Remove ads
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আটকে পড়া পাকিস্তানি বা উদ্বাস্তু পাকিস্তানি (উর্দু: محصور پاکستانی) বলতে এমন এক অবাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যারা ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে ভারতে থাকতো এবং ভারত বিভাগের পর তদানীন্তন বাংলা, পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) অভিবাসী হয়ে এসেছে।[৩][৪][৫][৬][৭]
এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত তারা রাষ্ট্রহীন ছিল যখন ঢাকা হাইকোর্টের একটি রায় তাদেরকে বাংলাদেশী নাগরিকত্বের অধিকার প্রদান করে। এই রায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।[৮] ২০১৫ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে ১,৭০,০০০ এর ও বেশি উদ্বাস্তুকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং অবশিষ্ট 'আটকে পড়া পাকিস্তানিরা' আর তাদের দায়িত্ব নয় বরং বাংলাদেশের দায়িত্ব।[৯]
বাংলাদেশ মিশ্র সংস্কৃতির দেশ। দেশের সুপ্রাচীন ইতিহাসে ভিন্ন ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর আগমনের প্রমাণ পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর ব্যাপক আগমন ঘটে। পুরনো ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য স্থানে যে বনেদি মুসলমান পরিবারগুলো ছিল তারা নানা কারণে আরবি এবং ফার্সির পাশাপাশি উর্দু চর্চা করত। তাদের পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলের ভাষাও ছিল উর্দু। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষ দশকগুলোতে ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে কাজ করার জন্য অনেক উর্দু ভাষাভাষী তৎকালীন পূর্ব বাংলায় আসে। তাদের মধ্যে এক বিশাল অংশ ছিল বিহার থেকে আগত যারা প্রধানত রেল, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও অন্যান্য বেসামরিক পদগুলোতে যোগ দিয়েছিল। ঢাকা থেকে ২০০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে সৈয়দপুরে এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে ওয়ার্কশপ অবস্থিত। এ ওয়ার্কশপে কাজ করার জন্য ব্রিটিশরা বিহার থেকে এখানে নিয়ে এসেছিল। ১৯৪৬ সালে বিহার মুসলিম হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে ও ১৯৪৭ সালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে ভারত বিভাজনকালে অধিকাংশ বিহারি মুসলমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে।
১৯৪৭ সালে যখন উপমহাদেশ বিভক্ত হলো তখন ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির কয়েক মাসের মধ্যেই হিন্দু মুসলিম দ্বন্দ্বে ২ কোটি লোক বাস্তুহারা হয় এবং ১০ লক্ষ লোক মারা যায়। ৭৫ হাজার মহিলা নির্যাতিত, ধর্ষিত ও গৃহহারা হয়। ১৯৪৭ সালের মধ্যে ৭২ লাখ মুসলিম পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে অভিবাসী হিসাবে গমন করে। অন্যদিকে ৫৫ লাখ হিন্দু ও শিখ ভারতে অভিবাসী হিসাবে যায়। এর মধ্যে ১৩ লাখ মুসলিম অভিবাসী পূর্ব পাকিস্তানে যায় যাদের মধ্যে ১০ লাখ ছিল বিহার থেকে আসা। সেই সময়ে বিহারে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে বিহার, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম অভিবাসী পূর্ব বাংলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া ব্রিটিশরা তাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কোন একটি দেশে যোগদানের সুযোগ করে দেয়। এ সুযোগ এবং ১৯৪৭ এর ঘটনাপ্রবাহে ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান তৎকালীন পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) ও পাকিস্তানে চলে আসে বা আসতে বাধ্য হয়। এভাবে শুরু হয় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নতুন পরিচয়ের আশায় লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমানের ভিন্নমুখী যাত্রা। বাংলাদেশে (তৎকালীন পাকিস্তান) আসা এ সকল অভিবাসীর বিরাট অংশ ছিল উর্দুভাষী। তখন রাজনৈতিক কারণে এদেরকে উদ্বাস্তু না বলে মুহাজির হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এসব অভিবাসীরা আরবি এবং ফার্সির পাশাপাশি উর্দু চর্চা করত। তাদের পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলের ভাষাও ছিল উর্দু। এরা বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক ভিন্নতার পাশাপাশি ভাষাগত ভিন্নতার মুখোমুখি হয়। বাংলা ভাষা কিংবা লিপি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। এ কারণে এবং রাজনৈতিক নীতির কারণে এরা বাংলা ভাষাকে এড়িয়ে চলে এবং দৃঢ় গোষ্ঠীগত বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠী থেকে তারা সব সময় আলাদা থাকে। ফলে প্রথম থেকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কারণে এরা বাংলাদেশের প্রধান জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিহারিদেরকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। ১৯৭১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, তখন অধিকাংশ বিহারিরা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ নেয়, বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে গড়ে তোলার দাবির বিরোধিতা করে এবং অনেক বিহারির মতো উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বেছে নেয়, এটি ছিল তাদের মাতৃভাষা। গোপন ও পরে ভারতীয় ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে পরিণত হয়। যুদ্ধের সময় বিহারি সম্প্রদায়ের উপর অনেক হামলা হয় যেহেতু তাদেরকে পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।[১০][১১]
মুক্তিযুদ্ধের পর তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে ইউএনএইচসিআর ও আইসিআরসি তাদের নিয়ে কাজ করে। ১৯৭৩ এবং ১৯৭৪ সালে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই মানবিক সমস্যা মোকাবেলায় একাধিক চুক্তি করে। ইন্দো-পাক অ্যাগ্রিমেন্ট ১৯৭৩, জেস ট্রাইপার্টাইট অ্যাগ্রিমেন্ট অব বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া, ১৯৭৪ এই চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইসিআরসি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিহারিদের পুনর্বাসনের চেষ্টার অংশ হিসেবে নাগরিকত্ব সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তারা পাকিস্তানে যাবার পক্ষে রায় দেয়। তখন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিহারিদের আটকে পড়া পাকিস্তানি বলে অভিহিত করা হয়। ফলশ্রুতিতে বিহারিদের তথা উর্দুভাষী এ জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে পাকিস্তানে পুনর্বাসন করা হয় বা পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে বাকিদের আইসিআরসি'র অধীনে বাংলাদেশের ৬৬টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়।
আইসিআরসি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ৬৬টি ক্যাম্প স্থাপন করে। এর মাধ্যে ছিল ঢাকার মিরপুর (২৫টি) ও মোহাম্মদপুর (৬টি)। মোহাম্মদপুরের ৬টি ক্যাম্প হলো জেনেভা ক্যাম্প, টাউন হল ক্যাম্প, সিআরও ক্যাম্প, মার্কেট ক্যাম্প, কমিউনিটি সেন্টার ক্যাম্প এবং স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্প। ১৯৭৩ সালে আইসিআরসি এর বিদায়ের পর বাংলাদেশ সরকার ও বিডিআরএস (Bangladesh Red Crescent Society) এদের দায়িত্ব নেয়।
রাবেতা আল আলম ইসলাম (রাবেতা আল আলম ইসলাম আটকে পড়া পাকিস্তানিদের পুনর্বাসনের জন্য পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হক কর্তৃক গঠিত ফান্ড যা পরবর্তীকালে নওয়াজ শরীফের হাতে পূর্ণতা লাভ করে।) পরিচালিত জরিপ (২০০৩) অনুযায়ী প্রায় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার উর্দুভাষী বাংলাদেশের ৮১ টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।
তাদের প্রাথমিক পাকিস্তানপন্থী অবস্থানের কারণে বিহারিদের পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। প্রাথমিকভাবে, ৮৩,০০০ বিহারি (৫৮,০০০ প্রাক্তন সরকারী কর্মচারী এবং সামরিক কর্মচারী), বিভক্ত পরিবারের সদস্য এবং ২৫,০০০ জনকে পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়া হয়। অবশিষ্ট বিহারিরা এখানে থেকে গেছে কারণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয় এবং তারা উভয় দেশে অবাঞ্ছিত মনে হয়। সে সময় পাকিস্তান সরকার হাজার হাজার আফগান শরণার্থী নিয়ে ঝামেলায় ছিল।[১২] উপরন্তু, পাকিস্তান সরকার বিশ্বাস করে যে যেহেতু বাংলাদেশ এখনও পূর্ব পাকিস্তানের উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র, তাই পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের (অনেক বাঙালীসহ) দেশে জায়গা দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে তেমন বাংলাদেশেরও দায়িত্ব বিহারিদের জায়গা দেওয়া উচিত। পাকিস্তানের কিছু দল পাকিস্তান সরকারকে বিহারিদের গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে।[১৩][১৪]
১৯৭৪ সালে একটি চুক্তিতে পাকিস্তান ১৭০,০০০ বিহারি শরণার্থী গ্রহণ করে; যাহোক, প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়।[১৫]
আইসিআরসি এর সদর দফতর জেনেভাতে। এ নামে তাই ১৯৭২ সালে নামকরণ করা হয় জেনেভা ক্যাম্প। লিয়াকত হাউজিং সোসাইটির সাথে চুক্তির মাধ্যমে এ স্থানটিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্যাম্প তৈরি করা হয়। সেখানে আশ্রয় নেয় ১৯৭১ সালে বাস্তুহারা বিহারিরা যারা মোহাম্মদপুরের রাস্তা, মসজিদ, স্কুলে অবস্থানরত ছিল। এটি বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৪৫ নং ওয়ার্ডের অধীনে অবস্থিত। জেনেভা ক্যাম্পের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। ক্যাম্পটি দুই অংশে বিভক্ত। এক পাশে ব্লক এ এবং বি। অপর পাশে সি থেকে আই পর্যন্ত (৭টি ব্লক)। সবচেয়ে বড় ব্লক সি এবং সবচেয়ে ছোট ব্লক আই। ১৯৭৩ সালে আইসিআরসি থেকে ক্যাম্পের দায়িত্ব নেয় বিডিআরএস। ১৯৭৫ সালে ক্যাম্পের দায়দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসে।
বাংলাদেশে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মূল সমস্যাটি নাগরিকত্ব সংক্রান্ত। তারা বাংলাদেশী না পাকিস্তানি? ২০০৩ সালের হাইকোর্টের এক রায় অনুযায়ী ১৯৭১ সালের পরে জন্ম বাংলাদেশের বিহারিরা বাংলাদেশী।
২০০৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশের হাইকোর্টের একটি রায় দশজন বিহারিকে নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার অর্জনের অনুমতি দেয়;[৪] এই রায় বিহারিদের মধ্যে এক প্রজন্মের ব্যবধান উন্মোচন করেছে, যেখানে তরুণ বিহারিরা এই রায়ের সাথে "উচ্ছ্বসিত", কিন্তু অনেক বয়স্ক মানুষ তরুণ প্রজন্মের উৎসাহে হতাশ হয়ে পড়েছে।[১৬] অনেক বিহারি এখন বাংলাদেশে বৃহত্তর নাগরিক অধিকার এবং নাগরিকত্ব চায়।[১৭]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.