বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদে স্বাধীন ভোটাধিকার সীমিত করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদটি সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখে।

Thumb
জাতীয় সংসদ,বাংলাদেশ

ইতিহাস

৭০ নং অনুচ্ছেদটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী কর্তৃক প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ ১৯৭২’-এর ফলস্বরূপ সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল।[১] রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শে আদেশটি জারি করেন। শেখ মুজিবুর রহমান বিচলিত হয়েছিলেন যখন তাঁর নিজ দলের একজন আইনপ্রণেতা কে এম ওবায়দুর রহমান বাংলাদেশের গণপরিষদে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যে কেন গণপরিষদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেই। ১৯৭২ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের অধীনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নির্বাহী শাখার কাছে ছিল।[২]

অনুচ্ছেদ

সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৭০-এ বলা হয়েছে:

৭০। কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-

(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন

(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,

তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।[৩]

প্রয়োগ

অনুচ্ছেদটি অবাধ ভোট প্রতিরোধ এবং সংসদ সদস্যদের দল পরিবর্তন করতে প্রভাব ফেলে। সংসদ সদস্যরা তাঁদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের সংসদীয় আসন হারায়। অনুচ্ছেদ নং ৭০-এর ফলে বাংলাদেশের সংসদ মূলত ক্ষমতাসীন দল বা জোটের গৃহীত পদক্ষেপের জন্য পুতুল সংসদ হিসাবে কাজ করছে। সংসদও প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের জন্য অনাস্থা ভোট দিতে অক্ষম।

অনুচ্ছেদটি যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার আইনসভার মতো ওয়েস্টমিন্‌স্টার সিস্টেমের পাশাপাশি অন্যান্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেমন মার্কিন কংগ্রেস এবং জাপানিজ ডায়েটের নিয়মের বিপরীত।

সমালোচকদের যুক্তি ৭০নং অনুচ্ছেদ বাকস্বাধীনতা এবং বিবেকের স্বাধীনতাসহ সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরোধী। সংসদে জবাবদিহিতার অভাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবাধ ক্ষমতা দেয়, যিনি প্রায়ই একনায়কতন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত হন।[৪][৫] অনাস্থা প্রস্তাবের বিকল্প ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ও ভারসাম্য উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত, কারণ এমন কিছু প্রতিকার রয়েছে যার মাধ্যমে একজন প্রধানমন্ত্রীকে আইনত বরখাস্ত করা যেতে পারে।

সংস্কারের প্রস্তাব

বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, নাগরিক অধিকার কর্মী এবং সংসদ সদস্যরা ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করার দাবি জানায়। ১৭ এপ্রিল ২০১৭ সালে অনুচ্ছেদটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।[৬] কিন্তু উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেয়।[৭] ২৩ অক্টোবর ২০২৪ সালে উক্ত অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবার হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।[৮]

বিতর্ক

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.