বন্দে মাতরম্‌

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত কবিতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বন্দে মাতরম্‌

বন্দে মাতরম্ ("বন্দনা করি মায়"[][]) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ১৮৮২ সালে রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসের অন্তর্ভুক্ত একটি গান। সংস্কৃত-বাংলা মিশ্রভাষায় লিখিত[] এই গানটি বন্দনাগীতি এবং বাংলা মা তথা বঙ্গদেশের একটি জাতীয় মূর্তিকল্প। শ্রীঅরবিন্দ বন্দে মাতরম্ গানটিকে "বঙ্গদেশের জাতীয় সংগীত" বলে উল্লেখ করেন।[] ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই গানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

দ্রুত তথ্য কথা, সঙ্গীত ...
বন্দে মাতরম্‌
Thumb
অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সঞ্চালিত 'রাগ দেশ'-এ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বন্দে মাতরম গান

ভারতের জাতীয় স্তোত্র
কথাবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ (১৮৮২)
সঙ্গীতহেমন্ত মুখোপাধ্যায়, যদুনাথ ভট্টাচার্য
গ্রহণকাল২৪ জানুয়ারি ১৯৫০
বন্ধ

১৮৯৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গাওয়া হয় বন্দে মাতরম গানটি। উক্ত অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর[] ১৯৫০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করলে বন্দে মাতরম্ গানটিকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্তোত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়।[] তবে একাধিক ভারতীয় মুসলিম সংগঠন বন্দে মাতরম্ গাওয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছেন। তাদের মতে, ভারতমাতার বন্দনাগীতি এই গানটির মূলভাবনা ইসলাম-নিষিদ্ধ পৌত্তলিকতার অনুসরণ করে। []

১৯০৯ সালে শ্রীঅরবিন্দ Mother, I bow to thee! শিরোনামে বন্দে মাতরম্ গানটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। ইংরেজি ভাষায় এই অনুবাদটি বহুল প্রচলিত।[] একাধিকবার এই গানটিতে সুরারোপ করা হয়। বন্দে মাতরম্ সঙ্গীতের প্রাচীনতম প্রাপ্ত অডিও রেকর্ডিংটি ১৯০৭ সালের। সমগ্র বিংশ শতাব্দীতে গানটি প্রায় একশোটি ভিন্ন সুরে রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০০২ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দশটি জনপ্রিয় গান নির্বাচনের একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় ৭০০০ গানের মধ্যে থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুরারোপিত বন্দে মাতরম্ গানটি বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম গান নির্বাচিত হয়।[]

পাঠ

সারাংশ
প্রসঙ্গ
আরও তথ্য জাতীয় স্তোত্ররূপে গৃহীত অংশ:, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক বঙ্গানুবাদ: ...
জাতীয় স্তোত্ররূপে গৃহীত অংশ: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক বঙ্গানুবাদ[]:

বন্দে মাতরম্
সুজলাং সুফলাং
মলয়জশীতলাং
শস্যশ্যামলাং
মাতরম্।
শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্
ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্,
সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং মাতরম্।

বন্দনা করি মায়!
সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা, চন্দন-শীতলায়!
যাঁহার জ্যোৎস্না-পুলকিত রাতি
যাঁহার ভূষণ বনফুল পাঁতি,
সুহাসিনী সেই মধুরভাষিণী–সুখদায়–বরদায়!
বন্দনা করি মায়!
সপ্তকোটির কণ্ঠনিনাদ যাঁহার গগন ছায়,
চৌদ্দ কোটি হস্তে যাঁহার
চৌদ্দ কোটি ধৃত তরবার,
এত বল তার তবু মা আমার অবলা কেন গো হায়?
বন্দনা করি মায়!

বন্ধ
দ্রুত তথ্য ভারতের সঙ্গীত, ধারা ...
ভারতের সঙ্গীত
Thumb
তানপুরা বাদনরত এক নারী, ১৭৩৫ খৃঃ; (রাজস্থান)
ধারা
ঐতিহ্যবাহী
আধুনিক
গণমাধ্যম ও অনুষ্ঠান
সঙ্গীত পুরস্কার
সঙ্গীত উৎসব
  • সপ্তক সঙ্গীত উৎসব
  • মাদ্রাজ সঙ্গীত মরশুম
  • ডোভার লেন সংগীত সম্মেলন
  • ত্যাগরাজা আরাধনা
  • পুরন্দর দাসা আরাধনা
  • হরবল্লভ সঙ্গীত সম্মেলন
সঙ্গীত মাধ্যম
  • শ্রুতি
  • দ্য রেকর্ড মিউজিক ম্যাগাজিন
জাতীয়তাবাদী ও দেশাত্মবোধক গান
জাতীয় সঙ্গীতজনগণমন
অন্যান্যবন্দে মাতরম্‌
অঞ্চলিক সঙ্গীত
  • অন্ধ্রপ্রদেশ
  • অরুণাচল প্রদেশ
  • আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
  • আসাম
  • উত্তরপ্রদেশ
  • উত্তরাখণ্ড
  • ওড়িশা
    • শাস্ত্রীয়
  • কর্ণাটক
  • কাশ্মীর, জম্মু ও লাদাখ
  • কেরালা
  • গুজরাট
  • গোয়া
  • ছত্তিসগড়
  • ঝাড়খণ্ড
  • তামিলনাড়ু
    • প্রাচীন
  • ত্রিপুরা
  • নাগাল্যান্ড
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • পাঞ্জাব
  • বিহার
    • মৈথিলী
  • মধ্যপ্রদেশ
  • মহারাষ্ট্র
  • মণিপুর
  • মিজোরাম
  • মেঘালয়
  • রাজস্থান
  • লাদাখ
  • সিক্কিম
  • হরিয়ানা
  • হিমাচল প্রদেশ
বন্ধ

মূল পাঠ

আনন্দমঠ উপন্যাসের মূল পাঠ[১০]

বন্দে মাতরম্
সুজলাং সুফলাং
মলয়জশীতলাং
শস্যশ্যামলাং
মাতরম্৷৷
শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্
ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্
সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং মাতরম্৷৷
সপ্তকোটিকণ্ঠকলকলনিনাদকরালে,
দ্বিসপ্তকোটীভুজৈর্ধৃতখর-করবালে,
অবলা কেন মা এত বলে৷৷
বহুবলধারিণীং
নমামি তারিণীং
রিপুদলবারিণীং
মাতরম্৷৷
তুমি বিদ্যা তুমি ধর্ম্ম
তুমি হৃদি তুমি মর্ম্ম
ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে৷৷
বাহুতে তুমি মা শক্তি
হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি
তোমারই প্রতিমা গড়ি
মন্দিরে মন্দিরে॥
ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমল-দলবিহারিণী
বাণী বিদ্যাদায়িনী
নমামি ত্বাং
নমামি কমলাম্
অমলাং অতুলাম্
সুজলাং সুফলাম্
মাতরম্॥
বন্দে মাতরম্
শ্যামলাং সরলাম্
সুস্মিতাং ভূষিতাম্
ধরণীং ভরণীম্
মাতরম্॥

ইতিহাস ও গুরুত্ব

সারাংশ
প্রসঙ্গ

রচনা

সাধারণভাবে অনুমান করা হয়, ১৮৭৬ সাল নাগাদ ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরিরত অবস্থাতেই বন্দে মাতরম্ রচনার কথা ভেবেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। গানটি ১৮৭৫ সালে (মতান্তরে ১৮৭৬ সালে) ২০ ডিসেম্বর রচিত হয়েছিল।[১১] ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে প্রথম গানটি প্রকাশিত হয়।[] রচনার অব্যবহিত পরে লেখক যদুভট্টকে গানটিতে সুরারোপ করার জন্য অনুরোধ করেন।[]

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন

Thumb
১৯০৭ সালে ভিখাজি কামা উত্তোলিত পতাকায় দেবনাগরী লিপিতে বন্দেমাতরম্ ধ্বনি

"বন্দেমাতরম" ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জাতীয় ধ্বনিতে পরিণত হয়। প্রথমে কলকাতা মহানগরীতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক সমাবেশে "বন্দেমাতরম" ধ্বনি দেওয়া শুরু হয়। এই ধ্বনির তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভীত হয়ে একবার ব্রিটিশ সরকার জনসমক্ষে এই ধ্বনি উচ্চারণ নিষিদ্ধ করে দেয়; এই সময় বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী "বন্দেমাতরম" ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে বিডন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পাঁচ বছর বাদে ১৯০১ সালের কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেন দক্ষিণাচরণ সেন। ১৯০৫ সালে কংগ্রেসের বারাণসী অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন সরলা দেবী চৌধুরাণীলালা লাজপত রায় লাহোর থেকে বন্দে মাতরম নামক একটি সাময়িকপত্র প্রকাশ করতেন।[] ১৯০৫ সালে হীরালাল সেন ভারতের প্রথম রাজনৈতিক চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন; এই চলচ্চিত্রের সমাপ্তি হয়েছিল গানটির মাধ্যমে। ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার আগে মাতঙ্গিনী হাজরার শেষ উচ্চারিত শব্দ ছিল "বন্দেমাতরম"।[১২]

১৯০৭ সালে মাদাম কামা (১৮৬১–১৯৩৬) ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকার যে রূপদান করেছিলেন, তার মাঝের ব্যান্ডে দেবনাগরী হরফে "বন্দে মাতরম্‌ " ধ্বনিটি খোদিত ছিল।[১৩]

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.