবস্থানের কারণে প্রাপ্ত শক্তি।[৫] বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভবশক্তি সাধারণত প্রত্যয়নী বল হিসেবে স্প্রিং বা মহাকর্ষ বলের সাথে সম্পর্কিত। একটি স্প্রিংকে প্রসারিত করা বা একটি ভর উত্তোলনের জন্য একটি বাহ্যিক বল দ্বারা প্রয়োজন হয় যা বিভবের বল ক্ষেত্রের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই কাজটি বল ক্ষেত্রে বিভবশক্তি হিসাবে সংরক্ষিত থাকে। যদি বাহ্যিক বল অপসারণ করা হয় তবে বল ক্ষেত্রটি বস্তুকে প্রাথমিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য বস্তুর উপর কাজ করে, যা স্প্রিংয়ের প্রসারকে হ্রাস করে বা কোনও বস্তুকে ভূপাতিত করে।
একটি বল বিবেচনা করা হয় যার ভর m এবং যার উচ্চতা h। অভিকর্ষজ ত্বরণ g প্রায় ধ্রুবক, তাই বলের ওজন mg ধ্রুবক। বল × স্থানচ্যুতি দ্বারা সম্পন্ন কাজের পরিমাণ পাওয়া যায়, যা মহাকর্ষীয় বিভবশক্তির সমান, সুতরাং
সুতরাং মহাকর্ষীয় বিভবশক্তির সংজ্ঞা দাড়ায়, বিভবশক্তি হলো একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের জন্য কোনও বস্তুর শক্তি এবং একটি উদ্ধৃত অবস্থানের জন্য তার শক্তির মধ্যে পার্থক্য।
বিভবশক্তি বলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যদি বল দ্বারা একটি বস্তুকে A থেকে B বিন্দুতে স্থানান্তর করা হলে সম্পন্ন কাজ বিন্দুদ্বয়ের মধ্যবর্তী পথের (যদি কাজটি কোনও সংরক্ষণশীল বল দ্বারা সংঘটিত হয়) উপর নির্ভর না করে, তবে A থেকে পরিমাপ করা এই বলের কাজ স্থানের অন্য প্রত্যেক বিন্দুতে একটি স্কেলার মান নির্ধারণ করে এবং একটি স্কেলার বিভব ক্ষেত্রকে সংজ্ঞায়িত করে। এক্ষেত্রে বলটিকে বিভব ক্ষেত্রের ভেক্টর গ্র্যাডিয়েন্টের ঋণাত্মক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
যদি কোনও প্রয়োগকৃত বলের জন্য কাজ পথ নিরপেক্ষ হয়, তবে বলের দ্বারা সম্পন্ন কাজ গতিপথের শুরু এবং শেষ বিন্দু মূল্যায়নের মাধ্যমে করা হয়। এর অর্থ হলো একটি ফাংশন U(x) রয়েছে, যাকে "বিভব" বলা হয়, যাকে xA এবং xB এই দুটি বিন্দুর মধ্যে যে কোনও গতিপথের উপর কাজ পেতে এই বিন্দু দুটি মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এই ফাংশনটি একটি ঋণাত্মক চিহ্নসহ সংজ্ঞায়িত করা হয় যাতে ইতিবাচক কাজের জলে বিভবের হ্রাস হয়, যা হলো
যেখানে C হলো A থেকে B পর্যন্ত গতিপথ। যেহেতু সম্পন্ন কাজ পথনির্ভর নয়, সুতরাং এই রাশিটি A থেকে B পর্যন্ত যে কোনও গতিপথ C এর জন্য প্রযোজ্য।
U(x) ফাংশনটি হলো প্রয়োগকৃত বলের সাথে সম্পর্কিত বিভবশক্তি। বিভবশক্তি আছে এমন বলের উদাহরণ হলো মহাকর্ষ এবং স্প্রিং এর বল।
এই অনুচ্ছেদে কাজ এবং বিভবশক্তির মধ্যে সম্পর্ক আরও বিশদভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বক্ররেখা C বরাবর কাজকে সংজ্ঞায়িত করা রেখা সমাকলন একটি বিশেষ আকার ধারণ করে যদি বল F একটি স্কেলারের ক্ষেত্র Φ(x) এর সাথে সম্পর্কিত হয়। তাহলে,
এক্ষেত্রে বক্ররেখা বরাবর কাজের পরিমাণ,
যা নতিমাত্রা উপপাদ্য দ্বারা নির্ণয় করা যেতে পারে
এটি দ্বারা বুঝা যায় যে, যদি বল একটি স্কেলার ক্ষেত্র থেকে উৎপন্ন হয় তাহলে C বক্ররেখা বরাবর এই বলের কাজ নির্ণয়ের জন্য বক্ররেখার সূচনা বিন্দু A এবং শেষপ্রান্ত B এর স্কেলার ক্ষেত্র মূল্যায়ন করা হয়। এটি দ্বারা বুঝায় যে কাজ সমাকলন A এবং B বিন্দুর মধ্যবর্তী পথের উপর নির্ভর করে না।
বিভবশক্তি U=-Φ(x) কে সাধারণত স্কেলার ক্ষেত্রের সাথে ঋণাত্মক হিসেবে প্রকাশ করা হয়, যেন বল ক্ষেত্র দ্বারা কাজ বিভবশক্তিকে হ্রাস করে,
এই ক্ষেত্রে, কাজের ফাংশনটিতে ডেল অপারেটর প্রয়োগ করে পাই,
এখানে বল F হলো "বিভব থেকে উদ্ভূত"।[৬] এটি দ্বারা এও বুঝায় যে F কে একটি সংরক্ষণশীল ভেক্টর ক্ষেত্র হতে হবে। বিভব U দ্বারা স্থানের সকল বিন্দু x এ একটি বল F কে সংজ্ঞায়িত করে, এবং বলের এই সেটকে বল ক্ষেত্র বলে।
একটি বল ক্ষেত্র F(x) হলে, নতিমাত্রা উপপাদ্যটি ব্যবহার করে কাজের সমাকলন মূল্যায়নের মাধ্যমে বিভবশক্তির সাথে সম্পর্কিত স্কেলার ফাংশনটি নির্ণয় করা যেতে পারে। γ(a)=A থেকে γ(b)=B পর্যন্ত একটি পরামিতিযুক্ত বক্ররেখা γ(t)=r(t) ব্যবহার করে এটি পরিমাপ করা হয়,
বল ক্ষেত্র F এর ক্ষেত্রে v= dr/dt হলে নতিমাত্রা উপপাদ্য থেকে পাওয়া যায়,
একটি বল ক্ষেত্র কর্তৃক কোনও বস্তুর উপর প্রযুক্ত ক্ষমতা বেগ v এর দিকে কাজ বা বিভবের নতিমাত্রা থেকে পাওয়া যায়, যা হলো,
বিভব ফাংশন থেকে নির্ণেয় কাজের উদাহরন হলো মহাকর্ষ বা স্প্রিং বল।[৭]
ছোট উচ্চতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি গননার জন্য,
যেখানে m হলো কেজি এককে বস্তুর ভর, g হলো উক্ত স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ (পৃথিবীতে এর মান ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড২), h হলো প্রসঙ্গ তল থেকে মিটার এককে উচ্চতা, এবং U হলো জুল এককে বিভবশক্তি।
পৃথিবীর পৃষ্ঠের নিকটবর্তী কোনো বস্তুর উপর অভিকর্ষ বস্তুটির ভরকেন্দ্র বরাবর একটি নিম্নমুখী বল F=(0, 0, Fz) প্রয়োগ করে। r(t) = (x(t), y(t), z(t)) গতিপথে চলমান কোনো বস্তুর উপর অভিকর্ষ বলের কাজ নির্ণয়ের জন্য এর বেগ v=(vx, vy, vz) ব্যবহার করা হয়,
যেখানে বেগের উলম্ব উপাংশের সমাকলন হলো উলম্ব দূরত্ব। মহাকর্ষ বলের দ্বারা কাজ কেবল বক্ররেখা r(t) এর উলম্ব গতিবিধির উপর নির্ভর করে।
একটি আনুভূমিক স্প্রিংয়ের উপর F = (−kx, 0, 0) বল প্রযুক্ত হলে, এই বল x-অক্ষ বরাবর স্প্রিংটির বিকৃতির সমানুপাতিক। বক্ররেখা s(t) = (x(t), y(t), z(t)) বরাবর কোনো বস্তুর উপর স্প্রিংটির প্রযুক্ত কাজের পরিমাণ গণনার জন্য এর বেগ v = (vx, vy, vz) ব্যবহার করা হয়,
ধরি, স্প্রিংয়ের সাথে বস্তুর সংস্পর্শের সময় t = 0, তাহলে দূরত্ব x এবং x-অক্ষ বরাবর বেগ xvx এর সমাকলনের গুণফল x2/2।
ফাংশনটিকে রৈখিক স্প্রিংয়ের বিভবশক্তি বলা হয়। স্থিতিস্থাপক বিভবশক্তি হলো পীড়ন বা সংকোচনের ফলে বিকৃত হওয়া স্থিতিস্থাপক বস্তুর বিভবশক্তি (যেমন, ধনুক বা গুলতি)। এটি এমন একটি বলের ফলাফল হিসাবে দেখা দেয় যা বস্তুকে তার মূল আকারে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে, যা হলো মূলত বস্তুটিকে গঠনকারী পরমাণু এবং অণুগুলির মধ্যবর্তী তড়িচ্চুম্বকীয় বল। পীড়ন সরিয়ে নিলে এই শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি বা মহাকর্ষীয় বিভব ফাংশন হলো,
ঋণাত্মক চিহ্ন দ্বারা বুঝায় যে, বিভবশক্তি ব্যয় করে কাজ সম্পন্ন পাওয়া যায়।
নিউটনের সূত্রানুযায়ী r দুরত্বে অবস্থিত M ও m ভরের দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষ বল
এখানে হলো M থেকে m এর দিক বরাবর একক দৈর্ঘ্য ভেক্টর, এবং G হলো মহাকর্ষ ধ্রুবক।
যদি m ভরের বস্তু v বেগ নিয়ে r(t1) থেকে r(t2) বিন্দুতে গেলে বস্তুটির উপর মহাকর্ষ বলের দ্বারা কাজের পরিমাণ
m ভরের বস্তুটির অবস্থান এবং বেগ হলো
যেখানে er এবং et হলো M থেকে m বরাবর ভেক্টরের সাপেক্ষে ব্যাসার্ধমুখী এবং তির্যক একক ভেক্টর। এটি ব্যবহার করে মহাকর্ষ বলের কাজের সূত্রকে সহজ করা যায়,
এখানে ধরে নেওয়া হয়েছে যে
কুলম্বের সূত্রানুযায়ী r দুরত্বে অবস্থিত q আধানের উপর অপর একটি আধান Q কর্তৃক প্রযুক্ত স্থির তড়িৎ বল
এখানে হলো Q থেকে q বরাবর একক দৈর্ঘ্য ভেক্টর এবং ε0 হলো শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতা। এটিকে কুলম্বের ধ্রুবক ke = 1 ⁄ 4πε0 হিসেবেও লেখা যায়।
স্থির তড়িৎ ক্ষেত্রে q চার্জকে A বিন্দু থেকে অন্য যেকোনো B বিন্দুতে সরাতে প্রয়োজনীয় কাজ W পাওয়া যায় বিভব ফাংশনের মাধ্যমে,
বিভবশক্তি হলো কোন সিস্টেমে কোনো কিছুর অবস্থার একটি ফাংশন, যা একটি নির্দিষ্ট অবস্থার সাপেক্ষে সংজ্ঞায়িত। এই প্রসঙ্গ অবস্থা সবসময় একটি বাস্তব অবস্থা নয়; এটি একটি সীমাও হতে পারে, যেমন অসীমের দিকে ছুটে যাওয়ার প্রবণতাসম্পন্ন এমন সকল বস্তুর মধ্যবর্তী দূরত্বের সাথে জড়িত শক্তির সীমা হলো সসীম, যেমন বিপরীতমুখী-বর্গ সূত্র বলের ক্ষেত্রে। যে কোনও প্রসঙ্গ অবস্থা ব্যবহার করা যায়; সুতরাং এটি সুবিধার উপর ভিত্তি করে চয়ন করা যেতে পারে।
সাধারণত কোনও সিস্টেমের বিভবশক্তি কেবল তার উপাদানগুলির আপেক্ষিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে, তাই প্রসঙ্গ অবস্থাটি আপেক্ষিক অবস্থানের ক্ষেত্রেও প্রকাশ করা যেতে পারে।
যেহেতু পৃথিবীর মহাকর্ষের বিপরীতে বস্তুকে উঠানোর জন্য কাজ করা প্রয়োজন, সুতরাং মহাকর্ষীয় শক্তি হলো মহাকর্ষ বলের সাথে সম্পর্কিত বিভবশক্তি। উচু অবস্থানের কারণে বিভবশক্তিকে মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি বলে, এবং এর প্রমান হলো উঁচু চৌবাচ্চায় বা বাঁধের পিছনে রাখা পানি। মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে অবস্থিত কোনও বস্তু যদি এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে পড়ে যায় তবে মহাকর্ষ বল বস্তুর উপর ধনাত্মক কাজ করবে এবং মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি সমপরিমাণে হ্রাস পাবে।
একটি টেবিলের উপরে রাখা একটি বই বিবেচনা করা হলে, বইটি মেঝে থেকে টেবিল পর্যন্ত উত্থাপিত হওয়ার সময় কিছু বাহ্যিক বল মহাকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কাজ করে। বইটি যদি মেঝেতে পড়ে যায় তবে বইটির "পতনের" শক্তি আসে মহাকর্ষীয় শক্তি থেকে। সুতরাং, বইটি যদি টেবিলের নিচে পড়ে যায় তবে এই বিভবশক্তি বইয়ের ভরকে ত্বরান্বিত করতে ব্যবহৃত হয় এবং তা গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বইটি মেঝেতে আঘাত করলে এই গতিশক্তি তাপ, বিকৃতি এবং আঘাত শব্দে রূপান্তরিত হয়।
যেসকল বিষয় কোন বস্তুর মহাকর্ষীয় বিভবশক্তিকে প্রভাবিত করে তা হলো প্রসঙ্গ বিন্দুর সাপেক্ষে উচ্চতা, এর ভর এবং এটি যে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে রয়েছে তার প্রাবল্য। সুতরাং, টেবিলের উপর থাকা একটি বইয়ের মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি লম্বা আলমারির উপরে থাকা একই বইয়ের তুলনায় কম, আবার একই টেবিলে থাকা ভারী বইয়েরর মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি হালকা বইয়ের তুলনায় বেশি। চাঁদের পৃষ্ঠের উপরে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় একটি বস্তুর মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরের সমান উচ্চতার চেয়ে কম, কারণ চাঁদের অভিকর্ষ পৃথিবীর তুলনায় দুর্বল। অভিকর্ষ যদি ধ্রুব না হয় তাহলে শুধু উচ্চতা ব্যবহার করে মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি গণনার করা যায় না। নিম্নলিখিত অনুচ্ছেদগুলোতে আরও বিশদ বর্ণনা রয়েছে।
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের প্রাবল্য অবস্থানের উপর নির্ভরশীল। তবে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের উৎসের কেন্দ্র থেকে দূরত্বের তুলনায় যখন অবস্থানের পরিবর্তন ক্ষুদ্র হয় তখন ক্ষেত্র প্রাবল্যের এই পরিবর্তন নগণ্য এবং আমরা ধরে নিতে পারি যে কোনও নির্দিষ্ট বস্তুর উপর মহাকর্ষ বল অপরিবর্তিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা ধরে নিই যে পৃথিবীর উপরিভাগের কাছে অভিকর্ষজ ত্বরণ একটি ধ্রুবক g = 9.8 m/s2 ("আদর্শ অভিকর্ষ")। এই ক্ষেত্রে, মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি নির্ণয়ের জন্য কাজের W = Fd সমীকরণটি ব্যবহার করে নেওয়া যেতে পারে
উচু স্থানে অধিষ্ঠিত যে কোনও বস্তুর মহাকর্ষীয় বিভবশক্তির পরিমাণ সেটিকে উত্তোলনের জন্য মহাকর্ষ বলের বিরুদ্ধে করা কাজের সমান। সম্পন্ন কাজের পরিমাণ বস্তুটিকে সরাতে প্রয়োজনীয় ঊর্ধ্বমুখী বল এবং উল্লম্ব দূরত্বের গুনফলের সমান হয় (W = Fd)। ধ্রুব বেগে চলার সময় যে ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়োজন তা বস্তুর ওজন, mg এর সমান, সুতরাং এটিকে উচ্চতা h উচ্চতায় উত্তোলনের ক্ষেত্রে সম্পন্ন কাজ হলো mgh এর গুণফল। সুতরাং, যখন কেবলমাত্র ভর, মহাকর্ষ এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার হিসাব করা হয়, তখন সমীকরণটি হলো:[৮]
এখানে U হলো পৃথিবীর পৃষ্ঠে থাকার সাপেক্ষে বস্তুটির বিভবশক্তি, m হলো বস্তুর ভর, g হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং h হলো বস্তুর উচ্চতা।[৯] যদি m কে কিলোগ্রাম, g কে মিটার/সেকেন্ড২ এবং h কে মিটারে প্রকাশ করা হয়, তাহলে U এর একক হবে জুল।
সুতরাং, বিভব পার্থক্য হলো
দূরত্বের বৃহত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে g কে ধ্রুবক মনে করা বৈধ নয় এবং মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি নির্ধারণের জন্য ক্যালকুলাস এবং কাজের সাধারণ গাণিতিক সংজ্ঞা ব্যবহার করতে হবে। বিভবশক্তি গণনার জন্য নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে প্রাপ্ত মহাকর্ষ বলকে বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দুরত্ব r এর সাপেক্ষে সমাকলন করতে পারি। এই সংজ্ঞাটি ব্যবহার করে মহাকর্ষ ধ্রুবক G এর সাহায্যে r দূরত্বের m1 এবং M2 ভরের বস্তুদ্বয়ের সিস্টেমে মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি হলো
এখানে K একটি ধ্রুবক যা কোথা থেকে বিভব পরিমাপ করা হবে তার উপর নির্ভরশীল। সাধারণত K=0 (অর্থাৎ অসীমে কোনও বিন্দুর সাপেক্ষে) ধরে নিলে গণনা সহজতর হয়, যদিও এর ফলে U ঋণাত্মক হয়।
সকল বিভবশক্তির মতো মহাকর্ষীয় বিভবশক্তির ক্ষেত্রেও শূন্য বিন্দু নির্ধারণ করা ঐচ্ছিক। যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সসীম সংখ্যা r কে প্রাধান্য দেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই, এবং শুধুমাত্র দুটি মানের কারণেই U এর মান শূন্য হয় যা হলো এবং । অসীমের মানটি অদ্ভুত বলে মনে হলেও শুধুমাত্র এই মানের ক্ষেত্রেই মহাকর্ষীয় বিভবশক্তির মানগুলি অসীম সংখ্যা হয় না, যদিও তা ঋণাত্মক হয়।
মহাকর্ষীয় বিভবশক্তির বহু ব্যবহার রয়েছে, বিশেষত পাম্প-স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। উদাহরণস্বরূপ, ওয়েলসের ডিনোরভিগে দুটি হ্রদ রয়েছে, একটির উচ্চতা অপরটির চেয়ে একটু বেশি। যখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না, তখন উচ্চতর হ্রদে পানি পাম্প করে বৈদ্যুতিক শক্তিকে (পাম্প চালানোর শক্তি) মহাকর্ষীয় বিভবশক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। আবার যখন বিদ্যুতের চাহিদা বেরে যায়, তখন বৈদ্যুতিক জেনারেটরের টারবাইনগুলির মধ্য দিয়ে পানিকে প্রবাহিত করে বিভবশক্তিকে গতিশক্তিতে এবং এরপর বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি দক্ষ নয় এবং ঘর্ষণের কারণে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ থেকে কিছু শক্তি নষ্ট হয়।[১০][১১][১২][১৩][১৪]
এমন ঘড়িগুলিতেও মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি ব্যবহৃত হয় যাতে পতনশীল ওজন প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে।
লিফট, ক্রেন বা স্যাশ উইন্ডো উপরে তোলার জন্য কাউন্টারওয়েটের ক্ষেত্রেও মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি ব্যবহৃত হয়।
রোলার কোস্টার বিভবশক্তি ব্যবহারের একটি বিনোদনমূলক উপায়। চেইনের মাধ্যমে রোলার কোস্টারের গাড়ীকে একটি ঢাল বরাবর উপরে তোলে (মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি বৃদ্ধি করে), তারপরে নিচে নামার সময় সেই শক্তি পতিত হওয়ার সাথে সাথে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
রাসায়নিক বিভবশক্তি হলো পরমাণু বা অণুর কাঠামোগত বিন্যাসের সাথে সম্পর্কিত বিভবশক্তির একধরনের রূপ। এই বিন্যাস অণুতে রাসায়নিক বন্ধনের ফলাফলস্বরূপ হতে পারে। রাসায়নিক পদার্থের রাসায়নিক শক্তি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য রূপে রূপান্তরিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যখন জ্বালানি পোড়ানো হয় তখন রাসায়নিক শক্তি উত্তাপে রূপান্তরিত হয়, জীবের মধ্যে খাদ্য বিপাকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। সবুজ গাছপালা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং তড়িৎ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
কোনও বস্তুর বৈদ্যুতিক আধান এবং বিভিন্ন বলের উপস্থিতি সম্পর্কিত কারণে বিভবশক্তি থাকতে পারে। এই ধরনের বিভবশক্তির দুটি মূল প্রকরণ রয়েছে: স্থির তড়িৎ বিভবশক্তি, চল তড়িৎ বিভবশক্তি (একে চৌম্বক বিভবশক্তিও বলা হয়)।
মহাশূন্যে দুটি বস্তুর মধ্যে তড়িৎ বিভবশক্তি q আধানের উপর Q আধান কর্তৃক প্রযুক্ত বল থেকে পাওয়া যায়, যা হলো
এখানে হলো Q থেকে q বরাবর একক ভেক্টর এবং ε0 হলো শূন্যস্থানের ভেদ্যতা। এটি কুলম্বের ধ্রুবক ke = 1 ⁄ 4πε0 ব্যবহার করেও প্রকাশ করা যায়।
যদি কোনও বস্তুর বৈদ্যুতিক আধান স্থির বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে অন্যান্য আধানযুক্ত বস্তুর সাপেক্ষে এর অবস্থানের কারণে এর বিভবশক্তি রয়েছে। স্থির তড়িৎ বিভবশক্তি হলো বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণার (স্থির) শক্তি। এই শক্তিকে অসীম থেকে আধানটি বর্তমান অবস্থায় আনতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয়েছে তা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। কাছাকাছি অন্য বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত বস্তু থাকলে এই শক্তি সাধারণত অশূন্য হয়।
q আধানকে স্থির তড়িৎক্ষেত্রের A থেকে B বিন্দুতে নিতে প্রয়োজনীয় কাজ W হলো
যা সাধারণত জুলে প্রকাশিত হয়। একক আধানের ক্ষেত্রে তড়িৎ বিভবশক্তি তড়িৎ বিভবের (সাধারণত ভোল্টেজের জন্য একটি V দিয়ে চিহ্নিত করা হয়) সমান।
বাহ্যিক কোনও চৌম্বক ক্ষেত্র B এর প্রভাবে চৌম্বক ভ্রামক এর বিভবশক্তি [১৫]
কোনও ক্ষেত্রের চুম্বকায়ন M হলো
যেখানে সমাকলন সমস্ত স্থানের উপর হতে পারে বা সমানভাবে যেখানে M অশূন্য।[১৬] চৌম্বক বিভবশক্তি হলো এমন বিভবশক্তি যা কেবল দুটি চৌম্বক পদার্থের মধ্যবর্তী দুরত্বের উপর নির্ভর করে না, বরং ক্ষেত্রের মধ্যে এই পদার্থের অভিমুখীকরণ বা প্রান্তিককরণের উপরেও নির্ভর করে।
পারমাণবিক বিভবশক্তি হলো আণবিক নিউক্লিয়াসের ভিতরে কণার বিভবশক্তি। পারমাণবিক কণা সবল নিউক্লিয় বল দ্বারা আবদ্ধ হয়। দুর্বল নিউক্লিয় বল বিটা ক্ষয়ের মতো নির্দিষ্ট ধরনের তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের বিভবশক্তি সরবরাহ করে।
প্রোটন এবং নিউট্রনের মতো পারমাণবিক কণাগুলি ফিশন এবং ফিউশন প্রক্রিয়াগুলিতে ধ্বংস হয় না, তবে সংগ্রহগুলিতে তাদের ভর পৃথকভাবে মুক্ত থাকলে তাদের যে ভর হতো তার চেয়ে কম হতে পারে, এক্ষেত্রে এই ভর পার্থক্যটি পারমাণবিক বিক্রিয়ায় তাপ এবং বিকিরণ হিসাবে মুক্ত হতে পারে (তাপ এবং তেজস্ক্রিয়তাই হলো অনুপস্থিত ভর। তবে এটি প্রায়শই সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যায়)। সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি এই শক্তি রূপান্তরের একটি উদাহরণ। সূর্যে হাইড্রোজেন ফিউশন প্রক্রিয়া প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪ মিলিয়ন টন সৌর পদার্থকে তড়িচ্চুম্বকীয় শক্তিতে রূপান্তরিত করে যা মহাকাশে বিকিরিত হয়।
বিভবশক্তি বলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যদি বল দ্বারা একটি বস্তুকে A থেকে B বিন্দুতে স্থানান্তর করা হলে সম্পন্ন কাজ বিন্দুদ্বয়ের মধ্যবর্তী পথের (যদি কাজটি কোনও সংরক্ষণশীল বল দ্বারা সংঘটিত হয়) উপর নির্ভর না করে, তবে A থেকে পরিমাপ করা এই বলের কাজ স্থানের অন্য প্রত্যেক বিন্দুতে একটি স্কেলার মান নির্ধারণ করে এবং একটি স্কেলার বিভব ক্ষেত্রকে সংজ্ঞায়িত করে। এক্ষেত্রে বলটিকে বিভব ক্ষেত্রের ভেক্টর গ্র্যাডিয়েন্টের ঋণাত্মক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, মহাকর্ষ একটি সংরক্ষণশীল বল। এর সাথে সম্পর্কিত বিভব হলো মহাকর্ষীয় বিভব যা সাধারণত বা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যা একক ভরে শক্তির জন্য অবস্থানের ফাংশন। r দুরত্বে অবস্থিত M এবং m ভরের দুটি ভিন্ন বস্তুর মহাকর্ষীয় বিভবশক্তি
বস্তু দুটির মহাকর্ষীয় বিভব (নির্দিষ্ট শক্তি) হলো
এখানে হলো পরিমিত ভর।
একটি অনীয়ান ভরের বস্তুকে সম্পন্ন A বিন্দু থেকে সম্পন্ন B বিন্দুতে সরাতে মহাকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কাজের পরিমাণ হলো , এবং বিপরীতদিকে গেলে কাজের পরিমাণ হবে , সুতরাং A বিন্দুতে ফিরে এলে বিভবশক্তিও পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
আবার, যদি A বিন্দুতে বিভবশক্তি এবং B বিন্দুতে বিভবশক্তি এবং একটি ধ্রুবক (অর্থাৎ এটি ঋণাত্মক, ধনাত্মক যেকোনো সংখ্যা হতে পারে, তবে এর মান A ও B উভয় ক্ষেত্রে সমান) হয়, তাহলে A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে যেতে কাজ
আগের মতোই।
ব্যবহারিক দিক দিয়ে এর অর্থ হলো, যে কেউ এবং এর মান যেকোনো স্থানে শূন্য ধরে নিতে পারে। তবে এটি সাধারণত পৃথিবীর পৃষ্ঠ বা অসীমে শূন্য ধরা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.