Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কোন ভাষার একটি বিশেষ রূপ অন্য রূপগুলির চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই উন্নত এবং এই রূপটিকেই ভাষাটির সমস্ত বক্তার ব্যবহার করা উচিত, এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সাধারণত ভাষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বিধানবাদ (ইংরেজি: prescriptivism) নামে অভিহিত করা হয়। বিধানবাদীরা মূলত ভাষার ব্যাকরণ ও শব্দভাণ্ডারের উপরেই বেশি জোর দেন, তবে উচ্চারণের ক্ষেত্রেও বিধানবাদের প্রচুর উদাহরণ আছে। সাধারণত ভাষাটির "আদর্শ" লিখিত ভাষার একটি সংস্করণকে, বিশেষ করে সাহিত্যের ভাষা কিংবা আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় ব্যবহৃত ভাষাকেই বিধানবাদীরা পছন্দ করে থাকেন। এই ভাষার অনুসারীরা সাধারণত বলেন যে তাঁরাই "শুদ্ধভাবে" কথা বলেন বা লেখেন, আর ভাষার অন্যান্য বৈচিত্র্যগুলি "অশুদ্ধ"।
সমস্ত প্রধান ইউরোপীয় ভাষাই বিধানবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে ১৮শ শতকে ব্যাকরণ ও অভিধান রচনায় বিধানবাদই ছিল ভাষা বিশ্লেষণের মূল ধারা। এই প্রথমদিককার ব্যাকরণবিদদের তিনটি লক্ষ্য ছিল:
বিধানবাদীদের এই কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের প্রকাশ ঘটে ব্যাকরণের বিভিন্ন "নিয়মের" প্রতি তাঁদের দুর্বলতায়। তারা নিয়ম করে দেন যে ভাষার কিছু ব্যবহার শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়, আর অন্য কিছু ব্যবহার বর্জনীয়। অর্থাৎ ভাষার কোন ব্যবহার হয় শুদ্ধ নতুবা অশুদ্ধ; এ দুইয়ের মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। বিধানবাদীদের মতে ব্যাকরণবিদ কেবল ভাষার ব্যবহারের বিভিন্ন উদাহরণ লিপিবদ্ধ-ই করেন না, এগুলির শুদ্ধাশুদ্ধি বিচারও তাঁর কাজ।
ভাষার ব্যাপারে এই দৃষ্টিভঙ্গি আজও আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে এবং এর সুবাদেই ভাষার আদর্শ সর্বজনমান্য রূপ বাস্তবায়ন করার কথা আজও আলোচিত হয়। কিন্তু ভাষা গবেষণার আরেকটি দিক আছে যা "আদর্শ ভাষা" নয়, বরং ভাষার ব্যবহার সংক্রান্ত প্রকৃত সত্য বা fact উদ্ঘাটনেই বেশি আগ্রহী। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ব্যাকরণবিদের কাজ বিধান দেয়া নয়, বরং বর্ণনা করা। অর্থাৎ ব্যাকরণবিদ কোন ভাষার বিভিন্ন ব্যবহার কেবল লিপিবদ্ধ ও বর্ণনা করবেন, কিন্তু এর শুদ্ধাশুদ্ধি বিচার কিংবা ভাষার পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি পাল্টানোর দুরূহ, অসম্ভব কাজটি তাঁর করার নয়। ১৮শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধেই ইংরেজি ভাষার ইতিহাসে আমরা এই বর্ণনাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির স্বপক্ষে লেখালেখি দেখতে পাই। জোসেফ প্রিস্টলি তাঁর Rudiments of English Grammar (1761) গ্রন্থে লেখেন যে 'the custom of speaking is the original and only just standard of any language', অর্থাৎ 'বলার রীতিনীতিই যেকোন ভাষার আদি ও একমাত্র আদর্শ'। বর্ণনাবাদীরা বলেন যে যুক্তি দিয়ে ও আইন করে ভাষিক ইস্যুগুলি সমাধান করা সম্ভব নয়। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষার ব্যাকরণিক বিশ্লেষণ করার সময় এই বর্ণনাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিয়েই অগ্রসর হন।
বর্তমান যুগে "বিধানবাদী" ও "বর্ণনাবাদী" — এই দুই ঘরানার ভেতরে বিরোধ প্রায়ই চরমে পৌঁছে, এবং এক পক্ষ আরেক পক্ষের অবস্থানের অবাস্তব উপস্থাপনেই বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়। বর্ণনাবাদীদের সম্পর্কে বলা হয় তাঁরা ভাষার কোনও রকম আদর্শায়নেরই ধার ধারেন না, কেননা তারা সব ধরনের ব্যবহারকেই সমান বৈধ মনে করেন। অন্যদিকে বিধানবাদীদেরকে বলা হয় তাঁরা ঐতিহ্যের অন্ধ ভক্ত। এই বিরোধকে একটা রাজনৈতিক রূপ দেয়ারও চেষ্টা চলে, যেখানে বর্ণনাবাদীরা আমূল সংস্কারবাদী উদারপন্থায় বিশ্বাসী, আর বিধানবাদীরা অভিজাত রক্ষণশীলতায়।
বিধানবাদী ও বর্ণনাবাদীদের চরিত্রের এই ছাঁচে-ঢালা উপস্থাপন উপেক্ষা করলে আমরা দেখতে পাব যে উভয় দৃষ্টিভঙ্গিই গুরুত্বপূর্ণ, এবং ধারণার চেয়ে এদের মধ্যে মিল অনেক বেশি। ভাষার গ্রহণযোগ্যতা, দ্ব্যর্থতা বা বহুঅর্থকতা, এবং বোধগম্যতার ব্যাপারে এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির গবেষকেরাই আগ্রহী। একই ভাষার বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শের সমস্যার সমাধানে বর্ণনাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ভূমিকা অপরিহার্য। যখন আমরা ভাষা ব্যবহারের প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত হই, তখন আমরা ব্যক্তিগত মতামতের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষা কিংবা ভাষা শৈলীর ব্যাপারে বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। অন্যদিকে ভাষার বিভিন্ন ব্যবহারের মূল্য সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের যে অনুভূতি আছে, যে অনুভূতি সমাজ-কাঠামো ও সেই কাঠামোয় আমাদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা গঠনে প্রভাব ফেলে, বিধানবাদ ভাষা গবেষণার সেই দিকের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
প্রায় ২০০ বছর ধরে বিরোধের পর চরম আশাবাদীরা ছাড়া আর কেউই ভাষা গবেষণার এই দুই "বাদের" প্রবক্তাদের মধ্যে সম্পূর্ণ ঐকমত্য আশা করেন না। তবে ইদানীং সমাজভাষাবিজ্ঞানীরা মানুষের ভাষিক আচরণ, ভাষার ব্যবহার ও ভাষা সংক্রান্ত বিশ্বাস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিধিবাদের ভূমিকার উপর আরও গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন, ফলে বিধিবাদী ও বর্ণনাবাদীদের মধ্যকার দূরত্ব ভবিষ্যতে হ্রাস পাবে, তা আশা করা যায়।
ইউরোপীয় ভাষাগুলিতে নিচের উৎসগুলি থেকে সাধারণত এই নিয়মগুলি উৎসারিত হয়।
১৮শ শতকে প্রকাশিত সবচেয়ে প্রভাবশালী ইংরেজি ব্যাকরণের একটি ছিল ধর্মযাজক বিশপ রবার্ট লোওথের লেখা A Short Introduction to English Grammar with Critical Notes (1762)। এই ব্যাকরণটিই ব্যাকরণবিদ লিন্ডলি মারিকে তাঁর বহুল ব্যবহৃত English Grammar (1794) বইটি লেখার প্রেরণা জুগিয়েছিল। পরবর্তী দশকগুলিতে এই দুইটি বইয়ের ২০টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।
মারির ব্যাকরণ বইটি স্কুলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও জনসাধারণের ভাষিক আচরণের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রভাব ছিল বেশি। অনুপ্রাসের সাহায্য নিয়ে লেখা তাঁর একটি নিয়মে বিধিবাদের বহু পরিভাষা লক্ষণীয়: 'Perspicuity requires the qualities of purity, propriety and precision.'
মারির কতগুলি নিয়ম ছিল অপরিহার্য, যেমন 'Keep clear of double meaning or ambiguity' এবং 'Avoid unintelligible words or phrases'। কিন্তু তাঁর বেশিরভাগ বিশ্লেষণই ছিল যথেচ্ছ, কৃত্রিম, ও লাতিন-ভিত্তিক, যেগুলি পরবর্তী দুই শতাব্দী ধরে বহু বিতর্কের রসদ যোগায়। মারির একটি নিয়ম ছিল এরকম - 'Two negatives, in English, destroy one another, or are equivalent to an affirmative'।
মারির ব্যাকরণের নিয়মগুলি ব্যাপকভাবে পড়ানো হত, এবং এটি ইংরেজি ভাষায় শুদ্ধিবাদের ভিত্তি গড়ে দেয়, যে শুদ্ধিবাদের আজও দেখা মেলে। তবে সেসময় এই নিয়মগুলিকে অনেকে আক্রমণও করেছিলেন। ১৮২৬ সালে American Journal of Education-এ এক লেখক মারির ব্যাকরণকে বিদেশী তাকের সাথে তুলনা করেন, যে তাকের ওপর লেখকের সরল মুখের ভাষাটিকে (অর্থাৎ ইংরেজিকে) টেনে খাপ খাওয়ানো হয়েছে ('foreign rack on which our simple language has been stretched')। ১৮৩৩ সালে আরেক লেখক জোর দিয়ে বলেছিলেন যে ব্যাকরণবিদদের কাজ নিয়ম 'আবিষ্কার' করা, 'উদ্ভাবন' করা নয়। তাই বলা যায়, আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের আবির্ভাবের অনেক আগেই বর্ণনাবাদ ও বিধানবাদের যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল।
জর্জ অরওয়েল তাঁর Politics and the English Language (1947) রচনাটিতে ছয়টি নিয়ম উল্লেখ করেন যেগুলি অনুসরণ করলে চিন্তার প্রবাহে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে কিংবা কোন লুকোচুরি না করে মনের ভাব ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব। অরওয়েল মনে করতেন ভাষার অবনতিই ছিল তাঁর সময়কার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ। অরওয়েলের উপদেশমূলক নিয়মগুলি ছিল এরকম:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.