Loading AI tools
ফরাসি সাংবাদিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে (ফরাসী: François Gautier) (জন্মঃ ১৯৫০) একজন ফরাসি রাজনৈতিক লেখক এবং ১৯৭১ সাল থেকে তিনি একজন ভারত ভিত্তিক সাংবাদিক। তিনি ফরাসি ভাষার সংবাদপত্র লে ফিগারোর জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন।[1]
ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে François Gautier | |
---|---|
জন্ম | ১৯৫০ (বয়স ৭৩–৭৪) |
পেশা | সাংবাদিক, ইতিহাসবেত্তা, কলামিস্ট |
দাম্পত্য সঙ্গী | নমৃতা বিন্দ্রা গওতিয়ে |
ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে ১৯৫০ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন।[1] তিনি ক্যাথলিক স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি প্যারিসের আইডিআরএসি (IDRAC) নামক একটি ব্যবসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেন কিন্তু সেখানে পড়াশোনা শেষ না করে তিনি লেখক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি একটি ছোট দৈনিক পত্রিকায় কাজ করতেন। তিনি তার এক বন্ধুর জন্য ছায়াছবির সংলাপও লিখেছিলেন কিন্তু সে ছায়াছবিটি পরবর্তীতে আর মুক্তি পায় নি।[1]
গওতিয়ে ১৯৬৯ সালে ১৯ বছর বয়সে ভারতে আসেন। তিনি প্রথম দিকে ভারতে দীর্ঘ সময় অব্দি থাকতে চান নি। তার অভিপ্রায় ছিল বিশ্বভ্রমণ করার। কিন্তু পরবর্তীতে তার সাথে মীরা আলফাসার পরিচয় ঘটে। মীরা আলফাসা কর্তৃক অনুপ্রাণীত হওয়ার পর থেকেই তিনি পন্ডিচেরীতে শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে প্রায় ৭ বছর কাটিয়ে দেন।[1][2]
ফ্রাঁসোয়া গওতিয়ে নমৃতা বিন্দ্রা গওতিয়েকে বিয়ে করেন যার মা হলেন একজন হিন্দু এবং পিতা শিখ। বর্তমানে তিনি ভারতের অরভিলে বাস করেন এবং বছরে একবার তার পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য তিনি ফ্রান্সে ভ্রমণ করেন।[1]
ভারতে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি বেশ কিছু সময় লেখালেখি ছেড়ে ধ্যান এবং বাগান পরিচর্যার মত কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। ১৯৮২ সালের দিকে তিনি একটি ফরাসি দৈনিক খুঁজে পান যেটিকে তিনি সনাতনী ও গতানুগতিক ধারার পত্রিকা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি পত্রিকাটির সংশোধনের পরামর্শ দিয়ে উক্ত পত্রিকার সম্পাদককে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির প্রতিউত্তরে উক্ত দৈনিকের সম্পাদক তাকে সেই পত্রিকায় নিবন্ধ লেখার আহ্বান জানায়। সেই থেকে তিনি ঐ পত্রিকাটির জন্য অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন প্রকাশনার জন্য লেখক ও ফটোগ্রাফার হয়ে কাজ করেন। এই ভাবে তার সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা।
এছাড়াও তিনি জেনেভা ভিত্তিক জার্নাল ডি জেনেভা পত্রিকাতেও কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে লে ফিগারোতে চলে আসেন এবং শুধুমাত্র সেখানেই তার নিবন্ধ লিখতে থাকেন। তিনি পূর্বে রেডিফ.কম নামের একটি পত্রিকাতে নিয়মিত নিবন্ধ লিখতেন।[3] পাশাপাশি গওতিয়ে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস,[4] ডিএনএ ইন্ডিয়া,[5] আউটলুক ইন্ডিয়া[6] এবং অন্যান্য দৈনিকগুলোতেও অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছিলেন। এছাড়াও গওতিয়ে 'La Revue de l'Inde' নামক একটি ফরাসী দৈনিকের সম্পাদক।
গওতিয়ে যখন অরভিলের বাইরে পুরো ভারত ঘুরে দেখা আরম্ভ করেন, তখন থেকেই তিনি ভারতবিদ্যায় আগ্রহী হয়ে উঠেন। ব্লিটজ নামক একটি ম্যাগাজিনে গওতিয়ের একটি নিবন্ধ পড়ার পর সিতা রাম গোয়েল গওতিয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। গোয়েল তার নিবন্ধের লেখাগুলোকে একটি বই আকারে প্রকাশের জন্য তার অনুমতি চান। এর পরিবর্তে গওতিয়ে নিজেই বইটি প্রকাশ করে এর নাম দেন দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ইজ ইন্ডিয়া। পরে হিন্দুইজম টুডে নামের একটি ওয়েবসাইট বইটির লেখাগুলো অনলাইনে পুনঃপ্রকাশিত করে। গওতিয়ে ফটোগ্রাফার রঘু রায়ের সাথে ভারতীয় মার্শাল আর্ট কালারিপায়াত্তু নিয়ে একটি বইয়ের উপরও কাজ করেছেন।
২০১০ সালে এক অনামিক সাহিত্যিক হিন্দুত্ব, সেক্স এণ্ড এডভেঞ্চার" নামে একটি বই প্রকাশ করেন। বিবিসি সংবাদদাতা মার্ক টালিকে উক্ত বইয়ের মূল চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাথমিকভাবে উক্ত বই লেখার পেছনে সন্দেহের তীর গওতিয়েরের কাছে গেলেও গওতিয়ার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।[7]
গওতিয়ে ফাউন্ডেশন এগ্যাইনস্ট কন্টিন্যুয়িং ট্যারোরিজম" (FACT) নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনটি ফটোগ্রাফি এবং চিত্রকলা প্রদর্শনীর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং সন্ত্রাসবাদের ফলে জনজীবন কীভাবে মারাত্মপকভাবে প্রভাবিত হয় সে সম্পর্কে মানুষকে উপলব্ধি করানো।[8][9][10]
২০০৩ সালে গওতিয়ে Terror Unleashed: An Exhibition on Kashmir নামের একটি ফটোগ্রাফ প্রদর্শনী শুরু করেন। উক্ত প্রদর্শনীটির মূল বিষয় ছিল কাশ্মীরি পন্ডিতদের সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে। এছাড়াও ঐ প্রদর্শনীতে কাশ্মীরে ঘটে চলা বিচ্ছিনতাবাদী সন্ত্রাসবাদও তুলে ধরা হয়েছিল।
গওতিয়ে ১৯৯০ সালেও কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশা নিয়ে " A Glimpse of a Tragedy Without an End" নামে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। এই প্রদর্শনীটি ২০০৫ সালে হিউস্টন সহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রদর্শিত হয়েছিল।[11]
২০১২ সালে ফ্যাক্ট (FACT) সংগঠনটি ভবানী ভারতকে উৎসর্গ করে "ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ মিউজিয়াম অব ইণ্ডিয়ান হিস্টোরি" নামের একটি জাদুঘর ও একটি মন্দির স্থাপন করেন যা উদ্বোধন করতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন শ্রী শ্রী রবি শংকর, অজিৎ পাওয়ার এবং নিতীন গডকারি।
২০১৩ সালে দালাই লামার আগমনের সময় গওতিয়ে ও তার স্ত্রী নমৃতা ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি এবং তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার নিয়ে "ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ মিউজিয়াম অব ইন্ডিয়ান হিস্টোরি" জাদুঘরে তিব্বতের ধর্মশালা জাদুঘরের ঐতিহাসিক উপকরণ সহযোগে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সর্বোপরি তিব্বতের সংস্কৃতিকে তুলে ধরায় ছিলো এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।[12]
গওতিয়ে আর্থার লিওয়েলিন বাশামের বই দ্য ওয়ান্ডার দ্যাট ওয়াজ ইন্ডিয়ার সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। তার অভিমত হিসেবে গওতিয়ে বলেছিলেন, বইটিতে শুধু বর্ণপ্রথা, আর্য এবং দ্রাবিড় জাতি বিশেষ নিয়ে সেই সনাতনী ও গতানুগতিক ধারায় ভারতীয় ইতিহাস নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। গওতিয়ে বাশামকে "বর্ণবাদের জনক" হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
গওতিয়ে কোনরাড এলস্ট এর একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি এলস্টকে ভারতের বুদ্ধিমান পণ্ডিতদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করেন। গওতিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, এলস্ট একজন বিদেশী হিসেবে যে দৃষ্টিকোণ দিয়ে এক সম্ভাবনাময় ভারতকে অবলোকন করেছেন, সেই দৃষ্টিকোণ দিয়ে ভারতীয়রা তাদের দেশকে দেখতে পায় নি শুধুমাত্র দুই শতাব্দীর ঔপনিবেশিক নিপীরণ ও কষ্টের দরুন।[1]
গওতিয়ে দেশ ভাগের সময় মুসলিম লীগের প্রতি গান্ধীর সহনশীল নীতিকে তুষ্টিকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর সমালোচনা করেন। এছাড়াও গওতিয়ে চীনের প্রতি নেহেরুর শান্তিবাদ নীতিরও যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন।[2]
২০১১ সালে গওতিয়ে আন্না হাজারের দূর্নীতি বিরোধী অনশনের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
এক বিবৃতিতে গওতিয়ার বলেছিলেন, ভারতীয় সাংবাদিকরা তাদের দেশের সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত নয় এবং ভারতীয় সাংবাদিকরা তাদের দেশ নিয়ে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা পোষণ করে। এছাড়াও ভারতীয় মিডিয়া কর্তৃক হিন্দু গুরুদের "গডম্যান" হিসেবে আখ্যায়িতকরণ নিয়েও গওতিয়ে তীব্র নিন্দা করেছেন।[13]
গওতিয়ে ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত 'শ্রী শ্রী সেন্টার' নামক সাংবাদিকতা সম্পর্কিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অধ্যাপনা করেন।[14]
গওতিয়ে হিন্দু ধর্মের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। গওতিয়ে বলেছেন যে জীবনের অর্থ, পরকাল, কর্ম এবং ধর্ম সম্পর্কিত প্রাচীন সব জ্ঞান হিন্দু ধর্মেই নিহিত। গওতিয়ে বিশ্বাস করেন যে ইসলাম, খ্রিষ্টান মিশনারী, মার্ক্সবাদ এবং পশ্চিমাকরণ ভারতে হিন্দু ধর্মের অস্তিত্বের হুমকির কারণ।[15] গওতিয়ে তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসা নীতির প্রভাবই আলেক্সান্ডারসহ অন্যান্য আক্রমণকারীদের আক্রমণের জন্য ভারতকে দূর্বল করে তুলেছিল।[16]
২০০৩ সালে গওতিয়ে পাঞ্চজন্যর নচিকেতা অ্যাওয়ার্ড এবং বিপিন চন্দ্র পাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।[17] তিনি তার পুরস্কারে পাওয়া অর্থগুলো ফ্যাক্ট (FACT) সংগঠনটিতে অনুদান হিসেবে প্রদান করে দিয়েছিলেন।[2]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.