বিদ্যাসাগর মেলা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় আয়োজিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত একটি শিক্ষামূলক মেলা। বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি এই মেলার আয়োজক। এই মেলার সূচনা হয় ১৯৯৪ সালে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রয়াণ-শতবর্ষে। প্রথমে এই মেলাটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই বীরসিংহ গ্রামই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পৈতৃক ভিটা ও জন্মস্থান। পরবর্তীকালে এই মেলা স্থানান্তরিত হয় কলকাতায়। ক্রমে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে সাক্ষরতা অভিযানের একটি দিকও। বর্তমানে এই মেলাটি কলকাতার অন্যতম বৃহৎ মেলা। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিমান বসু এই মেলার প্রধান সংগঠক।

ইতিহাস

১৯৯৪ সালে বিদ্যাসাগর প্রয়াণ-শতবর্ষ উপলক্ষে তদনীন্তন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমাস্থ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে মহকুমার শিক্ষানুরাগী মানুষদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি পাঁচ দিন ব্যাপী প্রথম বিদ্যাসাগর মেলার আয়োজন করে। এই মেলায় সাক্ষরতা প্রসার বিষয়ে আলোচনা, গান, নাটক, বিবিধ প্রদর্শনী ও নানা অনুষ্ঠানের সফল আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলা লোকসংস্কৃতির নানা আঙ্গিক এই মেলায় উপস্থাপিত হয়। পাঁচ দিনে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই মেলায়, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন আশপাশের গ্রামবাসী। মেলার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পরের বছরও বীরসিংহে বিদ্যাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়। এই বছর মেলার আয়তন ও আয়োজন বেশ বৃদ্ধি পায়। তবে গ্রামীণ অঞ্চলে সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাহীনভাবে মেলা করতে গিয়ে আয়োজকদের কিছু আর্থিক ঘাটতি হয়েছিল। সেই ঘাটতি মেটাতে পরের বছর থেকে বীরসিংহের পাশাপাশি কলকাতায় মেলা করার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৪ সাল থেকে কলকাতায় বিদ্যাসাগর মেলার সূচনা হয়। প্রথমে রবীন্দ্র সদন সংলগ্ন ময়দানের একটি অংশে মেলা আয়োজিত হত। বর্তমানে এই মেলাটি আয়োজিত হয় কলকাতার মিলনমেলা মেলাপ্রাঙ্গনে। অবশ্য বীরসিংহ গ্রামের মেলাটিও পাশাপাশি সমান উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

কর্মসূচি

বিদ্যাসাগর মেলার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সার্বিক সাক্ষরতার প্রসার ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে জেলায় জেলায় নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়। বর্তমানে সারা রাজ্যে সার্বিক সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। এই সাফল্যের পশ্চাতে বিদ্যাসাগর মেলারও বিশেষ অবদান রয়েছে।

বিদ্যাসাগর মেলা থেকে গৃহীত অপর এক অভিনব কর্মসূচি হল বিদ্যাসাগর বিদ্যালয় স্থাপন। বিদ্যাসাগর স্মারক বিক্রয় করে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে লব্ধ টাকায় প্রথমে মেদিনীপুর ও পরে রাজ্যের অপরাপর জেলায় স্থাপন করা হয় এই বিদ্যাসাগর বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের তিনটি পর্যায় – একটি সাধারণ, যেখানে নবসাক্ষরগণ তৃতীয় শ্রেণি থেকে ভর্তি হতে পারেন, একটি মুক্ত বিদ্যালয় ও একটি নৈশ বিদ্যালয়। সাক্ষরতার প্রসার ঘটানোর জন্য সকল রাজনৈতিক মতাদর্শকে এক ছাতার তলায় আনতেও অনেকটাই সফল এই বিদ্যাসাগর মেলা।

এছাড়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে।

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.