শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
বসফরাস প্রণালি
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
Remove ads
বসফরাস একটি জলপ্রণালি যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তী অঞ্চলের একটি অংশে সীমানা নির্দেশ করে। এটিকে অনেক সময় ইস্তানবুল প্রণালিও বলা হয়। বসফরাস, মারমারা উপসাগর এবং দক্ষিণ পশ্চিমের দার্দেনেলাস প্রণালি মিলে তুর্কি প্রণালি গঠিত। বসফরাস প্রণালি বিশ্বের নৌ চলাচলে ব্যবহৃত সবচেয়ে সরু জলপথ। এটি কৃষ্ণ সাগরকে মারমারা উপসাগরের সাথে যুক্ত করেছে। বসফরাস প্রণালির দুপাশে দু’টি করে চারটি বাতঘর দ্বারা এর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সীমানার মধ্যে বসফরাস প্রণালির দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। উত্তরের অংশে এর প্রস্থ ৩৩২৯ মিটার এবং দক্ষিণের অংশে প্রস্থ ২৮২৬ মিটার। বসফরাসের সর্বোচ্চ প্রস্থ ৩৪২০ মিটার এবং সর্বনিম্ন প্রস্থ ৭০০ মিটার। সর্বনিম্ন প্রস্থের অংশে নৌ ও ফেরি চলাচল খুবই বিপজ্জনক। কারণ এখানে জলযানের দিক বাক নেয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আগত জলযান দেখা যায় না। এ সমস্যাটি এখানে আরও বেশি প্রকট কারণ বসফরাস দিয়ে প্রচুর জলযান যাতায়াত করে।


বসফরাসের গভীরতা ১৩ থেকে ১১০ মিটারের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। এর গড় গভীরতা ৬৫ মিটার।[১] গোল্ডেন হর্ন বসফরাস প্রণালির একটি মোহনা। এটি অতীতে ইস্তানবুলের পুরোনো অংশকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে দুর্গপরিখা হিসেবে কাজ করতো। এছাড়া এখানে উসমানীয় সাম্রাজ্যের নৌবাহিনীর জলযান নোঙ্গর বাঁধার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হত।
বসফরাস নামটি গ্রীক Bosporos (Βόσπορος) থেকে এসেছে।[২] বিংশ শতকের পূর্ব থেকেই এটি মানুষের জানা ছিল যে, কৃষ্ণ সাগর এবং মারমারা উপসাগর পরস্পর একটি গভীর পানিপথ দ্বারা যুক্ত। এই পানিপথটি ভূপৃষ্ঠের থেকে দৃশ্যমান জলের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ২০১০ এর আগস্টে জানা যায় যে পানির নিচ দিয়ে প্রবাহিত এই চ্যানেলটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম নদী হতে পারতো যদি এটি ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হত। বসফরাসের তীরবর্তি কিছু অংশে কংক্রীট দিয়ে শক্ত করা হয়েছে এবং যে সমস্ত জায়গায় মাটির অবক্ষেপ পড়ে, সেখানে নিয়মিত ড্রেজিং করা হয়।
Remove ads
কৌশলগত গুরুত্ব
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বসফরাস প্রণালি কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রপথে রাশিয়া ও ইউক্রেনে যাওয়ার জন্য এটি অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিকে অধিকার করার জন্য আধুনিক ইতিহাসে বেশ কয়েকটি সংঘাত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম রাশিয়া-তুরস্ক যুদ্ধ ১৮৭৭-১৮৭৮। ১৬ থেকে ১৮ শতকের মধ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্য সমস্ত কৃষ্ণ সমুদ্র এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয়। এই সমুদ্র অঞ্চলে তখন রাশিয়ার সকল যুদ্ধ জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।[৩]
পরবর্তিতে বসফরাস দিয়ে জলযান চলাচলের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পন্ন হয়।[৪] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২০ সালে সম্পন্ন হয় সেইভ্রিস চুক্তি। এই চুক্তির অধীনে বসফরাসকে সকল ধরনের সামরিক নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত করা হয় এবং একে লীগ অফ নেশন্স এর নিয়ন্ত্রণে এনে জলপথে আন্তর্জাতিক চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ১৯২৩ সালের লুজান(সুইজারল্যান্ডের একটি শহর) চুক্তিতে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। এতে বলা হয়, বসফরাস প্রণালি ভৌগোলিকভাবে তুরস্কের অধীনে থাকলেও এ পথে যেকোন দেশের জলযান নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু তুরস্ক এই চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বসফরাস প্রণালিতে সামরিক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে। ১৯৩৬ সালের মনট্রিক্স কনভেনশনে বলা হয় বসফরাস প্রণালি আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হলেও তুরস্ক এই পথ দিয়ে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের দেশ ব্যতীত অন্য সব দেশের নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তুরস্ক নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল। তখন দার্দেনেলাস প্রণালি সকল যুদ্ধরত দেশগুলোর জাহাজের চালাচলের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিন্ন সম্মেলন চলাকালে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন রাশিয়ার সামরিক বেসকে বসফরাস ও দার্দেনেলাস প্রণালিতে অবস্থানের জন্য তুরস্ক সরকারকে অনুমোদন দেয়ার অনুরোধ জানায়, যদিও তুরস্ক এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিল না। এই ঘটনা এবং তুরস্কের কারস, আর্তভিন ও আরদাহান প্রদেশ পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য স্ট্যালিনের দাবি – এগুলো ছিল বিভিন্ন কূটনৈতিক সম্পর্কে তুরস্কের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা থেকে দূরে সরে আসার কারণ। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তুরস্ক কোন সশস্ত্র কার্যকলাপ সংঘটন করেনি।[৫][৬][৭][৮]
সাম্প্রতিক কালে তুরস্কের জলপ্রণালি তেল শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার তেল রপ্তানিকারকরা নভোরোসিসিস্ক্ থেকে বসফরাস ও দার্দেনেলাস হয়ে পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে তেল পরিবহন করে।
Remove ads
পারাপার

বসফরাস দিয়ে অনেক ফেরি নিয়মিত পারাপার করে। এই প্রণালির উপরে দুইটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। একটি বসফরাস সেতু, যা দৈর্ঘ্যে ১০৭৪ মিটার এবং ১৯৭৩ সালে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। দ্বিতীয়টি ফাতিহ সুলতান মেহমেত সেতু। এটি দ্বিতীয় বসফরাস সেতু নামেও পরিচিত। এই সেতু ১০৯০ মিটার লম্বা এবং ১৯৮৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বসফরাসের উপরে তৃতীয় সেতু নির্মাণের জন্য তুরস্ক সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এই তৃতীয় সেতুর নাম ইয়াভুজ সুলতান সেলিম সেতু। এর নির্মাণ কাজ ২০১৩ এর ২৯ মে শুরু হয়। ২০১৫ এর ২৯ মে এটি জনসাধারণের জন্যে খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।[৯] এটি বসফরাসের উত্তর প্রান্তে নির্মিত হচ্ছে।
Remove ads
গ্যালারি
- বসফরাসের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে দৃশ্যমান ইস্তানবুলের ইউরোপীয় অংশ
- বসফরাস থেকে দৃশ্যমান ইস্তানবুলের ইউরোপীয় অংশ
- মারমারা উপসাগর থেকে বসফরাসের প্রবেশ
- বসফরাসের তীরবর্তি অংশে দলমাবাচি প্রাসাদ।
- বসফরাসের তীরে রুমেলিয়ান প্রাসাদ
- আহমেত রাসিম পাশা ভবন। এরকম ৬২০টি জলসম্মুখ বাড়ি বসফরাসের তীরে রয়েছে
- বসফরাসের তীরে বাড়ি
- বসফরাসের তীরে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বাড়ি
- বসফরাসের তীরে আফিফ পাশা ম্যানশন। এটি আলেকজান্ডার ভ্যালরি নকশা করেন
- ইস্তানবুলের এই এলাকাগুলি তাদের মাছের রেস্টুরেন্টের জন্য বিখ্যাত
আরও দেখুন
- বসফরাস সেতু
- ইয়াভুজ সুলতান সেলিম সেতু
- ফাতিহ সুলতান মেহমেত সেতু
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads