সর্ব-ইসলামবাদ (আরবি: الوحدة الإسلامية) হল মুসলিমদের ঐক্যকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন।[1] একটি একক ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত বা আন্তর্জাতিক সংগঠক যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত ইসলামি আদর্শ অনুযায়ী হয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য এই আন্দোলনের মূল। এটি একটি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। অন্যান্য প্যান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (যেমন প্যান আরবিজম) থেকে এই আন্দোলন নিজেকে আদর্শের দিক থেকে পৃথক বিবেচনা করে। এতে সাংস্কৃতিক ও জাতিতাত্ত্বিক পরিচয়কে ঐক্যের জন্য মুখ্য প্রভাবক হিসেবে ধরা হয় না।
মুজাহিদিন
স্বেচ্ছাসেবী ইসলামি যোদ্ধাদের ধারণ সর্ব-ইসলামি চিন্তার সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বের সর্বত্র থেকে মুসলিমরা প্রয়োজনে লড়াইয়ে যোগ দিতে পারে।
ইতিহাস
সর্ব-ইসলামবাদ মডেল মুহাম্মদ (স) ও রাশিদুন খিলাফতের সময় থেকে উপস্থিত রয়েছে। এসময় মুসলিম বিশ্ব একটি একক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে কার্যকর ছিল।
আধুনিক যুগে জামালউদ্দিন আফগানি মুসলিম বিশ্বে ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিরোধের জন্য সর্ব-ইসলামবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আফগানি সাংবিধানিক সরকারের পক্ষে অবস্থা নেননি।[2] তার চিন্তা ছিল বিদেশি শক্তির আজ্ঞাবাহী শাসকদের উৎখাত করে তাদের স্থলে যোগ্য দেশপ্রেমিক শাসক নিযুক্ত করা।[3] তার জীবনীকারের ভাষ্যমতে তার প্যারিস ভিত্তিক সংবাদপত্রে রাজনৈতিক গণতন্ত্র বা সংসদ সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থার কথা তিনি অনুকূল ধরেননি।[3]
জামালউদ্দিন আফগানি ইসলামি আইন ও ধর্মতত্ত্বের চেয়ে রাজনৈতিক দিককেই বেশি আলোকপাত করেছেন। তবে পরবর্তীতে উত্তর ঔপনিবেশিক সময়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। নেতৃস্থানীয় ইসলামি নেতা যেমন সাইয়েদ কুতুব, আবুল আলা মওদুদি ও আয়াতুল্লাহ খোমেনি সবাই ঐতিহ্যবাহী শরিয়া আইনে ফেরার মাধ্যমে মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে বিশ্বাস করতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরব জাতীয়তাবাদের উত্থানের ফলে ইসলামবাদ আড়ালে চলে যায়। আরব বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষ প্যান আরব দল যেমন বাথ পার্টি ও নাসেরিস্ট পার্টি প্রায় সব আরব দেশে বিস্তার লাভ করে এবং মিশর, লিবিয়া, ইরাক ও সিরিয়ায় ক্ষমতায় আসে। ইসলামপন্থী এসময় নির্যাতনের স্বীকার হয়। এর প্রধান চিন্তাবিদ সাইয়েদ কুতুব বন্দী ও নির্যাতিত হন।[4] পরবর্তীতে তার মৃত্যুদন্ড হয়। মিশরীয় রাষ্ট্রপতি নাসের মুসলিম ঐক্যের ধারণাটিকে আরব জাতীয়তাবাদের জন্য হুমকিস্বরূপ দেখেছিলেন।[5]
ছয় দিনের যুদ্ধে আরব সেনাবাহিনীর পরাজয়ের পর ইসলামবাদ ও প্যান আরববাদ তাদের অবস্থান থেকে বিপরীত দিকে আসতে শুরু করে। ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লব সংঘটিত হয়। বিপ্লবে শাহ মুহাম্মদ রেজা পাহলভি ক্ষমতাচ্যুত হন। এর দশ বছর পর আফগান মুজাহিদিনরা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করে। মওদূদী এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো প্যান-ইসলামিক সুন্নি মুসলমানরা কমপক্ষে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প হিসাবে নতুন খিলাফত গঠনের বিষয়টি গ্রহণ করেছিল।[6]
এসকল ঘটনা ইসলামিস্টদের সমগ্র বিশ্বে পরিচিত করে তোলে এবং মুসলিম জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। মধ্য প্রাচ্য, বিশেষত মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিভিন্ন শাখা সেকুলার জাতীয়তাবাদী ও রাজতান্ত্রিক মুসলিম সরকারসমূহকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী বিশেষত মুত্তাহিদা মজলিসে আমাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনসমর্থন লাভ করে। আলজেরিয়ায় ইসলামিক সেলভেশন ফ্রন্ট ১৯৯২ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে জয়ী হবে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর হিজবুত তাহরির মধ্য এশিয়ায় একটি প্যান ইসলামি শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে আরব বিশ্বেও তারা সমর্থন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।[7]
সাম্প্রতিককালের সর্ব-ইসলামবাদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ও মিল্লি গোরাস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নাজিমউদ্দিন এরবাকান। তিনি প্যান ইসলামিক ইউনিয়নের ধারণা উৎসাহিত করেন। তার সরকার তুরস্ক, মিশর, ইরান, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশ নিয়ে উন্নয়নশীল ৮টি দেশ বা ডি৮ গঠন করে। তার লক্ষ্য ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত একক মুদ্রা (ইসলাম দিনারি)[8], যৌথ বৈমানিক ও প্রতিরক্ষা কার্যকলাপ, পেট্রোকেমিকেল প্রযুক্তি উন্নয়ন, আঞ্চলিক বেসামরিক বিমান নেটওয়ার্ক এসবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ঐক্য সৃষ্টি করা। ডি৮ সংগঠনটি রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদ পর্যায়ে বৈঠক করে থাকে। তবে ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর এরবাকান সরকারের পতন হলে কার্যকলাপের গতি হ্রাস পায়।[9]
আরও দেখুন
সংগঠন:
- বসনিয়ান মুজাহিদিন
- মুসলিম ব্রাদারহুড
- হিজবুত তাহরির
ইতিহাস:
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.