Loading AI tools
ব্রাসিলীয় শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পাওলো হায়াগ্লুস ন্যাভিস ফ্রেইরি (পর্তুগিজ: Paulo Reglus Neves Freire) ( ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯২১ –২ মে, ১৯৯৭) ছিলেন ব্রাসিলের মানবতাবাদী এক শিক্ষক ও দার্শনিক। জটিল শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্যতম সমর্থক ও পথপ্রদর্শক। তিনি তার জগদবিখ্যাত বই Pedagogia do Oprimido অর্থাৎ নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞান-এর জন্য (আমিনুল ইসলাম ভুইয়া কর্তৃক অত্যাচারিতের শিক্ষা নামে অনূদিত [1]) জন্য সুপরিজ্ঞাত। [2] [3]
পাওলো ফ্রেইরি | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২ মে ১৯৯৭ ৭৫) সাও পাওলো, ব্রাসিল | (বয়স
জাতীয়তা | ব্রাসিলীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | এলজা মাইয়া কোস্তা দে অলিভিয়েরা ফ্রেইরি (১৯৪৪-১৯৮৬), আনা মারিয়া আরাউশ্জো ফ্রেইরি (১৯৮৬-১৯৯৭) |
উচ্চশিক্ষায়তনিক পটভূমি | |
মাতৃ-শিক্ষায়তন | রেসিফে বিশ্ববিদ্যালয় |
উচ্চশিক্ষায়তনিক কর্ম | |
বিষয় | শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা, দর্শন |
বিদ্যালয় বা ঐতিহ্য | জটিল শিক্ষাবিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য কাজ | পেদাগোজিয়া দো ওপ্রিমিদো (অত্যাচারিতের শিক্ষা) (১৯৬৮) |
যাদের প্রভাবিত করেন | আহমদ ছফা |
পাওলো ফ্রেইরির জন্ম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের উত্তর-পূর্ব প্রদেশ পারনামবুকোর রাজধানী শহর রেসিফের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ১৯৩০ শতকে বিশ্বজুড়ে যে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা হয়, তার কারণে ছোটবেলা থেকেই দরিদ্রতা ও ক্ষুধার সাথে মানুষের লড়াই দেখেছেন। অভাব ছিল তাদের পরিবারের নিত্যসঙ্গী। অভাবের জন্য ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তারা রেসিফের পশ্চিমে অবস্থিত মোটামুটি স্বল্প আয়ের শহর 'জবাত পাওডো ডস গুয়ারারপেশস' শহরে চলে যান। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে অক্টোবর তার পিতার মৃত্যু হয়। এমতাবস্থায় আরো সমস্যায় পড়লে তার পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়। সেখানকার অন্য দশটা দরিদ্র কিশোরের মতো তিনি তার বস্তির বন্ধুদের সঙ্গে অলিতে গলিতে ফুটবল খেলে বেড়াতেন। তার সামাজিক জীবনের অনেকটা জুড়েই ছিল বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলার সময়টা। পরবর্তী জীবনে তিনি স্বীকার করেন -
"ক্ষুধার কারণে কোনো পড়াশোনাই আমার মাথায় ঢুকতো না। এমন না যে আমি বোকা ছিলাম, অথবা আমার আগ্রহের কোনো অভাব ছিল। আমার সামাজিক অবস্থা আমাকে শিক্ষা নিতে দেয়নি।"
তবে তার শেখার ক্ষমতা ছিল প্রবল। দারিদ্র্য আর ক্ষুধা তার শেখার ক্ষমতাকে আরো গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ভীষণ অভাবের ওই দিনগুলোই পরবর্তীতে তাঁকে দরিদ্র ও শোষিতদের জন্য কাজ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে পাওলো ফ্রেইরি রেসিফে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল'স্কুলে পড়ার সুযোগ পান। সেখানে তিনি দর্শন এবং মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু আইন ব্যবসা না করে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সহকর্মী শিক্ষয়িত্রী 'এলজা মৈয়া কোস্টা ডি অলিভেরা'কে বিবাহ করেন এবং দুজনেই শিক্ষার কাজে লিপ্ত থাকেন।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাও পাওলো তে শিক্ষা অধিকর্তা হিসাবে তার নিয়োগে পর তিনি শিক্ষা সম্বন্ধীয় তার নিজস্ব তত্ত্ব প্রয়োগের সুযোগ পান। পরীক্ষামূলক ভাবে তিনি তিন শত নিরক্ষর আখ চাষীদের মাঝে প্রয়োগ করে তাদের মাত্র ৪৫ দিনে লেখাপড়া শেখাতে সক্ষম হন। এতে উৎসাহিত হয়ে ব্রাজিল সরকার সারা দেশে কয়েক হাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলে। কিন্তু ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের সামরিক বিদ্রোহে পাওলোর কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি বিশ্বাসঘাতক হিসাবে ৭০ দিন কারাবাস করেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম রচনা 'এডুকেশন এজ দি প্র্যাকটিস অফ ফ্রিডম' প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে তিনি পন্টিফিক্যাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলোতে অধ্যাপনায় যুক্ত হন। তিনি আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। সেন্টার ফর দি স্টাডি অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাল চেঞ্জ-এর ফেলো এবং ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে হার্ভার্ড সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি জেনেভাস্থ অফিস অব দি ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস-এর উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি চিলির ইউনেস্কোর ইনস্টিটিউট অব রিচার্স অ্যান্ড ট্রেনিং ইন এগ্রোরিয়ান রিফর্ম-এর উপদেষ্টা ছিলেন পাঁচ বৎসর এবং চিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ব্রাজিলে বয়স্ক শিক্ষার জাতীয় পরিকল্পনার সাধারণ সমন্বয়কও ছিলেন।
পাওলো ফ্রেইরি বাস্তবিক পরিস্থিতির উপর পর্যালোচনা করে দেখেছেন: মানুষের চেতনা রূপ পায় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর মানুষটির নিজস্ব পারিপার্শ্বিকের প্রভাবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যে শিক্ষাচিন্তা পোষণ করতেন তার মূল কথা হলো: প্রতিটি মানুষ এক-একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সত্তা। তিনিই পারেন পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে এবং নতুন করে গড়তে। তবে তত্ত্ব-কর্ম-সমন্বয়ী বিশ্লেষণী চেতনা মানুষকে ভাবনা থেকে কাজে অগ্রসর হতে শেখায়। শোষকের নিপীড়ন মানুষকে বঞ্চিত করে, মিথ্যা ভাবনায় আটকে রাখে। সুতরাং জ্ঞানার্জন কেবল অক্ষর জ্ঞান নয়; জ্ঞানার্জন হলো জগৎকে সংশয়াতীতভাবে চেনা ও জানা, যেখানে শিক্ষার্থী এবং সেই সঙ্গে শিক্ষকও পারস্পরিক বিনিময়ে তত্ত্ব-কর্ম-সমন্বয়ী বিশ্লেষণী চেতনায়নের (consciência crítica) মাধ্যমে বাস্তব জীবনে মুক্তি অর্জনের পথের সন্ধান পাবেন । [4] ফ্রেইরি জঁ-পল সার্ত্র, এরিক ফ্রম, লুই আলত্যুসের, হার্বাট মার্কুস কার্ল মার্ক্স প্রমুখ দার্শনিকের চিন্তা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। চিন্তাবিদদের চিন্তার সমন্বয়ে ও তার জটিল শিক্ষাবিজ্ঞানের দর্শনে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় বিশ্বসমাদৃত বই পেদাগোজিয়া দো ওপ্রিমিদো। এখানে বর্ণিত শিক্ষার দিশাকে তিনি 'Educação Bancária' (ব্যাংকপদ্ধতির শিক্ষা) হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা এখানে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদেরও জ্ঞানের সহ-স্থপতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া তিনি শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষা সম্বন্ধীয় বিষয়ে ১৫টিরও বেশি বই প্রকাশ করেছেন।
বয়স্ক শিক্ষায় অনন্য অবদানের জন্য জীবদ্দশায় দেশে ও বিদেশে পাওলো ফ্রেইরি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এদের মধ্যে ১৯৮৬ সালে তার পাওয়া ইউনেস্কো প্রাইজ ফর পিস এডুকেশন অন্যতম। এছাড়া তিনি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৭ সালের ২ মে সাওপাওলোতে পাওলো ফ্রেইরি ৭৫ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.